
করোনায় বাংলাদেশ
করোনায় মারা গেলো ঐ বাড়ির চাচা
চলো সবে দেখে আসি মিছা নাকি হাচা?
বিদেশ থেকে ফিরেছে জমিরুল কাল
খোঁজ নিয়ে জেনে আসি তার হালচাল।
শুনেছি মর্জিনার মা আছে বদ্ধ ঘরে,
মর্জিনা দিনরাত কি না কি করে!
খোঁজ খবর নিতে হলে যেতে হবে আজি
আর তো কেউ নেই, আমি শুধু আছি।
পিকনিক পিকনিক ইস্কুল ছুটি
দলে দলে এসো সবে করি লুটোপুটি।
তেল,ডিম,রসুন,পেঁয়াজ আরো আছে আদা
যত খুশি দাম রাখো, কে দেবে বাধা?
চাল কিনো বস্তায়, ডিম হালি হালি
সবকিছু কিনে এনে বাজার করো খালি।
তিন ফুট দূরে থাকো বলে যেই দাদা
সম্মেলন করে পিছে লোক একগাদা।
ডাক্তার সেবা দিবে,নেই তার মাস্ক
রোগীতে গিজ গিজ, করবে কাকে আস্ক?
দিনরাত লকডাউন, কে আছে বাইরে
এটা জানা জরুরী, চলো সবে যাইরে।
করোনা ফরোনা আমাদের ধরে না,
আমরা বিশ্বাসী, আস্তিক মরে না।
গরীবের যাই হোক, আমি বেঁচে রবো,
করোনা শেষ হলে আবার ভাষণ দেবো।
২৪/০৩/২০
একটি রূপকথা
একদিন একা বসে ছিলেম নদীর ধারে,
হঠাৎ উড়ে এলো কিছু রঙবেরঙা পাখি।
কারো গায়ে নীল পালক তো কারো গায়ে হলুদ,
তারা এসে জমায়েত হলো ঠিক আমার ধারে।
যেন আমাকেই এসে বলছে, "যাবে?"
আমি বললেম, "কোথায়?"
"আকাশে"
"আকাশে?"
"হুম, আকাশে।
বিশাল নীলরঙা এক চাদর তলে সাতরঙা রামধনু,
রূপোর কৌটায় রূপোলী জোছনা,
ঝাঁক বেঁধে আমাদের দলে দলে উড়ে যাওয়া,
নরম মেঘের ভেলায় বিশ্ব ভ্রমণ,
চাঁদের হাসি, হিম শীতল আলো
আর...
এই ব্রাহ্মান্ডের যাবতীয় সুখ,
সব সব তোমার হবে, যাবে?"
"যাবো।"
পাখির ডানায় ভর করে উড়ে গেলাম আকাশে...
গিয়ে দেখি খটখটে রোদ, বিশাল নীলাকাশ
পানির তেষ্টায় প্রাণ যায় যায়!
কোথায় সেই নাম না জানা নানা রঙের পাখিরা?
কোথায় মেঘের ভেলা, চাঁদের শীতল পরশ?
এখানে কোন অভিকর্ষও আমাকে টানে না।
একা আমি ছটফট করে মরি!
"কেউ আছো? কোথাও কেউ আছো?
ফিরিয়ে দাও আমার সবুজ অরণ্য, মাটির শীতল পরশ।
চাই না এ চাঁদের আলো, চাই না মেঘের ভেলা।
কেউতো সারা দাও!"
কোথাও কেউ নেই।
আমার আওয়াজ কেবল বেজে বেজে আমার কানেই ফিরে আসে।
আমি শূন্য চোখে উদাস বদনে রইলাম বসে।
একদিন দুদিন কতদিন যায়...
মিছে মায়ার ঘোর কেটে রোজ ভোর হয়।
সূর্য মাথার ওপর উঁকি দিয়ে হাসে অট্ট হাসি!
আমি বেদনায় মরি ছটফটছটফট...
এমনি এক দিনে কোথা থেকে যেন উড়ে এলো
এক শাদা গাঙচিল।
আমাকে দেখে তার বড্ড মায়া হলো।
সে বললো, "যাবে?"
"না না যাবো না!"
কেঁদে ক্লেশে ভয়ে ভয়ে সরে এলাম দু'পা
সে হেসে বললো, "ভয় নেই।
আমার ডানায় চড়ো, নামিয়ে দেব মর্ত্যের পৃথিবীতে।
আমরা মর্ত্যবাসী, আমাদের জন্য
এ আকাশ নয়,
চাঁদ নয়,
রূপোর কৌটায় জোছনা নয়।
এগুলো রূপকথা।
আমাদের জন্য আছে নরম মাটি,
আছে সবুজ বনানী,
পাহাড়ি ঝর্ণা।
আমরা সেখানেই বাঁচি।।"
২৫/০৩/২০
২০টি মন্তব্য
সুপায়ন বড়ুয়া
“করোনা ফরোনা আমাদের ধরে না,
আমরা বিশ্বাসী, আস্তিক মরে না।
গরীবের যাই হোক, আমি বেঁচে রবো,
করোনা শেষ হলে আবার ভাষণ দেবো।”
সুন্দর লিখলেন আপু। লাগলো ভাল।
বলে দিতে পারি আমি
গরীব বাঁচবে এবার
জ্বলবে আবার আলো।
শুভ কামনা।
নীরা সাদীয়া
তাই যেন হয়। বাঁচুক গরীব বাঁচুক দেশ।
নিরন্তর শুভকামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
করোনায় বাংলাদেশ – আমরা এমনি জাতি , হুজুগে বাঙ্গালী আর ধর্মের দাম্ভিকতায় বাঁচি। রূপকথা- হ্যাঁ আমরা এই নরম মাটি , পাহাড়ী ঝর্ণা ভালোবাসি । এটাই আমাদের বাঁচার অক্সিজেন। ধন্যবাদ আপনাকে। স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা রইল। ভালো থাকুন
নীরা সাদীয়া
দুটো কবিতাই পড়েছেন জেনে ভালো লাগছে খুব। আপনাদের মত পাঠক পেয়ে আমি ধন্য।
শুভ কামনা নিরন্তর।
সাবিনা ইয়াসমিন
আমরা মর্ত্যবাসী। নিজের অস্তিত্বের অজুহাতে ফিরে ফিরে আসতে চাই এই মর্ত্যলোকে। এখানে আস্তিক খুঁজে নিতে হয় না, নাস্তিক ভাইরাস আমাদের মাঝ থেকেই খুঁজে নিতে পারে তার যোগ্যতম শিকার।
স্বপ্ন আর বর্তমানের যৌথ বন্ধনে লেখা চমৎকার কবিতা, ভালো লাগলো পড়ে।
শুভ কামনা 🌹🌹
নীরা সাদীয়া
ঠিক বলেছেন। এক ভাইরাস আমাদেরকে কতকিছু শেখালো।
আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমি বেশ খুশি।
শুভকামনা নিরন্তর।
জিসান শা ইকরাম
করোনাকে নিয়ে বানিজ্য হলো অনেক, করোনা সনাক্তে পর্যাপ্ত কিট নেই, নেই ডাক্তারদের সুরক্ষা উপকরন। অনেক চেস্টার পরে মানুষকে ঘরে বন্ধী করা গিয়েছে। আমরা আসলে করোনার ক্ষমতা সম্পর্কে ধারনাই রাখি না।
আমাদের জন্য আকাশ নয়, এই সবুজের মর্তই আমাদের জন্য উপযোগী।
কবিতা দুটো ভাল হয়েছে খুব।
শুভ কামনা।
নীরা সাদীয়া
এখনো গ্রামাঞ্চলের মানুষ চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছে। হোম কোয়ারেন্টাইন শব্দটাই তারা বোঝেনা৷ কি বলবেন তাদেরকে? তারা বোঝে ১৪৪ ধারা।
আমরা মর্ত্যেই বাঁচি।
শুভ কামনা নিরন্তর।
ফয়জুল মহী
লাগলো লেখা। নিজে সচেতন হই। অন্যকে সচেতন করি।
নীরা সাদীয়া
তাই হোক।
শুভকামনা নিরন্তর।
সুরাইয়া পারভীন
যেখানে পুরো পৃথিবী মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে
সেখানে আমরাই কেবল একমাত্র জাতি নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকি। করোনা মহামারীতে মরার ভয় নেই আছে করোনাকে সামনে রেখে বাণিজ্য ব্যবসার উন্নতি এই তো আমরা বাঙালি জাতি।
কল্পনায় আকাশে বাতাসে উড়তে আমরা বড্ড ভালোবাসি। চমৎকার লিখেছেন
নীরা সাদীয়া
কাফনের কাপড়,খাটিয়া এসব নিয়েও দেখবেন তারা বাণিজ্য করবে।
কল্পনার আকাশের চেয়ে মাটির শীতল পরশ অনেক মধুর।
শুভকামনা নিরন্তর।
সুরাইয়া নার্গিস
অনেক সুন্দর লেখা, ভালো লাগলো। নিজে সচেতন হই। অন্যকে সচেতন করি।
নীরা সাদীয়া
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভকামনা নিরন্তর।
এস.জেড বাবু
দুটি কবিতা সুন্দর
সময় উপোযোগি প্রতিবাদ যেন ।
/////তেল,ডিম,রসুন,পেঁয়াজ আরো আছে আদা
যত খুশি দাম রাখো, কে দেবে বাধা?
চাল কিনো বস্তায়, ডিম হালি হালি
সবকিছু কিনে এনে বাজার করো খালি।
কিছু মুনাফালোভী আগেও ছিলো- এরা চিরকাল থাকবে।
দারুন লিখেছেন,
নীরা সাদীয়া
এসব মুনাফালোভীরা কবে শুধরাবে কে জানে?
আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমি আনন্দিত।
শুভকামনা নিরন্তর।
হালিম নজরুল
ছন্দময় লেখা। সুন্দর।
নীরা সাদীয়া
ধন্যবাদ আপনাকে ।
তৌহিদ
প্রথমত করোনাকে আমরা সিরিয়াসলি নেইনি। যার ফলে অনেক গুজব বিশ্বাস করছি এবং করোনা নিয়ে অনেকেই আতঙ্কিত হচ্ছি না। উল্টো এমন সব কর্মকাণ্ড করছি যা মোটেও উচিত নয়।
এই পৃথিবীর মাটি পাহাড় সবুজ প্রকৃতিই আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন। সবাই ভালো থাকুক এটাই কাম্য।
নীরা সাদীয়া
ধন্যবাদ আপনা।
কবিতা দুটোই পড়েছেন দেখে ভালো লাগলো।
অনেক শুভকামনা রইলো ।