আমি তোমার জন্য এসেছি (পর্ব-৬৯)

সুরাইয়া নার্গিস ৩০ জুলাই ২০২০, বৃহস্পতিবার, ০৯:১৯:৫৮পূর্বাহ্ন উপন্যাস ২৯ মন্তব্য

আমি তোমার জন্য এসেছি -(পর্ব-৬৯)

১৭ নাম্বার কেবিনের রোগীর লোক কারা একটু এদিকে আসুন।রিহান ওনি মনে হয় শ্রেয়ার কথা বলবেন চল যাই,হ্যাঁ চল দোস্ত।আরাফ এগিয়ে গেল আপনি কি ডাক্তার মোঃ মজিবুর রহমান ?জ্বী আমি।

ও স্যার বলুন, আমরা ১৭ নাম্বার কেবিন শ্রেয়ার লোক।পাশ থেকে ডাক্তার পর্তুলিকা বললেন রোগীর সাথে আপনারা দেখা করতে পারবেন।রিহান,রাইসা শ্রেয়ার সাথে দেখা করার জন্য চেয়ার ছেড়ে ওঠে দাঁড়াল আমরা রোগীর ভাইয়া,ভাবী।ও আচ্ছা কিন্তু রোগী জ্ঞান ফেরার পর থেকে ১ টা নামেই বার বার বলছেন। আরাফ রিহানের সামনে দাঁড়াল রোগী কার নাম বলছে প্লীজ বলুন।ডাক্তার পর্তুলিকা বললেন জ্বী আপনাদের মধ্যে আরাফ কে?

রাইসা,রিহান দুজনেই চেয়ারে বসে পড়ল, আরাফ জবাব দিল ডাক্তার আমি আরাফ চৌধুরী।ধন্যবাদ আপনি আসুন আমি রাতের শিফটে ডিউটি করেছি এখন চলে যাব।আরাফকে নিয়ে অফিস কক্ষে প্রবেশ করলেন সেখানে সব ডাক্তার বসে গল্প করছেন।আরাফ সাহেব ওনি ডাক্তার হালিম নজরুল,আসসালামু আলাইকুম স্যার বলেই আরাফ সালাম দিলেন।ওয়া আলাইকুম সালাম বলে ডাক্তার হালিম নজরুল হ্যান্ডসেক করলেন।

আপনি ১৭ নাম্বার কেবিনের রোগীর আত্মীয়?জ্বী স্যার। ওকে বলেই ডাক্তার হালিম নজরুল চেয়ার ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালেন।একটা ফাইল হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলেন চলুন আমার সাথে।শোনেন রোগীর শরীর দূর্বল বেশি কথা বলা যাবে না। জ্বী স্যার,পুরাপুরি সুস্থ না তাকে উত্তেজিত করা যাবে না।ডাক্তার হালিম নজরুল আরাফ কথা বলতে বলতে ১৭ নাম্বার কেবিনে প্রবেশ করলেন।সেখানে ডাক্তার ইসহাক শ্রেয়াকে এই মাত্র ইনজেকশন পুশ করলেন। পাশেই নার্স আরজু মুক্তা দাঁড়িয়ে আছেন।

ডাক্তার হালিম নজরুল ভিতরে প্রবেশ করে শ্রেয়ার মাথায় হাত রাখলেন।এখন কেমন লাগছে মা?শ্রেয়া চোখ খুলল জ্বী ভালো আছি।আপনি বসুন বলেই আরজু মুক্তা আরাফকে চেয়ার টেনে দিল।স্যার আপনি বসেন আমি দাঁড়িয়ে আছি, এমন সময় ডাক্তার কামাল উদ্দিন এসে হাজির স্যার আপনি কি ব্যস্ত?নাহ্ আপনি যান আমি আসছি, ইসহাক সাহেব আপনি একটু কেবিন ৩ এ যাবেন।

আচ্ছা আপনারা গল্প করুন আমি গেলাম বলেই ডাক্তার হালিম নজরুল,কামাল উদ্দিন,নার্স আরজু মুক্তা, ডাক্তার ইসহাক সবাই চলে গেলেন।শ্রেয়া চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে হাতে স্যালাইন চলছে, আরাফ শ্রেয়ার বেড এর পাশে থাকা চেয়ারটা টেনে বসল।আরাফ শ্রেয়াকে কোনদিন চেয়ে দেখে নাই, আজ ভালো করে দেখে নিল সত্যি শ্রেয়া অনেক সুন্দর।আরাফ শ্রেয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল শ্রেয়া চমকে ওঠল চোখ খুলে আরাফকে দেখে তুমি! হ্যাঁ আমি তুমি আমাকে খোঁজছো আর আমি আসবো না। তা কি করে হয় রে পাগলী বলেই মুসকি হাসল।শ্রেয়া কেমন আছো?পাগলি এসব কেউ করে!

এতক্ষন কেমন ছিলাম জানি না,তবে এই মুহূর্তে খুব ভালো আছি বলেই ইসস করে ওঠল।একদম না তুমি শুয়ে থাকো তোমার শরীর দূর্বল আমি আছি তো চিন্তা করো না। বলেই আরাফ শ্রেয়া হাতটা ধরে এপাশ করে শুয়ে দিল আরাফ শ্রেয়া মুখোমুখি বসা।আরাফ শ্রেয়ার হাত ধরে বললো "আমি একজন প্রিয়াকে হারাতে দিয়েছি কিন্তু শ্রেয়াকে হারাতে দিব না" তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠ আমরা বিয়ে করবো।শ্রেয়ার চোখে পানি এই একটা কথা শোনার জন্যই আমার এত আয়োজন মনে মনে হাসল শ্রেয়া।

আরাফ শক্ত করে শ্রেয়ার হাতটা ধরে রাখল আমি সারাজীবন এভাবেই তোমাকে ধরে রাখবো।শ্রেয়ার চোখে মুখে যেন বিশ্ব জয়ের হাসি সে আনন্দে আর কিছু বলতে পারল না। আরে পাগলী মরতে তো চেয়েছিলে আমাকে ছেড়ে, একবার ভাবলে না আমার কি হবে।শ্রেয়া আমি তোমাকে ভালোবাসি বলে কপালে চুমু দিল আরাফ শ্রেয়া চোখ বন্ধ করে খুশিটা অনুভব করলো।জানো শ্রেয়া আমি জানি না প্রিয়া এখন কোথায় আছে, কেমন আছে আমাকে ভালোবাসে কিনা সেটাও জানি না।

কিন্তু একজন আমাকে তাঁর জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসে। এটা আমি জানতে পেরেছি তাই তার জন্যই আমিও বেঁচে থাকতে চাই।শ্রেয়া চিৎকার করে ডাকতে চাইল ভাইয়া ভাবী কিন্তু পারলো না।শ্রেয়া শান্ত হও আমি দেখছি বলেই আরাফ বাইরে আসল ডাক্তার কামাল উদ্দিন তখন কেবিনের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল।স্যার একটু ভিতরে আসবেন?শিওর চলুন, মানে শ্রেয়াকে কিছুটা সুস্থ মনে হচ্ছে ওর ভাইয়া,ভাবী কি দেখা করতে পারবে?

আপনারা অনুমতি না দিলে তো আসতে পারবে না।ডাক্তার কামাল উদ্দিনকে দেখেই শ্রেয়া করুন সুরে বললো প্লীজ স্যার আমি ভালো আছি।ওয়াটিং রুম থেকে আমার পরিবার এর লোকজনকে ভিতরে আসার অনুমতি দেন।তাই নাকি বলেই ডাক্তার কামাল উদ্দিন শ্রেয়ার হাত ধরে দেখল, স্যালাইন প্রায় শেষ।

হ্যাঁ দেখলাম আপনি অনেকটা সুস্থ আছেন, নার্স ডাকতেই উর্বশী এসে হাজির।জ্বী স্যার নার্স শ্রেয়ার আত্মীয় সামনে ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করছে।ওনাদের ভিতরে আসতে বলুন,জ্বী স্যার বলেই নার্স উর্বশী চলে গেলেন।শ্রেয়া আরাফের দিকে চেয়ে বললো আপনি খেয়েছেন?আরাফ প্রশ্ন করলো আপনিটাকে?মানে আপনি? আরাফ শ্রেয়ার ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বললো চুপ।ভালোবাসার মানুষকে কেউ আপনি করে বলে না, আজ থেকে শুধু তুমি বলবে।

না আমি খাইনি তোমাকে রেখে আমি খাব কি করে বলো? পিয়ন খাবার নিয়ে আসতেই তুমি একটা অঘটন ঘটালে তারপর তো তুমি জানো।শ্রেয়া লজ্জা পেয়ে আরাফের দিক থেকে চোখ নামিয়ে নিল। পাগলি লজ্জার কিছু নেই আমি প্রিয়ার জন্য মরতে পারি নাই সত্যি। তবে পৃথিবীর সবচেয়ে বেয়ারাপনা গুলো করেছি, ভালোবাসি বুঝাতে চেয়ছি।আমার দূর্ভাগ্য পিচ্চি প্রিয়া আমার ভালোবাসা বুঝতে পারে নাই..

আমার বিশ্বাস একদিন প্রিয়া আমার ভালোবাসা  বুঝবে।পাগলের মতো ভালোবাসবে কিন্তু তখন আমি তোমার থাকবো বলেই হাসল।কথার মাঝেই ওরা সবাই রুমে প্রবেশ করলো, রিহান  কে দেখে আরাফ ওঠে দাঁড়ল রিহান চেয়ারে বসল।বোন বলেই রিহান শ্রেয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে হাসল। কেমন আছিস বোন?ভালো আছি ভাইয়া।তুই এটা করলি কেন বোন বলেই রিহান কেঁদে ফেলল।দোস্ত আমি শ্রেয়াকে বকে দিয়েছি তুই চুপ কর এসব নিয়ে কোন প্রশ্ন করবি না।

আরাফের এমন কথায় রিহান,রাইসা,শ্রেয়া সবাই খুশি হলো।স্যরি ভাইয়া,স্যরি ভাবি বলেই শ্রেয়া রাইসা রিহানের হাত ধরে রাখলো।আমাকে ক্ষমা করে দাও ভাইয়া আর কোনদিন এমন ভুল করবো না।পিয়ন,অফিস সহকারী, আরো কয়েজন যারা সারা রাত শ্রেয়ার জ্ঞান ফিরা পর্যন্ত হাসপাতালে ছিলো।তারা সবাই আসলো শ্রেয়া মেম আপনি কেমন আছেন?আমি ভালো আছি, আপনাদের সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।সবাইকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম, আমি স্যরি আপনারা চিন্তা করবেন না আমি ভালো আছি।

শ্রেয়াকে দেখে সবাই খুশি হলো, আপনারা সবাই শান্ত হোক আমি কিছু কথা বলবো বলেই আরাফ চেয়ার ছেড়ে ওঠে দাঁড়াল।রিহান দোস্ত! আমার কথা শোন বলেই আরাফ রিহানের পাশে বসল।হ্যাঁ দোস্ত বল।রিহান দোস্ত তুই আমার আর শ্রেয়ার বিয়ের আয়োজন কর ঘরোয়া ভাবে বিয়েটা হবে।মানে কি দোস্ত বলেই রিহান ওঠে দাঁড়াল, তুই সত্যি শ্রেয়াকে বিয়ে করবি?হ্যাঁ সত্যি বিয়ে করবো পরে শ্রেয়া সুস্থ হলে আনুষ্টানিকতা হবে।

দোস্ত বলেই রিহান আরাফকে জড়িয়ে ধরল, গ্রেট সারপ্রাইজ দোস্ত। আজ মঙ্গলবার,আমি আগামী রবিবার তোদের বিয়ের আয়োজন করবো ইনশাল্লাহ্।রুমের সকলেই খুশি হলো করতালি দিল, সবাই শ্রেয়া আরাফের জন্য দোয়া করলো।দোস্ত আমি এই খুশিতে হাসপাতালের সকল কর্মচারীদের মিষ্টি মুখ করাব বলেই হাসল রিহান।পরিমল জ্বী স্যার বলেই পিয়ন হাজির,রিহান প্যান্ট হাত দিয়ে টাকা নিল যাও সবার জন্য মিষ্টি নিয়ে আস এ সুখবরটা আমি সেলিব্রেইট করতে চাই।আরাফ রিহানকে থামিয়ে দিল না দোস্ত মিষ্টির টাকাটা আমি দেই তোর টাকা রাখ।

আপনারা দেখি সবাই খুব খুশি ঘটনা কি বলেই ডাক্তার তৌহিদ ঢুকল,রোগীর রুমে এত লোক ভিড় করবেন নাসবাই বাইরে যান।রোগীর অবস্থা ভালো থাকলে বিকালের মধ্যেই ছেড়ে দিব,এখানে এত লোকে ভিড় করলে রেগী আরো অসুস্থবোধ করবে।রিহান,রাইসা,আরাফ, সহ সবাই বাইরে বেড়িয়ে আসল ওয়েটিং রুমের দিকে গেল।দোস্ত তোরা বস আমি একটু আসছি বলেই আরাফ ডাক্তারদের অফিস কক্ষের দিকে গেলেন।

আসসালামু আলাইকুম।আমি একটু কথা বলতে চাই বলেই আরাফ ভিতরে প্রবেশ করলো।জ্বী বলুন।আপনাদের অফিস স্টাফ কতজন আমার আর শ্রেয়ার পক্ষ থেকে সবার জন্য মিষ্টির ব্যবস্থা করতে চাই।ডাক্তার নিতাই বাবু হাসলেন কি ব্যাপার সুখবর আছে নাকি?

......চলবে।

0 Shares

২৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ