দিনকালের পরিস্থিতিতে ভালো গুণীন জ্যোতিষী পাওয়া মানে হাতে আসমান পাওয়া।
আজকালকার দুনিয়াটাতে চোর বাটপার সবকিছুতে ভরে গিয়েছে।
নগেন জ্যোতিষী ও ডাক্তার নীলুদা আজও ভারী বয়স নিয়ে বেঁচে আছেন। কলিকালে এমন বয়স্কা বৃদ্ধ ডাক্তার ও তান্ত্রিক জ্যোতিষী পাওয়া দুষ্কর বটে।
এক কথায় নেই বললে চলে।
পূর্বে জড়ীপুটি দিয়ে রোগ সেরে যেতো।
এখনকার দুনিয়ায় এন্টিবায়োটিক ছাড়া রোগ ছাড়ে না।
ইদানিং ভ্যালসা তামাক খেয়ে ডাক্তার নীলুদা গল্প জমাতে পারছেন না। রস যোগানো তামাক না খেলে গল্পে রস আসেনা। তাই এইবার লালমোহনকে বললেন ভালো তামাকের ব্যবস্থা করতে। লালমোহন যথাজ্ঞা পালন করতে সর্বদা প্রস্তুত।
গল্পের মধ্যে লজিক্যাল ব্যাখ্যা একমাত্র ডাক্তার নীলুদা দিতে পারেন। বলা যায় জমিদার হরিবাবুর চেয়ে শতগুণ যুক্তিযোদ্ধা।
রহমত আলী চা বিক্রি করার পাশাপাশি রাত্রিবেলা গ্রামেগঞ্জে গিয়ে ফুঁ ফা দিয়ে যা পয়সাকড়ি পান,
তা দিয়ে সংসার চালান। অনেকে রহমত আলীকে নিশি রাইতের কবিরাজ বলে।
ইদানিং তাঁর ফুঁ ফা তেমন একটা কাজে লাগেনা।
লোক ঠকানোতে রহমত আলী বড়ই চতুর।
তবে একটা কথা আজকাল চতুর ফতুর না হলে সংসার চালানো বড্ড কঠিন বলে তিনি মনে করেন।
তাই চতুরবিদ্যার প্রয়োজন।
লোকজনকে বোকা বানিয়ে ঠকানো রহমত আলীর স্ত্রী তা মোটেও পছন্দ করেন না। মাঝেমধ্যে ঝগড়াঝাঁটি হলে সাকিনাবিবি বলেন জাহান্নামের আগুনে জ্বলে পুড়ে মরবেন বলে দিলুম। এ পাপের ভার কেউ নিবে না।
এসব কথা রহমত আলীর কর্ণপাত না করে বরং উপড়িয়ে দেন।
হরিবাবুও চলেন নিজের বউ হিন্দুবালার টাকায়।
আর বউয়ের টাকাপয়সা চলা মানে বউয়ের কথায় উঠাবসা করা।
লোকজন খাজনা দিতে বড়ই অলসতা করে।
কত অমাবস্যা যায় আসে ভূতপ্রেতের দেখা অগোচরে রয়ে যায়। হরিবাবুও পারছেন না প্লানচেটের মাধ্যমে ভূতপ্রেতেকে আহ্বান করতে। মনের ভেতর তাঁর ভয় কাজ করে। কখন জানি আবার আফ্রিকান ভূত ঘাড় ধরে বসে।
মিস্টার নগেন জ্যোতিষী বলছেন ভূতপ্রেতের মধ্যে আমি একবার ব্রক্ষদৈত্য দেখেছি!
রাঘব জানতে চায় ব্রক্ষদৈত্য দেখতে কেমন?
প্রশ্নের প্রতিত্তরে নগেন জ্যোতিষী বলেন বর্ণনা দিয়ে তা বুঝানো যাবেনা। তবে এ দৈত্য গুলো তন্ত্র মন্ত্র দিয়ে বশ করা যায়না।
বিনুর তন্ত্রশাস্ত্র, মন্ত্রশাস্ত্রের প্রতি দিনদিন একটা বিশ্বাস জন্মাচ্ছে। আর এ তন্ত্রশাস্ত্রের মাধ্যমে ভূতপ্রেতকে বশীকরণ করা যায়।
সন্ধ্যা হলে আকাশ কালোরঙে গাড়ো হয়ে উঠে।
তার সাথে জ্বলে কত শত মাটির প্রদীপ।
আলোয় আলোকিত হয়ে উঠে সারা জমিদারবাড়ি।
সে সন্ধ্যায় বিনুর চোখের সামনে দিয়ে সাঁওতালী মেয়ে বিহারী কাপড় পরে হেঁটে যাচ্ছে।
অজানা অদেখা জায়গায় এমন রূপসী কন্যা দেখলে মন জুড়ায়। জুড়ানোর কথা।
কেননা মেয়েটি গানে ও নৃত্যে বেশ পারদর্শী।
মেয়েটিকে বিয়ে করতে চায় বিনু। কিন্তু বাড়ি থেকে আসেনি বিয়ে করার অনুমতিপত্র।
তাই আর বিয়ের রাত্রিতে বিনুর পাশাখেলার স্বপ্নটা পূরণ হলো না।
আফসোস রয়ে গেলে।
রাত্রি গাড়ো হলে দুনিয়া অন্ধকার হয়ে পড়ে।
তাই আনন্দপুরও অন্ধকার হয়।
আজকাল ভূতপ্রেত নিয়ে কেউ আলোচনা কিংবা রহস্যভেদ করতে চায় না।
রাঘব ভূতপ্রেত নিয়ে গবেষণা করতে সর্বদা বিচক্ষণ। কয়েকদিন ধরে রাঘব আনমনা হয়ে আনন্দপুরের ঐ দূরের রেলস্টেশনে গিয়ে ট্রেনের ডাব্বা গুনে দিনদুপুরে।
হঠাৎ একদিন ট্রেনের ডাব্বা গুনতে গুনতে চোখে পড়ে অদ্ভুত এক নরকঙ্কাল পড়ে আছে ট্রেনের কামরার ভেতর। জনশূন্য কামরা তারমধ্য একটা লাইট মিটিমিটি করে জ্বলছে। সাথে জোনাকিপোকারা উড়ছে।
অন্ধকার রাত্রি লোকজন নেই বললে চলে।
ভয়ে রাঘবের হাত পা কাঁপছে।
নরকঙ্কালের চোখ থেকে মাঝেমধ্যে আলো নিঃসরণ হয়। চোখের সামনে এমন দৃশ্য দেখে গা ছমছমে জ্বর উঠে বসে রাঘবের।
বাড়ি ফিরে ডাক্তার নিলুধা ও নগেন জ্যোতিষী যারযার মতো করে পথ্য দিলেন। রাত পোহালে জ্বর কিছুটা কমে আসে। আর দেখা নরকঙ্কালের দৃশ্য বর্ণনা করতে তাকে। এমন গল্প শুনে সবাই ভয়ে কাঁপছে।
কাঁপানোর কথা।
কেননা নরকঙ্কাল থেকে আলোর নিঃসরণ বের হচ্ছে তা কি যেই সেই কথা।
তবে একটা কথা রাঘব ও বিনু জমিদারবাড়িতে আসার পর থেকে অনেক রহস্য বের হয়েছে।
এমনিতে ভূতপ্রেতের স্বর্গরাজ্য আনন্দপুর।
অনেক প্রহর কাটিয়ে আজও অব্ধি জমিদারবাড়ির হরিবাবু ব্যতীত কেউ ভূতের দেখা পাননি।
লালমোহন বিয়ে করার পর থেকে ভূতপ্রেত নিয়ে ভাবেনা। ভূতপ্রেতের কথা ভাবলে বউ তাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে।
সেটাও একটা ভয়।
আর এ ভয়ে হরিবাবুর সাথে ভূতপ্রেতের আরাধনায় বসেনা। জমিদার হরিবাবু ভূতপ্রেতকে পাত্তা দেন না।
আর মনেমনে ভাবেন আফ্রিকান ভূতেরা দেহ বান্ধিবে ঠিক কিন্তু মন বান্ধিবে কেমনে? মন যে আমার বাইন্ধা রাখছে আমার স্ত্রী হিন্দুবালা।
বিনু হঠাৎ কোথায় হতে এসেই হরিবাবুকে বলছে
অনেকদিন হলো কর্তা আপনারে দুচোখ ভরে দেখি নাই। তাই এলুম দেখতে।
প্রতিত্তরে জমিদার হরিবাবু বলছেন রোজই দেখে না দেখার ভান করছো বিনু।
তো মন ভরে দেখো।
আনন্দপুরের জমিদারবাড়ির রহস্যটা জন্মজন্মান্তর ভর থেকে যাবে অগোচরে অদেখায়।
যদি পরবর্তী প্রজন্মের কেউ আসে তবে তা রহস্যভেদ করতে পারে! কিন্তু এজন্মে কেউ পারবেনা জমিদারবাড়ির ভূতপ্রেতের রহস্যভেদ করতে।
.
সমাপ্ত
২১টি মন্তব্য
ইঞ্জা
দাদা, যদিও ভূতের ভয়ে আমি এই ধরণের গল্প পড়া থেকে বিরত থাকি, এরপরেও আজ আসলাম সমাপনী মন্তব্য দেওয়ার জন্য, প্রথমেই ক্ষমা প্রার্থনা করছি আপনার লেখাটি এভয়ড করার জন্য, কারণটা আগেও বলেছি, আজও বললাম, ভূতে আমার ভীষণ ভয়।
সুন্দর ভাবে লেখাটি শেষ করার জন্য আন্তরিক অভিনন্দন।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ,দাদা।
ভালো থাকুন অনেক।
ইঞ্জা
শুভকামনা দাদা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
একটি সুন্দর গল্প এতো সুন্দর ভাবে শেষ করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা। ভূত নিয়ে ভালোই মজা দিলেন । আপনার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি। আরো সুন্দর কিছু লেখা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা অবিরাম
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ,দিদি।
ভালো থাকুন অনেক।
সুপায়ন বড়ুয়া
“আনন্দপুরের জমিদারবাড়ির রহস্যটা জন্মজন্মান্তর ভর থেকে যাবে অগোচরে অদেখায়।
যদি পরবর্তী প্রজন্মের কেউ আসে তবে তা রহস্যভেদ করতে পারে! কিন্তু এজন্মে কেউ পারবেনা জমিদারবাড়ির ভূতপ্রেতের রহস্যভেদ করতে।”
আপনার সাথে আমার ও ইচ্ছে ছিল ভুত দেখব বলে।
শুধু জমিধার হরিবাবু ছাড়া কেউ দেখে না যা ভুত।
তাই আর হলো না যে দেখা আপনি পরিসমাপ্তি টানলেন। সুন্দর একটা গল্প থেকে বঞ্চিত করবেন বলে।
ভাল লাগলো। শুভ কামনা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ,দাদা।
আরো একটু লেখার ইচ্ছে ছিলো কিন্তু আর লিখতে পারছিনা!
ভালো থাকুন অনেক।
ফয়জুল মহী
রহস্যময় থাক কারণ ভূত পেতনী ডর লাগে । তবে গল্প জমেছে ভালোই।
প্রদীপ চক্রবর্তী
ভূতপ্রেত আমার ভালো লাগে দাদা 😂
সাধুবাদ,
ভালো থাকুন অনেক।
সাবিনা ইয়াসমিন
কিছু রহস্যের কখনো সমাধান হয়না। আনন্দপুরের ভূতুড়ে কান্ড গুলো হরিহর বাবুর সাথেই চলে যাবে এক সময়, কিন্তু গল্প গুলো রয়ে যাবে। বিনুর বিয়ে হয়ে গেলে গল্পটায় সুন্দর সমাপ্তি আসতো। সব মিলিয়ে আরেকটা সম্পূর্ণ ধারাবাহিক গল্প উপহার দিয়েছো আমাদের। অভিনন্দন এবং অজস্র শুভেচ্ছা রইলো। লেখক জীবনের আগামীদিনগুলো উজ্জ্বল হোক, তোমার সার্বিক সাফল্য কামনা করি। ভালো থেকো প্রদীপ। শুভ কামনা নিরন্তর 🌹🌹
প্রদীপ চক্রবর্তী
আরও একটু বড়ো করে লেখার ইচ্ছে ছিলো তা আর পারিনি!
সাধুবাদ,দিদি।
ভালো থাকুন অনেক।
রোকসানা খন্দকার রুকু।
সব গুলো পড়ার সৌভাগ্য হলে ভালো হতো।।
ভালো লাগলো। ভালো লিখেছেন।
শুভ কামনা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ,দিদি।
ভালো থাকুন অনেক।
আলমগীর সরকার লিটন
গল্পটা সত্যই সুন্দর লেখেছেন প্রিয় কবি প্রদীপ দা
অনেক শুভেচ্ছা জানাই ————-
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ,কবি দাদা।
ভালো থাকুন অনেক।
সুরাইয়া নার্গিস
ছোট ভাইয়া ভূতের গল্পে যেমন ভয় পাই তেমনি পড়তে দারুন লাগে।
অনেকদিন পর পর্ব পড়লাম অনেক ভালো লেগেছে পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ,দিদি।
তৌহিদ
শেষ হয়ে গেলো এত তাড়াতাড়ি! কিন্তু রহস্যতো রহস্যই থেকে গেলো! আসলে কিছু রহস্য লোকমুখেই ঘুরেফিরে যার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না। এ গল্পটি তেমনই একটি গল্প ছিলো।
নতুন কোন গল্প নিয়ে আসুন শীঘ্রই। অপেক্ষায় রইলাম দাদা। শুভকামনা রইলো।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ,দাদা।
নতুন কিছু নিয়ে আসার চেষ্টা করছি।
আরজু মুক্তা
আপনার কাছে শিখলাম। পর্ব করে লেখা।
আপনাকে ধন্যবাদ, ভুতের গল্পের জন্য। যা আমার মেয়ে পছন্দ করেছে
প্রদীপ চক্রবর্তী
বাহ্!
সাধুবাদ,দিদি।
মামার জন্য রইলো শুভকামনা।