আবারও সক্রিয় দ্বাদশচক্র

মাহবুবুল আলম ২১ অক্টোবর ২০১৯, সোমবার, ০৫:৪৬:১১অপরাহ্ন সমসাময়িক ২৩ মন্তব্য

মাহবুবুল আলম ।।

আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনে ব্যর্থ হয়ে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে ষড়যন্ত্রের ছক কষছে অশুভ চক্র। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ড সামনে রেখে ইতোমধ্যেই বিদেশে তৎপরতা শুরু করেছে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বিএনপি-জামায়াত-শিবির ও যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠী। পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ করে বিশ্বব্যাংকের ঋণ আটকে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করেছিল যে মহল তারাই এখন আন্তর্জাতিক মহলে সক্রিয়। সরকারের বিরুদ্ধে কোন ইস্যুতেই কোন সুবিধা করতে না পেরে আবরার হত্যাকান্ডের ঘটনায় দেশে বাক স্বাধীনতা নেই আবার অভিযোগ সামনে এনে আন্তর্জাতিক মহলকে ভুল বোঝানো হচ্ছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গোয়েন্দারা মনে করছেন।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে চরম আওয়ামী লীগবিরোধী অশুভ চক্রটি আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। এদের মধ্যে যে বার জনের কথা কথা বলা হচ্ছে মানুষ এদের নাম দিয়েছে দ্বাদশচক্র। এই দ্বাদশচক্রের বার জনের নাম কম-বেশি সবাই জানে। এরা হলেন-ড. মুহাম্মদ ইউনূস, লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারভাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, ড. কামাল হোসেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সেনাশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বিএনপির অন্যতম থিঙ্কটেঙ্ক  ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম এবং টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, ঢাবি আইন বিভাগের শিক্ষক আসিফ নজরুল ও তুহিন মালিক। এ দ্বাদশচক্র আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার সরকারকে কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না। তাই সর্বদাই এরা আওয়ামী লীগ তথা সরকারের বিরুদ্ধে একটা না একটা ইস্যুর অপেক্ষা নর্দমার কিনারায় ব্যাঙের মতো সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।

যে কোন অজুহাতেই সরকারের বিরুদ্ধে নিত্য নতুন ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে এবং দেশের চেয়ে দেশের বাইরে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট, সরকারকে একটি কর্তৃত্ববাদী সরকার হিসেবে প্রতিপন্ন করার জন্য সক্রিয় একটি মহল কাজ করছে। সুস্পষ্ট তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা উপরোক্ত বার জনের নামের তালিকা সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে দিয়েছেন। এই দ্বাদশচক্র আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট, সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার এবং কুৎসা রটানোর জন্য কাজ করছে বলে সরকারকে সাবধান করে দিয়েছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর ও প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নানা সেমিনার, সিম্পোজিয়াম এবং অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। সম্প্রতি ঢাকায় সুজনের উদ্যোগে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে এক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই সংলাপে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে এই নির্বাচনে সুস্পষ্টভাবে কারচুপি হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে এই আলোচনাগুলোকে বহির্বিশ্বে, বিশেষ করে প্রভাবশালী দেশগুলোতে যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করছেন ড. কামাল হোসেন এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

আরও জানা গেছে, মার্কিন সিনেট এবং কংগ্রেসের কাছে এই গোলটেবিল বৈঠকের ক্লিপিংসগুলো পাঠানো হয়েছে। এই পাঠানোর কাজে সহায়তা করেছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিভিন্ন পত্রিকার প্রকাশিত খবরের তথ্যমতে ইউনূস সেন্টারের অন্তত দুইজন কর্মকর্তা সরকারের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলে দেনদরবার করছেন। যেন তারা এই নির্বাচনের ব্যাপারে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। ড. কামাল হোসেনও নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছেন। তাদের কাছে এই নির্বাচনের ব্যাপারে নানা নেতিবাচক তথ্য তুলে ধরছেন। সাবেক বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলার পর তিনিও তৎপর হয়ে উঠেছেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতে সরকারের বিরুদ্ধে নানারকম অভিযোগ উত্থাপন করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ভারতের একাধিক প্রভাবশালীর কাছে সুরেন্দ্র কুমার সিনহা একটি চিঠি লিখেছেন, সরকারের বিরুদ্ধে তিনি মানবতা লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করেছেন।

ড. বদিউল আলম মজুমদার তার সুজনের তত্ত্বাবধানে সারাদেশে সরকারের বিরুদ্ধে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহে ব্যস্ত। আন্তর্জাতিক মহলে তিনি এই তথ্য উপাত্তগুলো সরবরাহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সরকারের উন্নয়নকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে বাংলাদেশের উন্নয়ন টেকসই নয় এবং অনতিবিলম্বে বাংলাদেশে যে বৈষম্য বাড়ছে, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন সামাজিক অস্থিরতার ব্যাপারে নেতিবাচক কুৎসা রটনা করছেন।  একই অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন এবং ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। মাহফুজ আনামও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং গণমাধ্যম বিষয়ক সংস্থায় নিয়মিত লবিং করছেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে টিআইবি সরাসরি সরকারের বিভিন্ন দুর্নীতির ব্যাপারে গবেষণার নামে তদন্ত এবং সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার জন্য কাজ করছে। টিআইবির সম্প্রতি প্রকাশিত এমন কয়েকটি রিপোর্ট ইতোমধ্যে প্রকাশও করেছেন। আর লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আবরার হত্যাকান্ডটি ক্যাশ করতে দলের নেতাদের চোখ কান খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। যা দেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। এবং অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল ও তুহীন মালিক তাদের লেখালেখি ও গোপনীয় কর্মকান্ডের মাধ্যমে সরকারকে অস্থিতিশীল করতে বিভিন্ন মাধ্যমে লবিং করছেন বলে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে।

এই দ্বাদশচক্রটি সম্প্রতি প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডকে পূঁজি করে দেশে ও বিদেশে চক্রান্ত করে যাচ্ছে। এই  ইস্যুকে সারাদিশের স্কুল, কলেজ, বিশ^বিদ্যায়গুলোতে ছড়িয়ে দিতে বিপুল পরিমান অর্থ বিনিয়োগের খবরও কোনো কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ছাত্রদের আন্দোলন যাতে সরকার পতন আন্দোলনে রূপ দেয়া যায় তার জন্য  সরকার কঠোর হস্তে খুনীদের গ্রেফ্রতার করে দ্রুত বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তির কথা বলার পরেও এটা নিয়ে আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য হলো এই বিষয়টাকে অন্যখাতে প্রবাহিত করা। ছাত্রদের আবেগকে কাজে লাগিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করার একটি নীলনক্সা প্রণীত হয়েছে বলেও মনে করছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের পর সরকার যথাযথ কঠোর আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহণ সত্ত্বেও জাাতিসংঘ ও যুক্তরাজ্য খুবই দ্রুত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বিবৃতি প্রদানের বিষয়টি খুবই ইঙ্গিতপূর্ণ। বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন। বুধবার ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট এ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত ডিকাব-টক অনুষ্ঠানে এ দাবি জানান তিনি। যুক্তরাজ্য হাইকমিশনের এক বার্তায় বলা হয়, বুয়েটে ঘটে যাওয়া ঘটনায় আমরা বিস্মিত ও মর্মাহত। যুক্তরাজ্য বাক স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রসঙ্গে নিঃশর্তভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ।  এ ব্যাপারে তারা সরকারকে সতর্কবার্তাও দিয়েছে ইতিমধ্যে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। বিশেষ করে বিএনপি জামাত, ছাত্রশিবিরসহ একটি মহল এই হত্যাকা-কে রাজনৈতিক আবরণ দিতে চাইছে বলে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। এটা নিয়ে সারাদেশে ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র বিক্ষোভ করে সরকারকে একটি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার ষড়যন্ত্র চলছে।

বিএনপি নেতাদের কথাবার্তা, ছাত্রশিবিরের জঙ্গি মিছিল থেকে রটানো হচ্ছে যে, বুয়েট ছাত্র ফাহাদ তার ফেসবুকে এসব কথা লিখেছিল বলেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। দেশের জন্য তার এ রক্তদান বৃথা যাবে না। তারা এ কথাও বলছেন, শহীদ জেহাদর রক্ত দানের মাধ্যমে যেমন নব্বইয়ের স্বৈরাচারী এরশাদের পতন হয়েছিল, তেমনি ফাহাদের রক্ত দানের মাধ্যমে এ সরকারের পতনের সূত্রপাত হয়েছে। ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি, বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদ ও বিএনপি চেয়রপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গত শনিবার বিকেলে রাজধানীতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এমন মন্তব্য করেন। খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘বুয়েটের ছাত্র আবরার রক্ত দিয়ে সরকার পতনের যে আন্দোলনের সূত্রপাত করে গেছেন, আমার বিশ্বাস, সারাদেশের দেশপ্রেমিক ও গণতন্ত্রকামী ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেই রক্তের প্রতিশোধ নেবে।

সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আর একজন সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আবরার হত্যার মধ্য দিয়ে সরকার পতন আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। এখন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন সময়ের ব্যাপার। দেশের মানুষ কখনোই এই ফ্যাসিবাদী সরকারকে বরদাশত করতে পারে না।’ এর প্রেক্ষিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ১০ দফা দাবির প্রায় সব দাবিই নীতিগত মানার কথা বলেছেন কর্তৃপক্ষ। এরপরও আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের ঘটনায় বিদেশীদের এত দ্রুত প্রতিক্রিয়া ও বিবৃতিদানের পেছনে কলকাঠি নাড়ার ইঙ্গিত বহন করছে। নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছে পদ্মাসেতু নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ আনয়নকারী সেই মহলটির তৎপরতায়, যাতে দেশে অস্থিতিশীল ও অশান্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে বিএনপি-জামায়াত-শিবির ও যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠী।

শেষ করতে চাই এই বলেই যে, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নতবিশে^ও বিভিন্ন দেশে প্রতিদিনই স্কুল, কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্যে গুলি করে মানুষজন মারা হচ্ছে, ইউরোপের কোন না কোন দেশে মানুষজনকে গুলি করে, চাকু মেরে খুন করার ঘটনা ঘটছে, তারপরও এত দ্রুতগতিতে তো দূরের কথা কোন প্রতিক্রিয়াই দেখা যায় না। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার আবরারকে যারা হত্যা করেছে, দ্রুতগতিতে তাদের গ্রেফতার ও যথাযথ আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরও যে হত্যাকান্ডের বিষয়টিকে অন্য খাতে নিয়ে যেতে চাইছে, এটা তাদের বিভিন্ন কর্মকান্ডে প্রকাশ পাচ্ছে তার আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

 

0 Shares

২৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ