দেশে করোনা যেন দ্রুত ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য সবাইকে বারবার বলা হচ্ছে, “আপনারা ঘরে থাকেন। ঘর থেকে বের হইয়েন না প্লিজ” ....

অথচ যেসব ইয়াং ভাইয়েরা এই সময় মসজিদে বেশি মুসুল্লি দেখে খুশিতে, ঠেলায় বেশি বেশি আলহামদুলিল্লাহ বলছেন।
আমি সেইসব ইয়াং ভদ্রলোক ভাইদের শুধু এতটুকু বলতে চাই —-

আপনাদের অতি আবেগে বলা “আলহামদুলিল্লাহ” যেন আবার “ইন্নালিল্লাহে” পরিণত না হয় সেদিকে খুব খেয়াল রাখবেন .....

আমি যেহেতু নিজে একজন মুসলমান। তাই আল্লাহ সম্পর্কে, ধর্ম সম্পর্কে আমারও কিছু জ্ঞান আছে। আর যেহেতু আমি আপনাদের মত কখনোই অন্ধের মত অতি আবেগে ধর্ম পালন করি নাই। সেহেতু আমিও জানি ধর্মের সত্যতা সম্পর্কে।

আপনাদের ধারণা মতে করোনা মুসলমান, করোনারও ধর্ম আছে। তাই সে ধর্মের ভিত্তিতেই মানুষকে আক্রমণ করবে। আর তাই সে মসজিদে নামাজরত মুসলমানদের ধরবে না। সে মসজিদে প্রবেশ করবেন না। শুধু বেছে বেছে হিন্দু, কাফের, খ্রীষ্টান বেদ্বীনদের আক্রান্ত করবে।

আপনাদের জানা উচিৎ, করোনার ধর্ম (বৈশিষ্ট্য) একটাই, এটা অত্যন্ত ছোঁয়াচে এবং মরনব্যাধি। ঐ যারে ধরবে তার জীবনের চৌদ্দটা বাজিয়ে ছাড়বে। ধরার সময় কে হনুমানের নাম নিয়েছে আর কে আল্লাহর নাম নিয়েছে করোনা ঐসব জাস্টিফাই করবে না।

তাই বলদামী ছেড়ে এ রোগ আর এর ভয়াবহতা সম্পর্কে নিজে সচেতন হোন আর মানুষকে সচেতন করেন। সতর্ক করেন। মানুষকে মসজিদে না গিয়ে ঘরে বসে নামাজ পড়তে অনুরোধ করেন। আপনাদের ধর্মীয় গোড়ামী আর অন্ধত্ব দিয়ে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ফেইলেন না প্লিজ। আপনাদের নামাজ পড়তে কেউ নিষেধ করে নাই। আর যে প্রকৃত নামাজি আর আল্লাহভক্ত সে খুব ভাল করেই জানে যে, আল্লাহ সবখানে সব যায়গায় বিরাজমান। তিনি শুধু মসজিদেই থাকেন না। তিনি সর্বত্রই আছেন। সর্বত্রই থাকবেন। বেঁচে থাকলে মসজিদে গিয়ে বহুত নামাজ পড়া যাবে।

আল্লাহ ধর্মের জন্য মানুষ সৃষ্টি করেন নাই। মানুষের জন্য ধর্ম সৃষ্টি করছেন। ধর্ম হচ্ছে কতগুলা বিধি-বিধান, নিয়ম কানুনের সমষ্টি বৈ আর কিছুই না।
ধার্মিকরা বরাবরই আত্মকেন্দিক। তারা ধর্ম পালন করে শুধুমাত্র নিজের জন্য। পরকালের আযাব থেকে রক্ষা পেতে আর সেই সাথে বেহেশত পাওয়ার আশাতে।

সমগ্র কোরআনে যে কথাটি সবচেয়ে বেশি বলা হয়েছে সে কথাটি হচ্ছে, ‘সৎ কর্ম’ করার কথা । আর সৎ কর্ম বলতে শুধু নামাজ, রোজা পালন করার কথা বোঝানো হয়নি। নামাজ, রোজার সাথে সততা,সচ্চরিত্র, ন্যায়পরায়নতা, মানুষের প্রতি ইনসাফের কথাও বৃহৎভাবে বোঝানো হয়েছে। নামাজ পড়লেই প্রকৃত পক্ষে কেউ ভাল হয়ে যায় না। যদি না তার ভিতর মানুষের জন্য কল্যানকর কিছু না থাকে।

সুতরাং করোনা যে সত্যিই একটা মরণব্যাধি ভাইরাস এটা বয়স্কা ধর্মপরায়ন আংকেলদের ভাল করে বুঝান।
তাদের ঘরে থাকতে বাধ্য করেন। তাদের মসজিদে যেতে আর উৎসাহিত করবেন না প্লিজ। আপনাদের এই অতি উৎসাহ আর পাকনা কথা তাদের জন্য অমঙ্গল ডেকে আনবে।

আমার মা সবসময় একটা প্রবাদ দেয়, “এমনেই নাচুনী বুড়ি আরো পাইছে ঢোলের বারি”
আপনারা ইয়াং ভাইয়েরা এই নামাজী বুড়াদের ঢোলে ( ব্রেইনে ) আর বারি দিয়েন না প্লিজ।

তাদের ভাল করে বুঝান তাদের জন্য কোয়ারেন্টাইন মানে এতেকাফ করা, ঘরে বসে সবার থেকে আলাদা হয়ে একলা একলা ইবাদত বন্দেগী করা। আংকেলদের বলেন, তাদের বেশি কষ্ট হলে তারা যেন চল্লিশ দিনের জন্য চিল্লাহয় বসে যায়। তাতে করে উনারাও নিরাপদে থাকবেন আর করোনা ছড়ানোর আশংকাও অনেকটা কমে যাবে।

করোনা প্রতিরোধে নামাজ, রোজা, প্রার্থনা এবং আল্লাহর উপর ভরসা করার সাথে সাথে এই বিষয়ে বিজ্ঞান কি বলে, বিশেষজ্ঞরা কি বলে, দেশের সরকার কি বলে তা যথাযথভাবে মেনে চলেন। ঘরে থাকুন প্লিজ।

ফেসবুকে আলহামদুলিল্লাহ বলে নিজে ঠিকই ঘরে বসে বসে রাতভর ইনবক্সে চ্যাটিং করবেন, গ্রুপ চ্যাট করবেন, ইংলিশ মুভি দেখবেন।
আর বিপদের মুখে থাকবে ঐসব বয়স্কা ধার্মিক আংকেলরা যারা সত্যিই ধর্মের অল্প জ্ঞান ছাড়া আর তেমন কিছুই জানেন না।

ঘরে থাকুন প্লিজ। আপনাদের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইল।

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ