পলাশীর যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রায় আড়াইশ বছর পূর্বে। যে ঘৃণা মানুষের মনে সৃষ্টি হয়েছে মীরজাফরের প্রতি সেই ঘৃণা এখনো বয়ে যাচ্ছে মানুষের মনে। লজ্জা আর অপমানের হাত থেকে বাঁচার জন্য মীরজাফরের অষ্টম বংশধর পর্যন্ত স্বীকার করেনা যে তারা মীরজাফরের বংশধর। মানুষের ঘৃণা আর অপমান এখনো বহমান মীরজাফরদের বংশধরদের প্রতিও। ভিডিওটি দেখুন।   কতটা ধিক্কার, ঘৃণা, অভিশপ্ত হলে বিশ্বাসঘাতকতা মানুষের মনে জমা হলে এটি সম্ভব তা ভাবা যায়?

আসুন আমরা আমাদের এক বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর এর বীরত্বপূর্ণ কাহিনী জানি। ১৯৭১ সনের ২০ আগষ্ট  বেলা ১১টা বেজে ২৮ মিনিট এ করাচি, পাকিস্তানের মাশরুর বিমানঘাঁটি থেকে একটি প্রশিক্ষণ বিমান ছিনতাই এর উদ্দেশ্যে প্রশিক্ষণার্থী মিনহাজ রশিদকে হাত উঁচু করে থামান। মতিউর রহমান ছিলেন প্রশিক্ষক। পাকিস্তানী মিনহাজ অনিচ্ছা সত্ত্বেও রানওয়েতে বিমান থামান। সাথে সাথে মতিউর রহমান বিমানে উঠে ক্লোরোফর্ম দিয়ে মিনহাজকে অজ্ঞান করেন। অজ্ঞান হবার পূর্ব মূহুর্তে সে কন্ট্রোল টাওয়ারকে জানায় যে বিমান ছিনতাই হয়েছে। পাইলটের আসনে বসা ছিল মিনহাজ, পিছনে বসে অন্ধের মত মতিউর রহমান রাডার ফাঁকি দেয়ার উদ্দেশ্যে অত্যন্ত নীচু দিয়ে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন ভারতের দিকে।
আর মাত্র ৪৫ কিলোমিটার দুরেই ভারতের আকাশ সীমা। তিন মিনিট সারে তিন মিনিটের ব্যাপার। ককপিটে বসা অজ্ঞান মিনহাজ, পিছনের সিটে মতিউর রহমান। বিমানে ওঠার পরে ধস্তাধস্তি এবং সময় না থাকার কারনে নিজকে বেল্ট দিয়ে বাঁধার সময় পাননি। সীমান্তের ৪৫ কিলোমিটার দূরে থাকার সময় মিনহাজের জ্ঞান ফিরে আসে। কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে মেসেজ আসতে থাকে ইজেক্ট করার জন্য। মিনহাজ ইজেক্ট সুইজে চাপ দেহ, মুহুর্তের মধ্যে মতিউর রহমান বিমান থেকে ছিটকে বাইরে চলে যান, তার দেহ বিমানের পাখায় ধাক্কা খেয়ে বিমান হঠাৎ থেমে যায়, এবং প্রায় একই সময় ভূমিতে মতিউর রহমান এবং বিমানটি পরে। মতিউর রহমান এবং মিনহাজ দুজনেরই মৃত্যু হয়।

শিল্পীর তুলিতে

কেন মতিউর রহমান একটি বিমান হাইজাক করার চেষ্টা করেছিলেন? একটি যুদ্ধের বিভিন্ন ক্ষেত্র থাকে। সম্মুখ যুদ্ধ, প্রচার যুদ্ধ। তিনি বিমানটি হাইজাক করে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষন করার চেষ্টা করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে। এরপর মতিউর রহমান এর মরদেহ বিমানের চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের কবরস্থানে কবর দেয়া হয়। এবং তার কবরে লিখে দেয়া হয় 'কবরের সামনে লেখা ছিল, ‘ইধার শো রাহা হ্যায় এক গাদ্দার’ - ' এখানে শুয়ে আছে এক বেঈমান '।

৩৫ বছর আমাদের একজন বীর শ্রেষ্ঠ শুয়েছিলেন বেঈমান পরিচয় নিয়ে। অবশেষে  প্রায় তিন যুগ অপেক্ষার পরে আমরা ফিরে পাই আমাদের বীরশ্রেষ্ট মতিউর রহমান এর দেহাবশেষ। পুর্ন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ২০০৬ সালের ২৩ জুন মতিউর রহমানের দেহাবশেষ পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে ফিয়িয়ে আনা হয়। তাকে পূর্ণ মর্যাদায় ২৫ জুন শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে পুনরায় দাফন করা হয়।

আর আমরা কি করছি?
মীরজাফরের প্রতি ঘৃনার কারণে তার অষ্টম প্রজন্মও মীরজাফরের বংশধর হিসেবে পরিচয় দিতে অস্বীকার করে। আমরা মাত্র এক প্রজন্মও এই ঘৃণা অব্যাহত রাখতে পারিনি। বেঈমান রাজাকার আলবদরদের আমরা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে দেখেছি। শীর্ষ রাজাকার ৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদের প্রধান অভিযুক্তরা অনেক সম্পদশালী এবং সমাজে প্রভাবশালী। আমাদের জাতির অহংকার বীরশ্রেষ্ট মতিউর রহমানের কবরে লিখে রেখেছিল গাদ্দার, বিশ্বাসঘাতক। আর আমাদের দেশে ৭১ এর মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ফাসীতে মৃত্যু দন্ডপ্রাপ্ত কাদের মোল্লা, আবুল কাশেম, মুজাহিদ এর কবরে লেখা থাকে শহীদ। জাতীয় পত্রিকা সংগ্রামে সংবাদ প্রকাশিত হয় আজ শহীদ কাদেরের মৃত্যুবার্ষিকী। ক তে কাদের মোল্লা- তুই রাজাকার তুই রাজাকার শ্লোগান দেয়া শাম্মি হককে দেখলাম আজ ফেইসবুকে এক পোষ্ট দিয়েছে- বিক্ষুব্দ জনতা শহীদ কাদের লেখার কারনে সংগ্রাম কার্যালয় ভাংচুর করেছে, এতে নাকি বাকস্বাধীনতা ক্ষুন্ন হয়েছে। কতবড় পাল্টিবাজ এই শাম্মি হক ভাবা যায় না।

আমরা প্রমাণিত যুদ্ধাপরাধীদের কবরে ' বেঈমান শুয়ে আছে ' লেখা দেখতে চাই। রাষ্ট্র এটি নিশ্চিত করবে বা রাষ্ট্রের উদ্যেগে এটি করা হোক। 

 

0 Shares

৩২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ