আমার ছেলেবেলার কত মজার স্মৃতি না রয়ে গেছে, যা বলে শেষ করা যাবেনা, এমনই কিছু স্মৃতি আজ তুলে ধরছি আপনাদের জন্য।
ঘটনাঃ ১
বয়স হয়ত ছয় সাত হবে, আমার ফার্স্ট কাজিনরা জীপগাড়ি (ছাদ ছাড়া) কিনেছে, সেটাই নিয়ে কক্সবাজার যাবে।
ছোট বলে আব্বা তো যেতেই দেবেনা, কাজিনরা বলে কয়ে নিয়ে গেলো সাথে।
প্রথম দিন কক্সবাজার পোঁছেছি বিকেলের আগে আগে, প্রথমেই ড্রাইভার জীপগাড়ি সি বীচের বালির মধ্যে নামিয়ে দিয়ে সাই সাই করে চালাতে লাগলো, আমাদের সে কি আনন্দ, জীবনের প্রথম একটা গাড়ী নিয়ে বীচে নেমে গেছি, বুঝতেই পারছেন আনন্দ কেমন হতে পারে।
একসময় ড্রাইবার গাড়ী পানির পাশাপাশি, বলতে গেলে পানির উপর দিয়েই চালাচ্ছে, বেশ ঘুরাঘুরির পর হটাৎ জীপের চাকা ভেজা বালিতে গেলো আটকে, গাড়ীর চাকা বারবার স্লিপ কাটছে কিন্তু ফোর হুইল গাড়িটা আর উঠেনা।
বড় কাজিন গিয়ে লোকজন ডেকে নিয়ে গাড়ি ধাক্কা লাগালেন, আমি ছাড়া সবাই ধাক্কাচ্ছে, দেখা গেলো গাড়ি আরও বালিতে দেবে যাচ্ছে, এদিকে জোয়ার শুরু হয়ে গেছে, গাড়ী তুলতে না পারলে পুরা গাড়ীই পানির নিচে ডুববে।
কেউ একজন দৌঁড়ে গেলো ক্রেন আনার জন্য, একসময় ক্রেন এলে গাড়ী টেনে তোলা হলো।
সবাই হাফ ছেড়ে গাড়িতে উঠে বসে ফিরে এলাম পুরাতন সাইমন হোটেলে।
পরদিন সবাই হৈ-হুল্লোড় করতে করতে বীচে গেলাম, সবাই পানিতে নামছে দেখে আমারও আগ্রহ হলো পানিতে ঝাপাঝাপির কথা কিন্তু পানিতে নামার মতো কোন কাপড় আমার আনা হয়নি, তাহলে নামবো কি করে?
কাজিন সব এক জোট হয়ে কুবুদ্ধি দিতে লাগলো সব খুলেই পানিতে নামবো, আমি তো রাজিই না, একসময় কুবুদ্ধি মনে ধরলো, আশে পাশে কোন মানুষ নেই, তখনকার সময় মানুষ এখনকার মতো যেতোনা।
আমি পুরো নাঙ্গা হয়ে দিলাম দৌঁড়, পানিতে শুয়ে পড়লাম, ঝাপাঝাপি করছি, এই সুযোগে বড় কাজিন আমাকে ক্যামেরা বন্দী কিরে নিলো।
এখনো সেই ছবি বড় কাজিনের এলবামের শোভা বাড়াচ্ছে।
ঘটনাঃ ২
তখন প্রচলিত ছিলো, ভূমিকম্পের সময় পায়ে সমস্যা আছে এমন কারো পা টেনে ধরলে এবং আরেক পা দিয়ে চেপে ধরলে পায়ের সমস্যা ঠিক হয়ে যায়।
একদিন হটাৎ ভূমিকম্প শুরু হলে আমার নানা আমাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে পা দিয়ে চেপে ধরলেন আর আমাকে বললেন, "এই টান দে, টান দে", আমি তো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছি, বলেন বুঝে উঠার আগেই ভূমিকম্প ফুরুৎ।
না দিলে এক বকা, " শালা তোকে বললাম তুই টান, অথচ তুই বেয়াক্কেলের মতো চেয়ে রয়েছিস, যাহ তোকে দিয়ে কিচ্চু হবেনা"।
আমি অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর হয়ে রইলাম।
ঘটনাঃ ৩
নানার শখ হলো নাতি নাতনিকে সাঁতার শেখাবেন, নানার শ্যালক মানে আমার আম্মার মামাদের বড় একটা পুকুর আছে, দিঘির চেয়ে ছোট হলেও পুকুর হিসাবে বড়ই, সেইখানেই নিয়ে গেলেন, আম্মার মামা মানে আমার আরেক নানা টায়ার টিউব নিয়ে রেডি, আমরাও রেডি।
গোলমাল লাগলো যখন শুনলো আমি ফুল প্যান্ট পড়ে নামবো, নানাদের মাথায় হাত, ছোট নানা খুঁজে পেতে এক আন্ডারওয়্যার এনে দিয়ে বললেন, "এইটা পড়ো"।
শুনেই আঁতকে উঠলাম, পারলে ভৌঁ দৌঁড় দিই।
বড় নানা (আম্মার বড় মামা) খ্যাঁক করে মুরগীর মতো ধরে জোর করে ধরে পড়তে বাধ্য করলেন।
কি আর করা, বাধ্য হয়ে রওনা দিলাম পুকুর ঘাটে, লজ্জায় আমি মাথা তুলতে পারছিলাম না, নানা আমাদেরকে টিউব ধরিয়ে দিয়ে পানিতে নামিয়ে দিলেন।
আমরা সাঁতার শিখছি, ইতিমধ্যে পাড়ার পোলাপাইন সব হাজির তামশা দেখতে, কিছু পোলাপাইন তো আরেক কাঠি বাড়া, তখন ৭০৭ নামের সাবান বিক্রি হতো যার টিভি এড বেশ পপুলার ছিলো, যে এডে ৭০৭ গানের সাথে সুইমিংপুলের পানিতে ঝাম্প করতো।
সেই শয়তান পোলাপাইনও সেই স্টাইলে ৭০৭ বলেই পানিতে ঝাপিয়ে পড়তে লাগলো, বুঝতেই পারছেন টার্গেট আমি।
ঐ দিনের পর তওবা পড়ে আর যায়নি সাঁতার শিখতে।
সমাপ্ত।
৫৩টি মন্তব্য
সাবিনা ইয়াসমিন
আমি প্রথম 😊😊
ইঞ্জা
😊
মোঃ মজিবর রহমান
খ্যাঁক করে মুরগীর মতো ধরে জোর করে ধরে পড়তে বাধ্য করলেন। হা হা হা
এলাও সাতার সেহেন ন
ইঞ্জা
না ভাই। 😂
মোঃ মজিবর রহমান
আর দরকার নাই। আল্লাহ ভাল রাখুক সবাইকে।
ইঞ্জা
আমীন
সুরাইয়া পারভীন
চমৎকার স্মৃতি রোমন্থন। শেষে কি না নেঙ্গু হয়েই সমুদ্র স্নান।
ইঞ্জা
তখন তো ছোট ছিলাম আপু, ছবি দিয়েছি, দেখেছেন নিশ্চয়।
সুরাইয়া পারভীন
হা হা হা হা হা
দেখেছি তো ভাইয়া। মজা করলাম তো
ইঞ্জা
হি হি
ছাইরাছ হেলাল
যাক অবশেষে পেলাম আপনাকে!
আহা সেই সব স্মৃতি,
তবে সেই ছবিটা দিলে মন্দ হতো না। শুধু শুধু অ্যালবামে পড়ে আছে;
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আমিও এইটাই বলি
ইঞ্জা
ওরে বাবারে….. 😄
ইঞ্জা
মান সম্মান আমারও তো আছে ভাইজান। 😜
জিসান শা ইকরাম
নেঙ্গু হয়ে সমুদ্র স্নান এর ছবি দেখতে চাই। বাচ্চা ছবি, সমস্যা কি? 🙂
ইঞ্জা
ভাইজান আর বইলেন না, বড়ই শরম পাবো।
মোহাম্মদ দিদার
সোনালি সে দিন গুলি গেছে হারিয়ে।
এস.জেড বাবু
দুটো স্মৃতি নানা বাড়ির, খুউব ভালবাসেন উনাদের। উনাদের সকলের জন্য শুভকামনা এবং দোয়া।
চমৎকার স্মৃতিচারণ, নিরেট শৈশবের প্রতিরূপ। বেশ ভালো লাগলো। তবে বড় তাজিনের অ্যালবাম দেখার ইচ্ছেটা রয়ে গেল।
ইঞ্জা
নানা নানীদের বড় নাতি ছিলাম, স্বাভাবিক ভাবেই ওদের আদরে বড় হয়েছি।
ঐ ছবি দিলে আর ব্লগে আসতে হবেনা আমার। 😃
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ছেলেবেলার মজার স্মৃতি রোমন্থন। আরো ছবি দিতে পারতেন তাহলে লেখাটা আরো জমতো। ধন্যবাদ ভাইয়া
ইঞ্জা
আপু ঐ সময়কার দুইটা ছবিই আছে আমার কাছে, একটা দিলাম আর আরেকটি দিয়ে ইজ্জত ডুবাতে চাইনা। 😀
সুপর্ণা ফাল্গুনী
🤭🤭🤭🤭🤭 ঠিক আছে। সমস্যা নেই। ভালো থাকুন
কামাল উদ্দিন
আপনার বড় কাজিনের এ্যলবামের শোভা বাড়ানো কক্সবাজারের সেই ছবিটা জাতি দেখতে চায় 😛
ইঞ্জা
জাতি দেখলে হইবো, মোর কি মান সম্মান নাই? 😀
কামাল উদ্দিন
বড় ভাই, আমিও তো হেইয়াই কই 😀
সাদিয়া শারমীন
খুব মজার স্মৃতি। পড়ে ভালো লাগলো।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ, আপনাদের ভালো লেগেছে এই অনেক।
নিতাই বাবু
শেষ পর্যন্ত কি সাঁতার শিখেন নি? যদি না শিখে থাকেন, তো সবাই মনে হয় গোল্লায় গেল। আমার বিশ্বাস আপনি সাঁতার জানেন।
ভালো লাগলো দাদা। আপনার লেখা পড়ে আমিও আমার ছোটবেলার স্মৃতিতে হারিয়ে গিয়েছি।
ইঞ্জা
দাদা, এখনো সাঁতার জানিনা এই দুঃখ।
আমাদের সবারই এমন কিছু স্মৃতি আছে, লিখে ফেলুননা আপনারটা।
নিতাই বাবু
আমি আমার জন্ম থেকে এপর্যন্ত জীবনের ঘটনাবলী লিখতে শুরু করছি। আশা করি আগামী কয়েকদিনের মধ্যের পর্বে পর্বে প্রকাশ করবো। সাথে থাকবেন।
ইঞ্জা
অপেক্ষায় রইলাম দাদা
ফয়জুল মহী
আপনাকে একরাশ ভালোবাসা ভাই।
ইঞ্জা
আপনার জন্যও ভালোবাসা ভাই। ❤
সুপায়ন বড়ুয়া
ভারি মজার মজার গল্প জানলাম
সাথে আরও আশায় থাকলাম।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ দাদা। 😊
জিসান শা ইকরাম
শেষ পর্যন্ত নেংটু হয়েই ঝাপিয়ে পরলেন সাগরে! হা হাহা
মজা পেলাম খুব।
সাতার কি শেখাই হয়নি ?
ছোট বেলার কত যে স্মৃতি আছে! আপ্নার কিছু স্মৃতি জেনে আনন্দ পেলাম খুব।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
ভাইজান, সেই ছবি দেখলে এখন নিজেরও হাসি পাই, ছবিতে নিশ্চয় দেখছেন কত ছোট ছিলাম।
আর সাঁতার, ঐ দিনেই ইস্তফা দিয়ে ব্যাক টু প্যাভিলিয়ন হলাম যে আর শেখায় হয়নি।
ধন্যবাদ ভাইজান।
নাজমুল হুদা
স্মৃতির মধ্যেও লুকোচুরি। সব খুলে বুঝে পানিতে ঝাঁপাইয়া পড়ার মাঝেও কী যেন কার অনুপস্থিতি।
স্মৃতি হোক জীবনের অনুপ্রেরণা।
ইঞ্জা
কার অনুপস্থিতি পেলেন ভাই, খুলে বলুন?
নাজমুল হুদা
হা হা হা হা, সেটা বলতে গেলে আমি আপনি দুজনেই লজ্জা পাবো। আমি বুঝে নিছি শৈশব এমনেই হয়।
ইঞ্জা
হি হি হাঁ হাঁ ধন্যবাদ ভাই।
সঞ্জয় মালাকার
চমৎকার স্মৃতিচারণ, নিরেট শৈশবের প্রতিরূপ। বেশ ভালো লাগলো দাদা।
ইঞ্জা
আন্তরিক ধন্যবাদ দাদা
সঞ্জয় মালাকার
নতুন বছরের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা দাদা, শুভ কামনা।
ইঞ্জা
আপনাকেও শুভেচ্ছা ও শুভকামনা দাদা
রুমন আশরাফ
এমন স্মৃতি কখনও ভোলার নয়। অতীত অতীত হয়ে যায়, কিন্তু স্মৃতি সর্বদাই বর্তমানেই বিরাজ করে। সুন্দর স্মৃতি রোমন্থন করেছেন ভাই।
ইঞ্জা
সত্যি বলেছেন ভাই, ধন্যবাদ।
সঞ্জয় কুমার
ছেলেবেলার স্মৃতি আসলেই অনেক মজার, পড়ে মজা পেলাম৷
আমারও মনেহয় এমন একটা নাঙ্গা ছবি ছেলেবেলায় তোলা আছে, চাচাতো বড় ভাই তুলেছিলো, আপনার ছবিটার কথায় মনে পড়লো৷
ইঞ্জা
স্বাভাবিক ভাবে ছেলেবেলায় কে না নাঙ্গা ছিলোনা, এতো জগতের নিয়ম, ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
মাহবুবুল আলম
সত্যিই অপূর্ব স্মৃতিজাগানিয়া পোস্ট।
পড়ে নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হলাম!!
ইঞ্জা
ধন্যবাদ প্রিয়জন, স্বাভাবিক ভাবেই আমরা সবাই ওই দিনগুলো পার করে এসেছি বলে নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হই।
সাবিনা ইয়াসমিন
আমি শিউর, সেদিন যদি ফুল প্যান্ট পরে পানিতে নামতেন তাহলে সাতার শেখা কেউ ঠ্যাকাতে পারতো না। নানার জন্যেই এমন হলো 🙇🙇
ইয়ে মানে, আমিও ওসব সাতার -ফাতার শিখিনি। ভালোই হয়েছে, আমাদের দু’ ভাইবোনের। শীতে কোথাও ঘুরতে গেলে পানিতে নামতে হবে না 😀😀
ভাইজান, এ্যালবামের সুশোভিত ছবিটাই দিতেন, সোনেলাও আপনার ছবিটা যত্ন করে রেখে দিতো 😂😂
ইঞ্জা
সমস্যা হলো ফুল প্যান্ট পড়ে সাঁতার শিখতে গেলে সমস্যা হয়, এই জন্যই ৭০৭।
এলবামের ছবি দিলে তো আর ইজ্জত থাকবেনা আপু :p