“… … … আ ডার্টি বিচ” – অহেতুক উত্তেজনায় পাবলিক বাসের সংরক্ষিত আসনে বসে ফোনালাপরত তরুণীকে উৎসর্গকৃত স্বগোক্তির লেজের অংশটুকু প্রকাশ হয়ে পড়ে। সামনের আসনে বসা অফিসগামী ভদ্রলোক বিরক্তি মেশানো অনুসন্ধিৎসু চোখে আমার দিকে তাকান, পাশে কাউকে খুঁজে না পাওয়ার ব্যার্থতাকে সফলতায় রূপান্তর করতে সে ড্রাইভারকে ‘লাট সাহেব’ ও ট্র্যাফিক পুলিসের মাকে ‘কুত্তি’ সম্বোধন করেন। গালি খেয়ে বাস কয়েক ইঞ্চি সামনে এগুলে অনাকাঙ্খিত সাফল্যে ভদ্রলোকের চোখ বুঁজে আসে। আমি মস্তিষ্কের অপ্রকাশিতব্য বাক্যাবলীর আপত্তিকর অংশটুকু প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় সাময়িক বিব্রতবোধ করি।
আমি বাস থেকে নেমে পরি। রাস্তা পার হওয়ার সময় আইল্যান্ডে দাঁড়ানো টোকাইকে ধাক্কা মেরে তার থেঁতলানো মাথা দেখার ইচ্ছা সময় স্বল্পতায় চাপা পরে যায়। ক্লাসে বসে আমার দিকে পেছন করে দাঁড়িয়ে একঘেয়ে গলায় প্যারালাল ইউনিভার্স সম্পর্কে ঘ্যানঘ্যান করে চলা শিক্ষকের চকচকে টাকটিকে হোয়াইট বোর্ড পেন দিয়ে কালো করে দেয়ার ইচ্ছাটাকে দমন করতে সহপাঠিনীর কাছ থেকে ওয়াটার বোটল চেয়ে নিয়ে একটা নিউরোলেপটিক গিলে বেরিয়ে আসি। পরবর্তী ক্লাসে অ্যাটেনডেন্স শীটের উল্টোপাশে সুন্দরী ম্যামকে কুপ্রস্তাব সম্বলিত চিরকুট লিখে তার রিঅ্যাকশন দেখার ইচ্ছাটা মরে যায় এন্টিসাইকোটিকের দ্রুত কার্যকারিতায়।
ছাঁদে এসে দেখি পানির ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে আসা অ্যাক্রোফোবিক কেয়ারটেকার কিনারায় দাঁড়িয়ে হাটু কাঁপাচ্ছে, আমার ইচ্ছা হয় ধাক্কা মেরে তার অবাক-চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে। দীর্ঘদিনের পরিচয় সূত্রে সে আমার চকচকে চোখ দেখে ও বিড়বিড় শুনে কিছু একটা টের পায়। দ্রুত পায়ে সরে পরায় আমি নিজেই নিজের পতন উপভোগ করতে লাফিয়ে পড়ায় উদ্যোগী হই। অতঃপর আত্মহত্যাকারী-হতাশাগ্রস্ত-তরুণ অথবা প্রেমে-ব্যার্থ-আত্মহত্যাকারী-তরুণ ধরণের সস্তা ও অপমানজনক তকমার ভয়ে আমি নিচে নেমে আসি। তবে আমি হাল ছাড়িনা, নিচে নেমে ধরতে না দেয়ার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মোটাসোটা বেড়ালটাকে তুলে নেই।
আমি একজন সাইকোটিক। শুধুমাত্র আরেকজন সাইকোটিক পেশেন্ট মাত্রই বুঝতে পারবেন আমার অতি নিরীহ ও সাধাসিধে চেহারা, বুদ্ধিদীপ্ত উজ্জ্বল চোখ এবং অভাবনীয় দ্রুতগতিতে কার্যক্ষম মস্তিষ্কের আড়ালে কতো অসুস্থ একজন মানুষ লুকিয়ে আছে।
২২টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
সোনেলায় স্বাগতম ।
এমন ভয়ংকর চিন্তা ভাবনায় ভয় পেলাম ভাই
মানুষের মাঝে এমন চিন্তা হিমায়িত থাকে নাকি ?
ভালো লেগেছে ভিন্ন ধাঁচের লেখা , শুভ কামনা ।
কাফি রশিদ
ধন্যবাদ জিসান শা ইকরাম।
ঠিক হিমায়িত না, কয়েকজনের মধ্যে এই ধরণের প্রবণতা মোটামুটি প্রকাশ্যই থাকে। এই য্যামন বাসে সামনের সিটে বসে থাকা টাক মাথাকে থাপ্পড় দেয়ার ইচ্ছা অথবা বহুতল ভবন থেকে লাফ দিয়ে পতন অনুভব করার ইচ্ছা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই (নিউরোটিকদের) এসব করা হয় না, কেবল প্রতিক্রিয়া দেখার ইচ্ছাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। ব্যাপারটা একটু সিভিয়ার হলে সত্যিই এইরকম ঘটনা ঘটে (এরা সাইকোটিক)। নিউরোসিসকে রোগ হিশেবে ধরা হয়না, অনেকের মধ্যেই এটা আছে, কিন্তু সাইকোসিসের চিকিৎসা খুবই প্রয়োজন।
শুভকামনা।
মিসু
সাইকো লেখা ভালো লাগে । ভালো হয়েছে লেখা ।
কাফি রশিদ
ধন্যবাদ মিসু। শুভকামনা।
শিশির কনা
সাইকোরা এই ধরনের হয়নাকি ? বাইরে থেকে এদের বুঝা যায়না ? আমাদের চারিপাশে কত সাইকো আছে কে জানে । ভালো লিখেছেন ।
কাফি রশিদ
আচরণে আঁচ করা যায়। এদের অসামাজিক, ইন্ট্রোভার্ট, কিছুটা হতাশাগ্রস্ত মনে হতে পারে।
ধন্যবাদ।
অন্তরা মিতু
প্রথম লেখাতেই বাজিমাৎ………
সাইকোটিক কি আরেকজন সাইকোটিককে দেখলে বুঝতে পারে তারা স্বজাতি?
অনেক অনেক স্বাগতম আমাদের এই সোনালী পাতায়………… 🙂
কাফি রশিদ
পরস্পরের সাথে অল্পস্বল্প মিল পেলে অবশ্যই বুঝতে পারে। তবে এরা যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডিল্যুশনে ভুগে, সবাইকে নিজের মতোন ভাবাটাই স্বাভাবিক। ধন্যবাদ মিতু।
ছাইরাছ হেলাল
স্বাগত আপনি এখানে ।
মনের মধ্যে এমন থাকে !
লিখতে থাকুন নিয়মিত ।
কাফি রশিদ
ধন্যবাদ ছাইরাছ হেলাল।
মর্তুজা হাসান সৈকত
লিখতে থাকুন, লিখতে লিখতেই একদিন পরিপূর্ন একটা কাঠামোয় হেঁটে যাবে লেখা ।
কাফি রশিদ
হ্যাঁ। চেষ্টা করি লিখার। শুভ কামনা।
বনলতা সেন
এমন বিচিত্র বিষয় জেনে অবাক হওয়ার পাশাপাশি একটু
ভয় ভয় ও লাগছে ।
কাফি রশিদ
ভয়ের ত্যামন কোন কারণ নাই। এরা অন্যদের ক্ষতি প্রায় করে না বললেই চলে।
ব্লগার সজীব
আমারো এমন ইচ্ছে জাগে মাঝে মাঝে । মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় নিজের মোবাইলকে আছাড় দিয়ে ভেংগে ফেলি , ইচ্ছে হয় থানার বারান্দায় হিসু করি । আমিও কি এমন কাফি রশিদ ভাই ? লেখাটি আমার নিজের মনে হচ্ছে ।
কাফি রশিদ
আপনার ফোন ভাঙ্গতে ইচ্ছা জাগে, অন্যদের প্রতিক্রিয়া দেখতে ইচ্ছা করে, হয়তো কাউকে গালি দিয়ে দেখতে ইচ্ছা করে, শরীরে হাত দিয়ে চমকে দিতে ইচ্ছা করে- এই পর্যন্ত হলে কোন ত্যামন কোন সমস্যা নাই। এসব নিউরোসিসের লক্ষণ, এটাকে রোগ বলে ধরা হয় না। সাইকিয়াট্রিস্টের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এ ব্যাপারে আমার জানাশোনা খুবই কম, যতটুকু জানি ততটুকুর উপর এইরকম টুকটাক লেখালেখি করি।
আদিব আদ্নান
এখন দেখছি চোখ কান খোলা রাখতে হবে ।
এ বিষয় নিয়ে লেখার জন্য ধন্যবাদ ।
কাফি রশিদ
শুভ কামনা।
যাযাবর
নিজের মাঝে এসব কিছু কিছু লক্ষন আছে । আগে তো খেয়াল করিনি কোনদিন । আপনার লেখা ভাবনায় ফেলে দিল আমাকে । ধন্যবাদ ভাই ।
কাফি রশিদ
নিউরোসিস অনেকের মধ্যেই থাকতে পারে। এটা ত্যামন কোন সমস্যা না।
শুভ কামনা।
হতভাগ্য কবি
মন বড়ই আজিব জিনিষ। দুর্ভাগ্য হলো মনের নাম কখনই মহাশয় হয়না। 🙁
খসড়া
লেখাটা একটু অন্যরকম। খুব ভাল লাগলো। চমৎকার।