
আমি তোমার জন্য এসেছি-(পর্ব-৫৯)
ফরিদ সাহেব তার স্ত্রী কাছে আসলেন বেগম তোমাকে খুব ভালোবাসি তুমি আমার শেষ জীবনের অবলম্বন।শেখর সাহেব আড় চোখে মিতুর মাকে দেখে নিল আজ হয়ত রাতের খাবার ভাগ্যে জুটবে না।জিসানের মা দয়াকরে এবার চল নাকি রাতের খাবারটা বেয়াই বাড়িতে শেষ করবে?শেখর সাহেবের কথায় বেগম শেখর হাসতে শুরু করলেন আরে নাহ্! জিসানের বউকে বলে দিয়েছি তো রাতের রান্না করে রাখতে।
আল্লাহ্ আমাকে বাঁচালে শেখর সাহেব বুকে থুতু দিলেন ভালোবাসার মানুষটা রাগলে কস্ট লাগে! তার মানে আমার গিন্নির রাগ কমেছে, কৌশলে জেনে নিলাম মনে মনে হাসল শেখর সাহেব।মিতুর পিচনে গিয়ে দাঁড়াল রোহান ফুপি মিরা,আর প্রিয়ার কথায় স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব, কর্তব্য,সহানুভূতি, ভালোবাসা,শ্রদ্ধাবোধ সবটা বেড়ে গেল।
রোহান শোন বলেই ফরিদ সাহেব কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন মিতুর মাথায় হাত রাখলেন।
>>রোহান তোমার কাছে তোমার মা এবং স্ত্রী দুজনেই সমান শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পাবার দাবীধার।
>>কখনো সত্য না জেনে বউয়ের কথায় মাকে আর মায়ের কথায় বউ বিচারের কাটগড়ায় দাঁড় করাবে না।
>>একজন তোমার মা যিনি তোমাকে জন্ম দিয়ে পৃথিবীতে এনেছেন, লালন পালনের মাধ্যমে বড় করে তুলেছেন।
>>আরেকজন তোমার স্ত্রী যে তোমার জন্য তার পৃথিবী ছেড়ে এসেছে, আরেকটা নতুন পৃথিবীতে একদিন তোমার সন্তানের মা হবে বলে”
>>এদের দুজনের কাউকে ছাড়তে পারবে না।
>>এদের দুজনকে সমানভাবে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা দিয়ে সারাজীবন আগলে রাখবে।রোহান মাথা নাড়ল হ্যাঁ বাবা এদের দুজনকে আমি সারাজীবন আমার বুকে রাখবো তোমাদের ঘিরেই তো আমার পৃথিবী।
বেগম ফরিদ ফরিদ সাহেব মিতু,রোহানকে বুকে জড়িয়ে নিল মিতু আমার ছেলেটাকে সারাজীবন এভাবে জড়িয়ে রাখবি মা এটাই চাইব।বাবা মা আপনাদের ছেড়ে যাব কোথায় বলেন? এটাই তো আমার বাড়ি আর আপনারাই আমার আপনজন বললো মিতু।
দেখলে বড় মামা, বড় মামী মেয়ের কথা শোনলে এই তো দুদিন ধরে মিতুর জন্য কান্নাকাটি করে তোমরা শেষ হচ্ছো। আর মেয়ের কান্ড দেখ শ্বশুড় বাড়ীতে আসতে না আসতেই বলে কি না আপনাদের ছেড়ে যাব কোথায়! এটাই তো আমার বাড়ি আর আপনারাই তো আমার আপনজন হি হি হি হি বলেই হাসল প্রিয়া। কিছু বুঝলে মেয়ে তোমাদের সংসার চিনে গেছে ও এখানে ভালো থাকবে আর কাঁদবে না।হ্যাঁ সত্যি আমি খুব খুশি ফরিদ সাহেব,বেয়াইন সাহেবা রোহান বাবা আমার মেয়েটাকে আপন করে নিয়েছে।প্রিয়া আপ্পি।
বলো রোহান!অমি শ্রেয়া ভাবী,আরাফ ভাইয়া সবাই আমাদের বাড়ির সামনেই আছে। ওরা বাগানের সামনে দাঁড়িয়ে আরাফ ভাইয়ার বন্ধু রাহাত ভাইয়ার সাথে গল্প করতেছে।আমি কল করেছিলাম, আরাফ ভাইয়া বলছে কিছুক্ষনের মধ্যেই আসবে আপনারা বসুন।আচ্ছা আমি কি একটু ভাত ঘুম দিয়ে নিব বলেই মুচকি হাসলেন শেখর সাহেব।
একদম না তোমার ভাত ঘুম মানে তো ফজরের আগে আর জাগবে না বললেন মিতুর মা।বেয়াইন সাহেবা আজকে রাতটা না হয় থেকেই যান, আপনাদের ছাড়তে মন সায় দিচ্ছে না।খুব বেশি আপন করে ফেলছি, মিরা বোন তোমরা থেকেই যাও কাল যাবে। না ভাবী প্রিয়ার বাবার শরীরটা ভালো না মিতুর বিয়েতে আসা হয়নি।তারপর ভাইজান,ভাবিকে না দেখে থাকতে পারলাম না,দেখতে আসলাম সেই উপলক্ষে বৌভাতে আসতে হলো।সমস্যা নেই সময় করে আরেকদিন মিতুকে দেখতে আসবো, তাছাড়া আপনি ভাইজান মিতু, রোহান সবাইকে একদিন আমাদের বাসায় নিব।
মিতু যাও মা সাবিনার মাকে গিয়ে বলো চা বসাতে সবার জন্য, আচ্ছা মা বলেই মিতুর কিচেনে চলে গেল।প্রিয়া অমির জন্য অপেক্ষা করছিলো আর এদিক,ওদিক তাকাচ্ছিলো হঠাৎ একটা কন্ঠস্বর প্রিয়া দৃষ্টি ফেরাল।আশে পাশে কেউ নাই প্রিয়ার বুকের ভিতরে কেঁপে ওঠল কে হতে পারে কন্ঠটা এত পরিচিত মনে হচ্ছে কেন! হাজারটা প্রশ্ন মনে আসতে শুরু করলো।
প্রিয়া রুম থেকে বেরিয়ে গেল ছায়াটা আস্তে আস্তে অদৃশ্য হয়ে গেল, এখানে কেউ একজন দাঁড়িয়ে ছিলো। মা কাউকে খোঁজছেন দারোয়ানের এমন কথায় প্রিয়া চমকে ওঠল! চাচা এখানে আপনি ছাড়া কেউ ছিলো?দারোয়ান বললো না মা, আমি তো এখানে অনেকক্ষন ধরে আছি তবে হ্যাঁ পাশের বাসার ভাইজান আসছিলো।কোথায় ওনি প্রিয়া অস্তির ভাবে জানতে চাইল, মামনি ওনি বাইরে গিয়েছেন হয়ত আবার আসবেন।ওহ্ প্রিয়া সস্তির নিঃশ্বাস ফেলল নাহ্ আমি এই গেইটের বাইরে দাঁড়িয়ে তার জন্য অপেক্ষা করবো।
কন্ঠটা শুনে মনে হলো গুন্ডা ছেলের বয়সের কারনে হয়ত ভয়েজে কিছুটা পরিবর্তন আসছে।প্রিয়া মামনি কোথায় তুমি?ওহ্ ফরিদ আঙ্কেল ডাকছে আর এখানে থাকা যাবে না।আসছি আঙ্কেল বলেই বলেই প্রিয়া গেইটের ভিতরে আসল ফরিদ সাহেব দাঁড়িয়ে আছে।মামনি তুমি ভিতরে যাও অমি, শ্রেয়া রুমে বসে আছে তুমি রোহানের রুমে যাও।
জ্বী আঙ্কেল বলেই প্রিয়া রোহানের রুমে গেল, আজাদ ফরিদ সাহেবের সাথে বাইরে বের হয়ে গেল।প্রিয়াকে দেখেই অমি দৌঁড়ে আসল মিষ্টি আন্টি তুমি চলে যাচ্ছো বলেই মন খারাপ করলো।প্রিয়া অমিকে কোলে তুলে নিল তারপর পার্স থেকে অনেক গুলো চকলেট বের করে অমির হাতে দিল।চকলেট আমার ভিষন প্রিয় বলেই অমি সবগুলো চকলেট এর পেকেটা হাতে নিল।
মিষ্টি আন্টি তুমি খুব ভালো “আমি তোমার জন্য এসেছি বলেই অমি হাসলো।সত্যি বলছো?হ্যাঁ সত্যি বলছি তুমি খুব সুন্দর।ওরে দুষ্টু ছেলে তুমিও অনেক কিউট আমার বাবাটা, প্রিয়া শেয়ার সাথেও কথা বলে বিদায় নিল।সবাই এখানে হাজির আমরা এখন বেরুব আজাদ রাস্তায় গাড়ির কাছেই আছে,চল আমরা ওখানেই যাই।
প্রিয়া মন খারাপ করেই সবার কাছে বিদায় নিল, রোহান একটু শোনবে প্লীজ বলেই মিতু ডাকলো।বলো।প্রিয়া আপ্পি আরাফ ভাইয়াকে দেখতে চাইছিলো, ভাইয়া আজ সারাদিন ডেকোরেটর এর ভিতরে মেহমানধারীতে ছিলো। একবারও বাসায় ভিতরে আসে নাই, তোমার মোবাইলে ছবি নেই আপ্পিকে দেখাও প্লীজ।
ওহ্ শিওর। কেন দেখব না এখনি দেখাচ্ছি বলেই রোহান মোবাইল বের করলো প্রিয়া চাতক পাখির মতো চেয়ে আছে।স্যরি আপ্পি বলেই রোহান তার সেল ফোনটি উপরে তুলে ধরল। আপ্পি আমার মোবাইলে চার্জ নেই এই দেখুন মোবাইল বন্ধ হয়ে গেছে।
প্রিয়ার মুখটা মলিন হয়ে গেল, রোহান হেসে বললো মন খারাপের কিছু নেই আপ্পি।আরাফ ভাইয়া আমাদের বাসার সামনেই আছেন, আপনারা চলুন পথে যেতে যেতে ভাইয়াকে ডেকে দেখিয়ে দিব।মিতু মনে মনে ভাবলো প্রিয়া আপ্পির বর্ণনা অনুযায়ী গুন্ডা ছেলের বাসা ঢাকা শহরে, সে বর্তমানে জাপান প্রবাসী।অমির বাবাও কিছুদিন জাপান থেকে দেশে ফিরছে তবে কি ইনি আপ্পির বন্ধু আরাফ চৌধুরী!!
পরক্ষনেই মিতু নিজের মনকে শাসন করে আমি এসব কি ভাবছি! গুন্ডা ছেলেকে আপ্পি ভালোবাসে বিয়ে করতে চায় এই আরাফ সেই আরাফ হতেই পারে না।যে লোকটা কাউকে এতটা ভালোবাসতে পারে সে কখনো অন্যকারো সাথে ঘর বাঁধতে পারে না।মিতু আর ভাবতে চায় না এমন কিছু হলে তো আপ্পি মরে যাবে, ১২ বছরের স্বপ্ন ভাঙ্গার কষ্টে।মিতু সদর দরজায় দাঁড়িয়ে ওদের বিদায় জানায় নতুন বউ এর বাইরে যাওয়া যাবে না।অমি,শ্রেয়া,বেগম ফরিদ সদর দরজায় মিতুর কাছেই দাঁড়িয়ে থাকে।
প্রিয়া সামনে পা বাড়াবে আন্টি মিতুকে নিয়ে গেইট পর্যন্ত চলুন না বড় মামা,বড় মামী খুশি হবে।আচ্ছা মা তোমরা এগোও আমরা আসছি বলেই মিতু,শ্রেয়া বের হলো।প্রিয়া ছোট্র অমির হাত ধরে গেইটের বাইরে আসল গাড়ির উদ্দেশ্যে সামনে পা বাড়াল।সেই কন্ঠস্বর পিচন থেকে ডাকলো অমি সোনা কোথায় যাচ্ছো!
…..চলবে।
১৩টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
অতুলনীয় লেখনি। একরাশ মুগ্ধতা l
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।
একরাশ মুগ্ধতা ছড়ানো মন্তব্যে উৎসাহ্ পেলাম, কতটা ভালো লিখি জানি না তবে আপনাদের মন্তব্য দেখলে অনুপ্রেরনা পাই।
দোয়া রইল ভালো থাকুন
শুভ কামনা রইল আপনার জন্যম
আলমগীর সরকার লিটন
না ভাল লেখতেছেন আপু গল্প কথায় আসে না ——————
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় দাদা।
মুগ্ধ হলাম সুন্দর অনুপ্রেরনা মূলক মন্তব্যে, নিয়মিত আমার লেখা পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই।
দোয়া রইল ভালো থাকুন,।
শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
নিতাই বাবু
হুম! এগুচ্ছে ভালো। লেখা পড়েও ভালো লাগতেছে। পরের পর্বের অপেক্ষায় আছি।
নিরন্তর শুভকামনা থাকলো।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় দাদা।
সত্যি আপনার উৎসাহ্ মূলক মন্তব্য দেখে সব সময়ের মতো এবার ও আবেগ আপ্লুত হলাম।
আপনার অনুপ্রেরনা আমাকে লিখতে অনেকটা সাহায্য করে, দাদা চেষ্টা করছি।
উপন্যাসের সুন্দর একটা পরিণতির মাধ্যমে সমাপ্ত করতে বাকিটা আপনাদের দোয়া ও ভালোবাসা।
কৃতজ্ঞতা জানাই দাদা নিয়মিত আপনার লেখা পড়ে পাশে থাকার জন্য।
দোয়া রইল ভালো থাকুন,
শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় দাদা।
মুগ্ধ হলাম সুন্দর অনুপ্রেরনা মূলক মন্তব্যে, নিয়মিত আমার লেখা পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই।
দোয়া রইল ভালো থাকুন,।
শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
সুপায়ন বড়ুয়া
প্রিয়ার আজও হয়নি দেখা আরাফের সাথে।
সবাই জানে আরাফ কি জানে না প্রিয়া এখানে আছে।
নাকি ভুলেই গেছে।
ভাল লাগলো। শুভ কামনা।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় দাদা।
আরাফ জানে না প্রিয়া এখানে আছে, তবে প্রিয়ার মন বলছে আরাফ এখানে আছে ☺
সুন্দর মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম দাদা।
গল্পের মোড় যেকোন সময় ঘুরে যেতে পারে, সামনে হয়ত ওদের দেখা হতে পারে।
ভালো থাকুন,
শুভ কামনা রইল।
হালিম নজরুল
প্রিয়ার সাথে আরাফের দেখা না হওয়াটা একটা রহস্য। গল্পে এমন রহস্যময়তা গল্পের আকর্ষণ বাড়ায়।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।
গল্পে রহস্য থাকা ভালো তাই আরাফ,প্রিয়ার মিল করতে একটু দেরি করলাম।
ভাইয়া পরের পর্ব পড়ার অনুরোধ রইল, ৬০তম পর্বে আরাফ প্রিয়ার দেখা হয়েছে ☺
সুন্দর মতামতে আপ্লুত হলাম, দোয়া রাখবেন।
পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল ভাইয়া।
ভালো থাকবেন,
শুভ কামনা রইল।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আপনি রহস্য টা ভালোই পারেন। প্রিয়া আর আরাফরে নিয়ে ভালোই লুকোচুরি খেলছেন। এগিয়ে যান। শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় দিদি ভাই।
আপনার সুন্দর সুন্দর মন্তব্য গুলো সব সময় আমাকে লেখার প্রতি উৎসাহ্ দেয়।
উপন্যাসটা এত দূর নিতে পারবো ভাবি নাই, আপনার অনুপ্রেরনামূলক মন্তব্য আমাকে সাহায্য করেছে।
ভালো থাকবেন,
শুভ কামনা রইল দিদি।