ও আসার আগ মুহুর্তেই ব্যবসাতে বড় ধরণের প্রতারণার শিকার হই, বলতে গেলে কপর্দক শূন্য, পনেরো জনের ফ্যামিলি নিয়ে আমি অকূলপাথারে, এরপরেও কষ্ট করে ওর মাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যায় প্রতি মাসে, শেষ মুহূর্তে ডাক্তার ম্যাডাম বললো, "বাচ্চার পজিশন ভালো টেকছেনা, মনে হয় সিজার করতে হবে"।
আমি তখন বজ্রাহত, কি করবো বুঝতে পারছিলামনা, আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব সব দূরে দূরে যদি টাকা পয়সা চেয়ে বসি, কিছু আত্মীয় যারা পাশে ছিলো তাদের অবস্থাও তথৈবচ, ইচ্ছা থাকলেও তাদের উপায় নেই, আর কেউ দিলেও আমি নেবোনা, ইগো আমার বড়ই বেশি।
দিনক্ষণ ঠিক হয়ে গেছে, নির্ধারিত দিনে ভোরে ওর মাকে নিয়ে আমরা সবাই গেলাম চট্টগ্রামের মেমন হাসপাতালে, অল্প কিছু টাকা কোনক্রমে নিয়ে গেলাম, আল্লাহ্ আল্লাহ্ করছি যেন কোনভাবেই যেন সিজার না হয় কিন্তু বিধিবাম, সকাল সাতটায় খবর এলো সিজার করতেই হবে এবং আমার সীমার বাইরে টাকা লাগবে।
মাথা চেপে ধরে গাড়ীর ভিতরে গিয়ে বসে থাকলাম, কি করবো বুঝতে পারছিনা, সবাই এসে জিজ্ঞেস করছে কি ডিসিশন নিলাম?
কিছু সময় পর বললাম, ওকে নিয়ে চলো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে।
সবাই ওর মাকে ধরাধরি করে এনে গাড়ীতে তুললো, দুলাভাইয়ের গাড়ীটা আমিই ড্রাইভ করছিলাম, আমাদের গাড়ীর পিছ পিছ বেবি টেক্সিতে আরো এক দঙ্গল আসছে।
অবশেষে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি করলাম ওর মা মানে আমার স্ত্রীকে, ভর্তির পরপরই ওর মাকে নিয়ে গেলো ওটিতে, আমার শাশুড়ি আমাকে ডেকে এক কোণে নিয়ে গিয়ে পকেটে বেশ অনেক গুলো টাকা নিজে গুঁজে দিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করলেন, জানেন এইভাবে না দিলে মেয়ের জামাই নেবেনা, বড়ই একরোখা জামাই উনাদের, আমার চোখের জল তখন বাঁধ মানছেনা।
ঘণ্টা খানেক পর খবর এলো একটা মেয়ে হয়েছে, আমাদের সাথে আসা সকল আত্মীয় পরিজন খুশিতে আত্মহারা, কেউ একজন গিয়ে মিষ্টি নিয়ে এসে বিলি করছে, পরে শুনেছি আমার শাশুড়ির কান্ড।
প্রথমে মেয়েকে ভিতর থেকে এনে সবাইকে দেখানো হলো, মেয়ের মা এখনো ওটিতে, ঘন্টা খানেক পর মেয়ের মাকে আনা হলো বেহুঁশ অবস্থায়, এনেস্থিসিয়া দেওয়ায় সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
নার্সরা এসে মেয়েকে নিয়ে গেলো নতুন বাচ্চাদের রাখার স্থানে, পিছ পিছ গেলো আমার ছোট খালাম্মা এবং আমার আম্মা, উনারা দূর থেকে বাচ্চা পাহাড়া দেবেন কারণ শুনা যায় হাসপাতাল থেকে বাচ্চা চুরি হয়ে যায়, এরপর থেকে যতদিন হাসপাতালে ছিলো ও আর ওর মা, ততদিন উনারা মেয়েকে পাহাড়া দিয়ে রাখতেন দিনরাত ২৪ ঘন্টা।
আজ আমার সেই মেয়ের জন্মদিন, এমন দিনেই আমার সেই কষ্টকর দিনের কথা গুলো মনে পড়ে যায়, আপনারা আমার মেয়ের জন্য দোয়া করবেন যেন সে প্রকৃত মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে পারে।
শুভ জন্মদিন মা নাফিসা নাওয়ার আখাঙশা, বাপি তোকে অনেক ভালোবাসে।
২১টি মন্তব্য
মাহমুদ আল মেহেদী
শুভ জন্মদিন। পৃথিবীর সব বচ্চারাই যেন সুস্থ থাকে সুখে থাকে।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই
সঞ্জয় কুমার
জন্মদিনের শুভকামনা এবং শুভেচ্ছা
ইঞ্জা
ধন্যবাদ দাসা
ইঞ্জা
★দাদা
মোঃ মজিবর রহমান
শুভজন্মদিন। মামনি যত কষ্টের মধ্যেই আসুক। ভাকল থাকুক। সুস্থ থাকুক।
ইঞ্জা
দোয়া রাখবেন ভাই
মোঃ মজিবর রহমান
আল্লাহ সুস্থ ও ভাল রাখুক। আমিন।
ইঞ্জা
আমীন
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ফেবুকেই পড়েছি। শুভ জন্মদিন মামণি -{@
ইঞ্জা
দোয়া রাখবেন ভাই
আগুন রঙের শিমুল
(3 (3
ইঞ্জা
দোয়া রাখবেন ভাউ
মায়াবতী
আমি না জন্মদিনের উৎসব টাকে মন থেকে নিতে পারি না কারণ কেনো যেনো মনে হয়, আহারে সুন্দর এই জীবন থেকে আবারো একটি বছর শেষ হয়ে গেলো । তারপর ও মেয়ের বাবার হবার অতুলনীয় অনুভূতি পড়ে আনন্দে মন ট ভরে গেলো ইঞ্জা ভাই। অনেক অনেক দোয়া মামনি টার জন্য ।
-{@ -{@ -{@
ইঞ্জা
ধন্যবাদ আপু, আপনাকে বলে রাখি আমিও জন্মদিনের সময় কোন উৎসব পালন করিনা, জাস্ট উইশ করি, দোয়া রাখবেন আপু।
নীলাঞ্জনা নীলা
শুভ জন্মদিন নাফিসা সোনা 🎂 🍦 ❤ 🌹
অনেক বড়ো হও, মানুষের মতো মানুষ হও।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ অশেষ আপু, আশীর্বাদ করবেন।
জিসান শা ইকরাম
অনেক সুন্দর উপস্থাপনা করেছেন ভাই।
শুভ জন্মদিন নাফিসা মা,
বড় হয়ে সাফল্যের আকাশকে ছুঁয়ে দাও (3
ইঞ্জা
আন্তরিক ধন্যবাদ ভাইজান।
ছাইরাছ হেলাল
মা-মনিকে অনেক অনেক দোয়া ও ভালোবাসা এমন দিনে।
শত বিপত্তিতে ও আল্লাহ আপনাকে অটল অটুট রাখুক এই কামনা রাখি।
ইঞ্জা
অনিঃশেষ ধন্যবাদ ভাইজান।