
অনেকদিন আগে একটা ছোট্ট লেখা লিখেছিলাম,নিজেকে চেনা বিষয়ে, অন্যের আয়নায় কি কেউ নিজেকে চেনে? চিনতে হলে আসলে নিজেকেই নিজের আগে জানতে হয়/ চিনতে হয়। আমরা কে কতটা নিজেকে চিনি বা জানি? এক জীবনে গড় আয়ু নিয়ে শৈশব থেকে বয়োঃবৃদ্ধাবস্থা পর্যন্ত এই চেনা-জানা’র দোলাচালে কাটিয়ে দিতে দিতে একসময় টুপ করে সব ছেড়ে ছুঁড়ে নিজ আবাসভূমে গৃহপ্রবেশ করি চিরতরে। মৃত্তিকার উপরিভাগে বিচরনরত সঙ্গি সাথী বন্ধু বান্ধব আত্মীয় অনাত্মীয় তামাম জনগণের কাছ হতে তখন বেরোতে থাকে স্মৃতি থেকে উচ্চারিত ভালো মন্দের প্রশংসাপত্র । এর বিপরীতও তো ঘটে ! এই যেমন আমরা কারো সম্পর্কে অহরহ বলে যাই অমুকে এমন, তমুকে তেমন! কার্যব্যাবহারিক আচরনবিধি পরিমাপক মাপকাঠি আমাদের অধিকার বা অনধিকারে বাঁশের কেল্লায় অবিরত বন্দী করে রেখেই আমরা একে অপরের গুণাবলী-বে-গুণাবলী নিয়ে রসিয়ে রসিয়ে আচার বা চাটনির মত উপভোগ করতেই থাকি। কেউ দ্যায়না এ অধিকার। আমরা আমাদের হামবড়া মনোভাবের যৎকিঞ্চিত মনোটোনাস প্রক্রিয়ার প্রতিফলন ঘটাই মাত্র! একেকজন তখন তাবড় তাবড় মনোবিজ্ঞানী হয়ে উঠি, নিজেকে মানুষ চেনার বা জানার জ্ঞানগর্ভ থেকে। এখানে আরো কিছু শব্দ প্রয়োগ করতে পারলে ভালো লাগতো আমার। আমার ইচ্ছে করছে না এখন আরো কিছু সংযোযন করতে। কেন এই লেখার উৎপত্তি? আসলে বেশ কিছুদিন ধরেই আমি ভীষণ মানসিক অস্থিরতায় কাটাচ্ছি সময়। সার্বিক বাস্তবিক সামাজিক সাংসারিক এবং সর্বোপরি একান্ত ব্যাক্তিগত মানসিক পরিস্থিতীর কারনে। মানসিক অবস্থা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য বহু কিছু করছি, সুফল তেমন পাচ্ছি না। একটার পর একটা অঘটন ঘটেই যাচ্ছে অবিরত। বই পড়ার চেষ্টা,,গান শোনা, ছোট ছেলেকে বললাম- আমাকো সাদা কাগজ পেন্সিল কাটার ইরেজার এনে দে , আমি আঁকাআকি করিনা বহুদিন।
ভুল ভাববেন না কেউ, আমার শখের মধ্যে এই একটা বড় প্রিয় শখ, কাঠপেন্সিলে যা ইচ্ছা তাই হাবিজাবি আঁকাআঁকি। ছেলে এনেও দিলো, পেন্সিল ধরে দেখি…….. আমি রেখা টানতেই ভুলে গেছি। তারপরও প্রিয় কাগজ গুলো আমার চোখের সামনে নিয়ে বসে থাকি। আনাড়ি হাতে নদী,পাহাড়, ঘাস, আকাশ, গাছ, কাঁশবন আঁকার দুঃসাহসে পেন্সিলের ধুসর ছাইরঙা সিস্ ভোঁতা করতে থাকি। আমি দীর্ঘসময় অফলাইনে নেটে থেকে হোমপেইজের নানারকম ভিডিওগুলো দেখে দেখে একসময় বিরক্তি ধরাই নিজেই নিজেকে। বাবল শ্যুটার গেম খেলতে খেলতে কখন যেন অসময়ে ঘুমিয়ে পড়ি।ছোটছেলে এসে চোখ থেকে চশমা খুলতে এলেই জেগে যাই। ছেলেটা আমাকে ভর্তসনা করে বলে ওঠে–‘ এই অসময়ে কেউ ঘুমায়?’ আমি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি। মাঝ রাত্তিরে ড্রইং ডাইনিংএ পায়চারী করতে দেখে মেয়ে আৎকে ওঠে-‘ তুমি আজ সন্ধ্যায় ঘুমাইছো না? তোমারে যদি কালকে ঘুমাইতে দেখি, দেইখো -বুইঝো কি করি?’ আমি হাসি-‘ কি করবি? মেয়ে চোখ রাঙিয়ে বলে -‘ গায়ে পানি ঢাইলা দিবো’ আমি কি করে বলি ওদের — আমিও সব নিয়ম মাফিক ভালো থাকতে চাই। পারছি না কেন? আমি আসলে কেমন?
একজন বন্ধু আছে আমার, প্রায়ই ইনবক্সে টুকটাক কথা বিনিময় হয় তাঁর সাথে। কথার চেয়ে ঝগড়াঝাটি হয় বেশি। স্বভাবতই আমার রাগ বেশির কারনে এ যাবত তিনবার আনফ্রেণ্ড করেছি, আবার বন্ধুটাই রিকোয়েস্ট অনুরোধ উপরোধ…. প্লিজ এ্যাড করে নে’ আবার গালাগালি করি — তোর লাজ হয় না? কেন বার বার রিকোয়েস্ট করিস?
: তোকে তো ছেড়ে যাবো না!
— এই তুই কি এহনো চেনো না আমারে?
: কি বিষয়ে?
— আমার সম্পর্কে তোর ধারনা কি?
: তুই একটা বদমেজাজি নারী
— আর?
: অনুভূতিহীন
–আর?
: নির্দয়, নিষ্ঠুর
–আর?
:তবে তোর কিছু গুণাবলীও আছে
–বে-গুণগুলাই গুইন্না যা
:বললাম তো!
— ব্যস্? এইটুকুই বদগুণ আমার?
: মাথামোটা
— বলতে থাক, আর?
: যা, আর কমু না।
–ওক্কে , গুইন্না রাখলাম।
খুব উপকারে লাগে মাঝে মাঝে এরকম কারো কারো কাছে নিজেকে চিনতে /জানতে পারাটা। কি দুর্দান্ত সাহস আমার বলুনতো! মাথামোটা জ্ঞান নিয়ে আমি কি সব বকে যাই (লিখে) সদর্পে এখানে সেখানে?
আসলে ওই যে ঘাড়ত্যাড়ামী করে একটা কথা সবসময় বলি!
*আমি এমনই…….*
** ছবি গুগল থেকে নেয়া।
১৫টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
আয়নায় নিজে নিজেকে দাঁড় করানো কঠিন কাজ, সেখানে যে আমিকে আমরা দেখতে পাই
সেটি মেনে নেয়া আমাদের পক্ষে অসম্ভব, যদি প্রতারক-চোখে না দেখি। তাই সে কাজটি থেকে বিরত থাকি বেশ বীরত্ব নিয়ে।
অন্য ত্রুটি খোঁজার মত মজার!! কাজ আর দ্বিতীয়টি নেই, নিজের বেলায় অষ্টরম্ভা!!
বন্যা লিপি
চারপাশের মানুষজন আয়নার কাজটা ঠিকই করে ঠিকঠাকমতো, শুধু নিজেরা অস্বিকারের বায়নায় উল্টে দেই আয়নার স্বরুপ। মন্তব্যে অজস্র কৃতজ্ঞতা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আপনি এমনই ভালো, আর এটা নিজস্বতা। যেটা ছেড়ে দিয়ে বেঁচে থাকা অর্থহীন।
শুভ কামনা রইলো।
বন্যা লিপি
ঘরে বাইরে ” আমি এমনই” শুভ কামনা আপনার জন্যেও।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সবার ই একটা নিজস্বতা আছে যা চাইলেও ঝেড়ে ফেলা যায়না। আয়নাতে যতই নিজেকে বের করে দেখার চেষ্টা করি ভুলত্রুটি গুলো শুধরাতে না পারলে লাভ নাই। মানসিক, সামাজিক কোনোকিছুই এখন ভালো নেই। এমন বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার যত ই মান অভিমান হোক আবার ঠিক যোগাযোগ করছে। আপনার এই ঘাড়তেড়ামি, সোজাসাপ্টা খুব ভালো লাগে তবে সামনাসামনি দেখে এমন মনে হয়নি। সবসময় নিয়ম মেনে চলা যায় না মাঝেমধ্যে অনিয়মের সঙ্গে বন্ধুত্ব ভালোই লাগে নয়তো জীবন পানসে হয়ে যায়। শুভ কামনা রইলো অহর্নিশি। 🌹🌹🌹
বন্যা লিপি
ঘাড়ত্যাড়ামী কি আর যেখানে সেখানে, যখন তখন দেখাই দিদি? প্রয়োজনে আমি প্রচুর ঘাড়ত্যাড়া😊😊😊 আবার কখনো সখনো মানিয়ে চলতে আমি খুব সুবোধ।আমি এমনই*
শামীম চৌধুরী
বফু
সবাইকে দিনের শেষে আয়নার সামনে দাঁড়াতে হয়। আর তখনই সে হিসেব কষে ফেলে সারাদিনের কর্ম কি ছিল? সবার কাছে নিজেকে ফাঁকি দিতে পারলেও আয়নার সামনে যখন দাঁড়ায় তখন ফাঁকি দেবার সুযোগ নেই।
আপনি কেমন তা জানলাম।
আপনার বন্ধুটি এক নিঃশ্বাসে বলে দিলেন আপনার বদগুন গুলি। আপনার এই গুন বা বদগুনই হচ্ছে আপনি কেমন? যার এমন গুন আছে সে সরল ও সাদা মনের মানুষ। তার ভিতরে কিছু থাকতে পারে না। মনে হলেই ঝেড়ে ঝুড়ে সব বের করে দিল সাদা করে ফেলে। এরাই মহামানব।
বন্যা লিপি
শা’চ্চু
আমাকে পড়তে পারে সবাই। আমি ভাণ বা ডিপ্লোমেটিক আচরন করতে পারিইনা কারো সাথে কখনো। ঠিক আমি যেভাবে শব্দে লিখে যাই যখন যা কিছু! ঠিক তেমন। আমার আয়নাটার সামনে আমি আমাকে নিয়ে দাঁড়াতে পছন্দ করি নিঃসংকোচে। এটাই আমার স্বকিয়তা বলে বলে মরে যেতে চাই। দোয়া করবেন আমার জন্য।
রেজওয়ানা কবির
মানুষের মন সত্যি খুব অদ্ভুত। যখন মন খারাপ থাকে তখন আসলে পায়চারি করলে, রাত জাগলে , গান শুনলেও সহজে ভালো হয় না। আর নিজেকেতো আয়নায় প্রতিদিন দেখি তবুও নিজেই নিজেকে মাঝে মাঝে চিনি না।তবুও নিজেকে চিনতে পারাটা খুব বড় ব্যপার।আপনার বন্ধু আপনার সত্যিকারের বন্ধু,এইজন্যই আনফ্রেন্ড করার পর ও নক করে, এরকম বন্ধু সবার জীবনে দরকার। যে কিনা শত ঝগড়ার পরেও থেকে যায়।ঝগড়ার মাঝেই ভালোবাসা থাকে।খুব ভাল লাগল আপু লেখাটি। শুভকামনা।
বন্যা লিপি
মাঝে মাঝে ভালবাসা বিরম্বনায় পরিনত হয় আপু। তখন আনফ্রেন্ড করে দেই। মন খারাপের সময় আসলেই কোনোকিছু আর কোনোভাবে ভালো লাগে না।
ভালো থাকবেন আপু।
সুরাইয়া পারভীন
অন্যের চোখে নিজেকে আর কতোটুকু চেনা যায়? আমি/আমরা কেমন তা দেখতে অবশ্যই নিজেদের একটা আয়না থাকা চাই। আর সেই আয়নাতে শুদ্ধ চোখে নিজেকে দেখে চোখ বন্ধ হয়ে না যায় তবে বুঝতে হবে ঠিক আছি।
সময় মাঝে মাঝে যখন এমন বেয়ারা হয় তখন আমার আমি হয়ে উঠি অন্য। না থাকে ঘুম না থাকে খাওয়া দাওয়া না থাকে প্রিয় শখের কোনো কাজে মনোযোগ।
সবকিছু ঠিক হয়ে যাক এই কামনা করছি আপু। সুস্থ থাকাটা বেশি জরুরি। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
সুপায়ন বড়ুয়া
স্বচ্ছ আয়নায় নিজেকে দেখা ভারী মজার।
মাঝে মাঝে হই পুলকিত মাঝে হতাশার।
তাই কম যত পারি দেখি মুখ বড় আয়নার।
আর আনফ্রেন্ড আর ফ্রেন্ড খেলাটা ভারী মজার
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
খাদিজাতুল কুবরা
আপু আপনি যেমন আছেন তেমনই থাকুন। ওতেই আপনার মাধুরি ঝরে পড়ে। আজকাল সবাই খোলসে থাকতে পছন্দ করে এমনকি আমিও। দেখে শুনে চুপ করে থাকি বলিনা।অকপটে সত্যি বলার সাহস সবার থাকেনা।আপনার এই সাদা মনের জন্যই বন্ধুটি আপনাকে ছেড়ে যেতে পারেনা। সামনা সামনি দেখিনি তবুও আপনাকে কতো চেনা লাগে। এই ভালোবাসাগুলি সবাই পায়না।
ভালো থাকুন সবসময় সবার ভালোবাসায়।
আরজু মুক্তা
বদলানোর কী দরকার? স্বকীয়তা নষ্ট হয়। যা মন চায় করুন। দেখবেন, একসময় ভালো লাগছে। ঘাড় তেরামিই ভালো। প্যাঁচ নাই।
শুভকামনা। সুস্থ আছেন, এটাই বড়।
গান শেনাবেন কোনদিন?
তৌহিদ
মানুষ হিসেবে নিজেকে জাজমেন্ট বা মুল্যায়ন করাটা খুব কঠিন। আমরা অন্যকে নিয়ে সমালোচন্স করি কিন্তু আত্মসমালোচনা কতক্জনাই বা করতে পারি? আপনিতো তাও কিছুটা করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভকামনা সবসময়।