আমি পুরুষ। কিন্তু……!

তৌহিদুল ইসলাম ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ০৭:৪৮:০৯অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৪০ মন্তব্য

আমি পুরুষ। আমি প্রথম যখন নারীকে ভালোবাসি, তখন হৃদয়ের সমস্ত আবেগ ও আগ্রহ ঢেলে দেই তার প্রতি। প্রথম প্রেমের আলোকে আমার প্রিয়াকে পরম মনোহর মনে করি। আমার সেই প্রেমে থাকে নিবিরতা, একান্ত আপন করে পাবার ব্যাকুলতা। আমাদের দু'জনার প্রেমলীলা চলে শতমুখে-শতধারায়।

কিন্তু! আমার এই রঙিন নেশার ঘোর বেশিদিন থাকে না। নেশার অন্তে আমি পূর্বেকার চোখে আর সেই নারীকে দেখিনা। সামাজিকভাবে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হলেও ধীরে ধীরে আমার প্রেমের মধ্যকার অসাধারণত্ব ও অনির্বচনীয়ত্ব যেন ধীরে ধীরে উবে যায়।

আমি পুরুষ। আমি যখন কোন নারীর মোহ বেড়াজালের বন্ধনে শৃঙ্খলিত করি নিজেকে, তখন জগতের সবকিছু ভালোলাগা-ভালোবাসায় পরিণত হয়। কঠিন থেকে কঠিনতর ইস্পাত দেয়াল ভাঙতে আমি পিছপা হইনা।

কিন্তু! সংসারের শত ঘাত-প্রতিঘাতে, বাস্তবের সংকীর্ণ গণ্ডিতে আমার যৌবন-কামনার মুর্তিমতী দেবী এক অতি সাধারণ নারীতে পরিনত হয়। আমার মোহ কেটে যায়, প্রেমের বন্ধন ছিন্ন হয়। এটাই চিরন্তন সত্য যা আমি পুরুষের এক মর্মান্তিক রুপ।

আমি পুরুষ। আমি চিরকাল আদর্শবাদী। বৃহৎ ভাব বা আদর্শের দ্বারা আমি জীবনকে পরিচালিত করি। আমার জন্য প্রেমিকার হৃদয়ে একটি চিরন্তন রূপ আছে। সেই মানস-বিহারিণী আমার প্রিয়তমা অপূর্ব সুন্দরী, পরম রমণীয়া, অনির্বচণীয় মাধুর্যমন্ডিতা ও লীলাময়ী নারী- আমি পুরুষকেই তার দেহ-মন দিয়ে কামনা করে।

কিন্তু! বাস্তবের রুঢ় আবেষ্টনে আমার মানসসুন্দরীর অনুপম-চিত্র মোসীচিহ্নিত হয়ে যায়, আমার উচ্চ আদর্শ ভেঙে পড়ে। যে নারীকে আমি আমার আদর্শের প্রতীক বলে মনে করেছিলাম, যার মধ্যে আমি মানসীর মাধুর্য উপভোগ করতে চেয়েছিলাম; সে নারীকে আমার অতি সাধারন বলে মনে হয় একসময়। আমার কাছে তখন সে শুধুই রক্তমাংসে গড়া একটি পুতুল ছাড়া অন্য কিছু তো নয়!

আমি পুরুষ। কিন্তু আমার প্রেম কাঁচের মতো, অতি চাপে ভেঙে যায়। হুটহাট নারীর প্রতি ভালবাসার মোহ কেটে যায়। আমার প্রেম তখন নারীর প্রতি অনুরাগে লুপ্ত হয়। কেবল গৃহ-কর্তব্য-চক্রের ঘর্ঘর ধ্বনির তলে চলে দু'জনার আত্মবিস্মৃতির আয়োজন।

কিন্তু কেন? এই কিন্তুর পিছনে কারণ হচ্ছে পূর্ণতা। পুরুষ সবসময় পূর্ণতাপ্রাপ্তি চায়। প্রেমের চোখে নারীকে দেখে একরূপে, পরবর্তীতে অন্য রূপে। নারীকে পুরুষ মনে করে নির্দিষ্ট আবেষ্টনী। নারী আমার ঘরকে আঁকড়িয়ে ধরে থাকে। আমার দৃষ্টি আকাশ-পানে, নারীর দৃষ্টি তার নীড়ের দিকে।

নারী চায় একনিষ্ঠা অথচ পুরুষের দৃষ্টি বহির্মুখী। স্ত্রী স্বভাব গঠনশীল, পুরুষ স্বভাব ধ্বংসশীল। পুরুষ সর্বদাই চঞ্চল ও গতিশীল। কি প্রেমে, কি কার্যে, কি চিন্তায় সে চিরকাল চলেছে পূর্ণতার অভিসারে। অথচ আমি পুরুষ একবারও ভাবিনা, আমাদের দু'জনার আবেগ উত্তেজনাময় সেই প্রথম প্রেম আজ উত্তাপহীন শিষ্টাচারে পরিণত বলেই নারী হয় ব্যতীত ও নৈরাজ্য-মথিত।

আমি পুরুষকে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করা সে নারীর পক্ষে আমার এই প্রেমের হ্রাস চরম মর্মান্তিক এক রূপ। আমি পুরুষ তা কখনোই বুঝতে পারিনা এবং বুঝতে চাইও না। চাই না অনুভব করতেও।

অথচ আমি বিধাতার নিজ হাতে গড়া বিশ্ব বেহায়া একজন পুরুষ...!

0 Shares

৪০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ