আমি ও আমার খেতাবি নাম

আতা স্বপন ৮ মে ২০২০, শুক্রবার, ০৮:৪২:৩১অপরাহ্ন স্মৃতিকথা ১৬ মন্তব্য

আমার পুরো নাম আবু তালেব স্বপন। ব্লগে আতা স্বপন নামে লিখি। আমরা আরো অনেক গুলো নাম আছে। যেমন- মরা, বুতা, পাগলা স্বপন, ম্যাকগাইভার, মোল্লাসাব, তালিবালি এই টাইপের নামগুলো আমার খেতাবী নাম। শেষের দুটি নাম আমার কমস্থল হতে পাওয়া। অফিসে মাঝে মাঝে নামাজ পড়াতাম তাই মোল্লা সাব। আর সহকর্মীদের দেয়া নাম তালিবালি। আমার সাথে কাজ যারা করত তারা ঠিক ঠাক মত কাজ না করলে তাদের নামে বসের কাছে অভিযোগ চলে যেত। তাই আমার কাছে কোন তালিবালি চলেনা । এই ধারনা থেকেই নামরে একাংশের সাথে আলী যোগে অপভ্রংশ নাম তালিবালি।

আমারা ঢাকা শহরের খিলগাঁয়ে সেই ছোট বেলা থেকে বর্তমান নিবাস টংগী আসা আগ পর্যন্ত ভারাটিয়া হিসেবে বিভিন্ন এলাকায় ছিলাম। প্রত্যেক এলাকায় জুটত প্রচুর নতুন নতুন বন্ধু। কিছু এলাকার বন্ধু কিছু স্কুলের বন্ধু । আমার এই নামগুলো তাদের দেয়া উপহার। এই প্রত্যেকটি নামে কত স্মৃতি জড়িযে আছে। আছে কত মজার ঘটনা। আছে কত ইতিহাস।

১৯৮১ সালের কথা আমার বাবা আমাদের নিয়ে খিলগাঁও তিলপাপাড়ায় ২৪৫/এ এই বাসায় ভাড়া আসেন। সেখানে আমার ছোট বেলা কাটে। এ এলাকায় আমার অনেক স্মৃতি আছে।
বিশেষ করে হাকিম ভাই এর খেলাঘার এর কথা আজও মনে পরে। বুড়ো মত হাকিম ভাই । ছোটদের নিয়ে তার কারবার। তার বাসার সামন একটা মাঠ ছিল। একটা পার্কের মত স্লিপার ছিল। তাতে ছোটরা বিকেল বেলা খেলতে যেত। হাকিম ভাই ছোটদের নিয়ে গোল হয়ে বসে বিভিন্ন ছড়া পড়তেন। সেদিন তিলপা পাড়া গিয়েছি। কিন্তু হাকিম ভাই এর সেই বাড়ী আর মাঠ চোখে পড়ল না। সমস্ত পাড়াটা চেইঞ্জ হয়ে গেছে। বড় বড় দালান কোঠা চারপাশে।

কত সৃতি। কত আনন্দ। ও আমার বন্ধুরা তোদের কি মনে পরে রোগা পটকা সেই ছেলেটির কথা। যাকে তোরা নববর্ষের খেতাবী নাম “মরা” দিয়েছিলি। শাহ আলম ভাই আমাদের এলাকার বড় ভাই। এলাকার ছোট পোলাপানদের নিয়ে তার কারবার।

মনে পরে শাহআলম ভাই এর সেই দৌড় প্রতিযোগীতার কথা। এলাকার সব শিশুদের নিয়ে তিনি দৌড় করালেন। দৌড় শুরু হল । সবাই দৌড়ে পৌছে গেল গন্তব্যে। কিন্তু আমি তখনো দৌড়াচ্ছি। কে যেন পাশ থেকে বলে উঠল-
আর দৌড়াইয়া কাম নাই। খেলা শেষ।

প্রতিযোগীতা শেষে দৌড় প্রতিযোগীদের শাহআলম ভাই পুরষ্কার দিলেন। সাথে দিলেন খেতাবি নাম। আমার ছোট ভাই সাঈদ সে প্রতিযোগীতায় ১ম হয়েছে। তার নাম দেয়া হল “দ্রুত”। এমনি ভাবে সবাই সুন্দর সুন্দর খেতাবী নাম পেল। আমি হতভাগা কিনা পেলাম “মরা”। কোথায় আমার ছোটবেলার সেই বন্ধুরা। সাহালম ভাই। নিপু রুপু, বর্না, পাপিয়া। কোথায় তারা?
কোথায় অহিদ, কোথায় বাবু? কোথায় আমার খিলগাঁও বাস স্কুল? হাকিম ভাইয়ের মত সবাই আজ হারিয়ে গেছে।
সবাই হারিয়ে যায়
শুধু সৃতিটা থেকে যায়
বয়ে ফিরি শুধু একা
কেবলই একা।

আামার  স্কুলের বন্ধু  সহপাঠি ছিল সোহাগ। বর্তমানে স্বপ্নের দেশ আমেরিকার নিউইয়ার্ক শহরে। বৌ বাচ্চার ছবি সহ ফেসবুকে পোষ্ট মেরে যাচ্ছে সমানে। আমার বুতা নামটা ওরই দেয়া। কি কারনে যে আমাকে ও এই নামটা দিল। তা ওই বলতে পারবে। হয়তো আমার বুদ্ধি বিবেচনা তার কাছে ভোতা মনে হয়েছে। এই ভোতাটাই আমার নামের প্রথম অংশের শেষ অক্ষর বু আর দ্বিতীয় অংশের প্রথম অক্ষর তা দিয়ে হয়তো প্রকাশ করা হয়েছে। আর এই নামেই ক্লাসে আমি পরিচিত পেয়ে গেলাম।

জিও সোহাগ জিও ।
যুগ যুগ জিও ।
জানিস ওগো দোস্ত আমার
কতখানি তুই প্রীয়।

সোহাগ ছাড়াও আরেক জন আছে যে আমার এই নামটি আমার বাসায় মানে পরিবারের কাছে চাউর করেছে। আর সে হল - শাহজাহান ।

ভাল ছাত্র হিসাবে স্কুলে খুব পরিচিত। রোল-১ আবার ক্লাস ক্যাপটেন। একারনে দেমাকই ছিল দেখার মতো। সবসময় থাকতে একটা ভাবের মধ্যে। ভাল ছাত্রদেরতো একটু ভাব থাকবেই এটা কোন দোষের না। ভাব নিলেও আমার সাথে ভাব নিয়া কোন দোস্তই সুবিধা করতে পারে নাই।

কারন আমি যে বুতা
জায়গা মতো দিতাম গুতা

আমাদের পাড়াতেই থাকে সে। নোয়াখালী বাড়ী । আমাদের বাড়ী ফেনী। সে হিসাবে আমাদের দেশী বলা চলে। আর এ কারনে আমাদের পরিবারের সাথে তার পরিবারের একটা সখ্যাতা ছিল। আমার বড় ভাই আবু নাসের আমার সাথেই পড়ে ফলে সেও আমার দোস্তদের দোস্ত। শাহজাহান একদিন আমাদের বাসায় গেল আমার খোজেঁ। তখন বাসায় আমি ছিলাম না।বড় ভাই ছিল।
নাসের বুতা কই?
ওতো বাসায় নাই।
পিছন থেকে বড় আপা বলে উঠে বুতাটা কে?
বড় ভাইয়া বলল ও স্বপনরে চায়।
ওর নাম বুতা বুঝি। এই বলে আপার নাকি সেকি হাসি। ভাগ্যভাল আমি তখন ছিলাম না।
আমার বাসায় ব্যাপরটা সবাই স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছে তাই রক্ষা। তা না হলে উঠতে বসতে এই নামে ভ্যংচাতো সবাই।

জেবুন্নেসা আপা আমাদের স্কুলের বাংলা টিচার। একুট বয়স্ক টাইপ আপা। শুদ্ধ উচ্চারনে টেনে টেনে কথা বলেন। আমাদের পাড়াতেই দুতলার এক বাসায় থাকতেনে। আমাকে খুব স্নেহ করতেন। ওনার ক্লাসে কেউ কখনো উত্তম -মধ্যম খায় নি। ওনি ঠান্ডা মেজাজের মহিলা। ঠান্ডা ভাবে বকাবকি করতেন। সবাই তার ক্লাসটি স্বস্থির সাথে করতো। ওনি আমাদের বাংলা শিক্ষিকা ছিলেন। ওনার স্নেহের কারনে তার সাথে আমার ভাল জমত মানে ভালই তর্ক করতাম। এই জমাজমির কারনেই বোধ হয় এই ক্লাসের একমাত্র ছেলে আমি, যে কিনা ওনার হাতেও ধোলাই খেয়েছি।
ঘটানাটা এমন- আপা পড়াচ্ছেন আমাদের বাগধারা। উভয় সংকট মানে কি তোমরা জান?
জানি আপা স্বর্বস্বরে আমরা বলালম। এর অর্থ দুদিকে বিপদ।
হ্যাঁ! ঠিকই আছে! তবে এ অবস্থা হল এমন বিপদ যখন আসে তখন চতুদিক থেকে আসে। তখন মানুষ খবু অসহায় হয়ে পরে। কিংকর্তব্যবিমুর হয়ে যায়।
আমি বললাম কথাটা বুঝলাম না আপা
আপা বললনে, কি বুঝনি বলতো তালেব?
মানে আপা বিপদ চর্তুদিক থেকে আসলে অসহায় হবে কেন? বুদ্ধি দিয়া বাচব। মেকগাইভারের মত। উল্লেখ্য তখন টিভিতে ম্যাকগাইভার সিরিয়াল চলছিল। আপার সাথে এই ঘটনার পর থেকে ক্লাসের একটি মেয়ে আমাকে ম্যাকগাইভার ডাকা শুরু করলো। কি মছিবত? কোথায় কলতলা আর কোথায় কলকাতা। যাক ঘটনায় ফিরে আসি। আপা আমার কথা শুনে রাগলেন না মোটেই। খুবই ঠান্ডা মেজাজের। ঠান্ডা ভাবেই বকা দিয়ে বললেন, অর্বাচিনের মত কথা বলবেনা। ধর তুমি রাস্তাদিয়ে যাচ্ছ তোমার সামনে একটি ট্রাক আসল কোথায যাবে তুমি?
কেন আপা ডাইনে যাব নয় বামে
তোমার ডাইনে একটি মাইক্রো আর বামে একটি রিক্সা কোথায় যাবে তুমি?
কেন আপা রিক্সার দিকে যাইতে হইবো। মাইক্রো আর ট্রাকের নিচে পড়লে জীবন শেষে কিন্তু রিক্সার নিচে পইরা কেউ মরে না।
আমার উত্তর শুনে আপা ঠাস করে চড় মারলেন গালে। ঠান্ডা মেজাজেই মাড়লেন কিন্তু মাড়টা সলিট ছিল। তার সে মার আমার চিরদিন সুখ র্স্মতি হয়ে আছে থাকবে। তাকে খুব মিস করি। কোথায় আমার সেই আপাটি। বেঁচে আছেন তো?

আমার শৈশবের সেসব বন্ধুরা আজ কে কোথায় আছে জানিনা। তবে এফবির বদৌলতে কয়েকজনের সন্ধান মিলেছে। বন্ধুরা তোরা কোথায় কতদিন তোদের মুখে শুনিনা এই মধুর নামে ডাক। অপেক্ষায় রইলাম ফেসবুকে কোন একদিন কোন এক সময় কোন বাল্যবন্ধু বলে উঠবে আরে মরা যে, তুই মরা না। মনে পড়ে যাবে তিলপাপড়ার কথা। কিংবা কোন স্কুলের বন্ধু বলে উঠবে - তুই বুতা না।

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ