Image result for image of ekushey february

“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি”।  
আমরা আমাদের অমর ভাষা শহীদ ভাইদের কতটুকু মনে রেখেছি। আমরা কি আমাদের প্রাত্যহিক জীবন যাপনে,  আমাদের কথা-বার্তায়,  অফিস আদালতে, ছলনে বলনে, দেশজ কৃষ্টি সভ্যতা এবং সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বাংলা ভাষাকে সানন্দে সার্বজনীন ভাষা হিসেবে কতটুকু প্রয়োগ বা ব্যবহার করছি।  মাতৃভাষাকে মর্যাদা দেয়ার পাশাপাশি মননশীল, সৃষ্টিশীল, প্রগতিশীলতার কাজে সাবলীলভাবে এর প্রকাশ প্রসার এবং বিকাশ ঘটাচ্ছি।  আমাদের চিন্তায় চেতনায় ভাবনায় সাহিত্যে নাটকে কবিতায় গানে সিনেমায় সর্বোপরি আমাদের প্রতিদিনের পথ চলায় বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহার করছি, প্রয়োগ করছি। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আমাদের বাংলা ভাষার সঙ্গে বিদেশী ভাষার অনাকাঙ্ক্ষিত সংমিশ্রণে অনেকক্ষেত্রে বাংলা ভাষা তার আদি রূপ হারিয়ে জগাখিচুড়ি টাইপের ভাষায় পরিণত হচ্ছে ক্রমশ। পাশাপাশি আমাদের নিত্যনৈমিত্তিক বিবিধ কর্মকাণ্ডে, বিভিন্ন বিষয়ে বাংলা ভাষা বিকৃত হচ্ছে হরহামেশা। সবচেয়ে বড় অশনি সংকেত হচ্ছে উন্মুক্ত এবং আগ্রাসী আকাশ সংস্কৃতির কারণে আমাদের বর্তমান প্রজন্মের শিশু কিশোরেরা ইংরেজি এবং হিন্দি ভাষার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে অভিনব সব শব্দ ব্যবহার করছে যা বাংলার নিজস্ব দেশজ কৃষ্টি সভ্যতা সংস্কৃতির ওপর বিরাট আঘাত স্বরূপ। আবার অনেক কবি সাহিত্যিক লেখক নাট্যকার সিনেমা নির্মাতা জেনে শুনেই বাংলা ভাষার বিকৃতি ঘটাচ্ছে পাঠক শ্রোতা দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ এবং বিনোদন দেয়ার নাম করে। পাশাপাশি রাস্তায় চলতে গেলে দেখা যায় বিভিন্ন ঢাউস সাইজের সাইনবোর্ড বা বিলবোর্ডে সবার উপরে ইংরেজী লেখা জ্বল জ্বল করছে আর নীচে অতি ক্ষুদ্রভাবে বাংলায় লেখা যা অনেক সময় চোখেও পড়েনা।  এটা কি আমাদের শহীদদের রক্তের প্রতি অবমাননা নয়। নয় অবহেলা। এতে করে কি বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের আন্তরিকতা, সৌজন্যতা, উদারতার প্রকাশ ঘটায়। এটা তো বাংলাদেশ তাই না ! তাই এখানে শহীদদের রক্তের দামে কেনা বাংলা ভাষা সবার ওপরে থাকবে এটাই তো সর্বজন স্বীকৃত একটি বিষয়।  আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজী ভাষার ব্যবহার অবশ্যই থাকবে। এখানে আমাদের কোনো ধরণের আপত্তি নেই। নেই অন্তরজ্বালা। তবে তা কোনোভাবেই বাংলা ভাষার ব্যবহারকে ছোট করে বা মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেখার মতো করে নয় মোটেও।  আমরা কি করে ভুলে যাই, ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে মায়ের ভাষায়, বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য রাজপথ লাল টকটকে রক্তে রঞ্জিত করেছিল সালাম, বরকত, রফিক সহ অনেক বাঙ্গালী।  সারা দুনিয়ায় বাঙ্গালীরাই একমাত্র এবং শুধুমাত্র মায়ের ভাষায় কথা বলার জন্য রক্ত দিয়েছে।  আর সেই ২১ ফেব্রুয়ারির অমর শহীদদের আত্মদানের ভীতের ওপর দাঁড়িয়েই বাংলার দামাল ছেলেরা একাত্তরের ষোলই ডিসেম্বর অভ্যুদয় ঘটিয়েছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। এখন ২১ ফেব্রুয়ারি অমর শহীদ বাঙ্গালী এবং বাংলেদেশের নিজস্ব একটি দিবস বা কোনো বিষয় নয়। বরং অমর শহীদ দিবস এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসও হিসেবে স্বীকৃত এবং সারা বিশ্বব্যাপী তা পালিত হচ্ছে। যা বাংলাদেশের জন্য অতি গর্বের গৌরবের অংকারের একটি বিষয়। অথচ অবলীলায় আমাদের সব অর্জন এবং জাতীয় দিবসগুলোকে আমরা একটা সাদামাটা নিছক আনুষ্ঠানিকতার ছকে ফেলে দিয়েছি।  একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে যাওয়া, ফুল দেওয়া, পোষাক পরিচ্ছদে বাঙ্গালিয়ানা ফলানো, কিছু সাংস্কৃতিক এবং আলোচনা অনুষ্ঠান করার আনুষ্ঠনিকতা যেন। পাশাপাশি সারা দিন বন্ধু বান্ধব, পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরাঘুরি করা এটাতেই যেন শহীদদের প্রতি যথেষ্ট সম্মান দেখানো হয়ে যায়।  আমরা সবাই একদিনের বাঙ্গালী হয়ে যাই। দেশজ, লোকজ কৃষ্টি সভ্যতা ইতিহাস সংস্কৃতি নিয়ে আমাদের কোন মাথাব্যথা নেই। আমাদের জানার যেন কোনো আগ্রহই নেই কিভাবে ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে।  রাজনীতিবিদ, শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য পেশাজীবীদের অবদান, বীরত্ব, শৌর্য, বীর্য গাঁথা শোনার, পড়ার আমাদের সেই সময় নেই। কিন্তু ফেইসবুক আর স্মার্ট ফোন রাত দিন ২৪ ঘণ্টা পার করার পরেও মনে হয় দিন এতো ছোট কেন ? সময় কথায় হারিয়ে গেল?

আমাদের বর্তমান আর ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যে আমাদের পূর্ব পুরুষেরা কি পরিমাণ সংগ্রাম, লড়াই করে গেছে। মুক্তি যুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছে,  কত ঘরবাড়ি জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, কত মা সন্তানহারা হয়েছে, বিধবা হয়েছে, বোন ভাই হারা হয়েছে, দুই লক্ষ মা বোন ধর্ষণের শিকার হয়েছে, তা আমরা কি কখনোই ভেবে দেখবো না।  আলোচনা করবো না। একথা অস্বীকার করার উপায় তো নেই যে, তাঁদের আত্ম-ত্যাগ, বলিদান, মুক্তিযোদ্ধাদের অদম্য সাহসী ভূমিকা, রক্তের বন্যা, মা বোনের ইজ্জতের ভীতের ওপর আমরা আজ দাঁড়িয়ে আছি।  আজ বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে বুক উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের একটা জাতীয় সঙ্গীত আছে, আমাদের লাল সবুজের পতাকা আছে, আমাদের একটা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের ভুখন্ড আর মানচিত্র আছে। আর এসব কিছুর মূলে আছে ভাষা শহীদদের আত্ম- ত্যাগ। “মা” কে “মা” বলে অধিকার আদায়ের রক্তে ভেজা সংগ্রাম। তাই আমাদেরকে বার বার সেই ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারীর শিকড়ের সন্ধানে ফিরে যেতে হবে।  ভাষার জন্য আত্ম ত্যাগের পাশাপাশি এই মাতৃ ভাষা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি স্বাধীন জাতি সত্ত্বার উদ্ভব হয়েছে।  বাঙ্গালী জাতি বিজয় অর্জন করেছে। ভাষা শহীদদের ঋণ কখনোই পরিশোধ করা সম্ভব নয়। অমর ভাষা শহীদদের আত্মার মাগফেরাৎ কামনা করি। 

0 Shares

৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ