• ‘আমি বেশি  জানি,  এটা জ্ঞান হীন দের কথা’ 

‘আমি কিছুই জানিনা , জ্ঞানী দের কথা,’  সক্রেটিস 

সক্রেটিস

 

 

বিষের পেয়ালা হাতে দেয়া হল  বিষ পান করার জন্য ।  মৃত্যুর খুব কাছে সক্রেটিস ।

 এখনো সময় আছে যদি তুমি ভুল স্বীকার করো । সক্রেটিসের এক কথা।তাঁর সিদ্ধান্তে তিনি অটল ।  তিনি বলেছিলেন যে সমাজে সত্য  কথা বলার জন্য মৃত্যু দণ্ড দেয়া হয় সে সমাজে না বাঁচাই  উত্তম। 

বিষ পানে মৃত্যুর  পুর্ব মুহুর্ত

 

 

সক্রেটিস, একজন দার্শনিক ,যাকে বলা হয় দার্শনিকদের  ভিত্তি স্থাপন কারি। 

জন্ম এথেন্সে , জন্ম ৪৭০ বি সি, মৃত্যু ৩৯৯ বি সি । তিনি  পশ্চিমে দর্শনের ভিত্তি স্থাপনকারী । তাঁকে হেমলেক বিষ দিয়ে মৃত্যু দণ্ড প্রদান করা হয়। তাঁর বাবার নাম সফ্লনিয়াস, মায়ের নাম ফিনারিটি । স্ত্রীর নাম জানথিপি । তাঁর ছিল তিন পুত্র সন্তান প্লকসিস, সাফ্লক্স এবং  মেনেজেনাস।  তাঁর নিজের কোন ইনকাম ছিলনা। বাবার কাছ থেকে যা সম্পত্তি পেয়েছিলেন তা দিয়ে তাঁর কোনমতে  চলে যেতো। মৃত্যু দণ্ড দেয়ার কারন তিনি সে সময়ের দেবদেবী দের সৃষ্টিকর্তা বলে মানছিলেন না। 

তাঁর দর্শন চিন্তা যা দীর্ঘ ২০০০ বছর ধরে পশ্চিমের সংস্কৃতি, দর্শন এবং সভ্যতাকে প্রভাবিত করেছে। তিনি ছিলেন একজন মহান শিক্ষক ,তাঁর কোন ক্লাস ঘর ছিলনা। যেখানে যাকে পেতেন তাকেই মৌলিক শিক্ষা দিতেন। মৌলিক প্রশ্নের উত্তর বোঝানর চেষ্টা করতেন। 

তিনি কোন কিছু লিখে যাননি। তবে তাঁর ছাত্র এরিস্তেটল  এর নাটক, এবং প্লেটোর ডাইয়ালগের মাধ্যমে তারা তা প্রকাশ করে গেছেন ।   

তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠ দার্শনিক। কারন তিনি ছিলেন নিচের গুন গুলোর জন্য বিখ্যাত 

১)  বিশুদ্ধতা, সততা, অখণ্ডতা

২) গভীরত্ব, স্ব- প্রভুত্ব 

৩) সংযম। 

৪) অ - প্রতিৎদ্বন্দ্বী তর্ক বাগীশ 

৫) নিতিবান 

  তাঁর বিখ্যাত দর্শন হল , 

১) আমি কিছুই জানিনা , ২) এ জীবন বাঁচিয়ে রাখার জন্য তেমন দরকার নাই, কারন জীবন এমন  গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটা নয় যে তাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। ৩) যে জীবন কে গভীর ভাবে চিন্তা করেনা তার বেঁচে থাকার দরকার নাই। ৪) জ্ঞান অর্জন এটাই হোল জীবন। ৫) অজ্ঞতা  হোল খারাপ দিক। 

আজও সক্রেটিস গুরুত্বপূর্ণ কারন তাঁর শিক্ষা পদ্ধতি যা   পৃথিবীর  অনেক শিক্ষা ব্যাবস্থাতে অনুসরণ করা হয়। তিনি যে ভাবে শিক্ষা দিতেন তা হোল ‘আমি কাউকে কোন কিছু শিক্ষা দেইনা আমি তাদেরকে চিন্তা করতে শেখায়’

  তাঁর এই শিক্ষা পদ্ধতি কে বলা হয় ‘সক্রেটিস পদ্ধতি’ । 

সক্রেটিস পদ্ধতি হল, তিনি নিজে ক্লাসে গিয়ে লেকচার দিতেন না । ছাত্রদের কে জিজ্ঞাসা করে বের করতেন তাদের কি ধারনা।তিনি ক্রমাগত ভাবে প্রশ্ন  জিজ্ঞেস করতেন এবং তা নিয়ে যুক্তি দিতে বলতেন।  তিনি ছাত্র দের কে বলতেন,

১) কেন এটা হচ্ছে 

২) কি ভাবে তুমি জানো 

৩) আমাকে দেখাও

৪) একটা উদাহরণ দাও 

৫) তুমি এ ব্যাপারে কি ভাবো 

৬) এটার প্রকৃতি  কি 

৭) যে কারন গুলো তোমরা দিচ্ছ তা কি যথেষ্ট 

তাঁর এই পদ্ধতির মাধ্যমে একজন গভীর ভাবে চিন্তা করতে শিখে। যা কিনা যুক্তি পুর্ন । তাঁর এই পদ্ধতি মেডিক্যাল কলেজ এবং আইন বিদ্যা ক্লাসে অনুসরণ করা হয়। পশ্চিমের অনেক দেশে ট্রেনিং বা বিদ্যালয়ে এই পদ্ধতি আনুসরন করে ।

 

সৃষ্টি কর্তা সম্বন্ধে সক্রিটিসের ধারনাঃ 

এথেন্সবাসি সে সময়ে নানা রকম দেবদেবী তে বিশ্বাস করতো । সেই দেবদেবীরা ছিল মানুষের মতো । মানুষের মতো তাদের হিংসা ছিল,মারামারি করতো, রাগ ছিল এবং  প্রতিশোধ নিতো । সক্রেটিসের মতে সৃষ্টিকর্তা হবে সঠিক ,  জ্ঞানী এবং নীতি বান এবং তাঁর একটা সঠিক প্রয়োজনীয়তা থাকবে।  

মধ্যযুগীয় বিশ্বাস ঃ 

মধ্যযুগে মুসলিম পণ্ডিত আল ফিলি, যাবির, ইবনে হায়ান এবং মুতাজিলা সক্রিটিসের  ছাত্র প্লেটোর কাজ গুলি আরবিতে অনুবাদ করেন এবং তাঁর নীতি শাস্ত্র আর এক ঈশ্বরবাদ  ইসলামী বিশ্বাসে প্রভাব ফেলার চেষ্টা করেন। তাদের এই কাজ প্রশংসিত হয়েছিলো এবং আরবি ভাষী বিশ্বে এইভাবেই তাঁর প্রভাব চলতে থাকে। সক্রেটিসের বিশ্বাস ইসলামি বিশ্বাসের সাথে পরিবর্তিত হয়।  

আবার খ্রিস্টান ধর্মের পণ্ডিত  মিসান্তিন, ইউসিয়াস এবং অগাস্তাইন সক্রেটিসের চিন্তা ধারাকে নিজ ধর্মে  মিলিত করেন। 

আধুনিক সময় ঃ 

ফ্রান্স সক্রেটিস কে গ্রহন করেছে তাঁর ব্যাক্তিগত জীবনের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আর জার্মান ভাববাদ হেগেল সক্রিটিসের দর্শনকে পুনর্জীবিত করেছে । 

সক্রেটিসের  কিছু দার্শনিক উক্তি 

. অপরীক্ষিত জীবন নিয়ে বেঁচে থাকা গ্লানিকর 

. পোশাক হল বাইরের আবরণ, মানুষের আসল সুন্দর হচ্ছে তার জ্ঞান ।

.  নিজেকে জানো 

. জ্ঞানের শিক্ষকের কাজ হচ্ছে কোন ব্যাক্তিকে প্রশ্ন করে তার কাছ থেকে উত্তর জেনে দেখানো যে জ্ঞানতা তার মধ্যেই ছিল। 

. পৃথিবীতে শুধুমাত্র একটিই ভালো আছে,জ্ঞান। আর একটি-ই  খারাপ আছে , অজ্ঞতা। 

. আমি কাউকে কিছু শিক্ষা দিতে পারব না, আমি শুধু তাদের চিন্তা করাতে পারব। 

. বিস্ময় হল জ্ঞানের শুরু। 

. টাকার বিনিময়ে শিক্ষা অর্জনের চেয়ে অশিক্ষিত থাকা ভালো। 

. তুমি কিছুই জানোনা এটা জানাই জ্ঞানের আসল মানে। 

. যাই হোক বিয়ে করো, তোমার বউ ভালো হলে তুমি সুখী, খারাপ হলে দার্শনিক। 

.ব্যাস্ত জীবনের অনুর্বতা সম্পর্কে সতর্ক থাকুন।

. আমাদের চাওয়া উচিৎ সাধারণের কিসে ভালো হয়, শুধু ঈশ্বরেই জানেন কিসে আমাদের ভালো হয়। 

.কঠিন যুদ্ধেও সবার প্রতি  দয়ালু হও। 

.বন্ধুত্ব করো ধীরে ধীরে , কিন্তু যখন বন্ধুত্ব হবে, এটা শক্ত করো এবং স্থায়ী করো। 

. মৃত্যুই হল মানুষের সর্বাপেক্ষা বড়ো আশীর্বাদ ।  

তথ্য সূত্রঃ Republic , Book by Plato. 

Politics of Aristotle , Wikipedia 

ফটো ক্রেডিটঃ উইকিপেডিয়া 

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ