
নওশাদ সাহেব আমতা আমতা করে বললেন , 'আয়শা আমি খুব অসুস্থ। বিশ্বাস কর তুমি যা ভাবছো এরকম কিছুই না।' আয়শা তখনও কেঁদেই যাচ্ছেন। নওশাদ সাহেব বললেন , 'তবে তোমাকে আজ আমি কিছু সিরিয়াস কথা বলতে চাই।' আয়শা বললেন , কি কথা? নওশাদ সাহেব বললেন , 'তোমার সাথে আমার লাস্ট ফিজিক্যালি রিলেশন ঠিক কবে হয়েছিল , সেটা কি তোমার মনে আছে ?'
'মনে থাকবে না কেন? মনে আছে। দু' বছর আগে আমাদের ১৬তম বিবাহবার্ষিকীর রাতে। সে রাতে খুব ঝড় হয়েছিল। প্রচন্ড বর্ষনে এলাকার নিচতলা বাড়িগুলোতে পানি উঠে গিয়েছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেছিলাম আমাদের বারান্দার টবে লাগানো আমার সখের গোলাপ গাছটা ভেঙ্গে মাটিতে পড়ে আছে। কিন্তু তুমি হঠাৎ করে এসব প্রশ্ন কেন করছো?
'আয়শা। আমরা হয়তো সংসার আর নিজেদের সাহিত্য চর্চায় অতিরিক্ত সময় দিয়ে ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমাদের নিজেদেরও একটা ব্যক্তিগত চাহিদা আছে।'
'কে ভুলে গিয়েছে? কই আমি তো কিছুই ভুলিনি। তুমি তোমাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকো , তাই আমি তোমায় নিজে থেকে আর ডাকি না। বিরক্ত করি না।'
'তুমি কি ভাবছো আয়শা? আমি শুধু ব্যস্ততার জন্যই তোমার সংস্পর্শ থেকে এতদিন যাবত দূরে সরে আছি? নাকি অন্য কোন কারণও আছে এর সাথে। শোন আয়শা , আমি ভাল নেই। আমি বুঝতে পারছি আমি দিন দিন একজন অক্ষম পুরুষে পরিণত হয়ে যাচ্ছি। স্ত্রীর সেক্সুয়াল নিডস পূরণ করতে যে ফিজিক্যাল ক্ষমতা একজন পুরুষের থাকে তা আমি একেবারেই হারিয়ে ফেলেছি। তুমি কি বুঝতে পারছো আয়শা , আমি কি বলছি?'
'পারছি। এটাই কি তোমার সেই সিরিয়াস কথাটা?
'হ্যা আয়শা। আমি চাচ্ছি। মানে আমি চাচ্ছি তোমায় মুক্তি দিতে। তুমি আমায় ডিভোর্স দাও আয়শা। তুমি তো এখনও একজন পরিপূর্ণ যুবতী নারী। তোমারওতো একটা ফিজিক্যাল নিডস আছে। আর ফিজিক্যাল নিডস একজন মানুষের মৌলিক অধিকার। আমি কেন স্বার্থপরের মত তোমাকে এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাখব? আমার সাথে থেকে থেকে তুমি কেন শুধু শুধু তোমার সুন্দর জীবনটা নষ্ট করবে। তুমি আবার বিয়ে কর আয়শা। সংসার কর। প্লিজ।'
আয়শা নওশাদ সাহেবের কথা শুনে রেগে আগুন। নওশাদ সাহেব ভয়ে আয়শার মুখের দিকে তাকাতে পারছেন না। আয়শা এখন অগ্নিরুপ ধারণ করেছেন। আয়শা জোরে জোরে চিৎকার করে বলে উঠলেন , 'তুমি এটাকে এতো বড় করে কেন দেখছো? বল কেন দেখছো? এটা একটা শারিরীক সমস্যা।
আর শারিরীক সমস্যা যে কারোরই হতে পারে। স্বামী বা স্ত্রী যে কারোর। তুমি এটাকে বড় করে দেখছো বলেই তোমার কাছে এ সমস্যাটাকে এত বড় আর জটিল মনে হচ্ছে। আর তাই তুমি আমার থেকে ডিভোর্স নিতে চাইছো। ছিঃ নওশাদ ছিঃ। স্বামী- স্ত্রীর মাঝে শারিরীক সম্পর্কটাই কি সব? সেক্সুয়াল নিডস কি সবকিছুর উর্ধ্বে? পরষ্পরের প্রতি পরষ্পরের প্রেম- ভালোবাসা আর বিশ্বাসের কোন মূল্য নেই? সম্পর্কের কোন দাম নেই? কয়েক মুহুর্তের সুখের জন্য আমি আমাদের তিল তিল করে গড়ে তোলা একুশটা বছরের সমস্ত সম্পর্কটা একটা সিগনেচারের আঁচড়ে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেব? একটা কলমের কালির ছোয়ার এত ক্ষমতা? তুমি কি তাই চাও?'
'আয়শা আমি তোমার সুখের কথা ভেবেই এসব বলেছি।'
'শোন। আমার সুখের কথা তোমাকে আর ভাবতে হবে না। অনেক ভেবেছো। এবার আমাকে মাফ কর। আমার কাউকে দরকার নেই। আমার শুধু তোমাকে দরকার। শুধু তোমাকে দরকার।' এসব বলে আয়শা চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে রুম থেকে বেড়িয়ে পড়লেন। নওশাদ সাহেব পিছন পিছন ডাকতে লাগলেন , 'আয়শা আয়শা'। আয়শা মুখ ঘুরিয়ে বললেন , 'আমায় ডাকবে না। আর কখনো ডাকবে না।' সে রাতে আয়শা আর তাদের বেড রুমে ঘুমাতে এলেন না। সে ঘুমাল ড্রয়িংরুমের সোফাতে। বিয়ের পর এই প্রথম নওশাদ সাহেব আর আয়শা আলাদা আলাদা ঘুমাতে গেলেন। কিন্তু নওশাদ সাহেব সারারাত এক ফোটাও ঘুমাতে পারলেন না। আজ অনেকদিন পর নওশাদ সাহেব ফজরের আজান শুনলেন। 'হাইয়া আলাস সালাহ , হাইয়া আলাস সালাহ। হাইয়া আলাল ফালাহ , হাইয়া আলাল ফালাহ। আল্লাহু আকবার। আল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।' নওশাদ সাহেব ওজু করে নামাজ পড়লেন। হাত উঠিয়ে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করলেন, ' হে আল্লাহ। আমার সংসারে শান্তি ফিরিয়ে দাও। আমার সংসারে তোমার রহমত বর্ষন কর।' তারপর কিছুক্ষণ অন্ধকারে ছাদে হাঁটাহাটি করলেন। দিনের প্রথম আলো ফোটার সাথে সাথেই নওশাদ সাহেব ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়লেন। বের হওয়ার সময় দেখলেন আয়শা সোফার উপরে বিভোর ঘুমে। আয়শার চোখের জল শুকিয়ে সে জলের ছাপ আয়শার গালে লেগে আছে। নওশাদ সাহেব চুপটি করে অতি যত্নে আয়শার কপালে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে বিড়বিড় করে বললেন , 'আমিও তোমায় ছাড়া ভাল থাকব না আয়শা।'
২০টি মন্তব্য
নাজমুল হুদা
শত কিছুর উর্ধ্বে পরস্পরের ভালোবাসার জয় হলো।
আগের পর্বগুলো পড়া হয় নাই পরে নিবো, ইনশাআল্লাহ।
কিছু মনে না করে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন-
গল্পের সংলাপে বারবার আয়শা নামটি উল্লেখ্য না করলে গল্পের গতি আরো বেড়ে যেতো। যেহেতু গল্পকার আগেই বলে দিয়েছেন “আয়শা বললো, নওশাদ বললেন” ।
নাজমুল হুদা
#পড়ে নিবো
মুক্তা মৃণালিনী
অশেষ ধন্যবাদ ভাইয়া। আমার মনেহয় আপনি মনোযোগ সহকারে গল্পটা পড়েন নি। তাহলে আপনার চোখে পড়তো যে লেখক একবারই লিখেছেন ‘আয়শা বললেন, নওশাদ সাহেব বললেন’ এ কথাটা। তারপর থেকে শুধু তাদের কথোপকথনই উল্লেখিত হয়েছে। আর যেখানে আয়শা নাম বারবার আসছে সে ডাকগুলো নওশাদ সাহেব ডেকেছেন। আমরাও কথোপকথনের সময় পরষ্পর পরষ্পরের নাম ধরে ঘন ঘনই ডাকি। একই নাম দুই যায়গায় দুভাবে দু প্রসঙ্গে দুভাবে প্রকাশ পেয়েছে। সবটাকে এক অর্থে গুলিয়ে ফেললে তো হবে না।
নাজমুল হুদা
ধন্যবাদ আপু 💞 ।
যদিও লেখকের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা কারো ঠিক না , এই মন্তব্য ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশাকরি ।
জিসান শা ইকরাম
স্বামী- স্ত্রীর মাঝে শারিরীক সম্পর্কটাই সব নয়।
পারস্পরিক বিশ্বাস, আস্থা, ভালোবাসা এসব প্রথম, এরপরে শারিরিক প্রশ্ন আসতে পারে।
নওশাদ সাহেব এটিকেই প্রধান ধরে ভুল করেছেন।
গল্পটির সুন্দর সমাপ্তি ভালো লেগেছে।
নিয়মিত লেখো এখানে মুক্তা,
ব্লগটি তোমাদের, এটিকে ভালোবেসে নিজের মত ব্যবহার করো।
শুভ কামনা।
মুক্তা মৃণালিনী
অশেষ ধন্যবাদ ও শুকরিয়া প্রিয় দাদাভাই।
এস.জেড বাবু
চমৎকার এবং অনাকাঙ্খিত একটা উপসংহার দেখলাম। আন্দাজ ও করতে পারিনি এভাবে শেষ হবে।
তবে শেখার অনেক রেখেছেন এ অংশে-
///স্বামী- স্ত্রীর মাঝে শারিরীক সম্পর্কটাই কি সব? সেক্সুয়াল নিডস কি সবকিছুর উর্ধ্বে? পরষ্পরের প্রতি পরষ্পরের প্রেম- ভালোবাসা আর বিশ্বাসের কোন মূল্য নেই? সম্পর্কের কোন দাম নেই? কয়েক মুহুর্তের সুখের জন্য আমি আমাদের তিল তিল করে গড়ে তোলা একুশটা বছরের সমস্ত সম্পর্কটা একটা সিগনেচারের আঁচড়ে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেব? একটা কলমের কালির ছোয়ার এত ক্ষমতা? তুমি কি তাই চাও?’
একজন সত্যিকার সহধর্মিনী-
////‘আয়শা আমি তোমার সুখের কথা ভেবেই এসব বলেছি।’
একজন স্বপ্ন পুরুষ- যে বিসর্জন করতে পারে কাছের কারো জন্য।
অনেক ভাল লাগলেও কষ্ট লাগছে শেষ হয়ে গেল যে।
শুভকামনা আপু
চমৎকার ছিলো প্রতিটি পর্ব।
মুক্তা মৃণালিনী
অশেষ ধন্যবাদ ও শুকরিয়া প্রিয় ভাইয়া।
বন্যা লিপি
সবকিছুর উর্ধে স্বামী-স্ত্রীর বোঝাপরা। চমৎকার ভালোলাগা রইলো।
মুক্তা মৃণালিনী
অনেক ধন্যবাদ প্রিয় আপুমনি।
মোঃ মজিবর রহমান
মনে দাগ রেখে যাওয়া মত একটি লেখা। এটা যদি ৩০ ভাগ নারী পুরুষ বুঝত তাহলে সংসারে অনেক ঝামেল্লাই ঝাক্কি মেরে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া যেত। কিন্তু আমরা সবাই উগ্র কেউ কাউকে বুঝতে চাইনা। সবাই নিজের মত ভাবি এবং করি। ফলে পরিবারে অনাকাংখিত ঘটনা গুলই বেশি ঘটে চলেছে।
লেখা টা প্রিয়তে নিলাম ভাই।
মুক্তা মৃণালিনী
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
মোঃ মজিবর রহমান
🇧🇩
সুরাইয়া পারভিন
চমৎকার লিখেছেন আপু।
একটা সম্পর্কে শারীরিক প্রয়োজনটাই সব নয়। আয়শা তা জোর গলায় বুঝিয়ে দিলেন
মুক্তা মৃণালিনী
অনেক ধন্যবাদ প্রিয় আপু।
নিতাই বাবু
“শেষ ভালো যার, সব ভালো তার” গল্পের শেষ পর্ব পড়ে খুব ভালো লাগলো। দুঃখ থেকে গেল, আগের পর্বগুলো রীতিমতো পড়া হয়নি। ভাবছি, সময় করে পড়ে নিবো।
শুভেচ্ছা জানবেন।
মুক্তা মৃণালিনী
অশেষ ধন্যবাদ ও শুকরিয়া নিবেন দাদা।
মনির হোসেন মমি
চমৎকার উপস্থাপনা। একে অন্যের প্রতি স্যাক্রিফাইস না থাকলে সংসার টিকে না আবার অতি মাত্রায়ও ফলাফল ভাল হয় না। এখানে সব কিছু ছাড়িয়ে শুধু ভালবাসারই জয় হল। দারুণ সমাপ্তি।
মুক্তা মৃণালিনী
অনেক ধন্যবাদ প্রিয় ভাই।
সাবিনা ইয়াসমিন
মন যদি মনের চাহিদা পূর্ণ করে দেয়, তাহলে শারীরিক চাহিদা তুচ্ছ হয়ে যায়। শরীরের সবলতা একদিন শেষ হয়ে যায়, কিন্তু বিশ্বাস, ভালোবাসা মনকে সজীবতায় রাখে চিরদিন।
তোমার নতুন গল্পের অপেক্ষায় রইলাম,
তাড়াতাড়ি লিখো।
শুভ কামনা 🌹🌹