আমি তোমার জন্য এসেছি (পর্ব-সাতাশ)

সাথে সাথে প্রিয়ার পাশের লোকটা চমকে গেল! বাঘ দেখার মতো উৎসাহ্ নিয়ে প্রিয়ার উপর দিয়ে জানালার দিকে মুখ বাড়াল। লোকটাকে দেখে মনে হচ্ছিল পারলে প্রিয়াসহ জানালার বাইরে গিয়ে পড়বে।

কি আর্চয্য! পাগল নাকি! আপনার সমস্যা কি? লোকটা নিচু স্বরে বললো জ্বী মানে আপু।
এত মানে মানে করছেন কেন! বলুন?
লোকটা আমতা আমতা করে বললো! জ্বী, মানে আমি জানালা দিয়ে বাইরে থুথু ফেলতে চাইছিলাম।

ততক্ষনে বাসটা নির্দিষ্ট স্টােশন ছেড়ে গেল, প্রিয়া পিচনে ফিরে দেখল। ট্রাই পড়া লোকটা দাঁড়ানো নেই!
মনটা খারাপ হয়ে গেল, রাগি মুখে লোকটাকে প্রিয়া ধমক দিয়ে বললেন থুথু ফেলবেন। তাহলে পলি ব্যাগ সাথে আনেন নাই কেন?

লোকটা বোকা বনে চলে গেল! বাসের অন্য যাত্রীরা হাসতে শুরু করলো।
আপনারা থামুন থুথু ফেলার জন্য পলি ব্যাগ ব্যবহার করলে বাংলাদেশে পলি ব্যাগ সংকট দেখা দিবে হা হা হা হা। তখন বাজার বা নিত্য প্রয়োজনীয় কাজের জন্য,মহিলাদের নিজেদের শাড়ির আঁচল বা লুঙ্গি ব্যবহার করতে হবে হা হা হা হা।

বাসের ড্রাইভারের এমন কথা সবার হাসির আওয়াজ বাড়ল, বাসের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সবাই হাসলো, শুধু কারনটা অজানা। প্রিয়া,লোকটা দুজনেই শান্তু, প্রিয়া বুঝতে পারল ৪০ বছরের মধ্য বয়স্ক লোকটা প্রিয়ার মুখ দেখার জন্য এমন অসভ্য আচরন করলো।

স্যরি ম্যাডাম বলে লোকটা ক্ষমা চাইল, প্রিয়া চেয়ে দেখল বাবার বয়সি লোকটা অথচ আমাকে মেয়ে ভাবতে পারল না।
সত্যি বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা এতটা বাজে হয়ে গেছে যে মেয়েদের রাস্তাঘাটে একা চলাচল করাটা নিরাপদ নয়।

ওকে শান্ত ভাবে বসুন আবার থুথু ফেলার ইচ্ছা হলে বলবেন, আমি সাইড দিব।
লোকটা বিড় বিড় করে বললো আহারে থুথু! এবার বমি আসলেও বলবো না।
কিছু বলছেন? নাহ!
কিছুই বলি নাই।

প্রিয়ার মোবাইলটা বেজে উঠল ওহ! মম কল দিয়েছে বলেই প্রিয়া রিসিভ করলো। হ্যালো প্রিয়া, কোথায় তুমি মিরার প্রশ্ন? জ্বী মম, ত্রিশাল পর্যন্ত চলে আসছি। মম তুমি টেনশন করো না ভালো ভাবেই আসছি।

প্রিয়ার কথায় খুশি হয়ে মিরা ফোন কেটে দিল, প্রিয়া পিচনে ফিরে অবাক হলো!! গুন্ডা ছেলের মতো দেখতে সুটকোট পড়া মানুষটা আরেক জন, কাছ থেকে দেখলে আরাফের সাথে মিল নেই।
প্রিয়া মুচকি হাসল সত্যি চোখের দৃষ্টিতে আজোও গুন্ডা ছেলেটা বেঁচে আছে।

প্রিয়া টেনশন ফ্রি হয়ে সিটে বসে থাকে, নানার বাড়িতে কাটানো সময় গুলো, মামাত ভাই, বোন গুলোকে খুব মিস করে।
কয়েক ঘন্টায় বাস ময়মনসিংহ এসে পৌঁছায়।
প্রিয়া একটা রিক্সা নিয়ে একাই বাস স্টেশন থেকে ময়মনসিংহে বাসায় চলে আসে।

দাদুমনি অবাক হয় প্রিয়া সত্যিই আজ বড় হয়ে গেছে নিজেকে সেইভ করতে শিখে গেছে।
দুপুরে খেয়ে প্রিয়া তার কাটের নিচে পুরনো বই, খাতা, কাগজপত্রের পুটলি দেখতে পায়।
মা! মা এগুলো কি বলেই বিছানা ছেড়ে নিচে নেমে আসল ততক্ষনে মিরাও এখানে এসে উপস্থিত। কি হয়েছে প্রিয়া, ডাকলে কেন.?

মম কাটের নিচে এগুলো কি.?
মিরা জবাব দেয় পুরনো বই, কাগজ পত্র, পেপার, তোমার বাবার অফিসের অপ্রয়োজনীয় কাগজপত্র।
ওহ্! প্রিয়া দেখলো পুরনো আকাশি রঙের একটা ডাইরি এসবের মাঝে। প্রিয়া তাড়াতাড়ি দড়ির বাঁধনটা খুলে দিয়ে ডাইরিটা বের করলো।

মম ডাইরিটা আমার আব্বু আমার জন্মদিনে গ্রিফ্ট করছিলো, এটা দিলে কেন..?
মিরা অবাক হয়ে জানতে চায় পুরনো ডাইরি তো মা তোমার বুকসেল্ফ এর নিচে পড়ে ছিলো আমি বিক্রি করার জন্য রেখেছি।

পুরনো হলেও এটা আমার প্রিয় ডাইরি মম, ভিতরে খোলে দেখছিলে? মিরা অবাক হয় না তো! বুকসেল্ফে ময়লা যুক্ত দেখে ফেলে দিতে চাইছিলাম।

মির কথা শেষ হবার আগেই প্রিয়া ডাইরিটা নিয়ে বিছানায় উঠে পড়ে। নিঃশ্বাস বন্ধ করে বুকে জড়িয়ে রাখে ডাইরিটা, মিরা বুঝতে পারে না। প্রিয়ার আচরনটা কি হলো হঠাৎ! এই মুহূত্বে প্রিয়াকে দেখে মনে হচ্ছে। পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান কিছু ওই ডাইরির মধ্যে আছে, মিরা হেসে নিজের রুমে চলে গেল।

আরাফ নিয়মিত বয়স্ক বাবা মায়ের ফোনে খোঁজ নেয়, প্রিয় মানুষদের সবাইকে মিস করে। তবে জাপান যাবার পর আর বাংলাদেশে আসে নাই। ওখানে কাজের চাপে সময় হয়ে ওঠে না। তাই পরিচিত অনেক প্রিয়জনের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে, চোখের আড়াল হলেই মনের আড়াল এটাই বাস্তব আরাফ মেনে নিয়েছে।

.....চলবে।

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ