আমি এমনই (ই ম্যাগাজিন)

রাফি আরাফাত ২১ মে ২০১৯, মঙ্গলবার, ১২:৪৫:৫৭অপরাহ্ন গল্প ১৯ মন্তব্য

ছোটবেলায় বাবা বলতো,সব সময় হাসিখুশি থাকবি।।মা বলতো,তোর কি মন খারাপ??একটু হাসনা!!তোর মুখে হাসিটা খুবই মানায়।।আচ্ছা যারা সবসময় হাসে তারা কি সবসময় ভালো থাকে??নাকি হাসি আমাদের চাহিদা পূরন করে।। না কিছুই করেনা।।কিন্তু তারপরও সবার এক কথা কেন??বাবা হাস একটু।।বাবা হাসতেছিস না কেন??হাহাহাহহাহা হায়রে হাসি।।সে হাসছে, তুমি হাসছো,আপনারা হাসছেন।।আচ্ছা এমন কেউ আছে, যে কখনোই হাসেনি??হাহাহা!!এই কথাটাও হাসতে হাসতেই বলতে হবে যে,হাসে না এমন কেউ নাই।।আমিও হাসি।।আমার বাবা মা আমাকে হাসতে শিখিয়েছে।।তাই আমিও সবার মতো করেই হাসি।।

..
সেদিন ক্লাসে আসতে দেরি হইলো আমার।।স্যার বললো দেরি কেনো??আমি বললাম,হাহাহাহা স্যার সাইকেল নষ্ট হয়েছিলো।।স্যার বললো,আচ্ছা জায়গায় গিয়ে বস।।আমি হাহাহা করে হাসতেছিলাম,আর রুম এ ঢুকতেছিলাম।।স্যার বললো, এ দ্বারা,তুই হাসতেছিস কেনো??আমি বললাম,হাহাহা স্যার আমার তো সাইকেলই নাই।।স্যার বললো, যা এখনি ক্লাস থেকে বার হয়ে যা বেয়াদব।।আমি বললাম স্যার,হাহাহা আজ ছুটিটা খুব দরকার ছিলো।।কি সবাই হাসতেছেন তাইনা।।আমি এমনই।।
..
ধিরে ধিরে বড় হয়ে গেলাম।।ভার্সিটিতে ভর্তি হইলাম।।কিন্তু হাসিটা আমার জীবনের একটা অংশ।।সবসময় হাসিনা আমি।।কিন্তু সবসময় মুখে হাসিটা ধরে রাখার চেষ্টা করি।।আপনারা জানেন কি,সবাই হাসতে পারে না।।কিন্তু এতো হাসির পরও আমার জীবনে আরেকটা অংশ আমার জন্য অপেক্ষা করছিলো,সেটা হলো,জব/চাকরি।।আসলে কি জানেন,আজকাল হাসলে, আমি বাচাল,পাগল।।না হাসলে আমার মাঝে রস নাই,আমি আধুনিক নই।।আবার জব করলে,আমি জ্ঞানি,না করলে বেকার,বাপের টাকা গুলো নষ্ট করছি।।আচ্ছা একটা কথা বলেন তো,হাসলেও সেটা আমি,না হাসলেও সেটা আমি।।জব করলেও সেটা আমি,না করলেও সেটা আমি।।কিন্তু আমাকেই আপনারা কত ভাবে ভাগ করলেন।।অথচ আমি,আমাকে,আমার আমিতে খুজতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে ক্লান্তির কাছে ক্ষমা চাইছি সেই কবে।।
..
সেদিন ভার্সিটিতে প্রথম আমি নিলাকে দেখি।।দেখেই হাসে ফেলি৷। কি ভাবছেন হাকাউ হাসতেছি।।হাহাহা না।।নিলা আমার পাশে বসে ছিলো।। ওর বাবা কল দিলো,আর ও বললো, আমি বাবা ক্লাসে পরে কথা বলি।।অথচ সে আমার সাথে বসে আছে।।এ মিথ্যা বললো এই জন্য আমি হাসতেছিনা,আমি হাসতেছি যে,চা খাওয়া কি অপরাধ কিছু নাকি যে বাবাকে বলা যাবেনা আমি চা খাচ্ছি।।হাহাহহাহা কি অদ্ভুত তাই।।আমার হাসি দেখে নিলা বললো, আপনি কি পাগল,এভাবে হাসছেন কেন??আমি বললাম, আমি জানি,আমি হাসি তাই আমি পাগল।।নিলা বললো,আপনি হাসছেন কেন??আমি বললাম,সকাল থেকে হাসিনি তাই হাসতেছি।।হাহাহাহাহা।।
..
এরপর অনেকদিন নিলার সাথে আমার দেখা হয়েছে।।কিন্তু কেন জানি কাকতালীয় ভাবে হলেও যখনই ওর সামনে আসি,তখনই আমি কোন না কোন কারনে হাসতে থাকি।।শেষ পর্যন্ত একদিন নিলা নিজে এসে বললো,আচ্ছা তুমি যে হাসো শুধু, তুমি কি জানো এতে অনেকে তোমাকে অনেক রকম ভাবে??আমি বললাম, হুম জানি তো।।নিলা বললে তাহলে হাসো কেন??আমি বললাম,তুমি হাসো না কেন??নিলা বললো, হাসিনা মানে।।কি জন্য হাসবো??আমি বললাম, আমি হাসবো না কেন??কি জন্য হাসবো না।।নিলা কিছু না বলেই চলে গেলো।।
..
এরপর নিলার সাথে আমার প্রায় কথা হইতো।।কিন্তু সব কথার শেষ কথা আসতো, রাফি একটু কম করে হাস।।আজ পহেলা বৈশাখ।।নিলা আমাকে নিতে আমার বাসায় আসলো।।আমি গ্যাঞ্জি আর প্যান্ট পরে আসছি৷।আমাক দেখেই যেন আকাশ থেকে পরলো।।বললো এসব কি পরে আসছিস।।আমি বললাম কেন??ও বললো, আজ পহেলা বৈশাখ।। আজ আমাদের একটা ঐতিহ্য আছে।।আমি বললাম সেটাই তো।।নিলা বললো মানে,আমি বললাম,আমি ভাবছি যে তুই আমাক একটা পাঞ্জাবি গিফট করবি আজকে।।কিন্ত তুই যে দিবিনা এটা আমি কিভাবে বুজবো।।আসলে তার আগের দিন রাতে রাফির বাবা মারা যায়।।কিন্তু সে কাউকে বলেনি কারন সবার আজকের দিনটা নিয়ে অনেক প্লান।।তার একটা কথা সবার প্লান শেষ করে দিবে তাই সে আর বলেনি।।
..
আপন বলতে বাসার কাজের চাচা ছাড়া রাফির আর কেউ নাই।।মা তো সেই হাসি শিখিয়ে দিয়েই চলে গেছে।।কিন্তু আজ কেন জানি হাসলে নিজেকে খুব বেহায়া মনে হচ্ছে।।কি করবো এখন আমি,কিছু তো করতে হবে।।এইসবই ভাবতেছিলাম।।হঠাৎ নিলা বললো, ওই কি ভাবতেছিস।।আমি বললাম না কিছুনা।।নিলা সহ হাটতেছিলাম।।হঠাৎ নাঈম এর সাথে দেখা।।নাঈম আমাদের পাশের মহল্লায় থাকে।।নাঈম বললো,রাফি আঙ্কেল কেমন আছে আজকে??আমি বললাম, নেই।।নাঈম বললো, নেই মানে??আমি বললাম,সেটাই তুই যেটা ভাবতেছিস।।নাঈম কিছু না বলেই চলে গেলো।।নিলা বললো, কি হইছে আঙ্কেলের??আমি বললাম পেটে ব্যাথা,হাহাহা।।
..
তারপর দিন আমি বাবার ছবি দেখতেছিলাম সকাল বেলা।।হঠাৎ দেখি নিলা আসছে।।আসেই বলে, তুই এমন কেন করলি??আমি বললাম আমি কি করলাম।।তুই কথাটা বললি না কেন কালকে।।আমি বললাম, খুশির দিনে তোদের মন খারাপ করতে চাইনি।।নিলা বললো, তুই কি মানুষ?? কেন জানি খুব কান্না পাচ্ছিলো।।পানি ধরে রাখতে পারলাম না।।নিলা আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলো।।আমি নিলাকে বললাম,তুই আমাকে একটা চাকরি দিতে পারবি।।নিলা বললো, সব হবে,চিন্তা করিস না।।
..
ভার্সিটি জীবনটাও শেষ হয় গেলো।।একটা চাকরির খুব দরকার তখন আমার।।হাসিটা কেন জানি এখন অনেক খুজেও পাইনা।।আর চাকরি এখন ঘুমের ভিতরেও তাড়া করে।।কি অদ্ভুত তাই না।।নিলার বিয়ে ঠিক হলো।। আমাকে এসে বললো, আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।।তুই কিছু কর।।আমি বললাম, যাক অনেকদিন পর পেট পুরে খেতে পারবো।। কবে রে তোর বিয়ে৷।নিলা বললো, একটু সিরিয়াস হয়ে ভাব প্লিজ।।আমি বললাম আরে আজব তোর বিয়ে হবে না।।এখানে ভাবা ভাবির কি আছে।।নিলা কিছু না বলে চলে গেলো।।কিন্ত হা আমি বুজতে পারলাম, নিলা আমাকে পছন্দ করে।।কিন্তু কি করবো আমি??আমি তো বেকার।।
..
নিলাকে কিছু না বলে ওর বাবাকে গিয়ে বললাম,আমি নিলাকে বিয়ে করতে চাই।।ওর বাবা বললো, কি করো তুমি।।আমি বললাম চাকরি খুজছি৷।ওর বাবা খুব হাসলো।।আমি হাসিটা সহ্য করতে পারছিলাম না।।উঠে চলে আসলাম।।পরশু নিলার বিয়ে।।কেমন আছে ও সেটা জানিনা আমি।।কিন্তু আমি সত্যি ভালো নেই।।
..
আজ সকালে নিলা আসলো আমার বাসায় হঠাৎ করেই।।হাতে একটা টিফিন বাটি।।আমি অনেকটা অবাক হলাম।।নিলাকে বললাম কেমন আছিস??নিলা কিছু বললো না।।আমি বললাম জানিস নিলা,মা যখন আমাকে ছেড়ে চলে যায়, তখন বাবা বলেছিলেন, আমি তো আছি।।একদম কাদবি না।।আর তোর মা তোকে হাসি শিখিয়েছে না।।সবসময় হাসবি।।কিন্তু বাবা যখন চলে যায়,তখন বাবা বলছিলো,আচ্ছা আমি যাওয়ার পর তুই হাসবি তো।।সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারবি তো।।তুই কি খাবিরে বাবা।।তুই তো পানিও নিতে পারিস না।।আমি তোক একা করে দিচ্ছি তাইনা৷।কি করবো বল,আমার তোকে রাখে যাওয়ার ইচ্ছে করছে না।।তুই হাসবি সবসময়।।
..
কিছুক্ষন থেমে আবার বলা শুরু করলাম,জানিস নিলা বাবা যাওয়ার পর তুই প্রতিদিন আমার ঘুম ভাঙ্গায় দিতি।।আমাকে নাস্তা খাওয়ার কথা মনে করে দিতি।।কিন্তু তুই চলে গেলে আমার কে এসব মনে করে দিবে বলতে পারিস।।জানিস আমি না তোকে খুব ভালবাসি।।তুই চলে গেলে আমি একদম একা হয়ে যাব জানিস।।আচ্ছা তোর বর কি আমার সাথে কথা বললে রাগ করবে??নিলার চোখ দিয়ে পানি পরতেছিলো অবিরাম গতিতে।।
..
কিছু না বলে নিলা আমাকে জোরায় ধরলো।।এরপর বললো, আজ আমার গায়ে হলুদ।।তুই আমাকে হলুদ দিবি না??আমি বললাম কেন দিবো না।।ও টিফিন বাটি খুললো।।আমি হলুদ দিয়ে দিলাম ওকে।।ও বললো,জানিস রাফি আজ আমি কি জন্য আমি তোর হতে পারছি না??আমি বললাম কেন??নিলা বললো, একটা চাকরির জন্য।।জানিস রাফি তোর হাসিটা আমার খুব পছন্দের।।আচ্ছা আমি যাওয়ার কি তুই এমন করেই হাসবি৷।আচ্ছা আমি চলে যাওয়ার পর তুই কি ভালো থাকবি।।কাদতে কাদতে নিলা উঠে চলে যায়।।
..
আজ নিলার বিয়ে।।আমি গেলাম নিলার বিয়েতে।।নিলা আসলো আমার সাথে দেখা করতে।।নিলা বললো, কেমন খাইলি।।আমি বললাম, অনেক রে।।অনেক দিন পর আজ শান্তি করে খাইলাম।।হাহাহা।।নিলা একটা কার্ড আমাকে দিয়ে বললো,এই ঠিকানায় কাল যাস।।চাকরি দিতে পারে।।আমি বললাম আচ্ছা।।নিলা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, আমি চলে যাচ্ছি রে।।কাল থেকে সকাল করে তোকে আর ডাকবো না।।আমাদের গল্পটা এখানেই শেষ।।আমি বললাম,একটা কথা বলি??নিলা বললো, হুম বল।।আমি বললাম,না গেলে হয় না।।দেখ না আমি কত একা।।কেউ আছে আমার বল।।বাবাও তো নাই।।তুই গেলে আমি কার সাথে গল্প করবো বল।।নিলা বললো,হাসবি সবসময়।।আচ্ছা সবসময়ই হাসবো।।কখনও কাদবো না।।খালি হাসবো।।
..
কাল আমি নিলার দাওয়া ঠিকানায় ইন্টারভিউ দিতে গেছিলাম।।আমাকে জিজ্ঞেস করা হলো, তোমার একটা ভালো গুন আর একটা খারাপ গুন বলো।।আমি বললাম,ভাল গুন হলো,আমি সবসময় হাসি।।আর খারাপ গুন হলো,আমি সবসময় হাসি।।ওরা কিছু বুজলো না।।কিন্তু আপনারা যারা পুরা গল্পটা পরছেন তারা হয়তোবা বুজে গেছেন।।

[সবসময় হাসিখুশী থাকবি,এই কথাটা বলার মানুষগুলো হয়তো জানে না,তারাই তার হাসিখুশি থাকার কারণ]

0 Shares

১৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ