আমাদের দেশের ছাত্র ছত্রীদের কাজ কি শুধু লেখাপড়া করা। নিজের ওজনের চেয়ে বেশী ভারী ব্যাগ বহন করা। আমাদের দেশে একটা দালান কোঠা হলেই হল এটা হয়ে যায় মাদ্রাসা স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের প্রথম এবং প্রধান কাজ হল জ্ঞান অর্জন করা। আর এ ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত নেই এবং থাকা উচিৎও নয়। একজন প্রকৃত এবং স্বাভাবিক মানুষের জন্য জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি আরো কিছু আনুষঙ্গিক বিষয়ও মানুষের জীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। শরীর চর্চা এবং খেলাধুলা মানুষকে সুঠাম দেহ এবং স্বাস্থ্যবান হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। পাশাপাশি সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সুপ্ত বিভিন্ন প্রতিভার বিকাশ ঘটে। তাই গান বাজনা, কবিতা আবৃতি, চিত্রাংকন, বিতর্ক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বগ্মিতা,অভিনয় শিল্প সহ আরো অনেক মননশীল আর সৃষ্টিশীল প্রতিভার উন্মেষ আর বিকাশ ঘটানো দরকার। ধর্মীয় রীতি নীতি চর্চার মাধ্যমে মানুষের মন বিশুদ্ধতায় ভরে উঠে। হয়ে উঠে নির্মল এবং পবিত্র।
আমাদের ছেলে মেয়েদের খেলাধুলার জন্য পাড়ায় মহল্লায় মাঠের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। ওখানে গড়ে উঠছে আকাশচুম্বী দালান কোঠা। সাঁতার কাটার জন্য চট্টগ্রাম শহরে হাতে গুণা কিছু পুকুর অবশিষ্ট আছে মাত্র। প্রকৃতপক্ষে আমাদের শিক্ষালয় গুলোতে হচ্ছেটা কি ? ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, বাস্কেট বল, ভলিবল খেলা কি সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চর্চা বা অনুষ্ঠিত হয় ! দাবা, টেবিল টেনিস, ব্যাট মিন্টন, লং টেনিস খেলা কয়টা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হয়। বডি বিল্ডিং প্রতিযোগীতা কি হয় । আন্তঃস্কুল, আন্তঃ কলেজ, আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আগে খেলাধুলার যে প্রতিযোগিতাগুলো হত তা এখন আর হয় বলে মনে হয় না। হয়না বিতর্ক প্রতিযোগীতাও। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতার নামে নামকা ওয়াস্তে ভাড়া করা ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় পেপার পত্রিকায় মিডিয়ায় মুখ দেখানোর জন্য। চিত্রাংকন প্রতিযোগীতা, ক্বেরাত প্রতিযোগীতা এগুলোর চিন্তা করা তো অনেক দূরের ব্যাপার।
একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক চর্চা, মননশীল সৃষ্টিশীল সুপ্ত প্রতিভা জাগ্রত করার মূল জায়াগাটা হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে মুক্ত চিন্তা বুদ্ধির প্রতিভার উন্মেষ বিকাশ আর প্রসার ঘটানোর ব্যবস্থা করতে হবে প্রতিযোগীতার মাধ্যমে। আর এখান থেকেই সৃষ্টি হবে আমাদের ভবিষ্যত লেখক, গায়ক, কণ্ঠশিল্পীদের। খেলাধুলার, শরীর চর্চার ব্যস্থা আর প্রতিযোগীতার ব্যবস্থাও করতে হবে। এখান থেকেই গড়ে উঠবে আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ ক্রীড়াবিদরা যারা দেশের জন্য সম্মান গৌরব আর মেডেল ছিনিয়ে আনবে দেশ বিদেশ থেকে এবং দেশের মান সম্মান ও মর্যাদা বিশ্ব দরবারে উজ্জ্বল করবে।বিতর্ক প্রতিযোগীতার ব্যবস্থা করতে হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, আন্তঃ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে। আমরা এক সময় বাংলাদেশ টেলিভিশনে অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে থাকতাম বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিতর্ক প্রতিযোগীতা শুনার জন্য। কি সুন্দর, শিক্ষণীয় এবং তার্কিকদের শাণিত ছিল যুক্তি আর যুক্তি খন্ডনের বাহাদুরী। তাঁদেরকে যে এসব বিষয়ে কি পরিমাণ লেখাপড়া করতে হত, জ্ঞান অর্জন করতে হত শুধু তাঁরাই বুঝতে পারবেন যারা এইসব বিতর্ক গুলে শুনেছেন। ক্বেরাত প্রতিযোগীতা সহ ধর্মীয় বিভিন্ন শিক্ষা দিতে হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই যাতে ধর্মের নামে আমাদের শিশু, কিশোর, যুবারা বিপথগামী না হতে পারে। চিত্রাংকন প্রতিযোগীতা করার রেওয়াজ এখন আর নেই আগের মতো। আমাদের জাতীয় বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে বিষয়ভিত্তিক রচনা, সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান, খেলাধুলার আয়োজন করা আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য জরুরী হয়ে উঠেছে। এবং আ করা অবশ্যই দরকার জাতীর বৃহত্তর স্বার্থে।
আজকাল আমাদের সন্তানদের জন্য খেলাধুলার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা, সুযোগ বা ক্ষেত্র না থাকায় তাদের মননশীল সৃষ্টিশীল প্রতিভা বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে। ফলশ্রুতিতে তারা প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে উঠেছে অর্থাৎ তাদের হাতে এখন স্মার্ট ফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, টেব ইত্যাদি তুলে দিয়ে তাদেরকে আমরা একটা অলস জাতি হিসেবে গড়ে তুলছি। আমাদের নিজস্ব, স্বতন্ত্র, লোকজ, কৃষ্টি, সভ্যতা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য রয়েছে। আমাদের সন্তানেরা তা জানেই না, কিছু কিছু জানলেও তা ভুলতে বসেছে। আমরা সব দায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর ছেড়ে দিলে হবে না। পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে যথাযথ ব্যবস্থা বা নীতি গ্রহণ করতে হবে। আমাদের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এব্যাপারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা দরকার। তাছাড়া রাজনীতিবিদের এবং রাষ্ট্রের এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল ভূমিকা গ্রহণ করা অতীব জরুরী। সুষ্ঠু এবং সুস্থ শিক্ষা এবং অন্যান্য মানবিক নৈতিক মূল্যবোধ এবং সঠিক ধর্মীয় অনুশাসনের মাধ্যমে গড়ে না তুললে আমাদের সন্তানদের অনেকেই বিপথগামী হয়ে যেতে পারে। তাদের মগজ ধোলাই করে ধর্মীয়ভাবে বিপথগামী করে তুলতে পারে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই শিক্ষার্থীদের একটা বিরাট অংশ মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। পাড়ায় মহল্লায় কিশোর গ্যাং কালচার গড়ে উঠেছে। অতএব সুন্দর সজ্জন ভদ্র এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমাদের সন্তানদের প্রতি মনোযোগী হওয়া পরিবার, সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্রে জন্য অতীব জরুরী হয়ে উঠেছে। আশা করি সংশ্লিষ্ট সকল মহল এব্যপারে তাঁদের যথাযথ ভূমিকা রাখবেন।
সবার অঙ্গীকার হোক আমাদের সন্তানদের হাতে একটা সুখী সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দেয়ার।
১২টি মন্তব্য
আরজু মুক্তা
শিক্ষাব্যবস্থা কেমন জানি পাল্টে গেছে। আমরা তো সব স্কুলেই শিখছি। আর এখন শুধু ব্যাগ ভারি। পড়ার নামে হরিবোল।
ভালো পোস্ট
শুভ কামনা
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আপা আপনার কথাগুলো প্রণিধানযোগ্য — “শিক্ষাব্যবস্থা কেমন জানি পাল্টে গেছে। আমরা তো সব স্কুলেই শিখছি। আর এখন শুধু ব্যাগ ভারি। পড়ার নামে হরিবোল”।— শুভ কামনা নিরন্তর ।
ছাইরাছ হেলাল
আমার একটি জিনিস সব সময় ই মনে হয়, ফিনল্যান্ড বা জাপানের কাছ কিছুই কী শেখার নাই।
সামান্য একটু চেষ্টা তো করা যেতেই পারে। জানি না, বিজ্ঞেরা কীভাবে ভাবছেন।
রিতু জাহান
জাপানের এডুকেশন সিস্টেম পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো সিস্টেম।
আমি ওদের পড়তে গিয়ে দেখলাম।
আমরা ভালো কিছু শিখি না এটাই সমস্যা।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আসলে আমরা শিখতে চাইনা বরং শেখাতে চাই। আপনার বাস্তব অভিজ্ঞতা জেনে খুব আনন্দিত হয়েছি — “জাপানের এডুকেশন সিস্টেম পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো সিস্টেম।
আমি ওদের পড়তে গিয়ে দেখলাম”।
আপনার মতামতের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির জন্যে ভালো যে কোনো বিষয় চেষ্টা করা যেতে পারে । ধন্যবাদ ভাইয়া।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
আধুনিকতার নামে বহমান
বিধ্বংসী সভ্যতার কড়াল গ্রাসে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আজ বন্দি।
তাই তো সন্তান আজ বলে না ’মাগো বল কেনার জন্য চাঁদা দিতে হবে, টাকা দাও’
বরং কষ্টে করে ‘ আমাদের বাসায় রাউটার নেই কেন?’
অশেষ মুগ্ধতা রেখে গেলাম মূল্যবান লেখা পাঠে।
আন্তরিক শুভ কামনা জানবেন সতত।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আপনার সুন্দর মতামত আমাকে আপ্লুত করেছে। সুস্থ আর ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।
হালিমা আক্তার
আমরা বর্তমানে শিক্ষা বলতে বুঝি। পরীক্ষা দিব। ভালো রেজাল্ট করব। সার্টিফিকেট অর্জন করব। একসময় শিক্ষা ছিল জ্ঞানচর্চার আঁধার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সেভাবে গড়ে উঠেছিল। আমাদের স্কুলে চিত্রাংকন ক্লাস হত। শরীরচর্চা বা খেলাধুলার জন্য আলাদা ক্লাস বরাদ্দ ছিল। গল্পের বই পড়ার প্রতিযোগিতা ছিল। আমরা ডাকটিকেট জমাতাম।ডাকটিকেট সংগ্রহের প্রতিযোগিত হত।এখনকার অনেক অভিভাবক মনে করেন গল্পের বই পড়া মানে সময় নষ্ট করা। তাদের একটাই স্বপ্ন কি করে সন্তান জিপিএ ফাইভ পাবে। সন্তান মানুষ হল কিনা সে ভাবনা নেই। আর তাই দেখা যায় ছোটবেলা থেকে সন্তানের ওজনের চেয়ে বইয়ের ব্যাগের ওজন বেশি।শিক্ষা হচ্ছে এখন এক ধরনের ব্যবসা। আর দশটা ব্যবসার মতো শিক্ষা এখন একটা পণ্য। অনেকেই ব্যবসা করার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করে তুলেন। এই যদি হয় শিক্ষার হাল হকিয়ত তাহলে সে দেশের শিক্ষা কতটুকু ভালো হবে। শুভ কামনা রইলো।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আপনার গুরুত্বপূর্ণ, বিশ্লেষণধর্মী এবং বাস্তব মতামতের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। শিক্ষা এবং শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আপনার মতামত প্রণিধানযোগ্য — “একটাই স্বপ্ন কি করে সন্তান জিপিএ ফাইভ পাবে। সন্তান মানুষ হল কিনা সে ভাবনা নেই। আর তাই দেখা যায় ছোটবেলা থেকে সন্তানের ওজনের চেয়ে বইয়ের ব্যাগের ওজন বেশি।শিক্ষা হচ্ছে এখন এক ধরনের ব্যবসা। আর দশটা ব্যবসার মতো শিক্ষা এখন একটা পণ্য। অনেকেই ব্যবসা করার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করে তুলেন। এই যদি হয় শিক্ষার হাল হকিয়ত তাহলে সে দেশের শিক্ষা কতটুকু ভালো হবে”।
সুস্থ আর ভালো থাকবেন। শুভ কামনা।
নার্গিস রশিদ
আসলেই আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থা তাতে অনেক পরিবর্তন দরকার। শুধু মাত্র বই এর বোঝা নয়, মুখস্ত বিদ্যা নয়, কোচিং সেন্টার থেকে রেডিমেড নোট এনে মুখস্ত করে পরীক্ষার খাতায় ঢেলে দিয়ে আসা নয়। প্রত্যেক ক্লাসে বয়স অনুযায়ী প্রচুর বই থাকেবে। খেলাধুলার ব্যাবস্থা থাকবে, দুপুরে খাবারের ব্যাবস্থা থাকবে, যাতে ছেলে মেয়েরা স্কুলে যেয়ে আনন্দের সাথে পড়াশুনা করবে। আপনার প্রস্তাব টি এখন সময়ের দাবী । শুভ কামনা।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আপনার সুচিন্তিত এবং সময়োপযোগী মতামতের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি সহমত পোষণ করি — “আসলেই আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থা তাতে অনেক পরিবর্তন দরকার। শুধু মাত্র বই এর বোঝা নয়, মুখস্ত বিদ্যা নয়, কোচিং সেন্টার থেকে রেডিমেড নোট এনে মুখস্ত করে পরীক্ষার খাতায় ঢেলে দিয়ে আসা নয়। প্রত্যেক ক্লাসে বয়স অনুযায়ী প্রচুর বই থাকেবে। খেলাধুলার ব্যাবস্থা থাকবে, দুপুরে খাবারের ব্যাবস্থা থাকবে, যাতে ছেলে মেয়েরা স্কুলে যেয়ে আনন্দের সাথে পড়াশুনা করবে”। সুস্থ আর ভালো থাকবেন। শুভ কামনা রইলো ।