রাত ১:২৫। ঘুমানোর চেষ্টা করছি। এখন চোখ ভেঙ্গে ঘুম আসার কথা কিন্তু ঘুম আসছে না। কোথাও একটা গান বাজছে। মিউজিক টা খুব পরিচিত কিন্তু সেটা শুনতে ইচ্ছে করছে না। তাহলে কি করা যায়! ফোনটা হাতে নিয়ে জানালার পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। যদিও ঠান্ডা বাতাসের জন্য সমস্যা হতে পারে কিন্তু ও সব এখন মাথায় কাজ করছে না। চেয়ার টেনে বসে পড়লাম জানালার কাছে। ওর সাথে একটু কথা বলা দরকার। মানুষের মত জড় পদার্থরাও যদি কাঁদতে পারতো তাহলে সম্ভবত কাউন্টডাউন এর এই শেষ সময় সেই সবচেয়ে বেশি কাঁদতো কিংবা জানি না হয়তো মানুষের মত সেও কান্না গিলে ফেলতো!
“আমি তোমার গায়ে একটু হাত রাখি? খুব রাগ করবে? তোমার মাঝে দিয়ে শেষ বারের মত রাতের আকাশ টা দেখে নেই? দক্ষিন থেকে আসা বাতাস টা একটু গায়ে মাখি? প্রিয় রাস্তাটা আর ওর পাশে ল্যাম্পপোস্ট? ওদের কে একটু দেখে নেই? আচ্ছা পাখিরা রাত জাগে? শীতকালে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়ার সময় কি ওরাও মন খারাপ করে, না ঘুমিয়ে বসে থাকে? শোন? এই পাশ দিয়ে যে পাখি গুলো উড়ে যায় প্রতিদিন, যাদের সাথে আমার দেখা হতো রোজ, কাল কি তুমি ওদের একবার বলে দেবে আমি আর এখানে থাকি না? আমি আজ সকালেই চলে গেছি? আচ্ছা শোন প্রতিদিন যে চাঁদটা আমায় টেনে টেনে নিজের আলো দেখায় তাকে কি একবার বলে দেবে তার সাথে আমার এই ঘরের সময় শেষ? সূর্য এসে আমাকে না দেখলে কি মন খারাপ করবে? ওকে আমার নতুন ঠিকানা বলে দিও প্লিজ। ও হ্যা! প্রজাপতি! প্রত্যেক গরমে যে প্রজাপতি গুলো এরুমে আসে ওদেরকেও মনে করে বলে দিও কিন্তু যে আমার ঠিকানা বদলে গেছে। মরার পরে যত্ন করে শরীর তুলে রাখার সেই মানুষ টা এখানে থাকে না। তাই এবার না মরে বাঁচতে শিখুক। জানো আমার তো খুব করে জানতে ইচ্ছে করে আমার ঠিকানা বদলে গেছে শুনে কে কে আমায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে?
আচ্ছা ওদের কথা তো বুঝলাম। তুমি? তুমি কি আমায় আমার মত করে মনে রাখবে? আমার নামে কি একটা ফাইল বানিয়ে যত্ন করে তুলে রাখবে? মাঝে মাঝে সেই ফাইলের কিছু স্মৃতি কি তোমায় কষ্ট দিবে? কিংবা আনন্দ? কিভাবে আমি বৃষ্টি ধরতাম তোমার মাঝ দিয়ে সে মনে থাকবে তোমার? আচ্ছা অনেক দিন পর যদি আবার আসি আমি তাহলে আমায় চিনবে তুমি? আচ্ছা আমার আগে কি কেউ তোমাকে এভাবে বলেছে? আচ্ছা থাক জানি বলবে না। আমার পরে কে আসবে এখানে এটা নিয়ে কি তোমার মাঝে মাঝে চিন্তা হয়? যেই আসুক তাকে আমার কথা বলবে না খবরদার। আর আমার সাথে তার তুলনাও করবে না কখন ও।আমার মত সে হবে না কিংবা তার মত আমি।
আচ্ছা বলতো ব্যালকনি সাথে কি তোমার টেলিপ্যাথিক উপায়ে কথা হয়? আমার আর সময় হবে না, ওকে একটু বলা দরকার ও আমার অনেক প্রিয় ছিলো, ঠিক তোমার মত প্রিয়। ওকে প্রিয় বলেছি বলে কি রাগ হচ্ছে? না হওয়াই উচিৎ কারন ও আমার প্রথম দিকের বন্ধু ছিলো; যখন তুমিও ছিলে না। সে তুমি ভুলে গেছো? আচ্ছা আমি যখন তোমার মধ্যে দিয়ে বাহিরে দেখতাম তখন কি তোমার হিংসা হতো? জানো তো হিংসা করা ভালো নয়!
ভালো থেকো প্রিয় জানালা, ঘুমাতে গেলাম।
খুব করে মিস করবো তোমাদের!!! আমায় না হয় এক চিমটি মিস করো তোমরা। আমার তাতেই চলে যাবে!
৩২টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
আমি আজ রাত ১:২৫ পর্যন্ত জেগে থাকবো। ঘুম পেলেও চোখ টেনে টেনে জানালার পাশে গিয়ে বসবো। এরপর দেখি নিদেনপক্ষে একটা জানালার পাল্লা নিয়েও যদি লিখতে পারি।
অদ্ভুত সুন্দর লেখা বুবু। তুই বোধহয় নিজেও জানিস না তুই কতো ভালো লিখিস।
লেখাটা প্রিয় করে রেখে দিলাম। মাঝে মাঝে ঘুরেও আসবো যদি ছোঁয়াচের মতো কিছু পাই…
মেহেরী তাজ
তোমার ঘুমের সাথে বিশ্বাসঘাতকাতা করো না বুবু। ১:২৫? তুমি? সে মরে যাবে। বেচারা ঘুম। :p
নীহারিকা
আহা জানালা! বেচারা যদি জানতো তাকে মিস করে কেউ কবিতা লিখেছে। কিন্ত একে ফেলে যাও কোথায়? বাসা বদল?
মেহেরী তাজ
বাসা বদল শুধু নয় শহর বদলও বলতে পারেন আপু।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
গুড বাই জানালা।চমৎকার অনুভুতি। -{@
মেহেরী তাজ
ধন্যবাদ ভাইয়া।
নীলাঞ্জনা নীলা
হলের জীবন কি শেষ পিচ্চি আপু? অনেক কষ্ট হয় প্রিয় রুমটা ছেড়ে আসতে। কতো কিছু যে মনে করিয়ে দিলো আপনার এই লেখাটা। জড় পদার্থ বলেই যে বোঝেনা, এ কথা আমি কেন জানি কখনোই মেনে নিতে পারিনা। ওরাও বোঝে বদল।
আপনার কষ্ট হচ্ছে। জানি। লেখাটা পড়ে আমার নিজেরই অনেক খারাপ লাগছে।
মন ভালো থাকুক। -{@
মেহেরী তাজ
হ্যা আপু শেষ। খুব কষ্ট হচ্ছিলো রুমটা ছেড়ে আসতে।
ধন্যবাদ আপু।
নীলাঞ্জনা নীলা
পিচ্চি আপু জীবনে ফেলে আসা শুরু হলো মোটে। অমন দিন আমারও তো ছিলো।
অনেক ভালো থাকুন।
মেহেরী তাজ
আপু ভয় ভয় লাগে। আপনার কথাতে তো আর ও বেশি ভয় লাগছে।
ভালো থাকুন আপনিও।
মৌনতা রিতু
তুই সত্যিই খুব ভাল লেখিস। মন খারাপ?
ছেড়ে চলে যাবি বলেই এমন চমৎকার এক লেখা উঠে এসছে।
তোর ঠিকানা আমরা ঠিকই খুঁজে নিব। সত্যিইরে, এই জানলাগুলো আমাদের কতো কিছুর সাক্ষী। কাউকে খোঁজার সাক্ষী, নির্ঘুম রাতেরও সাক্ষী।
ভাল থাক। (3 -{@
মেহেরী তাজ
ভাবীজান অন্য সব কিছুর সাথে এটা ও একবার ভাবো যে এই জানালায় বসেই তোমার খুব প্রিয় কোন মানুষের সাথে পরিচয় হইছে।
কেমন লাগবে বলো?
জিসান শা ইকরাম
লেখাটা একটু বেশীই ভাল হয়েছে,
দীর্ঘ দিন মাস বছর একস্থানে থাকি আমরা অস্থায়ী ভাবে, তারপরেও কজন আমরা এমন করে ভাবি?
আজ যে স্থানটি অনেক আপন, আগামী পাঁচ বা ততোধিক বছর পরে সে স্থানটিই অনাহুত অতিথির মত মনে হবে।
হোস্টেল জীবন বা কলেজ জীবনও এমনই।
অন্য একজনের জড়’র লেখার শানে নযুল হয়ত এই লেখা 🙂
মেহেরী তাজ
দাদা some one told me” । if i returns after longtime within Taz, whynot Taz within somebody else?”
এটা শুনে অনেকটা শান্তি পাইছি।
ও আচ্ছা আগে শানে নযুল তারপর লেখা??? ( কাওকে বইললেন না, আমিও ভাবছিলাম এই বিষয় নিয়ে :))
জিসান শা ইকরাম
অভ্যস্থ হওয়া হোস্টেল জীবন শেষে নতুন জীবনে ভাল থাকিস সারাক্ষণ।
আজকাল আমি আর কাউকেই ব্লগে আসতে তারা দেই না 🙂
যে যার নিজের মত আসবে, বা আসবে না।
মেহেরী তাজ
এতো বলার কি আছে। যে আসতে চাইবে আসবে যে চাইবে না সে আসবে না।
ধন্যবাদ দাদা।
মোঃ মজিবর রহমান
জানালা আমার জানালা মন সেথায় গাঁথে সময় অসময়ে জানালা ধরে দাঁড়ানো, হেলান দিয়ে ঘর বন্ধ চক্ষু বাহির পানে অপলক নয়নে চেয়ে থাকা, কো ভাবনা ভাবে , কত স্বপ্ন বুনি আন্দাজে সেই এক দারুন সময় মনে [পড়ে কত কি??
এক জানালায় এতো কথন লেখক লেখে পড়ুয়া পড়ে তৃপ্তি পেলাম।
\|/ আনন্দে আজ নাচে মন্টা।
মেহেরী তাজ
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
ইঞ্জা
আমিও একসময় রুমের জানালায় বসে রাস্তা, রাস্তার মানুষ, ল্যাম্পপোস্ট সহ সব কিছুই খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতাম, ভালো লাগতো। 🙂
মেহেরী তাজ
এখন দেখেন না কেনো ভাইজান? ভালো লাগে না?
ইঞ্জা
ঠিক ধরেছেন আপু, এখন যান্ত্রিকতা ছাড়া আর কিছু দেখিনা বলেই আকাশ দেখি, রাতের আকাশ।
মেহেরী তাজ
ভাইজান আমার জানালায় যান্ত্রিকতা ছিলো না। ওটা অসাধারণ ছিলো।
ঠিক আছে ভাইজান সেই ভালো, আকাশ দেখুন। আকাশ দেখলে মন ফ্রেশ হয়। শান্তি শান্তি লাগে।
আবু খায়ের আনিছ
রজনীগন্ধার গন্ধ সব সময় সুন্দর, তবে আজকের গন্ধটা অদ্ভুত কারণেই ভালো লাগছে। চেয়ারটা টেনে জানালার পাশে বসেছি, বাইরে মিষ্টি একটা বাতাস বইছে। পাশের বাসার পিচ্চি মেয়েটা গান গাইবার চেষ্টা করছে, তাকে শুধরে দিচ্ছি বড় কেউ। একটা মিষ্টতা আছে সেই কন্ঠে, ইচ্ছা জাগছে তাকে ডেকে এনে সিড়ির বারান্দায় বসে গান শুনি, কিন্তু এই ঘুটঘুটে অন্ধকারে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও যখন সুরটা ঠিক করতে পারছে না তখন বাধ্য হয়েই বোধ করি বড় মেয়েটা গেয়ে উঠল। আহা! কি সেই সুর…….. প্রশান্তির একটা শীতল বাতাস এসে লাগে গায়ে, সুরের র্মুছনায় হারিয়ে যেতে চায় মন বিহোরে। যে রবীন্দ্রনাথে আমি শান্তি খুজেঁ পাই সেই রবীন্দ্র গেয়ে উঠল মেয়েটা। যে পথ দিয়ে চলে এলি, সে পথ এখন ভুলে গেলিরে, কেমন করে ফিরবি তাহার দ্বারে, মন মনরে আমার।
এই রকম লেখা পড়লে এমন গল্প লেখা কোন বিষয় মনে হয় না……………… কতটা ভালো লেগেছে লেখা বুঝে নিবেন এবার আপু।
মেহেরী তাজ
অনুভূতি মন্তব্য? বাহ বেশ সুন্দর।
ধন্যবাদ ভাই।
ছাইরাছ হেলাল
অসুখ ছোঁয়াচে,
তাই বলে ভাল লেখাও!!
মেহেরী তাজ
ছোঁয়াচে কিছু থেকে ভালো কিছু হইলে ছোঁয়াচে ভালো। 😀
প্রহেলিকা
কি সুন্দর করে বলে গেলেন সব। জানালা দেয়ালকেই মাঝে মাঝে নিবিড় বন্ধু মনে হয়। খুব ভালো লেগেছে লেখাটি
মেহেরী তাজ
আপনাদের ভালো লাগাতেই আমার লেখার স্বার্তকতা।
ধন্যবাদ আপনাকে।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
দক্ষিণা জানালা নামে আমারও একটি কবিতা আছে। ভালো লাগলো আপনার লেখাটি। -{@
মেহেরী তাজ
এই ব্লগে আছে সেই কবিতা?
ধন্যবাদ আপনাকে।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
না, এখনও এই ব্লগে দেয়া হয়নি। (y)
নীরা সাদীয়া
জানালা আমারো বেশ প্রিয়। লেখাটা ভাল লেগেছে।