আমি তোমার জন্য এসেছি (পর্ব -ষোল)

-প্রিয়াদের বাসায় যাচ্ছি রাস্তায় আছি।

-ওকে। আজাদকে বলো প্রিয়াকে নিয়ে ঢাকায় আমাদের বাসায় বেড়াতে।

প্রিয়ার দাদুমনিকে আমার সালাম দিও।

-আচ্ছা আব্বু।

-ফেরার পথে আমাদের ময়মনসিংহের বাসাটা দেখে এসো নতুন ভাড়াটিয়ারা উঠেছে। ভাড়াটিয়াদের কোন সমস্যা আছে কি না খোঁজ নিও।

-আচ্ছা আব্বু আমি রাখছি প্রিয়াদের বাসার সামনে রিক্সা চলে এসেছে বললো আরাফ।

-ওকে, সাবধানে থেকো।

-আল্লাহ্ হাফেজ।

-আরাফ প্যান্টের পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে ড্রাইভারকে ৫০ টাকার নোট দিল।

-ড্রাইভার জানে এখানের ভাড়া ৩০ টাকা তাই সে নোটটা নিজের কাছে রেখে দিল।

আরাফকে ২০ টাকা ফেরত দিবার জন্য হাত বাড়িয়ে দেবার আগেই আরাফ ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেয়, পুরোটাই রেখে দিতে। -খুশি হল ড্রাইভার, কোমর থেকে লঙ্গিটা পেঁচ খুলে পলি ব্যাগে টাকাটা মুড়ে রাখল খুব স্বযত্নে।

-এখানে বেড়াতে আসছেন স্যার..?

-জ্বী। আপনি বুঝলেন কি করে..?

-দেখতে শহরের বড় সাহেব মনে হচ্ছে! হাতে মিষ্টির পেকেট দেখে।

-ওহ্ আরাফ ভুলেই গিয়েছিলো প্রিয়ার জন্য ঢাকা থেকে মিষ্টি, প্রিয়ার  চকলেট,চিপস কিনে আনছিলো।ছোটবেলায় চকলেট প্রিয়া খুব পছন্দ করছো, হ্যাঁ মামা বেড়াতে আসছি।

-মুচকি হেসে ড্রাইভার সালাম দিল আসসালামু আলাইকুম স্যার বলে চলে গেল।

তিন বছরে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে প্রিয়াদের একতলা বাড়িটা তিনতলা হয়েছে, বাড়ির সামনে ছোট বাগান।

কয়েকটা ফলজ গাছ বেড়ে উঠেছে লেবু, আম,জাম,কাঁঠাল,লিচু চারপাশটা খুব পরিস্কার লাগছে। শহরের মাঝে এমন কোলাহলহীন, সিগ্ধ, নিরিবিলি পরিবেশ আরাফের বেশ পছন্দ।

কয়েক কদম হেঁটে আরাফ প্রিয়ার বাসার সামনে চলে আসছে।

আরাফ দজায় কলিংবেল চাপল কেউ আসছে না।

মিরার আজ হাতের সব কাজ শেষ তাই সেও আজাদের সঙ্গে সবাই একসাথে দুপুরে খাবার খেতে বসল। প্রিয়া দাদুমনির দিকে ইশারা করলো, আজাদ আজ মিরার প্লেটে খাবার তুলে দিচ্ছে। যে কাজটা প্রতিদিন মিরা করে আজ সেই দ্বায়ীত্বটা আজাদ নিয়েছে দাদুমনি ছেলে বউও ভালোবাসা দেখে খুশি হলো। মা! তোমার কিছু লাগবে বললো আজাদ,

না রে বাবা যা প্লেটে দিছিস তাতে আরো এক ঘন্টা লাগবে। তাও হয়ত সব খাবার শেষ হবে না যা খাবার প্লেটের চারপাশে সাজিয়ে রাখছিস।

আহ্! তুমিও যা মা এত খাবার খেতে পারবেন অল্প করে দিতে হয়। মায়ের বয়স হয়েছে হজম এর একটা ব্যাপার আছে, বলেই কিছু খাবার নিজের প্লেটে তুলে নিলেন।

এর মধ্যে কয়েকবার কলিংবেল বেজে গেছে কেউ টের পায়নি নিজেদের মধ্যে আলোচনা চলছে।

এই সময় দরজায় কে আসলো ভিক্ষুক না তো! বলেই দরজা খুলতে যাবার জন্য প্রিয়া উঠে দাঁড়াল।

তুমি খেতে বসো আমি দেখতাছি বলেই মিরা দরজার কাছে গেল।

দরজা খুলতে এত সময় লাগে বাসায় কেউ নেই নাকি এতক্ষন ধরে আওয়াজ করছি। কেউ আসছে না আরাফ কিছুটা বিরক্ত হলো সারাদিনের জার্নিতে শরীর অনেকটা ক্লান্ত।

আসসালামু আলাইকুম আন্টি।

কেমন আছেন.??

হ্যাঁ খুব ভালো বাবা, ভিতরে আস বলেই মিরা হাসল।

আরাফ ড্রইনিং রুমে আসল মিরা দরজা আটকিয়ে দিল ওগো শুনছো আরাফ আসছে..!

আরাফ! প্রিয়া চমকে উঠল ওই গুন্ডা ছেলেটা আসছে! দাদুমনি বললো ওই বাদরটাকে আমার কাছে ধরে নিয়ে আস, এতদিন পর দাদুমনির কথা মনে পড়ল।

আজাদ খাবার টেবিল ছেড়ে ড্রইনিং রুমে আরাফের সাথে কথা করতে গেল, কেমন আছো আরাফ..?

জ্বী ভালো বলেই পা ছুঁয়ে সালাম করলো আরাফ আপনি কেমন আছেন আঙ্কেল.?

ভালো আছি।

দাদুমনি কোথায় আঙ্কেল.? মা ড্রাইনিং খেতে বসছে তুমি ওদিকে আস বলে আরাফের কাঁধে হাত রাখল।

মিরা বেসিনে হাত ধুতে গেল আরাফ এর জন্য নতুন প্লেট নিয়ে আসল।

দাদুমনি কেমন আছেন.? বলেই সালাম করল, ভালো আছি দাদা ভাই কত বছর পর তোমাকে তোমাকে দেখলাম! দাদুমনি আপনাদের কথা সব সময় আমার মনে পড়ে! কিন্তু ব্যস্ততার জন্য আসতে পারি নাই বলেই চেয়ার টেনে বসল।

তোমার বাবা,মা কেমন আছেন.?

জ্বী সবাই ভালো আছেন আঙ্গেল।

মিরা বললো আরাফ তুমি তাড়াতাড়ি যাও হাত পা ধুয়ে ফ্রেশ করে আস আমাদের সাথে খাবে। না আন্টি আপনারা খেয়ে নিন আমি পরে খাব।

ছেলে বলে কি! তোমাকে রেখে আমরা খেয়ে নিব, মানে! আন্টি যা বলছে তাই করো বলেই আজাদ চেয়ার টেনে বসল।

প্রিয়া আজ নীল জামা পড়েছে, কপালে টিপ নেই,নেই বাড়তি কোন সাজ। মাথা পিচনে খোপা করা, কিছু চুল গাল বেয়ে পড়ে আছে চমৎকার লাগছে প্রিয়াকে, অনেক বড় হয়ে গেছে সে।আজ তাকে আর পিচ্চি প্রিয়া বলা যাবে না অনেক বড় হয়ে গেছে কেমন আছো প্রিয়া..?

জ্বী ভালো।

আরাফ ভাইয়া আপনি কেমন আছেন.?

হ্যাঁ, ভালো আছি। বলেই  একবার আরাফের দিকে তাকিয়ে মনে হয় লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে দিল।

আরাফ ওয়াস রুমে গেল  প্রিয়া এতক্ষনে ভাবছে আরাফ ভাইয়া আজ আসবে বলেই হয়ত সকালে কুটুম পাখি ডেকেছিলো প্রিয়া হাসল।  প্রিয়াকে হাসলে আরো সুন্দর লাগে চেয়ে দেখল আরাফ।

আজাদ মায়ের পাশের চেয়ারটাতে আরাফকে বসতে দিল। প্রিয়া খাবার শেষ করে রুমে চলে গেছে এই মাত্র প্রিয়ার হালকা পায়ের নূপুরের আওয়াজটা আরাফ বুঝে নিল।

আন্টি আরাফের প্লেটে খাবার দিল টেবিলে সাজানো হরেক রকম খাবার চিংড়ি মাছ দিয়ে মিস্টি কুমড়ো, পুঁই শাক, গরুর মাংস, ডাল। অনেকদিন পর আরাফ পেট ভরে খেল কারন প্রিয়ারকে না দেখার ক্ষুদাটা তার অনেক বছরের তা আজ পূর্ণতা পেল।

দাদুমনির রুমে আরাফ বিশ্রাম নিচ্ছে রাতের ট্রেনেই ঢাকা ফিরতে হবে কিন্তু প্রিয়াকে বলবো কি করে আমার মনের কথা দেরি করার মতো আমার হাতে আর সময় নেই। বাসা থেকে বাবা,মা ভাই,বোন সবাই ফোনে  বিয়ে করার জন্য বলতেছে তানিয়া না হলেও অন্য কাউকে বিয়ে করতে হবে।

ফোনটা ক্রিং ক্রিং বেজে উঠল ওপাশ থেকে শীলা।

ময়মনসিংহে পৌঁচ্ছো.?

হ্যাঁ। খেয়েছো।

হ্যাঁ, অনেকক্ষন আগে।এখন কি করো..?

বিছানায় শুয়ে বিশ্রাম করছি।তুমি খেয়েছো নতুন বউ..?

হি হি হি হি হি,, মহাশয় নতুন বউ হতে এখনো অনেক সময় দেরি।

আরে! বাদ দেও আমি আগে থেকেই ডাকতে শুরু করলাম রাগ করছো নাকি..?

নাহ্, নতুন বউ ডাকটা শুনতে আমার ভালোই লাগছে তুমি ডেকো।

আচ্ছা তুমি যে কাজে ময়মনসিংহ গিয়েছো তার কতদূর এগুল।

এখনো বলতে পারি নাই, দেখি আমার ভাগ্যে কি লেখা আছে।শোন আমাকে সব জানাবে আমি চিন্তায় থাকবো।আচ্ছা বাবা! ভালো থাকো তুমিও ভালো থাকো।

 

আরাফ শীলার কথা মাঝে রুমে দুবার কেউ এসেছিলো কিন্ত আরাফ তা খেয়াল করে নাই দাদুমনি ভিতরে আসেন।

দাদুমনি আসতেই পিচনে মিরা আন্টিও রুমে ঢুকলেন হাতে নুডলস, পায়েস আর কেক পিঠা প্লেট নিয়ে আসছেন। আন্টি এসবের কি দরকার ছিলো দুপুরে যে খাবার খেয়েছি তাতেই পেট ভরা। আর কিছুই খাওয়া সম্ভব না বলেই, আরাফ বিছানা থেকে নেমে আসলেন দাদুমনিকে ধরে চেয়ারে বসালেন। মিরা নাস্তার প্লেটটা শ্বাশুড়ীর সামনে টেবিলে রেখে দরজার দিকে তাকালেন ভিতরে আস আরাফ জেগে আছে। বলতেই দরজার পাশ থেকে আজাদ আঙ্কেল রুমে ঢুকল সবাই গোলাকার ভাবে বিছানায় বসে পড়ল।

এই শহর,এই পরিবেশ, এই পরিবারের সাথে প্রায় তিন বছর ধরে আত্নার একটা সম্পর্ক গড়েছে আরাফের সাথে। তাই এখানে তার সবাই আপন সবাই রুমে শুধু প্রিয়া ছাড়া কারন সামনে মাসে প্রিয়ার ফাইনাল পরীক্ষা তাই পড়তে বসছে।
আরাফ নাও শুরু করো বলেই পায়েসের প্লেটটা আজাদ এগিয়ে দিল জ্বী আঙ্কেল। পায়েস আমার খুব প্রিয় ছোটবেলা পর্যন্ত ছিলো বড় হবার পর বয়সের সাথে সাথে পছন্দ গুলো চেঞ্জ হয়ে গেছে। তারপরও সামনে দেখতে কয়েক প্লেট খেতে পারি বলেই হেসে প্লেটটা আরাফ হাতে নিয়ে খেতে শুরু করলো।
আজাদ মায়ের হাতে দিল সে নিজেও প্লেট হাতে নিয়ে খেতে শুরু করলো কিন্তু মিরা খেতে পারছিলো না প্রিয়াকে রেখে তিনি নাস্তা খাবেন না তাই একটা পায়েসের প্লেট নিয়ে প্রিয়ার রুমে যাবে পিচন থেকে দাদুমনি বললেন বউমা প্রিয়াকে এখানে আসতে বলো সবাই এক সাথে নাস্তা করবো। আরাফের মনের কথাটাই যেন দাদুমনি মুখে উচ্চারিত হলো জ্বী আন্টি প্রিয়াকে ডেকে নিয়ে আসুন। সারাক্ষন বইয়ের মাঝে মুখ গুজে থাকতে হয়না,মাথাকে একটু বিশ্রাম দেওয়া প্রয়োজন।
আমি প্রিয়াকে আসতে বলছিলাম বললো পরে খাবে তাই জোর করি নাই আচ্চা তুমি যাও দেখ আসে কি না যদি না আসে, বলবে বাবা ডেকেছে বললো আজাদ।
তোমরা শুরু করো আমি প্রিয়াকে নিয়ে আসছি....

.....চলবে।
সুরাইয়া নার্গিস আলিফ।

0 Shares

১০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ