আমি তোমার জন্য এসেছি -(পর্ব-৪৪)
কয়েক কদম হাঁটল বৃষ্টির পানি সারা শরীরে ভিজিয়ে নিল।
অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পরও আরাফ পিচনের দিকে দেখে জিসানের গাড়িটা দেখতে পেল না।
কিছুটা চিন্তিত হয়ে বিষয়টা শ্রেয়াকে জানাল, আচ্ছা তোমরা জিসান সাহেবের গাড়িতে থাকা মেয়েদের কাউকে একবার কল দেও তো।
বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে এদিকে জিসান সাহেবের গাড়িটা এখনো দেখতে পাচ্ছি না।
আমার খুব টেনশন হচ্ছে, জিসান সাহেবের সাথে আমাকে কথা বলিয়ে দিও।
জ্বী ভাইয়া, আমি আদিব রোহানের বেস্ট ফ্রেন্ড।
আমি এখনি ঝুমাকে কল দিচ্ছি।
দোস্ত তোরা কোথায় আসছি দোস্ত।
এত দেরি কেন.? তোদের গাড়িটা দেখতে পারছি না।
আমাদের গাড়িটা রাস্তার পাশে থেমেছে.?
কেন,কোন সমস্যা.?
না রে দোস্ত।
ওই যে মিতু ভাবীর মামাত বোন যে রোহানদের বাসায় গিয়েছিলো।
ওনার বৃষ্টিতে ভেজা সখ তাই ওনার সখ পূরন করতে ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে বসে আছে।
আদিব তার বন্ধুর কথা শোনে হা হা হা হা করে হেসে দিল।
রাখছি আপুটা গাড়িতে উঠছে, আমরা এখনি রওনা হবো।
আরাফ তখনও আদিবের দিকে বোকার মতো চেয়ে আছে, ব্যাপার কি ছেলেটা হাসছে কেন!
আদিব হাসতে হাসতে বললো ভাইয়া টেনশন নিবেন না ওরা আসতেছে। আমরা যেতে পারি, যেতে যেতে বাকি কথা বলবো।
ড্রাইভার চল..
আরাফদের গাড়ি চলছে আর আদিব সবাইকে প্রিয়ার বৃস্টিতে ভেজার গল্প শুনিয়ে চলছে সবার হাসির আওয়াজ বুঝিয়ে দিচ্ছে এটা কোন বিয়ের গাড়ি।
রহিমা হাসতে হাসতে ওয়াক করে কাঁচের বাইরে মুখ বের করে দিল।
রহিমা তোমার কি হয়েছে শ্রেয়া চিৎকার করে উঠল, কিন্তু রহিমা কথা বলার অবস্থায় নেই।
আরাফ তাড়াতাড়ি পানি দেও বলেই শ্রেয়া হাত বাড়াল, পাশ থেকে একজন রহিমাকে ধরে সিটে বসিয়ে ধরে রাখলো।
আচ্ছা হঠাৎ আরেক কান্ড বাঁধালেন তো আপনার বমি সমস্যা আছে, আগে বলবেন না এখন তো দিলেন গাড়িটা নষ্ট করে।
ড্রাইভাবের এমন কথায় আরাফ ধমক দিলো, সামনে গিয়ে পানি নিয়ে গাড়ি ধুয়ে নিবে এখন চুপ করো।
জ্বী স্যার বলেই ড্রাইবার চুপ করলো, দুপুরে যা খেয়েছিলো বমি হয়ে সব বের হয়ে গেল।
রহিমা নেও এই ট্যাবলেটটা খেলে আর বমি আসবে না, আরাফ শ্রেয়াকে রহিমার খেয়াল রাখতে বললো। রহিমা কিছুটা স্বাভাবিক হলো, গালি চলছে ইসস এই রাস্তার যেন শেষ নেই খালি একের পর এক সমস্যা।
বিয়ের আনন্দটাই মাটি করে দিচ্ছে ভিড় ভিড় করে কথা গুলো বললো রোহানের বন্ধু আদিব।
এর মধ্যে প্রিয়াদের গাড়িটা আরাফের গাড়িটা অতিক্রম করে চলে গেল।
হঠাৎ আরাফের বুকের বাম পাশটা কেঁপে উঠল গাড়ির কাঁচের বাইরে থাকা হাতটা দেখে। কার হাত এটা! কেনই বা আমার এত কস্ট রাগছে হাতটা দেখার পর ভিতরে অস্তিরতা কাজ করছে।
একটা শূন্যতা আরাফ সামনের দিকে চেয়ে রইল গাড়িটা ভিড়ে হারিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল।
মেয়েরা মেকআপ ঠিক করছে, কেউবা চুল, কেউবা লিপস্টিক,কেউবা কাজল, কেউবা আয়না নিয়ে টানাটানি করতে ব্যস্ত সাজগোজ ঠিক আছে কিনা! গাড়ি থেকে নামার আগে সবাই ঠিক করে নিচ্ছে, বিয়ে বাড়ি বলে কথা নিজের বেস্টটাই সবাই দেখাতে চায়। ভাইয়া ওরা সবাই দেখি ব্যস্ত, আমি উপরে গেলাম তুমি ওদের নিয়ে আস বলেই প্রিয়া মুসকি হাসল।
পিচনে গাড়িটা দেখা যাচ্ছে না ওনারা মনে হয় আসতেছে তুমি একটু অপেক্ষা করো সবাইকে নিয়ে এসো আমি গেলাম।
প্রিয়া গেটের ভিতরে ঢুকে গেল, মামা,মামা,মিতু,ভাবী মেজ মামী কই তোমরা এদিকে আস বলতে বলতে প্রিয়া রুমে আসল।
ওরে বাবা! বাসায় ডাকাত পড়লো নাকি! হেসে হেসে কথা গুলো বললে মিতুর মামা শেখর সাহেব।
পাশ থেকেই মিতুর মা এসে হাজির,মিতু সহ সবাই আসলো।
মামা,মামী মিতুর শ্বশুড়বাড়ী থেকে হলুদ নিয়ে কয়েকজন ছেলে মেয়ে আসছে।
ওহ! ওরা কোথায় নিচে গাড়িতে আছে জিসান ভাইয়া ওদের নিয়ে আসবে।
ভাবী,মেজ মামী তোমরা দুজন ওদের জন্য নাস্তার ব্যবস্থা করো, মিতু তুই ফ্রেশ হয়ে রেডি হও।
মামা,মামী এখানে সোফায় বসে থাকো ওরা তোদের খোঁজবে,আচ্ছা মা বসলাম বলেই শেখর সাহেব আরাফ করে সোফায় হেলান দিলেন।
আপনারা ভিতরে আসুন বলেই মেয়ে গুলোকে নিয়ে জিসান রুমে আসলো।
আসসালামু আলাইকুম।
ওয়া আলাইকুম সালাম।
কেমন আছেন সবাই?
জ্বী ভালো আপনারা বসুন বলেই বেগম শেখর তার ছোট জ্যা এর দিকে ইশারা করলো ওদের নাস্তার ব্যবস্থা করতে।
এদিকে জিসানের বউ তো রেগে আগুন মেয়ে তিনটাই দেখতে অসম্ভব সুন্দরী, তাদের পাশে নিজের স্বামীকে দেখে যেকোন মেয়ের ইষ্যা হওয়ার কথা। কারন নারী মানেই একটু হিংসুটে হবেই এটা তাদের সহজাত প্রবৃত্তি এসব ভেবে প্রিয়া হাসলো। জিসান ভাইয়া ভিতরে যাও ফ্রেশ হয়ে আসো, ভাবী আপনিও ভিতরে যান মামীকে বলবেন নাস্তা রেডি করতে।
ভাইয়ার প্রতি ভাবীর রাগটা ভালোবাসায় পরিণত হোক এই জন্যই প্রিয়া ওদের ভিতরে পাঠাল।
তারপর বলো তোমাদের সাথে তো পরিচয় হলো না, আমি প্রিয়া মিতুর ফুপাত বোন। আমদের বাসা ময়মনসিংহ, পড়াশোনা শেষ করে আমি একজন ম্যাজিস্টেট হিসাবে ঢাকায় কর্মরত আছি। আমি রিয়া রোহানের বন্ধবী আমি একটা ব্যাংকে জব করি।
আমি রিমঝিম রোহান ভাইয়াত চাচাত বোন, আমি তনিমা রোহান ভাইয়ার মামাত বোন ভার্সিটিতে পড়াশোনা করি।
গুড পরিচয় পর্ব শেষ তোমরা বসে বিশ্রাম করো আমিও ফ্রেশ হয়ে আসছি। প্রিয়া আপু আমরা একটু ভাবির সাথে দেখা করতে চাইছিলাম।
ওকে তোমরা বসো আমি নতুন বউকে পাঠিয়ে দিচ্ছি বলেই প্রিয়া হাসলো এর মধ্যেই দরজায় কলিবেল বেজে উঠল।
মনে হয় ভাইয়ারা আসছে বলেই তনিমা দরজা খুলতে উঠে গেল, প্রিয়া মিতুর রুমের দিকে পা বাড়াল।
দিনের অবস্থা ভালো না কখন বৃষ্টি নামে ঠিক নেই জানালাটা বন্ধ করে দেও বলেই মিরা ভিতরে ঢুকল।
কি করো ভাবছি!
কি ভাবছো মেয়েটার কথা, কয়েকদিন মেয়েটা বাসায় নেই মনে হচ্ছে কত বছর আমার মায়ের মুখটা দেখি না।
সত্যি প্রিয়ার বিয়ে হয়ে গেলে কি করে থাকবো, ভাবতেই কান্না আসে বলেই মিরা মন খারাপ করলো।
কষ্ট হলেও তো মেয়ের বিয়ে দিতে হবে ওর একটা ভবিষ্যৎ আছে না বলেই থামল আজাদ।
শোন! রাতে কি রান্না করবো?
মানে কি! বলছি রাতে কি রান্না করবো?
আজাদ হাসতে হাসতে বললো মিরা গত ২৮ বছর ধরেই তুমি আমাকে এই প্রশ্নটা করে আসছো।
হ্যাঁ!
আমি প্রতিবারেই ১ টা জবাব দেই, "সোনা তোমার পছন্দই আমার পছন্দ" তুমি ভালোবেসে যা রান্না করবে আমি তাই খাব।
কারন আমি তোমাকে পছন্দ করে বিয়ে করেছি তোমার পছন্দই আমার পছন্দ।
তারপর তুমি কেন একই প্রশ্ন প্রতিদিন করো.???আসলে মহারাজ আমি দেখতে চাই গত ২৮ বছর পরও আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা কিছুটা কমে গেছে নাকি আগের মতোই আছে।
ওমা! আমার বউ বলে কি! তা মহারানী কি বুঝলেন বলেন একটু শুনি।
বুঝলাম আমার মহারাজ এখনো আমাকে আগের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন।
জানো মিরা!
বলো।
আমি যতবার তোমাকে দেখি ততবারেই নতুন করে প্রেমে পড়ি।
আমি সেই ৩০ বছর বয়সে ফিরে যাই যেন সেই প্রথম দেখার অনুভূতি অনুভব করি।
আর মৃত্যুর আগ মুহূত্ব পর্যন্ত তোমার ভালোবাসায় শেষ নিংশ্বাস ত্যাগ করতে চাই।
আজাদের এমন কথায় মিরা আবেগ আপ্লুত হয়ে গেল স্বামীর বুকেই যেন তার সকল সুখ খোঁজে পায়।
মিরা তুমি সুখি তো.?
হুম আমি তোমার মতো স্বামী পেয়ে খুব সুখি।
প্রিয়াকে একবার কল দেও তো একটু কথা বলি...!
মিরা মোবাইল আনতে ড্রয়িং রুমে চলে গেল আজাদ কতটা সুখি বিছানায় শুয়ে সেটা ভাবতে লাগলো।
আরাফ, শ্রেয়া,রহিমা,অমি,আবিদ একে একে সবাই মিতুদের বাসায় প্রবেশ করলো।
জিসান কলিংবেল এর শব্দ শোনে আসলো...
.....চলবে।
১৯টি মন্তব্য
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দ, নারীর হিংস, ত্রিশ বছরেও বার বার নতুন করে প্রেমে পড়া সবকিছু মিলে দারুণ উপভোগ্য গল্প। এগিয়ে চলুন সঙ্গে রইলো শুভ কামনা।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় ভাইজান।
বৃষ্টিতে ভিজতে আমারও খুব ভালো লাগে, মেয়েরা ভালোবাসার ক্ষেত্রে অনেকটা হিংসুটে হয়।
মিরা আজাদের ৩০ বছরের সংসার কখনো ভালোবাসার অভাব হয়নি, ওরা সুখি।
ভালো থাকবেন ভাইজান।
ইঞ্জা
বাহ ৪৪পর্ব দিয়ে দিলেন, আপু আপনি তো আমার রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলবেন দেখছি, আগাম অভিনন্দন জানিয়ে রাখলাম আপু।
যায় এখন গল্প পড়ে আসি।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইজান।
আপনার লেখা পড়েই উপন্যাস লেখার চিন্তাটা মাথায় আসলো। আলহামদুলিল্লাহ্ দেখতে দেখতে ৪৪ পর্ব লিখে ফেললাম।
দোয়া করবেন যেন বাকি পর্ব গুলো লিখে সুন্দর একটা সমাপ্তি করতে পারি।
ভালো থাকবেন ভাইজান
ইঞ্জা
ইনশা আল্লাহ আপু, খুব সুন্দর এগুচ্ছে, এগিয়ে যান।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আপু খুব ভালো হচ্ছে। এগিয়ে যান, সাথেই আছি। টানটান উত্তেজনা কখন ওদের দেখা হবে এই আশায় আছি। শুভ কামনা রইলো
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ দিদি ভাই।
আপনার মতামত পেয়ে খুব ভালো লাগে, অনুপ্রেরনা পাই,উৎসাহ্ পাই।
ইনশাল্লাহ্ আরাফ প্রিয়ার খুব তাড়াতাড়ি দেখা হব।
পরের পর্ব দেখার আমন্ত্রন রইল..
ভালো থাকবেন দিদি ভাই।
নিতাই বাবু
আশা করি আপনার লেখা “আমি তোমার জন্য এসেছি” সমস্ত পর্ব একত্রিত করে একটা বই বের করবেন। যদি বই হয়ে বের হয়, তাহলে বইয়ের প্রথম কাস্টমার আমিই হবো, কথা দিলাম।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় দাদা।
খুব খুশি হলাম এমন কমেন্টস সত্যি আপ্লুত হলাম,আপনাকে গ্রিফ্ট পাবেন।
দোয়া করবেন দাদা! ইচ্ছা আছে দেশের করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে প্রকাশ নিয়ে ভাববো।
পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল।
ভালো থাকবেন।
সুপায়ন বড়ুয়া
গরমে জবুতবু হয়ে যাই
বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দে
রোমান্সের গন্ধ পাই।
ভাল লাগলো আপু। শুভ কামনা।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় দাদা।
অনেকদিন পর আমার লেখায় মন্তব্য পেলাম খুব ভালো লাগছে।
আশা করি বাকি পর্ব গুলো পড়ে পাশে থাকবেন।
ভালো থাকবেন দাদা।
ফয়জুল মহী
অসাধারণ লেখা। অপরিসীম ভালো লাগলো।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
ধৈর্য ধরে সময় নিয়ে আমার লেখা নিয়মিত পড়ে উৎসাহ্ দিবার জন্য কৃতজ্ঞতা রইল।
ভালো থাকবেন।
তৌহিদ
কে কাকে কতটা ভালোবাসে আজ তাই দেখলাম লেখায়। বৃষ্টিতে ভিজতে কার না ভালো লাগে? আরাফ প্রিয়াকে নিজের অজান্তেই অনেক ভালোবাসে।
চলুক গল্প। ভালো থাকুন আপু।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
আরাফ প্রিয়াকে ১২ বছর ধরে ঠিক একই ভাবে ভালোবেসে আসছে।
সুন্দর মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম, সব সময় পাশে থাকার অনুরোধ রইল।
ভালো থাকবেন।
হালিম নজরুল
বাপরে! চুয়াল্লিশ পর্ব হয়ে গেল! শুভকামনা আপু।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
আপনাদের মতো মানুষের দোয়া আর ভালোবাসা সাথে থাকলে সবই সম্ভব ভাইয়া।
অনেক ভালো লাগছে সুন্দর মতামত পেয়ে, দোয়া রাখবেন।
ভালো থাকবেন।
জিসান শা ইকরাম
প্রিয়ার হাত দেখেই আরাফের মন উথাল পাতাল! পরের পর্বে আশাকরি দেখা হচ্ছে।
এই বয়সেও মিরা আজাদের পারস্পরিক ভালোবাসা দেখে ভালো লাগছে।
শুভ কামনা।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় ভাইজান।
চোখের সমস্যার পরও আমার লেখা পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
ভালো থ্কবেন,শুভ কামনা রইল।