আমি তোমার জন্য এসেছি (পর্ব-বিশ)

সুরাইয়া নার্গিস ২৩ এপ্রিল ২০২০, বৃহস্পতিবার, ০১:০০:৩৮অপরাহ্ন উপন্যাস ১৪ মন্তব্য

আমি তোমার জন্য এসেছি- (পর্ব-বিশ)

প্রিয়া মা-মনি তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে..? জ্বী আঙ্কেল ভালো।

আচ্ছা তুমি একটু ভিতরে যাও আমরা একটু অন্য বিষয় কথা বলবো।

জ্বী আঙ্কেল বলেই প্রিয়া পড়তে নিজের রুমে চলে গেল।

আরাফ বুঝতে পারল কি বিষয়ে কথা বলবে তাই সেও বিছানা ছেড়ে উঠে যেতে চাইল।

মনোয়ারা তাকে থামিয়ে দিল, আলোচনায় তোমার থাকা প্রয়োজন আছে তুমি বসো।

আজাদ কিছুই বুঝতে পারছিলো না। দাদুমনি আর ভাবতে চায় না, যাই বলুক তার মত আছে  এতটুকু বিশ্বাস তার মনের উপর ছিলো। দাদুমনিও চুপ করে বসে থাকলেন, মিরাও  আজাদের পাশেই বসা ছিলো।

আজাদ, মা, মিরা তোমাদের সাথে একটা আলোচনা করার জন্যই আজ হঠাৎ তোমাদের বাড়িতে আসলাম। কথাটা প্রিয়াকে নিয়ে তাই ওর সামনে বলতে চাইনি বললেন আকরাম সাহেব। অজাদ কিছুটা অবাক হয়ে বললেন, স্যার আমি কিছুই বুঝতে পারছি না, আচ্ছা আপনি কি বলতে চান বলুন। হ্যাঁ তোমরা তো আরাফকে চিন? তার সম্পর্কে সব জানো তবুও আমি আরেকবার আরাফকে তোমাদের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই।

সবাই মাথা নেড়ে সম্মতি দিল, মনোয়ারা বেগম বলতে শুরু করলেন আরাফের

-পুরা নামঃ আরিয়ান চৌধুরী আরাফ।

-পড়াশোনাঃ মাস্টার্স(ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)

-পিএসডি (জাপান)

-পেশাঃ শিক্ষক (ঢাকা কলেজ, ঢাকা)

-নিজেন দুটো ব্যবসা আছে।

সবচেয়ে বড় পরিচয় আরাফ আমাদের  সন্তান।

এবার আকরাম সাহেব যোগ করলেন, আমার অর্থ,সম্মান,সামাজিক অবস্থান, সম্মান সবকিছু  সম্পর্কে তোমরা জানো এটা নিয়ে গর্ব করছি না।

আজাদ, মিরা আরাফ সম্পর্ক এত বেশি জানতো না মনোয়ারার কথায় সবটা জানতে পারলো। জ্বী, স্যার আজাদ মিরার ছোট্র জবাব।

মনোয়ারা বললেন আজাদ,মিরা আমরা তোমাদের সম্পর্কে সবটা জানি আমরা সন্তুষ্ট, আর কিছু জানার নেই।

দাদুমনি বললেন আরাফ সম্পর্কে তো জানি! তাহলে এখানে এই মুহূত্বের এসব কথা কেন বলছো বাবা.? মা আমরা আপনার কাছে একটা প্রস্তাব নিয়ে আসছি।

আজাদ প্রশ্ন করলেন। কি প্রস্তাব স্যার..?

আজাদ বেশ কয়েকদিন ধরে আমরা আরাফকে বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করছি, সে রাজি হচ্ছিল না। গতকাল রাতেই আমরা জনতে জানলাম আরাফ প্রিয়াকে পছন্দ করে, ভালোবাসে, বিয়ে করতে চায়। সন্তানের সব চাওয়া আবদার গুলো আমরা সব সময় মেনে নেই।

আর আমার প্রিয়াকে বেশ পছন্দ, কয়েকদিন আগেই প্রিয়াকে নিয়ে মনোয়ারার সাথে কথা বলছিলাম। তোমাদের কথা শুনে মনোয়ারও বলছিলো আজাদ এর সাথে সম্পর্কটা আরো ঘনিষ্ট হতে পারে আরাফের সাথে প্রিয়ার বিয়ের মাধ্যমে।

আজাদ, মিরা তখনো চুপ কিছু বলছিলে না, হ্যাঁ ভাই আজাদ, বোন মিরা আমার আরাফ ছেলে হিসাবে খারাপ না। আত্নীয় হিসাবে আমরা খারাপ না। তোমার প্রিয়াকে আমাদের কাছে দিয়ে দেও ওর অযত্ন হবে না, আমার বাড়ির বউ না! প্রিয়া আমার মেয়ের মতো থাকবে বলেই মিরার হাতটা জড়িয়ে ধরেন মনোয়ারা।

মিরা চুপ কি বলবে বুঝতে পারছিলো না তবে মনে মনে আরাফের মতোই একটা ভালো ছেলে সে প্রিয়ার জন্য ভাবছিলো, তবে এই বয়সে না আরো পরে। ভাবি প্রিয়ার বয়স কম এই মুহূর্তে আমরা ওর বিয়ে নিয়ে ভাবছি না! বলেই আজাদ মনোয়ারর দিকে তাকালেন।

আমি প্রিয়াকে খুব ভালোবাসি দাদুমনি! সেই প্রথম যেদিন প্রিয়াকে দেখেছিলাম, সেদিন থেকেই মনে মনে স্থির করেছিলাম প্রিয়াকেই বিয়ে করবো। তখন কথাটা বলি নাই কারন প্রিয়া ছোট এখন তো প্রিয়া বড় হয়েছে তোমরা আমাকে ফিরিয়ে দিও না বলেই আরাফ দাদুমনির পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো।

আরাফের কান্না যেন উপস্থিত সকলের হৃদয় নাড়িয়ে দিল দাদুমনি আরাফের কান্না আর বাড়াতে দিলেন না, হাত দিয়ে পরম মমতায় চোখ মুছিয়ে দিয়ে বুকে ঢেনে নিলেন।,দাদাভাই একদম কান্না করবে না আমি আছি তো।

আকরাম, মনোয়ারা যেন আশার আলো দেখতে পেলেন বাড়ির একমাত্র মুরব্বি তিনি এই পরিবারে নিশ্চয় তার মতামতের একটা মূল্য আছে।

মিরা মনোয়ারাকে লক্ষ করে বললেন, ভাবি প্রিয়ার বয়স মাত্র ১৪ চলছে এখনো গুছিয়ে কথা বলতে শিখে নাই, এই বয়সে সংসারের দায়ীত্ব ওর উপর চাপিয়ে দেওয়া কি ঠিক হবে ভাবি..? একটা নতুন জীবন শুরু করলে সেখানে কিছু দায়ীত্ব কর্তব্যের ব্যাপার আছে। সবার মন জয় করে সংসার টিকিয়ে নেবার মতো জ্ঞান তার হয়নি, তার উপর সামনে স্কুল ফাইনাল এই সময় এসব আলোচনা না করাই ভালো।

আচ্ছা প্রিয়ার পরীক্ষার আর ১ মাস বাকি আমরা না হয় পরে একদিন এই বিষয়ে আলোচনা করবো..! মিরার কথায় যেন বিয়ে না দিবার হাজারটা অজুহাত খোঁজে পাচ্ছিলেন আকরাম। মিরাকে থাকিয়ে দিয়ে বললেন নাহ্ মিরা কথাটার একটা সমাধান আজকেই হওয়া উচিত।

আজাদ সত্যি মন থেকে চাইছিলেন না, দেশের একজন শিক্ষিত নাগরিক হয়ে তার মেয়েকে বাল্য বিবাহ্ দিতে কিন্তু স্যারের কাছে তার ঋণের শেষ নেই। শিক্ষাজীবন থেকে শুরু করে কর্মজীবন, জীবনের যেকোন ক্ষেত্রে স্যারের স্নেহ,ভালোবাসা, আন্তরিকতা,উপদেশ দিয়ে সব রকম সাহায্য সহযোগীতা পেয়েছেন।

তাই স্যারের মুখের উপর না বলার ক্ষমতা তার নেই, আর আরাফও ছেলে হিসাবে খারাপ না। এমন হিরার টুকরো ছেলেকে মেয়ের জামাই হিসাবে পাওয়া, যেকোন বাবার পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। অনেক ভেবে আজাদ মনে মনে স্থির করলো প্রিয়াকে আরাফের কাছে বিয়ে দিবেন।

আজাদ জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল সন্ধ্যা হয়ে গেছে বাইরে রাস্তায় টিউব লাইটের আলো প্রিয়ার রুমের দরজার ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে। মেয়েটা মনে হয় বিকালে ঘুমিয়ে পড়ছিলো এখানে আলোচনা হচ্ছে দেখে মিরাও ওইদিকে খেয়াল নেই। জানালা গুলো মনে হয় খোলায় আছে বনো মশার দল পুরো রুম দখল করে নিয়েছে। আজ মনে হয় কয়েলে কাজ হবে না, রুমটা অন্ধকার ভাবতে ভাবতে আজাদ অন্য জগৎ ডুব দিল।

আজাদ,আজাদ! দাদুমনির এমন ডাকে চমকে উঠল আজাদ! জ্বী মা!

আমরা তো সবাই নিজেদের মতো করে ভাবছি বিয়েটা সারাজীবনের জন্য তাই এখানে প্রিয়া উপস্থিতিটা খুব দরকার। ওর মতামত নিয়ে তারপর না হয় আমরা আলোচনা করি! মায়ের কথায় আজাদ সাই দিল।

মিরা অনেকক্ষন ধরে কথা বলছি গলা তো শুকিয়ে কাট হয়ে গেল আজ এক কাপ চা ও পেলাম না! কি কপাল আমার বলতেই রুমের সবাই হাসতে শুরু করলো অনেক খড়ার মাঝে যেন এক পশলা বৃষ্টি সবার মন ভিজিয়ে দিল

হা হা হা হা মিরা।

শোন আমি অনেকক্ষন আগেই চুলায় চা বসিয়ে আসছি, আলোচনা শেষ হলেই আনতে যাব। মিরার জবাব শুনে আজাদ বললো যাই হোক যাও চা নিয়ে আসারমিরা হুড করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল কারন চুলায় চা বসিয়ে রাখছিলো।কয়েক মিনিটের মধ্যেই মিরা ফিরে আসলো।

ভিতরে হয়তো সব নাস্তা মিরা আগেই রেডি করে রাখছিলে বিস্কুট, চানাচুর, চা এর সাথে আপেল, কমলা,আঙ্গুলও সেমাই প্লেটে রয়েছে। এসবে আরাফের মন নেই, মিরার পিচনে আঁচল ধরে প্রিয়া দাঁড়িয়ে ছিলো, মিরা এগিয়ে গিয়ে নাস্তা গুলো বিছানায় রাখলেন এবার সবার নজর পড়ল প্রিয়ার দিকে।

হলুদ স্যালোয়ার কামিজ, তার উপর সাদা ওড়না, মাথায় দুই বেনি করা লম্বা চুল মনোয়ারা ভাবতে লাগলো..

....চলবে।

সুরাইয়া নার্গিস।

0 Shares

১৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ