আমি তোমার জন্য এসেছি (পর্ব-৪৮)

সুরাইয়া নার্গিস ২ জুলাই ২০২০, বৃহস্পতিবার, ০৬:৪২:১৬অপরাহ্ন উপন্যাস ১২ মন্তব্য

আমি তোমার জন্য এসেছি- (পর্ব-৪৮)

স্যার মালা নিবেন না! না নিলে না করেন আমি অন্য গাড়ির সামনে যামু খাঁড়াইয়া থাকলে টেকা পামু কই।

ওহ্! সরি সরি।

আচ্ছা মালা জানি, কয়টা বলছিলে.?

স্যার ১১ টা মালা।

ওকে সব গুলো আমাকে দাও! ছেলেটার চোখে মুখে হাসি স্যার আপনি সবগুলো মালা কিনবেন।

দাও, আরাফ মালাগুলো নিয়ে গাড়ির পাশের সিটে রেখে দিল।

এই নাও তোমার ফুলের টাকা।

স্যার ২০০ টাকা ফুলের দাম না, ফুলের দাম তো ১১০ টাকা এইটা রাখেন।

মা কইছে কার দান নিবি না কামাই করে খাবি।

 

হা হা হা হা তোমার নাম কি.?

আমার নাম সুজন স্যার, আপনি ১১০ টাকা দেন আমি নিব মা কইছে বেশি টাকা না নিতে।

সুজন তুমি পড়াশোনা জানো.?

হ, স্যার ক্লাস টু পর্যন্ত পড়ছি পরে বাপ মরে গেল। আর পড়াশোনা করতে পারি নাই বলেই মন খারাপ করলো।

তেমার মা.?

মা মাইষের বাসায় কাম করে ছুডু একটা বইন আছে। ওই গাছের নিচে অন্যদের সাথে বহাইয়ে রাখছি বলেই দূরের একটা গাছ দেখাল।

 

সুজনের কথা শোনে আরাফ কষ্ট পেল, সুজন তুমি ২০০টাকা রাখ আমি খুশি হয়ে দিলাম।

আমি তোমাকে দান করছি না, ভালোবেসে দিলাম টাকাটা নাও।

আমার অফিসের কার্ড এটা তোমার মাকে দিয়ে বলো আমার সাথে দেখা করতে।

স্যার আপনি বড় চাকরি করেন.?

হ্যাঁ আমার কয়েকটা ব্যবসা আছে, গার্মেস ফ্যাক্টরী আছে, সেখানে তোমার মাকে চাকরি দিব।

আচ্ছা স্যার মাকে কালেই আপনার অফিসে নিয়ে যামু।

নাহ্! কাল না আজ শুক্রবার, আগামী মঙ্গলবার তোমার মাকে নিয়ে আমার অফিস যাবে। যাই স্যার আমার বইনরে রুটি কিনে খাওয়ামু বলেই

সুজন খুশি হয়ে চলে গেল...

আরাফ চেয়ে আছে দেশে মানুষের কত অভাব যদি ক্ষমতা থাকতো তাহলে সবার সব অভাব একাই পূরন করে দিতাম।

দেশের অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোঁটাতাম...

আরাফ মোবাইল দেখল ৯.৩০বাজে, আস্তে আস্তে জ্যাম কমতে শুরু করলো।

আরাফ গাড়ি স্টাট করে এগিয়ে চলল রাহাতের সাথে বেশি সময় দেওয়া যাবে না।

নিয়োগের বিষয়টা বলেই ফিরতে হবে আজ রোহানের বিয়ে আমাকে যেতে হবে, অফিসের কিছু কাজ জমে আছে সেগুলো আটকে আছে।

সকাল ১১ টা বাজে মিতুদের বাসার সামনে বিয়ের পর পর দু-টো বড় গেইট যেটা গত তিনদিন ধরেই শোভা বাড়াছে। শেখর সাহেব, জিসানসহ, আরো কয়েকজন গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে পরিচিতদের আমন্ত্রন জানাচ্ছে।

ঢাকা উওরা সিটির মেয়র সাহেব অনেকক্ষন ধরে গেইট এর উপরে "মিতুর শুভ বিবাহ্" লেখাটা পড়েছেন।

বাহ্!

চমৎকার।

কি চমৎকার মেয়র সাহেব, শেখর সাহেবের এমন কথায় মেয়র মুখ হাসলেন।

রঙিন কাগজে ব্যানার এত সুন্দর করে কে এঁকেছে! দেখে তো মনে হচ্ছে নিশ্চয় হাতে আর্ট করা?

ওহ্ জ্বী ভাইজান "মিতুর শুভ বিবাহ্ আমার ছোট বোন মিরার মেয়ে আর্ট করছে।

শেখর সাহেবের কথা শুনে মেয়ন সাহেব বললেন খুব ভালো তো! জিসান বললো জ্বী আঙ্কেল আমি বাইরে থেকে ডিজাইন করিয়ে আনতে চেয়েছিলাম।

কিন্তু প্রিয়া বললো সে পারবে, তারপর আর্ট করলো সবাই লেখাটার প্রশংসা করতেছে।

শেখর সাহেব হেসে বললেন দেখতে হবে তো! লেখার কার আমার বোনের মেয়ের,, হা হা হা হা।

তা তো বটেই হা হা হা হা বলে মেয়র সাহেবও হাসলেন। আঙ্কেল ভিতরে চলুন বলেই জিসান মেয়র সাহেবকে নিয়ে ডেকোরেটরের ভিতরে বসিয়ে দিলেন।

মেজ মামী বিয়ে বাড়িতে মেহমান আসতে শুরু করছে মহিলারা ভিতরে আসলে, আপনি একটু সবার খেয়াল রাখবেন।

ভাবী আপনি মামীকে সাহায্য করবেন, মিতু রোহানরা কখন আসবে? ওরা ১.৩০মিনিটে আসবে প্রিয়া আপ্পি।

যাও তোমরা মিতুর কাছে গিয়ে বসো, জ্বী বলে মেয়েরা ভিতরে চলে গেল। ওরে বাবা বড় মামী মিতুর এত বান্ধবী বলেই প্রিয়া হাসলো।

আর বলো না ওরা ৮ জন ক্লাস সিক্স থেকে কলেজ পর্যন্ত একসাথে পড়ে তাই ঘনিষ্টতা একটু বেশি বলে মামী হাসলো।

কেন বললাম জানো সকাল থেকে মিতু আমাকে প্রায় ১৫ জনের সাথে পরিচয় করালো প্রিয়া আপ্পি আমার বন্ধু।

আর বলো না জিসান মিতুর বন্ধু, বান্ধবীর হিসাব নেই ওরা যেদিকে তাকায় সেদিকেই বন্ধুত্ব হয়ে যায় বলে মেজ মামী হাসলো।

প্রিয়া তোমার মাকে কল দিয়ে বলবে মিতুর বৌভাবে ওদের আসতেই হবে।

তোমার বড় মামা মিরাকে দেখতে চেয়েছেন,আজাদকে বলো আজ তো শুক্রবার মিরাকে নিয়ে শনিবারে আমাদের বাসায় চলে আসতে।

আচ্ছা মামী আমি মমকে কল দিয়ে তোমার সাথে কথা বলিয়ে দিব, বলেই প্রিয় বাইরে বের হলো।

এদিকে রাহাতের সাথে প্রয়োজনীয় কথা শেষ করে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরছে আরাফ।

কোথায় তুমি শ্রেয়া কল! এ- তো আসছি, তোমরা রোহানদের বাসায় যাও নাই? তোমার জন্য অপেক্ষা করছি, তুমি আসলেই আমরা সবাই একসাথে যাব।

ভাবী আপনি গোসলটা সেরে নেন আমি অমি বাবাজীকে গোসল করিয়ে দিয়েছি।

আরাফ ফোনের ওপাশ থেকে রহিমা গলা শোনল, শ্রেয়া আমার জন্য অপেক্ষা করছে।

শ্রেয়া তুমি গোসল করে রেডি হও আমি ২০ মিনিটের মধ্যে বাসায় আসবো।

আরাফ বাসায় ফেরার তাড়া তাই গাড়িটা স্পীটটা বাড়িয়ে দিলো। হঠাৎ রাস্তার পাশে চোখ পড়ল গোলাপি রঙ এর শাড়ি পরা একটা মেয়ে দেখতে ঠিক প্রিয়ার মতো। শাড়ির আঁচলে হলুদ,জমিনে কালো রং মিশ্রনে কাজ করা। প্রিয়া চুড়ি পড়তে খুব ভালোবাসতো ছোটবেলা দেখতাম দু-হাতে দুটি চুড়ি পড়ে হেঁটে বেড়াত,পায়ে নূপুর পরত। আরাফ সাইড করে গাড়িটা থামাল চেয়ে দেখল সামনে একটা বিয়ে বাড়ি সব কিছু তো মেসিং হতেই হবে। শাড়ির সাথে মেসিং গোলাপি ব্লাউজ,মাঝে হলুদ, শেষে গোলাপি চুড়ি দিয়ে দু-হাত সাজিয়েছে। মেয়েটারর লম্বা চুল কিছু চুল কাঁধের এক পাশে ছেড়ে রেখেছে যেন এক গোলাপি পরী।

কানে হালকা গোলাপি রঙের এক জোড়া দুল ঝুলছে। নাকে হীরের গোলাপি একটা টপ ঝলকানিতে পুরা মুখ আলোকিত দেখাচ্ছে।

আরে আরাফ তুই এখানে, আরাফ চমকে উঠল দৃষ্টি সংযত করে বললো জ্বী। আমি আরাফ চৌধুরী আপনি কে?

আমি কে মানে। তুই আমাকে চিনতে পারছিন না! আমি শীলা তোর ভার্সিটির বান্ধবী।

আরাফ শীলার নাম শুনে তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নামল দোস্ত তুই বলেই আরাফ শীলার হাত ধরল। কতদিন পর দেখলাম বিয়ের পর তো যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে, তারপর কি খবর।

শীলা হাসল দোস্ত ইচ্ছা করেই যোগাযোগটা রাখি নাই! আরাফ হয়ে জানতে চাইল কেন রে?

তোকে ভুলার জন্য বলেই হি হি হি হি হাসল শীলা, আরাফ ও হা হা হা হা হেসে দিল।

স্যরি,স্যরি মিষ্টি আনতে গিয়ে লম্বা সিরিয়ালে দাঁড়াতে হলো তাই একটু দেরি হয়ে গেল চল  তাহলে।

বাহ্ খুব সুন্দর তো শীলার বর আরাফ মনে মনে বাহবা দিল শীলাকে পাগলিটা সুখেই আছে স্বামী নিয়ে।

-যাব মানে কি, আরে দাঁড়াও আগে তোমাকে একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।

-ওহ্!  শিওর বলো।

-শীলা আরাফকে দেখিয়ে বললো এ হচ্ছে আমার বেস্টফ্রেন্ড আরিয়ান চৌধুরী আরাফ পিএইচ ডি প্রাপ্ত। বর্তমানে জাপান প্রবাসী সেখানে ওর নিজস্ব ব্যবসা, চাকরি করে।

-আর দোস্ত ইনি সজিব মাহমুদ আমার কিউট স্বামী, তাকে তো তুই বিয়েতে দেখাছিলে কিন্তু পরিচয় করাতে পারি নাই।

-আরাফ সজিবকে জড়িয়ে ধরল -হ্যালো।

-কেমন আছেন ভাইয়া,জ্বী ভালো।

-ভাইয়া শীলা একটু ভুল বলছে কারন ও জানে না বর্তমানে আমি বাংলাদেশেই আছি, জাপান আর যাব না।

-ওয়াও দোস্ত গুড নিউজ তাহলে তোর সাথে আবার দেখা হচ্ছে!

-আরাফ শিলাকে প্রশ্ন করলো তা দোস্ত তোরা দেশে আসলে কবে.?

-দোস্ত মাস খানেক হল আর ২ মাস থাকবো বাংলাদেশে।

-সজিব এর চাচাত বোনের বিয়ে তাই আসতেই হলো, সাথে আমারও দেশে আসতে মন চাইছিলো তাই আসা।

-তারপর তোর কথা বল প্রিয়া কেমন আছে?

0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ