নিদ্রা হইতে জাগিয়া দাঁত মাজিতে মাজিতে মস্তিষ্কে এক দুষ্ট বুদ্ধি উদিত হইলো।বাজারের যে দিনকাল তাহাতে 'সস্তা' শব্দখানা এখন দুর্লভ হইয়া পড়িয়াছে।তাহার পর ও আজকের দিনখানা বিনা খরচে পার করিবার বুদ্ধিখানা মস্তিষ্কে ধারণ করিয়া বাসা হইতে বাহির হইলাম। সকাল ১০.০০ টা বাজিয়াছে। দিবসের প্রথম আহার করা হইয়া উঠে নাই  অদ্যবধি। এক বন্ধুর বাসগৃহকে টার্গেট করিলাম আহার সমাপনের জন্য।তাহার বাসগৃহে পৌঁছাইয়া দেখিলাম সে তাহার প্রাতঃরাশ সারিতেছে। আমাকে দেখিয়া সে সানন্দে আমাকেও আমার প্রাতঃরাশ সম্পন্ন করিতে অনুরোধ করিলো। দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়া গেলো, আমিও যারপরনাই আনন্দিত। সকালের খরচখানা বাঁচিয়া গেলো। কিছু সময় বিশ্রাম নেওয়ার পর সিনেমা হলে গিয়া সে আমাকে একখানা বাংলা সিনেমা দেখার অফার করিলো। সিনেমাটা শোনা যাইতাছিলো চরম হিট হইয়াছে। বন্ধু এত আদর করিয়া আপ্যায়ণ করিলো, না গিয়া কি হয়! না করিলে বন্ধু নির্ঘাৎ দুঃখ পাইবে। সিনেমার শো শুরু হইবে ১২ টার দিকে। আমরা দুজনা শো এর দশ মিনিট পূর্বে হলে উপস্থিত হইলাম। তাহার বাসার সন্নিকটবর্তী সিনেমা হল বলিয়া হাঁটিয়াই চলিয়া আসিলাম। বন্ধু আমাকে টিকিট কাটিতে বলিলো।আমি এখন কি করিবো! টিকিট কাটিলে আমার ত খরচ হইয়া যাইবে, সাথে অর্থকড়িও সঙ্গে আনি নাই। আমি তৎক্ষণাৎ আমার ফোনখানা নিয়া ব্যস্ত হইয়া পড়িলাম।কাউন্টার থাকিয়া একটু দূরে সরিয়ে ফোনে কথা বলার অভিনয় শুরু করিয়া দিলাম। শো এর সময় পার হইয়া যাইতেছে দেখিয়া বন্ধু আমার নিজেই টিকিট ক্রয় করিয়া ফেলিলো।ইহা দেখিয়া আমি হাঁপ ছাড়িয়া বাঁচিলাম।

সিনেমা দেখিবার ফাঁকে বন্ধু আমার বোমা ফাঁটাইলো আমার কর্ণ কুহুরে। সিনেমা দর্শণ শেষ হইলে তাহাকে দুপুরে খাওয়াইতে হবে। হায় হায়, কি হইবে এখন আমার! ভাবিতে ভাবিতে সিনেমা দর্শনের ইতি ঘটিবার ১০ মিনিট পূর্বে ফোনটা কানে দিয়া একটুখানি অভিনয়ের ছলে বন্ধুকে বলিলাম, আমার এক আত্মীয় দূর্ঘটনায় কবলিত হইয়াছে।আমাকে এক্ষুণি বাহির হইতে হইবে। এই বলিয়া তাহার কথার অপেক্ষা না করিয়া হল থাকিয়া বাহির হইয়া গেলাম। মধ্যাহ্নভোজনের সময় প্রায় শেষের পথে।কি করিবো ভাবিয়া ভাবিয়া ব্যাকুল হইতেছিলাম। হঠাৎ একখানা বিবাহ বাড়ির ফটক আবিষ্কার করিলাম। মস্তিষ্কে তড়িৎ বিক্রিয়া ঘটিলো। বাহিরে দাঁড়াইয়া কিছুক্ষণ অপেক্ষা করিতেই কানে বাজিলো, বরের গাড়ি চলিয়া আসিয়াছে। ক্ষণিকের অপেক্ষার পর দেখিলাম বরযাত্রী সহ বর হাজির। আমিও তাহাদের ভিড়ে নিজেকে সমর্পণ করিলাম। এই মুহূর্তে আমিও একজন বরযাত্রীর সদস্য। পেট পুরিয়া ভক্ষণ করিয়া উক্ত অনুষ্ঠান হইতে বাহির হইয়া সন্নিকটবর্তী পার্কে গিয়া বসিলাম। এখন আমার বিশ্রাম লইবার সময়। রাত্রিবেলার আহার সমাপন করিতে পারিলেই আমার খরচ হীন দিবস সার্থক হইবে। ভাবিতেছিলাম কি করিবো? কাহার গর্দানে বন্দুক চাপাইয়া রাতের আহারখান করিবো। হাঁটিতে হাঁটিতে আকস্মিকভাবেই একটা মন্ডপ দেখিতে পাইলাম।  খোঁজ খবর নিয়া জানিতে পারিলাম কাহার যেন শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান। আমার কপাল হইতে চিন্তার রেশ কাটিয়া গেলো। রাত্র আট ঘটিকা নাগাদ উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত হইয়া রাত্রির আহার সম্পন্ন করিলাম। আহার শেষ করিয়া খুশীমনে আমি আমার বাসস্থানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হইলাম। তাড়াতাড়ি বাসস্থানে পৌঁছাইতে আমি একখানা সরু গলিপথে ঢুকিতেই বিদ্যুৎ চলিয়া গেল। ঘুটঘুটে অন্ধকারে ওই পথ দিয়া কিছুক্ষণ হাঁটিতেই হঠাৎ গগনবিদারী চিৎকার করিয়া কোন এক স্থলে ধপাস করিয়া পড়িয়া গেলাম।গলা অবধি পানিতে আমি, বুঝেতেছিলাম না আসলে কোন স্থলে পড়িয়াছি।অকস্মাৎ আমার নাসিক্য অত্যন্ত উটকো এক গন্ধ অনুধাবন করিলো এবং সহসাই বিদ্যুৎ চলিয়া আসিলো। নিজেকে আমি ম্যানহোলের অভ্যন্তরে আবিষ্কার করিলাম। ক্ষোভে, দুঃখে কোন রকম সেখান থাকিয়া উঠিলাম এবং অতি সন্তর্পণে বাসগৃহে প্রবেশ করিলাম। ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকায় আমার ওই করুণ অবস্থা কাহারো দৃষ্টিগোচর হয় নাই। স্নানঘরে ঢুকিয়া কাপড় খুলিয়া আমার প্যান্টের পকেটের ভিতর হাত ঢুকাইতেই আমার চক্ষু চড়কগাছ হইয়া উঠিলো। সর্বনাশ নিজের চক্ষু দিয়াই দেখিলাম। দুই খানা হাজার টাকার নোট ছিড়িয়া জীর্ণ শীর্ণ হইয়া রহিয়াছে। খরচহীন দিবস পালন করিতে গিয়া আমার দুই হাজার টাকার লোকসান হইয়া গেলো।

0 Shares

৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ