Comets swim teams gearing up for season | Prep Sports | yourgv.com

বাংলাদেশকে বলা হয় নদীমাতৃক দেশ। যদিও গত কয়েক দশক থেকে ধীরে ধীরে উজানের পানি প্রবাহ কমতে থাকায় নদী গুলোতে বর্ষা ছাড়া অন্য সময়ে পানি খুব একটা বেশী থাকেনা, অনেকগুলো ইতিমধ্যেই মৃত নদীতে পরিণত হয়েছে। এক তথ্য থেকে জানা যায়, “একসময় বাংলাদেশে ১২শ’চলমান নদীর নাম পাওয়া যেত, যা বর্তমানে ২শ’র বেশি হবে না। শীতকালে চলমান নদীর সংখ্যা কমে ৬০-৬৫ টিতে নেমে আসে। নদীর এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের সামগ্রীক পরিবেশের উপর চরম নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। স্বাধীনতা পরবর্তী ৪৬ বছরে বাংলাদেশে প্রায় ২২ হাজার কিলোমিটার নদীপথ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাংলাদেশে পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে মৃতপ্রায় নদীগুলো পুনরুজ্জীবিতকরা অতি জরুরি। উজানে বাঁধ নির্মাণ করে ভারত একতরফাভাবে পানি আটকে রাখায় ১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্প হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া উত্তরাঞ্চলের প্রায় ১০০টির মতো নদী বিশ্বের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। তিস্তার জীবন-মৃত্যুর উপর নির্ভরকরছে প্রত্যক্ষভাবে ২ কোটি ও পরোক্ষ ভাবে ৫ কোটি মানুষের বাঁচা-মরা। উত্তরাঞ্চলের নদীগুলোতে পানি না থাকায় মরু করণের দিকে যাচ্ছে উত্তরাঞ্চল”। পাশাপাশি পরিবেশ প্রতিবেশের ওপর আমাদের নগ্ন, লোভী, দখলধারী মনোভাব, বিধ্বংসী ও আগ্রাসী কর্মকাণ্ড, দেশের উন্নয়ন, ক্রমবর্ধমান অপরিকল্পিৎ শিল্পায়ন এবং নগরায়নের ফলে দেশের পুকুর, ডোবা, খাল, বিল, ঝিল, জলাশয়, নদী, নালা ভরাট হয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন প্রতিক্ষণ। সাঁতার শেখার বা অনুশীলনের জায়গা ক্রমশ বিলীন আর হারিয়ে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে সাঁতার না জানার কারণে নদীমাতৃক বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত পানিতে ডুবে শিশু কিশোরদের করুণ, মর্মান্তিক, মর্মন্তুদ, দুঃখজনক মৃত্যু হচ্ছে কখনো পুকুরে, নদীতে বা সাগরের পানিতে। সাঁতার না জানার কারণে ৫ বছরের নিচের অবুঝ শিশুদের পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু হলে যেখানে স্বজনহারারা এই শোক মেনে নিতে পারেন না সেখানে কিশোর যুবকদের পুকুরে নদীতে বা সাগরে ডুবে মারা যাওয়া আরও দুঃখজনক ও বেদনাদায়কও বটে।

আমাদের সন্তানদের কিশোর বয়সে পানিতে ডুবে দুঃখজনক মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাঁতার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাঁতার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার জন্য যুপোযোগী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কড়া নির্দেশনা জারী করা উচিৎ। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুইমিংপুল আছে সেগুলোকে সাঁতার অনুশীলনের উপযোগী করে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সাঁতার শিক্ষা দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। চট্টগ্রামের অভিজাত ক্লাব এবং তারকা হোটেলগুলোকেও সামাজিক দায়বদ্ধতার অঙ্গীকার হিসেবে তাঁদের সুইমিং পুলের একটি বিশেষ সময় অনগ্রসর /­ অগ্রসর স্কুলের শিক্ষার্থীদের ব্যহারের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের সমন্বয়ের মাধ্যমে। দেশের আগামী প্রজন্মের বেঁচে থাকার স্বার্থে, তাঁদের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু রোধ করার জন্য দেশের উন্নয়নের নামে, নগরায়নের নামে দেশের নদ নদী খাল বিল ডোবা পুকুর জলাশয় ভরাট বন্ধে কঠোর হতে হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়,স্বরাষ্ট্র,­ বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে। পাশাপাশি সাঁতারের এসব ক্ষেত্রগুলোকে স্বাস্থ্য সম্মত রাখা ও সাঁতার উপযোগী করা ও রাখার ব্যাপারেও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমাদের দেশের অভিভাবকদেরকে তাঁদের সন্তানদের সাঁতার শেখার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে এবং ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে পুকুর ডোবা নদী জলাশয় থেকে দূরে রাখার ব্যাপারে সদা সজাগ এবং সতর্ক থাকতে হবে।

আমাদের আগামী প্রজন্মকে পানিতে ডুবে করুণ, মর্মান্তিক, হৃদয়বিদারক, বেদনাদায়ক, মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে ৫ বছর থেকে ১৭ বছর বয়সীদের সাঁতার শেখার ব্যবস্থা করা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রের সামাজিক, নৈতিক এবং রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা ও অঙ্গিকারের মধ্যেই পড়ে। আসুন আমাদের সন্তানদের সাঁতার শিখতে উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ করি। অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করি।

ছবিঃ সংগৃহীত।

0 Shares

১৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ