আমি তোমার জন্য এসেছি-(পর্ব-৬৩)

 

আমরা তো রাতেই বাসায় ফিরতাম।তোমরা কেউ কল রিসিভ করছো না তাই বাধ্য হয়েই আসতে হলো বলতে বলতে, বেগম শেখর ঢুকলেন।পাশে রোহান,ফরিদ সাহেব শ্রেয়ার সাথে অমিও হাসপাতালে আসলো।আরাফ উঠে দাঁড়াল, শ্রেয়া মাকে বাসায় একা রেখে তুমি আসতে গেলে কেন!শ্রেয়া মাথা নিচু করে বললো আমি আসতে চাইনি মা পাঠালেন। মায়ের কথা শোনে রিতা বললেন আসছে সমস্যা কি! একজন অসুস্থ মানুষকে দেখতে আসা উচিত। শ্রেয়া বললো আজাদ আঙ্কেল, মিরা আন্টি সবাইকে আমাদের বাসায় নিতে যেতে বলছেন মা।

ও আচ্ছা মা এসব জানলেন কি করে?রিতা ভাবী মাকে কল দিয়ে আজাদ আঙ্কেল অসুস্থ এটা বলছেন তারপর মা তোমাকে কল দিয়েছিলো।রিসিভ করো না বলেই শ্রেয়া রিতা ভাবীর পাশে গিয়ে ভিতরে চেয়ারে বসল।ওরে বাবা ১২ টা মিসকল আম্মু কল দিয়েছিলো,সো সেড আমি রিসিভ করতে পারি নাই বলে চমকে ওঠল আরাফ।হাসপাতালে ছিলাম তাই আওয়াজ পাইনি, জিসান সাহেব আপনি এখানে থাকুন। আমি একটু ভিতর থেকে আসছি বলেই আরাফ ডাক্তার সুপায়ন বড়ুয়ার সাথে দেখা করতে গেলেন।রোহান প্রশ্ন করে প্রিয়া আপ্পি ফুপা কেমন আছেন?প্রিয়া কোন জবাব দেয় না, জিসান জানায় ফুপা ভালো আছেন। প্রেশারটা বেড়ে গিয়েছিলো এখন স্যালাইন চলছে।আলহামদুলিল্লাহ্ জেনে খুশি হলাম বলেই রোহান প্রিয়ার পাশে বসল।

কিছুক্ষন পর আরমান ডিউটি শেষ করে আসলেন, প্রিয়া তোমরা কিছু খেয়েছো?না ভাইয়া আমরা কিছু খাব না বললো জিসান ! তা বললে কি হয় আরাফ যাও বাইরে থেকে হালকা নাস্তা নিয়ে এসো সবাই খাবে।শেখর সাহেব সবাইকে থামিয়ে দেয় না বাবা আমরা কিছু খাব  না,আজাদকে সুস্থ করে বাসায় ফিরতে পারলেই শান্তি। প্রিয়া ওনাকে চিনতে পারলাম না! রোহান জবাব দেয় বড় ভাইয়া ওনি আমার শ্বশুড় বৌভাবে আসছিলো হঠাৎ ফুপা অসুস্থ হয়ে যায়।

আজাদ আঙ্কেল তোমার ফুপা জ্বী ভাইজান শ্বশুড় বাড়ির দিক থেকে।বুঝলাম, আপনারা আরাম করুন আমি আসছি বলে আরমান ওটির দিকে গেল।শেখর সাহেব চোখে চশমা ছাড়া রাতে কম দেখেন,বেগম শেখরকে উদ্দেশ্য করে বললেন দেখ তো সামনে বোরকা পড়া মহিলাটা কে?বেগম শেখর ধমক দেয় ওনি মহিলা নয়, ওনি ডাক্তার রাতের ড্রেস পড়ে ডিউটি করছেন।রোহান,শ্রেয়া, অমি হেসে দিল, আরাফ হাসতে পারলো না, আব্বু চশমা কোথায় জানতে চায় জিসান।মিতুর বাসায় ভুলে রেখে আসছি,তাই ঠিক মত দেখতে পারছি না।রোহান বুঝতে পারলো হাসাটা ঠিক হয়নি, ডাক্তার সুপায়ন বড়ুয়া এসে হাজির সাথে দুজন নার্স সাবিনা, বন্যা আজাদ সাহেবের বাড়ির লোক কে? জিসান সামনে দাঁড়ায় আমরা।নার্স একটা কাগজ দিয়ে বলে যান এখনি এই ইনজেকশনটা নিয়ে আসুন।

জ্বী বলেই জিসান ঔষধ আনতে চলে যায়, মিরা অস্থিত ভাবে জানতে চায় স্যার আমার স্বামী কেমন আছেন?ডাক্তার সুপায়ন বড়ুয়া শান্ত ভাবে জবাব দেন, আপনারা চিন্তা করবেন না ওনি ভালো আছেন।স্যালাইনটা চলছে শেষ হলেই, একটা ইনজেকশন পুষ করে ছেড়ে দিব বলেই সুপায়ন বড়ুয়া চলে যান।সবার মুখে হাসি ফুটে মিরা বড় ভাবীকে জড়িয়ে ধরে ওনি সুস্থ হয়ে যাবে তো! হ্যাঁ। আরমান হাসতালের ডিউটি অনেক আগেই শেষ করেছে।আরাফ ডাক্তারের কাছ থেকে আজাদের ছুটির কাগজপত্র নিয়ে হাজির।

বেয়াই সাহেব এবার বাসায় চলুন, মিতু আপনার বেয়াইন সাহেবা খুব টেনশনে আছে বলেই  ফরিদ সাহব ওঠে দাঁড়ালেন।আরে না বেয়াই সাহেব আজ আর নয় বাসায় ফিরতে হবে না হলে পুরো হাসপাতাল আমাদের আত্মীয়স্বজন দখল দিবে।বড় মামা এমন কথা মুখেও আনবেন না, মা আজাদ,মিরা, প্রিয়ার জন্য বাসায় অপেক্ষা করছে।রাতে আপনারা সবাই আমাদের সাথে যাবেন কাল সকালে বাড়ি ফেরার কথা চিন্তা করবেন।প্রিয়া, মিরা আন্টি আপনার প্লীজ অমত করবেন না বলেই আরমান  প্রিয়ার পাশে গিয়ে চেয়ারে বসল।

আন্টি আপনারা চলুন প্লীজ আমি সন্ধ্যার পরেই চলে যেতে চাইছিলাম। পরে মা ফোন দিয়ে বললেন আপনারা বাসায় যাবেন তাই যাই নাই বললের রিতা।আরাফ,রোহান আজাদকে নিয়ে বের হয়ে আসলো জিসান পাশে হেঁটে আসছে।শ্রেয়া গিয়ে আজাদকে সালাম করলো আঙ্কেল আমাদের বাসায় চলুন মা আপনাকে যেতে বলছে।আজাদ প্রিয়ার দিকে চেয়ে আছে, প্রিয়া কিছু বলছে না চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।প্রিয়া প্লীজ বাসায় চল, রিতা,আরমান সবাই আজাদকে বাসায় যেতে অনুরোধ করে। আজাদ মিরার দিকে তাকায়,মিরা বলে না বাবা আরাফ তোমার আঙ্কেল অসুস্থ। এই মুহূত্বে জার্নি ঠিক হবে না।আন্টি আমিও একজন ডাক্তার রাতটা আমাদের সাথে চলেন, সমস্যা হলে আমরা দেখব বলেই শ্রেয়া মিরার পাশে দাঁড়াল।

আজাদ অনেকদিন পর দেখা বাসায় চল জমিয়ে আড্ডা দিব বললো আরমান। কতবছর পর তোমার সাথে দেখা হলো অনেক কথা বাকি বলেই আরমান হাসল।আজাদ মনে মনে বললো তোমরা কেউ জানো না আমার প্রিয়ার মনে আজ কি ঘটছে। আমি আমার মেয়ের কষ্টটা বুঝতে পারছি ওর ভিতরটা জ্বলে,পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে।ওরে একটু সময় দেওয়া প্রয়োজন হয়ত মানসিক ভাবে কষ্টটা সামাতে পারবে,আজাদ হাঁটতে পারছিলো না।আরাফ বুকে জড়িয়ে রাখল ঠিক ছোটবেলা যেভাবে বাবা তার সন্তানকে আগলে রাখে।

মেয়েটাকে ছোটবেলা থেকে কত যত্নে মানুষ করেছি,ওর চোখে পানি আসার আগেই সব আবদার পূরন করতাম।আর আজ মেয়েটা অতি শোকে পাথর হয়ে গেছে আমি তার জন্য কিছুই করতে পারলাম।মেয়েটা নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে ক্লান্ত, আজাদের চোখ চলচল করে উঠল। আরাফকে চেয়ে দেখল এই ছেলেটা হতে পারত আমার প্রিয়ার শেষ জীবনের অবলম্বন,আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল।আঙ্কেল বলেই আরাফ চিৎকার করে ওঠে, মিরা আন্টি,আজাদ আঙ্কেলের বিশ্রামের প্রয়োজন প্লীজ বাসায় চলুন।

আরমান বললেন প্রিয়া, ডাক্তার আজাদকে কয়কদিন পর আবার এখানে নিয়ে আসতে বলছে।তাই তোমরা কয়েকদিন আমাদের বাসায় থাকবে তারপর যাবে, তাছাড়া আজাদের কিছু টেস্ট করানো হয়েছে। রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত তোমরা যেতে পারবে না, এটাই ফাইনাল কথা।শ্রেয়া প্রিয়ার কাছে গিয়ে হাতটা ধরে বললো বোন আমাদের সাথে চলো আরাফ তোমাকে খুব ভালোবাসে।তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে বাসায় চল শোনাব, প্রিয়া নির্বাক শ্রেয়ার দিকে চেয়ে থাকে।তোমরা সবাই আজাদ আঙ্কেলকে নিয়ে গাড়িতে যাও, প্রিয়া যাবে বলছে।

সবাই খুশি হয় ৫-তলা থেকে আজাদকে লিফ্ট করে নিচে নামানো হয়, প্রিয়া হ্যাঁ না কোন ইঙ্গিত দেয়নি।শ্রেয়া ভাবতে লাগলো প্রিয়া কি মানসিকভাবে সর্ট! নাহ্ আমি এসব কি ভাবছি।আজাদ,প্রিয়া, শ্রেয়া,অমি, শেখর সাহেব,বেগম শেখর সবাই গাড়িতে ওঠল।ফরিদ সাহেব,রোহান,আরাফ, আরমান, রিতা, জিসান সবাই আরমানের গাড়িতে চড়ল।রহিমা কল দেয় ছোট ভাইজান আপনারা কোথায়? খালাম্মা খুব টেনশন করতেছে।ও রহিমা শোন মাকে বলে দেও আমরা বাসার কাছেই চলে আসতেছি টেনশন না করতে।আরামান প্রশ্ন করে কে কল দিয়ে আরাফ?রহিমা কল দিয়েছিলো বলছি আমরা আসতেছি মাকে জানাতে।সত্যি মা আজাদকে খুব স্নেহ করতেন, ভালোবাসতেন ছোটবেলা থেকে আমি আজাদ একসাথে পড়ামোনা করছি।

ওহ্! আজাদ আঙ্কেলের গ্রামের বাড়ি তোমাদের একসাথে প্রশ্ন করলো রিতা।হ্যাঁ রিতা, আজাদ আমার খুব ভালো বন্ধু ছিলো, বাবার স্কুলে সিক্স থেকে ক্লাস টেন পর্যন্ত আমরা একসাথে পড়াশোনা করেছি।বাহ্ দারুন ব্যাপার তো, ফুপা আর আপনি বন্ধু ছিলেন! আজ অনেক কিছু জানলাম বললো রোহান।স্যার প্লীজ নামুন বলেই ড্রাইভার গাড়ি থেমে নেমে নিচে দাঁড়াল।ওহ্ চলে আসছি বললো আরমান,জ্বী ভাইয়া আমরা বাসায় চলে আসছি বলেই আরাফ নামল।জিসান,রিতা,রোহান সবাই নেমে পড় আমরা বাসায় চলে আসছি বলেই আরমান গাড়ি থেকে নামলো।বড় ভাবী,ভাইয়া তোমরা,ফরিদ আঙ্কেল,রোহান, জিসানকে নিয়ে ভিতরে যাও,আজাদ আঙ্কেলদের গাড়িটা এখনো পিচনে আছে।আমি ওনাদের নিয়ে আসবো।

কিছুক্ষনের মধ্যেই প্রিয়াদের গাড়িটা আসল আরাফ তাড়াতাড়ি গিয়ে গাড়ি থেকে আজাদকে নামিয়ে নিল,আন্টি আপনারা আসুন।শেখর সাহেব,বেগম শেখর মিরা সবাই আরাফের পিচনে গেইটের ভিতরে প্রবেশ করলো।প্রিয়ার এদিকে কোন খেয়াল নেই সে আকাশের দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, অমি প্রিয়ার হাত ধরে ঢানছে এক চুলও সরাতে পারছে না।শ্রেয়া মা তুমি প্রিয়াকে নিয়ে আস বলেই মিরা বড় ভাবীকে নিয়ে সামনে আগাল,জ্বী আন্টি বলেই শ্রেয়া প্রিয়ার হাতটা ধরতে চাইল।কিন্তু প্রিয়া এক ঝটকায় শ্রেয়াকে সরিয়ে দিল  তারপর আপন মনে গুন গুন করে কি জানি বিড়,বিড় করতে করতে...

.....চলবে।

0 Shares

১৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ