আন্না থেকে মান্না

আজিজুল ইসলাম ২৮ নভেম্বর ২০১৪, শুক্রবার, ০৮:৫০:৫২অপরাহ্ন বিবিধ ৮ মন্তব্য

আন্না থেকে মান্না। ভারতের আন্না হাজারে আর বাংলাদেশে মাহমুদুর রহমান মান্না। ভারতে আন্না হাজারে দুর্নীতি বিরোধী সামাজিক আন্দোলন শুরু করেছিলেন ২০১১-এ আর বাংলাদেশে মান্না শুরু করলেন আজ ২০১৪-র ২৮শে নভেম্বর। জনাব মান্না ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে একবার ডাকসুর জিএস এবং চিটাগাং ইউনিভার্সিটিতেও চিউকসুর জিএস ছিলেন। প্রতিবাদী মানুষ। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে উঠেছেন তিনি ইদানিং। আগে জাসদ করতেন, কমিউনিষ্ট পার্টির সাথেও সংস্রব ছিল নিবিড়ভাবেই। কিন্তু স্বাধীনচেতা মানুষ, কোন বন্ধনে জড়াতে চাননা, স্বাধীনভাবে লিখতে পারবেননা এবং আরো কিছু বিধিনিষেধের কারনে কমিউনিষ্ট পার্টিও ছেড়ে দেন একসময়। এরপর শেখ হাসিনা তাঁকে আওয়ামী লীগে নিয়ে আসেন। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন অনেকদিন। কিন্তু এখানেও টিকতে পারেননি স্বাধীনচেতা মান্না। এরপর ”নাগরিক ঐক্য” নামে একটি সংগঠন করেন এবং তিনি এর বতর্মান আহ্বায়ক।

”দুর্নীতিকে না বলুন” এই স্লোগানের উপর ভিত্তি করে জনাব মান্না আন্দোলনটার সূচনা করলেন। অনেকে এসেছিলেন। যেমন সবর্জনাব সৈয়দ আবুল মোকসেদ, শাহদীন মালিক, সাবেক আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, ডা. জাফরুল্লা চৌধুরী, প্রফেসর আসিফ নজরুলসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকা হতে নাগরিক ছাত্র ঐক্যের কিছু সদস্য। আর কিছু মানুষ নিতান্তই উৎসুক্যের কারনে। বলাই বাহুল্য বক্তারা সরকারকে, সরকারের প্রশাসনকে ধুনবেন এবং ধুনলেনও।

সমাপনী বক্তব্যে জনাব মান্না সকলকে সালাম এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, এই দুর্নীতিকে রুখতেই হবে। সরকারের ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনকে সমালোচনা করে কিছু বললেন। আগামীতে একটা গোলটেবিল বৈঠক করবেন তিনি এবং এভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কী করা যায়, সেবিষয়ে সকলের পরামর্শ নিবেন। আরো বলেন আমি ঢাকা শহরে একহাজার স্বেচ্ছাসেবক চাই, যারা সারা ঢাকা শহরে দুর্নীতিবিরোধী প্ল্যাকার্ড নিয়ে মানববন্ধন করবে একদিন। জনাব মান্না আরো বলেন, বিখ্যাত শ্লোগান “তুই রাজাকার” যেদিন প্রথম জন্ম নেয়, সেদিন কে ভেবেছিল যে এটা এত তীব্র হয়ে উঠবে। সেরকম একদিন আজকের এই দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনও একদিন তীব্র হয়ে উঠবে অবশ্যই বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আশাবাদী এই বক্তব্য শুনে কর্পোরেট এই ঢাকা নগরের প্রধান প্রধান রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে ফিরছিলাম আর মনে মনে ভাবছিলাম আমাদের দেশে তাহলে শেষ পযর্ন্ত আন্দোলনটা শুরু হলো, ভারতে যেটা শুরু হয়েছিল আরো তিন বছরেরও বেশী সময় আগে। ভারতে আন্দোলনটা অতি তীব্র হয়ে উঠেছিল প্রথম থেকেই, যে তীব্রতার ছিঁটেফোঁটাও আজ দেখা গেলনা। তবুও আমাদের একজন মান্না আছেন, ভালবেসে যাঁকে প্রায় সবাই  “মান্না ভাই” বলে সন্বোধন করেন।

সার্বিকভাবে আমার মনে হলো, আন্দোলনটাকে সফল করতে তাঁরা পথ হাতড়ে বেড়াচ্ছেন, কিন্তু পাচ্ছেননা, পেতে কষ্ট হচ্ছে। মান্না ভাই শহুরে রাজনীতিক, সংগঠনের নামটাও তাই রেখেছেন “নাগরিক ঐক্য”। শহর ছাড়াও বিস্তীর্ন গ্রাম-গঞ্জকে কতখানি আমলে নেন তিনি সেটা আমার জানা নেই। গ্রাম-গঞ্জের শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীদের অথর্নৈতিক দুরবস্থার কথা তাঁর মনে থাকে কী-না, এটাও অজানা আমার। গ্রাম-গঞ্জের কুঁড়েঘরগুলোর কান্না তাঁকে কতখানি নাড়া দেয়, সেটা তিনিই জানেন। তা নাহলে দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন তিনি শুধুমাত্র ঢাকা শহরে সীমাবদ্ধ রাখার কথা বললেন কেন ? এ কী দায়সারা গোছের কিছু? এ আন্দোলনকে সারাদেশব্যপী ছড়িয়ে দেয়ার কোন পরিকল্পনা আছে কি-না তাঁর জানা গেলনা। শুধু সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করার জন্য কী এ আন্দোলন!

জানিনা প্রশ্নগুলো মান্না ভাইয়ের কাছে পৌঁছবে কি-না। তবে আমার মতে এ আন্দোলনকে সার্থক করতে হলে সারাদেশব্যপী আন্দোলনটাকে ছড়িয়ে দিতে হবে। যেখানেই দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ উঠবে, সেখানেই তরুন সমাজের সহায়তায় প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে এবং সেখানে সুনীতি প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পযর্ন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যেতেই হবে। কোনমতেই ছাড় দেয়া যাবেনা। এভাবেই এ আন্দোলন একটা রুপ লাভ করতে পারে বলে মনে করি।

তবুও মান্না ভাইকে অশেষ ধন্যবাদ দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশে প্রথম সামাজিক এই আন্দোলন শুরু করার জন্য।

0 Shares

৮টি মন্তব্য

  • মামুন

    কিছুই করতে পারবেন না মান্না সাহেব। দেখে নিয়েন। কারন আমাদের সাধারন জনগণের রক্তে দুই দলের পা চাটার মনোবৃত্তি গরে উঠেছে। আর দূর্নীতি প্রতিটি সেক্টরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সিস্টেম হিসেবে জমে বসেছে, এর থেকে মুক্তি অত সহজে মিলবে না।
    আপনার লিখার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

    • আজিজুল ইসলাম

      এটা দেখে নেওয়া না নেওয়ার কোন ব্যাপার নয় জনাব মামুন। আমাদের আসলে কিছু করতে হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং জনাব মান্না এদেশে প্রথম সেটাই করা শুরু করলেন। কই, আর তো কেউ করা শুরু করলেননা। উনি কিছু করতে পারুন বা না পারুন, সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে যে, উনার এবিষয়ে আন্তরিকতা আছে কী না, উনি এবিষয়ে ডেডিকেটেড কি-না।
      আর এদেশের মানুষের রক্তের সাথে মিশে আছে বললেন তো জনাব মামুন! আপনার পরের কথাটাও ঠিক আছে। আবার এটাও ঠিক যে, এদেশের প্রধান ব্যক্তির এক হুংকারে দুর্নীতি অর্ধ্বেকে নেমে আসবে।
      তবে মান্না ভাইও বলিনা, দুর্নীতি কমানোর পথ শুধু-ই প্রতিবাদ এবং প্রতিবাদ অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাওয়া।
      অনেক ধন্যবাদ কিছু অন্তত: বলার জন্য।

  • আজিজুল ইসলাম

    আপনার প্রথম লাইন বুঝিনি।

    আর দ্বিতীয় লাইন যদি বুঝে থাকি, তবে আমি আপনাকে আশাবাদী করার জন্য লিখিনি জনাব। কারন আমি জানি কথা দিয়ে আশাবাদী করা যায়না মানুষকে, কাজ দেখিয়ে তা করতে হয়।

  • নওশিন মিশু

    এই দেশের প্রতিটি মানুষ দুর্নীতিপরায়ন, আমি/আমরা প্রত্যেকে। তারপরও আমি আশাবাদী, হয়তো কোন একদিন আমরা বুঝতে পারবো দেশের ক্ষতি মানে আমার ক্ষতি। হয়তো কোন একদিন হৃদয়ে বাংলাদেশকে আমরা ধারন করবো। সেই দিনে প্রত্যাশায় রইলাম ……

  • আজিজুল ইসলাম

    দেখুন জনাবা, এদেশের খেটে-খাওয়া মানুষ কোন দুর্নীতি করেনা। জানি আপনি বলেছেন, এদেশের প্রতিটি ক্ষমতাশালী মানুষ দুর্নীতিপরায়ন। আমি বলবো, প্রায় প্রতিটি ক্ষমতাশালী মানুষ দুর্নীতিপরায়ন। সবাই না। তা হলে এতদিন দেশটা লাটে উঠে যেত। বলবেন, লাটে উঠার বাকিটা আছে কী? এটা-ও ঠিক। তবুও বলবো, সবাই নয়।

    এদেশে দুর্নীতি-দু:শাসন উচ্ছেদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে এবং এই সংগ্রাম করতে করতে অপ্রতিরোধ্য একটা প্রচন্ড শক্তি সামনে এসে যাবে, যারা ছাত্রলীগ-যুবলীগ-ছাত্রদল-যুবদল কিছুই করেনা। এরা গ্রাম-গঞ্জ, ছোট শহরের স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, বিভিন্ন পাবলিক, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী তথা নিরপেক্ষ যুবসম্প্রদায়। এই শক্তিকে কিছু করতে হবেনা, শুধু শো হতে হবে একত্রিতভাবে। যেখানেই দুর্নীতি-দু:শাসন পরিলক্ষিত হবে, সেখানেই সেসবের বিরুদ্ধে এই শক্তিকে শুধুমাত্র সম্মিলিতভাবে প্রদর্শিত হতে হবে। আশা করা যায় আর কিছু করতে হবেনা।

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ