বিবেক যেখানে দংশিত, নিজে যেখানে ভূল ত্রুটির ঊর্ধ্বে নই সেখানে অন্যের ভুল ত্রুটি খোঁজা কেন ? আমরা নিজের আত্মসম্মানের কথা ভাবি কিন্তু অন্যের প্রতি বিনয় ভদ্রতা সৌজন্যতা শোভনীয়তা সহানুভূতিশীলতা দেখাতে কার্পণ্য করি। কি বিচিত্র আর আজব আমাদের মানব চরিত্র। কিসের মানুষ মানুষের জন্য ?মানুষের সাথে হৃদ্যতা, সদ্ব্যবহার, সুন্দর আচরণ, বিনয়ের বিকল্প নেই। অথচ আমরা সদাসর্বদা মানুষের সাথে অসদাচারণ করি বিনয়ের পরিবর্তে কর্কশ ভাষায় কথা বলি। আমাদের আচরণে অসৌজন্যতা, অসভ্যতা, অভদ্রতার চরম প্রকাশ পায়। নিজেকে বড় অন্যকে ছোট নীচ ভাবতে আমাদের বড়ই আনন্দ লাগে। মনে হয় মানুষের প্রকৃত কাজ যেন অন্যের সমালোচনা করা। সমালোচনা মানে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মানুষের দোষ ত্রুটি বের করা। আর ভাল কাজের বা কথার চর্চা বা প্রশংসা আমরা করতে চাইনা। তাতে অন্যকে মহান করার আর নিজেকে ছোট করার হীনমন্যতা, মানসিক সঙ্কীর্ণতা কাজ করে নিজেদের মধ্যে। আমরা শুধু অন্যকে ছোট করেতে নয় পায়ের তলায় পিষ্ট করতে যেন মজা পাই !বড়ই মজা পাই। সত্যি কথা বলতে কি দুনিয়াটা যেন মাইন পোঁতা একটা জমিন, হাটতে হয় খুব সাবধানে। জটিল কুটিল মানুষগুলো যেন এক একটা মাইন। উপর থেকে বোঝা যাবেনা তারা যে অন্তরে ধারণ করে আছে জ্বলন্ত বারুদ। সামনে সফেদ সাদা শান্তির পায়রা আর অন্তরে বিষ। সময়ে প্রকাশিত হয় আসল রূপ। অএতব জীবন জমিনে পা ফেলতে হয় খুব সাবধানে। একটুখানি উনিশ বিশ হলেই যে কোন মুহূর্তে মাইন ফেটে পৈত্রিক জীবনটা হারিয়ে যেতে পারে। একথা ভুলে গেলে চলবে না আপনার অন্যায় আচার আচরণ এবং ব্যবহারে আপনার ব্যাক্তিত্বের, সম্মানের এবং বংশের হীন পরিচয় প্রকাশিত হয়ে পড়ছে জনসম্মুখে। এখানে আত্ম-তৃপ্তি, আত্ম-সন্তুষ্টি এবং উল্লসিত বা উচ্ছ্বসিত হওয়ার কিছুই নেই বরং আপনার ব্যবহার মানুষকে আন্তরিকভাবে আঘাত করছে।

আমাদের সমাজের মূল সমস্যা হচ্ছে, আমরা সর্বদা অন্যের গলদ খুঁজে বেড়াই কখনোই নিজের চেহারার দিকে তাকাই না। তাকাইনা নিজের কৃতকর্ম বা অপকর্মের দিকেও। আমিওবা কম কিসে ? মিথ্যে দম্ভ, অহংকার ,অহমিকা, আর্থ সামাজিক অবস্থান, অসম প্রতিযোগীতা, মানুষকে মানুষ হিসেবে গণ্য না করা , অন্যকে ছোট বা হেয় করে নিজেকে বড় বা মহান করে দেখা্‌ সবকিছু মিলিয়ে অনেক সময় জীবনে আমরা খেই হারিয়ে ফেলি। ফলে দেখা দেয় পারিবারিক, সামাজিক হিংসা বিদ্বেষ, অশুভ অনভিপ্রেত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিযোগীতা,মানবিক বিপর্যয় এবং অশান্তি। সৃষ্টি হয় অসহনীয় ও বিবৃতকর পারিবারিক এবং সামাজিক অবস্থা আর পরিস্থিতির। অনেকক্ষেত্রে তা একজনের সঙ্গে অন্যজনের মুখ দেখাদেখিও বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় দুই পরিবারের দুয়ার। ছিন্ন হয়ে পড়ে সৌহার্দ্য ভ্রাতৃত্ব সামাজিকতার অটুট বন্ধন। কাছে থেকেও অনেকেই হয়ে পড়ে এক একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা।

সত্যিকার অর্থে আমাদের অতৃপ্তি, উচ্চাকাঙ্ক্ষা, পরশ্রীকাতরতা, হীনমন্যতা, অতিলোভ, না শোকর হওয়ার কারণে আমাদের মন মানসিকতা জটিল, কুটিল, সঙ্কীর্ণ আর অসুস্থ হয়ে পড়ায় আমরা নিজেদের ওপর নিজেদের আস্থা হারিয়ে ফেলছি। আর নিজেদেরকে অসুখী ভেবে অন্যের দিকে ট্যারা চোখে তাকিয়ে হীনমন্যতায় ভুগছি। অবশ্যই নিজেদেরকে অসুখী ভাবার মানসিক বিকৃতি,অতৃপ্তি,অসন্তুষ্টি পরিত্যাগ করতে হবে সুখী সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের জন্য। একথা অনস্বীকার্য মানবিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, নৈতিক, ধর্মীয় অবক্ষয়ের কারণে মানুষ আজ অমানুষ, দানব আর জানোয়ারে পরিণত হচ্ছে। এখানেও মানুষের ব্যাক্তি স্বার্থের দ্বন্ধ প্রতীয়মান। মানুষের মাঝে সহমর্মিতা, মমত্ববোধ, স্নেহ, শ্রদ্ধার অভাব প্রকট হয়ে উঠছে প্রতিনিয়ত। নিজের দোষ স্বীকারে কোন লজ্জা নেই বরং নিজের অক্ষমতা অন্যের কাধে তুলে দেয়াই বেশি লজ্জাজনক। মানুষ কি কোনো দিনোও এই সহজ কথাটা বুঝবে না।

আসুন মানুষকে যথাযথ সম্মান, মর্যাদা দিতে শিখি। তাঁদের সঙ্গে ভালো আচরণ করি, বিনয়ী হই। সুখে দুঃখে আনন্দ বেদনায় একে অপরের সহমর্মী, সংবেদনশীল, সহানুভূতিশীল এবং মানবিক হই। আত্মার আর সামাজিক বন্ধনকে শুভ সুন্দর আর সুদৃঢ় করি। অন্যথায় একদিন সুখের বন্ধন, আত্মার বন্ধন ছিন্ন হয়ে পড়বে। দুঃখে শোকে আনন্দ বেদনায়  আত্মীয় স্বজন পরিজন আপনজন অতি কাছের অতি নিকটের অনেকেই থাকবেনা। হয়তবা এই বৃত্তের মধ্যেই একদিন প্রাণবায়ু বেরিয়ে যাবে যা একজন মানুষের পক্ষে সহ্য করা অসহনীয়, অস্বাভাবিক, অমানবিক, হৃদয়বিদারক হয়ে উঠবে। এসব বিষয় চিন্তা-ভাবনা করতেই কেন জানি দম বন্ধ হয়ে আসছে ! আমি মন- প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নিতে চাই। একটুখানি নিঃশ্বাস নয় বরং মন প্রাণ ভরে আত্মীয়ত্মার বন্ধনের নিঃশ্বাস। পারিবারিক, সামাজিক,মানবিক,সহমর্মীতার, সহানুভূতিশীল মানুষের সান্নিধ্যের নিঃশ্বাস।

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ