পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই জামায়াত-শিবির তাদের বাংলাদেশের এজন্টদের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকার উৎখাত করে তাদের তাবেদারদের ক্ষমতায় বসানোর মিশন নিয়ে গত দুই বছর যাবত কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু কোনো আন্দোলনের মাধ্যমেই শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করতে না পেরে যুদ্ধাপরাধ ইস্যুকে সামনে নিয়ে এসেছে। আইএসআই এখন তাদের এজেন্ট ও বাংলাদেশবিরোধী জামায়াত-শিবির ও আফগান যুদ্ধ ফেরৎ জঙ্গিদের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিরোধী নাশকতা চালাচ্ছে। এদের থিঙ্কটেঙ্ক হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধীদলের নেতার লন্ডনে নির্বাসিত পুত্র যুবরাজ তারেক জিয়া। এনিয়ে সম্প্রতি ইন্ডিয়ার এক এক প্রভাবশালী পত্রিকায় তারেক রহমানের আইএসআই ক্যানেকশন নিয়ে দীর্ঘ প্রতিবেদন ছেপে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে।

পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা ও তাদের এদেশীয় এজেন্টদের মাধ্যমে শত চেষ্টা করে সরকারকে হটানো বা গণআনোদালন সৃষ্টি করে নির্বাচন বানচাল করতে না পেরে এখন তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রার ধারাকে ধারাকে বাধাগ্রস্ত করারও অপচেষ্টা করছে। এনিয়ে দেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রেও অনেক প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। পাকিস্তানের জানিদোস্ত একাত্তুরের যুদ্ধপরাধী ও মানবতাবিরোধী আপরাধের দায়ে দন্ডিত কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের পর পাকিস্তান বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সংসদের নিন্দা প্রস্তাব পাস করে যে ধৃষ্টতা দেখিছে এ নিয়ে সারা দেশ এখনো প্রতিবাদে উত্তল। পাকিস্তানের এমন ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণে দেশের সর্বস্তারের মানুষ ও পেশাজীবী সংগঠন, রাজনৈতকি দল প্রতিবাদে সামিল হলেও কোন অজানা কারণে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি বা তার নেত্রী খালেদা জিয়া মুখে কুলুপ এটে বসেছেন। তাই এ কথা বলতে দ্বিধা নেই ‘মৌনতাই সম্মতির লক্ষন’ অতি পুরাতন এই প্রবাদটির সত্যসার অনুযায়ী খালেদা জিয়া বা বিএনপির মৌমনতা পাকিস্তানের ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণকে সমর্থ করে।

পাকিস্তানের এ ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণের প্রতিবাদে গতকাল ২১ ডিসেম্বর ২০১৩ শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে বাংলাদেশ সম্পর্কে নিন্দা প্রস্তাব পাস হওয়ার প্রতিবাদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন,“একটি স্বাধীন দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পাকিস্তান জেনেভা কনভেনশন অনুসরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলেও মন্তব্য করা হয়।”

নেতৃবৃন্দ তাদের প্রতিক্রিয়ায় আরো বলেন,“বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকে পাকিস্তানের ভূমিকা দুঃখজনক। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই জামায়াত-শিবিরের মাধ্যমে বাংলাদেশবিরোধী নাশকতা চালাচ্ছে। একই সঙ্গে তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারাকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। একাত্তরের ঘৃণ্য অপরাধের জন্য পাকিস্তান কোনদিন দুঃখ প্রকাশ বা ক্ষমা চায়নি। অথচ সে দেশের জাতীয় সংসদে কাদের মোল্লাকে নিয়ে নিন্দা প্রস্তাব পাস ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বক্তব্য আমাদের স্বাধীন দেশের প্রতি কূটনৈতিক শিষ্টাচারবর্জিত কাজ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরকারকে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সে দেশের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান তিনি। ’৭১-এর ঘাতক-দালালদের বিচার ও সম্প্রতি কাদের মোল্লার ফাঁসির পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তান সংসদ যে ধৃষ্টতাপূর্ণ মন্তব্য করেছে, তা স্বাধীন দেশ ও বিচার বিভাগের ওপর অবৈধ হস্তক্ষেপ বলে মনে করছে প্রেশপ্রেমিক বাংলার মানুষ।

অথচ দুঃখজনক হলেও সত্যি একই রকম আচরণ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এসব ঘণ্য মানকতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার বানচাল ও ফাঁসি রহিতের জন্য চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘসহ পশ্চিমা দাদারা। তার পরও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এসব চাপ অগ্রাহ্য করে কসাই কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করে প্রমাণ করেছেন তিনি সত্যি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য উত্তরসূরি। সেই কারণেই শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি গোস্যা করে বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের রাষ্ট্রদূতরা ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবসে সম্মান জানাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাননি।

পশ্চিমাদের এই দুমুখো নীতি প্রসংসে সাংবাদিক ও কলামিস্ট মাসুদা ভাট্টির একটি লেখার কিছু অংশ এখানে উল্লেখ করতে চাই। মাসুদা ভাট্টি প্রশ্ন তুলেছেন পশ্চিমাদের ভূমিকা নিয়ে। তিনি গতকাল ২৪ ডিসেম্বর দৈনিক জনকন্ঠে তার এক নিবন্ধে বলেছেন,“প্রত্যেক দেশেরইকিছু ক্ষত থাতক যেমন জার্মানির ক্ষেত্রে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ। এই যুদ্ধে হিটলারের পক্ষে যারা কাজ করেছে এবং নাৎসী বাহিনীর বিভিন্ন পদে থেকে যুদ্ধাপরাধ করেছে তাদের শাস্তির আওতায় আনাটা জার্মানির জন্য আধুনিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয়ে ওঠার প্রথম ও প্রধান পদক্ষেপ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছিল। ফলে জার্মানিকে ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নাৎসী বাহিনীর বিভিন্ন পদে থাকা ব্যক্তিদের ট্রাইব্যুনালের মুখোমুখি করতে হয়েছিল এবং তাদের মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল, যার যার অপরাধ অনুযায়ী। এই শাস্তি কার্যকর করায় কোন ধরনের কালক্ষেপণ করা হয়নি বা তাদের রক্ষার জন্য কারও আবেদন-নিবেদন গ্রাহ্য করা হয়েছিল বলে শোনা যায় না। বাংলাদেশও তেমনই ১৯৭১ সালে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধকারীদের শাস্তির আওতায় আনার কাজটি শুরু করেছিল স্বাধীনতার পর পরই। যদিও তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি কারণ মাঝখানে ক্ষমতাসীনরা বরং মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে অপরাধীদের রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী করেছেন এবং নিজেদেরও ক্ষমতাবান করেছেন। কিন্তু আজকে যে রাজনৈতিক পক্ষটি ক্ষমতাসীন তারা মুক্তিযুদ্ধের লিগেসি বহন করে এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা জনগণের কাছে এই মর্মে ম্যান্ডেট নিয়েই এসেছে যে, ক্ষমতায় গিয়ে তারা যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। কিন্তু যখনই বিচার প্রক্রিয়ায় হাত দিয়েছে তখনই পশ্চিম থেকেই প্রথম বাঁধাটি এসেছে। পশ্চিমকেই যুদ্ধাপরাধের পক্ষের শক্তিটি বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানের হচ্ছে না। এ দেশের প্রচলিত আইন ও আইনী কাঠামোর ভিত্তিকে সরাসরি প্রশ্নের মুখোমুখি করে তোলা হয়েছে। বেশিরভাগ সময়ই কালো টাকায় কেনা লবিস্টদের মাধ্যমে, আবার কখনও এদেশেরই ভেতর পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিনিধিদের মাধ্যমে।”

তারা কেন জামায়াত শিবিরকে কিছু না বলে প্রকারন্তে তাদের নাশকতামূলক কাজকেই সমর্থন করে যাচ্ছে। যা একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল। আমরা তাদের মনোবেদনার কারণ আমরা জানি। বাংলাদেশের চেয়ে ড. মুহম্মদ ইউনূসকে তাদের বেশি প্রয়োজন কেননা, এই রহস্যজনক লোকটি তাদের এজেন্ট হিসেবে সকল পারপাস সার্ভ করে থাকে। এই লোকটির কারণেই বাংলাদেশের স্বপ্নের পদ্মাসেতু ঋণ বাতিল করেছে বিশ্বব্যাংক। যাদের কাছে একজন ব্যক্তির চেয়ে একটি দেশ গৌন হয়ে যায় এমন বন্ধুদের আমাদের প্রয়োজন নেই।

0 Shares

৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ