আমি!

তৌহিদুল ইসলাম ১৯ জুলাই ২০১৯, শুক্রবার, ১০:২৫:১২অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২৬ মন্তব্য

আমার আমিকে কি আর লিখে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করা সম্ভব? নিজের খেয়ালে আমার অপ্রকাশিত কিছু কথা আজ সোনেলার পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত করে দিলাম।

একঃ

আমি এখন ভীতু গিনিপিগ -

আগে হাতীর মত চলাচল ছিলো আমার, তাই বনের বাঘও ভয় পেয়ে পাশ কাটিয়ে যেতো। আর আজ যখন নিজের রাজত্ব ছেড়ে দিয়ে শান্তিতে থাকতে চাইছি তখন বাঘতো দূরে থাক নিজের বাসার মিনি বেড়ালটাও আমার দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে ফোঁস ফোঁস করে দাঁত ভেংচায়। অপারেশন ক্লীন হার্টের দৌড়ানি আর রাজনৈতিক কারনে জেল, জরিমানা, পুলিশের টর্চার সেল সব শেষে এখন একজন ভীতু গিনিপিগ আমি। তাই বলে নিশ্চুপ নই। অন্যায় দেখলেই আমার মাথা সবসময় গরম।

দুইঃ

আমি অর্থে সুখ পাইনি-

শুনেছি টাকার ভিতরে নাকি সুখ লুকিয়ে থাকে। আমার আবার সুখ দেখার খুব শখ। তাই একবার আমি অনেকগুলি টাকাকে কুচিকুচি করে ছিঁড়ে তন্নতন্ন করে খুঁজেছি সুখটা কোথায় লুকানো? কিন্তু আপসোস! আমি টাকার ভিতরে কোন রকম সুখ খুঁজে পাইনি, উল্টো টাকাগুলি অচল হয়ে গিয়েছিলো। নিজ হাতে লক্ষ লক্ষ টাকা উড়িয়ে এখন আমি দিন আনি দিন খাই অবস্থায় পড়ে আছি।

তিনঃ

আমার অপূরণীয় সব স্বপ্ন-

ছোটবেলায় খুব স্বপ্ন দেখতাম- মাসুদ রানা, তিন গোয়েন্দা এসব আর কি! এখনো দেখি; তবে ছোটবেলার মতো নয়। অনেক অনেক স্বপ্ন, সব স্বপ্ন কি আর মনে আছে? সেই স্বপ্নগুলোই ভালো ছিল। জানতাম কোনদিন পূরণ হবে না। তবে এখনকার স্বপ্নগুলোকে পূরণ করতে চাই, কিন্তু হয়না। তখন বেশি বেশি হতাশা কষ্ট আর না পাওয়ার বেদনা কাজ করে। তাই চাহিদার পরিমাণটা কমিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেও ন্যূনতম চাহিদা নিয়েও বাঁচাতে পারছি কই?

ইদানিং নিজেকে খুব একা, অসহায় মনে হয়। মনের জোরটা অনেকখানি কমে গেছে। কথায় আছে সময়ের কাজ সময়ে করা উচিত, পরে সেটা করলেও ফল তেমন করে পাওয়া যায়না। অনেকগুলো দিন সময় মুহূর্ত কাটিয়ে এসেছি তার সবকিছুই তবে কি ভুল ছিল?

ছোটবেলার স্বপ্নগুলো ছিল সব আকাশ কুসুম; এটা বড় হয়ে বুঝেছি। আরও বুঝতে পারলাম আমি কত বোকা! বোকারাইতো আকাশ কুসুম স্বপ্ন দেখে। এরপরও সৃস্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি- আমার জন্য যা কিছু পাঠিয়েছো এটারই হয়তো প্রাপ্তি আমার। এর চেয়ে বেশী কিছু পাওয়ার অধিকার আমার নেই।

আসলে মানুষের চাহিদার কোনো শেষ নেই। আমিতো মানুষই নাকি?

চারঃ

আমার মাথায় এখনো ছেলেবেলার দুষ্টু বুদ্ধি-

যদি কখনো পরিচিত কারো উপর খুব রাগ হয় আর তা প্রকাশ করতে না পারেন তাহলে একটি কাজ করতে পারেন। কাগজে তার উদ্দেশ্যে যতগুলি গালি, বকাঝকা করবেন সব লিখে সে কাগজটি মুড়িয়ে সিনা টান টান করে গোপনে তার দিকে ছুঁড়ে মারুন যেন সে বুঝতে না পারে।

এবার আড়াল থেকে তাকে লক্ষ্য করুন। সে যখন কাগজের ভাঁজ খুলে আপনার গালিগুলি পড়তে থাকবে তখন তার মুখের অভিব্যক্তিগুলি দেখুন আর আপনি অমরেশ পুরী টাইপ হাসি হাসুন। হি হি হা হা হা!

এর ফলে আপনার দুটো লাভ হবে-

প্রথমত, যার উপর রাগান্বিত হয়েছেন কিন্তু প্রকাশ করতে পারছেননা, তার কাছে মনের কথা প্রকাশ হয়ে গেল। সে জানুক আর না জানুক আপনি কে।

দ্বিতীয়ত, বেশি রাগ হলে মানুষ যেমন জিনিসপত্র ছোড়াছুঁড়ি করে তার বদলে কাগজ ছুঁড়ে মারলেন। এতে আপনার মুল্যবান মোবাইল কিংবা কাঁচের জিনিসপত্র নষ্ট হবার হাত থেকে বেঁচে গেলো।

এতে নিশ্চিই মন ভালো হবে আপনার। বিপিও কমে যাবে আপনার নিশ্চিত। এটা আমার পরীক্ষিত পন্থা ।

বি:দ্র:- পরিবারের আপনজনের উপর এ পদ্ধতি প্রয়োগ করবেননা। এতে হিতে বিপরীত হলে আমি দায়ী নই।

পাঁঁচঃ

আমি বেয়াদব অনেকেই বলে -

এবার আসল কথা বলি- আমি বেয়াদব। যদিও আমার আপনজনেরা বলেনা। তারা জানেন আমি কেমন। এমনকি ফেসবুকে কোনওদিন দেখা হয়নি, কিন্তু অতি আপন তারাও বলতে পারবেনা আমি বেয়াদব। কিন্তু যারা বলে তারা কেন বলে ?

আমি অহেতুক তর্কে জড়াইনা এটা তর্কবাজদের ইগোতে লাগে। আমি কেন কথায় কথায় তাদের মত অন্যদের বেয়াদব বলিনা, এটা তাদের সহ্য হয়না। এটাও যে বেয়াদবি এ জ্ঞান তাদের মগজে ঢুকেনাই আজও।

আমি জানি লেখকরা উদারমনা হয়। যখনই হীন মানসিকতার কোন লেখককের উল্টাপাল্টা লেখা দেখি আমি তাকে সুন্দর করে বলি। এটা তাদের পছন্দ নয়, তাই আমি বেয়াদব।

নিজেকে লেখক পরিচয় দেন। কিন্তু তারা এমনই লেখক যারা নিজের ভুল স্বীকার করতে চাননা। ফেসবুকে ফেরেশতা সেজে পোষ্ট দেন আর নীচু মানসিকতার কাজ করে বুক ফুলিয়ে অন্যকে বেয়াদব বলেন। এটাই কি তাদের আদব শিক্ষা?

আসলেই আমি বেয়াদব, না হলে তাদের আদব শিক্ষা হবে কিভাবে? ককুরকে কামড়ালে তাকে কামড় দেয়া যায়না, তাহলে নিজেই কুকুর হতে হয়। তবে বেয়াদবকে আদব শেখানোর জন্য নিজে বেয়াদব হতে হয় বৈকি।

এটাই হচ্ছে তাদের আর আমার পার্থক্য। এইজন্যই আমি বেয়াদব।

স্কুল কলেজের বন্ধুদের সাথে তেমন আর যোগাযোগ নেই। তারা রাখেনি, আমিও রাখিনা। আমার আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক বলে অনেককেই ইচ্ছে করে ভুলে গিয়েছি। আবার তারাও হয়তো আমার পূর্ববর্তী লাইফ স্টাইলে অভ্যস্ত ছিলোনা বলে এখনো এড়িয়ে যায়। হাই হ্যালোতেই সীমাবদ্ধ রেখেছি তাদের। তবে বাস্তবের মতই ব্লগে আর ফেসবুকে বেশ কিছু শ্রদ্ধেয় বন্ধু পেয়েছি। এই নিয়েই আমি ভালো আছি, বেশ ভালো। অনেকের থেকে অনেক অনেক ভালো।

ছয়ঃ

যেমন আমি তেমনি আমার কবিতা-

ভালোবাসি তোমায়,
কখনো মিথ্যে আবেগী তাড়নায় কিংবা
ইবলিশের দোসর হয়ে...
নয়তো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের মিথ্যে আশ্বাসের
নিগুড় প্রহসনে।
হয়তো আয়নার স্বচ্ছ প্রতিচ্ছবির
নিখাদ মিথ্যেয়...
তবুও ভালোবাসি তোমায়।

(এসব অনুভূতির কিছু কিছু লাইন কোনও একসময় ফেসবুকেও লিখেছিলাম।)

0 Shares

২৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ