আমার মা

ইঞ্জা ১১ নভেম্বর ২০১৯, সোমবার, ০৮:১৬:৩৫অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৩৬ মন্তব্য

 

১৯৯০ সনের কথা, তখন আমি সিলেটে আমাদের গাড়ীর শোরুম দেখতাম, ওখানেই থাকতাম এক হোটেলে দৈনিক ১৫০ টাকা ভাড়ায় আমার আরেক স্টাফ সহ, সেখানে শোরুম দেখভালের সাথে সাথে পড়াশুনাটাও চলছিলো সমান গতিতে।
সারাদিন অফিস, গাড়ী ডেলিভারি ইত্যাদিতে ব্যস্ত থেকে সন্ধ্যায় শ্রান্ত আমি ফিরে যেতাম হোটেলে,কিছুক্ষণ রেস্ট করেই পড়তে বসতাম, এই ছিলো আমার নৈমিত্তিক কর্ম।
মাসে দুই মাসে চট্টগ্রাম ফিরে যেতাম মাকে দেখবো বলে।
আম্মা আমার জন্য ভালো ভালো আমার পছন্দের পদ গুলো রান্না করে রাখতেন, সাথে আমার অনুপস্থিতিতে যা কিছু ভালো রান্না হয়েছিলো তার সবই তুলে রাখতেন আমার জন্য।

সিলেটের অফিস শেষে হোটেলে ফিরে এলাম, শরীরটা কেমন যেন লাগছে, আমি আমার স্টাফকে বললাম রুম বয়কে বলে মশার এরোসল দেওয়ার জন্য, সিলেটের মশা গুলোর সাইজ বেশ বিশাল, মশাদের হাতিই বলতে পারেন।
রুম বয় এসে এরোসল দিয়ে গেলে আমি ঘুমিয়ে গেলাম, রাতে খাওয়ার জন্য স্টাফ আমাকে ডাকতে গিয়ে দেখলো প্রচন্ড জ্বর আমার, ও দ্রুত আমাকে জাগিয়ে দিয়েয়ে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে কিছুক্ষণ মাথায় পানি ঢাললো, এরপর রুমে শুয়ে দিয়ে দৌড় দিয়ে বেরুলো নাপা আনার জন্য।
ও ফিরে এসে দেখে আমি বসে আছি, জ্বর ঘাম দিয়ে পড়েছে।

পরদিন সকালে একদম ঠিকঠাক, অফিস সেরে আসার আগেই জ্বর উঠলো।
এইভাবে দুইদিন হতে দেখেই ও পরদিন দ্রুত টিকেট কাটতে গেলো ট্রেনের, টিকেট কেটেই সে সহ রওনা দিলাম ঐ রাতেই, তখন ছিলো পাহাড়িকা ট্রেন, আমি শুয়ে আছি স্লিপিং কুপে, প্রচন্ড জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকছি, আমার স্টাফ (জাবেদ মামা) বোতলে করে আনা পানি দিয়ে মাথায় পট্টি দিচ্ছে।

ভোরে পোঁছে গেলাম চট্টগ্রামে, জাবেদ মামা আমাকে বাসায় পোঁছে দিলো, আব্বা আম্মা দুজনেই অবাক হটাৎ করে আমাকে দেখে।
সেইরাতেই ডাক্তার এলেন, ব্লাড টেস্ট দিলেন, ব্লাড টেস্টেই ধরা পড়লো আমার ম্যালেরিয়া হয়েছে।
আম্মা শুনেই অস্থির হয়ে উঠলেন, জ্বর উঠলেই বালতি কে বালতি পানি ঢালছেন মাথায়, পুরা শরীর টাওয়েল পানিতে ডুবিয়ে মুছে দিচ্ছেন।

ডাক্তার ম্যালেরিয়ার ঔষধ দিয়েছেন, কিন্তু জ্বর নামেনা, বরঞ্চ আরও সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছে দেখে ডাক্তারই শঙ্কিত হয়ে উঠলেন।

এই অবস্থা দেখে আম্মা আর থাকতে পারলেননা, আম্মা দৌড় দিলেন উনার এক ফকির বাবার কাছে, আব্বা এসে আমার মাথাটা উনার কোলে নিয়ে বসে আছেন।
ঘন্টা দুয়েক পর আম্মা ফিরে এসে আমাকে একটা পান দিয়ে বললেন, নে এইটা খেয়ে ফেল, ফকির বাবা দিয়েছেন।
আমি যেহেতু এইসব বিশ্বাস করিনা, তবুও আম্মার মন রক্ষার্থে মুখে পুড়ে দিলাম।

মনে হয় মিনিট দুয়েক চিবিয়ে খেয়ে ফেলে দিতে চাইলে আম্মা বললেন, সব খেয়ে ফেলতে।
আমি বাধ্য ছেলের মতো কোঁৎ করে গিলে ফেললাম, গিলে ফেলার একটু পরেই ওয়াক ওয়াক করে বমি করতে লাগলাম, এতো বমি আমার কখনো হয়নি, আমার বেডরুমের পুরা ফ্লোর বমিতে ভরে গেলো, বমি বন্ধ হলে আম্মা আমাকে কুলি করিয়ে শুইয়ে দিয়ে কাজের লোককে দিয়ে পুরা রুম পরিস্কার করিয়ে দিলেন আর এদিকে আমি ধরধর করে ঘামছি, সেইদিন যে জ্বর পড়লো আর জ্বর উঠেনি।

এ কারো কেরামতি কিনা জানিনা, শুধু জানি এ ছিলো আমার মার অগাধ বিশ্বাস, উনার বিশ্বাসের কারণে আমি একদম সুস্থ হয়ে গেলাম।

এমনি ছিলেন আমার মমতাময়ী মা, যার মমতার তুলনা হয়না।
এমনি মমতাময়ী মা আমার ২০১৭ ১০ই নবেম্বর আমাদেরকে একদম এতিম করে দিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
দোয়া করি আল্লাহ্ রহমানুর রহিম আম্মাকে যেন জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন।

রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সাগীরা।

0 Shares

৩৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ