শীতের দুপুর তারমধ্যে এক ফালি রৌদ্রের আনাগোনা।
শরীরকে তাজা করে দিতে এ যেন মিষ্টিময় রৌদ্রের আগমন।
হরিবাবুর গায়ে কুষ্টিয়ার চাদর। পরনে বাঙালি পাঞ্জাবী।
একথায় বেশ সৌখিন বিলাসী লোক বলা যায় তাঁকে।
কিন্তু টাকাপয়সা লেনদেনে বড্ড কাঁচা।
একটাকা ধার পাওয়া যায়না। প্রায় গোপাল ভাঁড়ের কাছাকাছি। অনেকেই বলে থাকে হরিবাবু না কি গোপাল ভাঁড়ের মাসিতো ভাই!
ভূত ধরতে অনেক সময়ের ব্যাপার। আজ দুদিন হয়ে গেলো ভূত ধরা তো দূরের কথা একটাও ভূত দেখতেই পারেনি বিনু আর রাঘব।
হরিবাবু রাঘবকে বলছেন রাঘব আমায় কেন খাসকামরায় ডেকেছ?
আজ্ঞে কর্তা মশাই কী বলব-
বিনু প্রায় বলেই ফেলেছে।
রাঘব শুনো,বিনুর সম্পর্কে আমাকে আর একটা কথাও বলবে না।
আজ্ঞে কর্তা মশাই বিনুর কথা আর বলতে চাচ্ছি না।
আমি বলতে চাচ্ছিলাম যে বাগানবাড়িতে আসার আজ আমাদের দুদিন হতে চলছে।
ঠিকমতো ঘুমাতে পারছিনা। যদি কর্তা মশাই আমাদের এ জায়গা পরিবর্তন করে দিতেন তাহলে বেশ হতো।
জমিদার হরিবাবু বলছেন শুনো রাঘব তুমিও দেখছি বিনুর মতো। তোমাদের পোষালে থাকো আর না পোষালে বাড়ি চলে যেতে পারো।
আমার বাড়িতে কোন ভূতটুত নেই।
আজ্ঞে না কর্তা মশাই আমাকে ক্ষমা করবেন এমন কথা বলাতে।
আর যাই হোক কর্তা মশাই।
আপনার বাগানবাড়িতে আমাদের আসার একমাত্র কারণ হলো ভূত ধরবো এবং ভূত দেখবো !
গ্রামের লোকজন বলছে আপনার বাড়ির আশেপাশে নাকি ভূতপ্রেতের অনেক আনাগোনা।
আমি ভূত ধরতে বড্ড উৎসুক!
এই ছেলে শুনো,
তোমাদের উল্টাপাল্টা কথা শুনতে শুনতে আমার কান শেষ হয়ে যাচ্ছে। এইবার চুপটি মেরে চলে যাও বাগানবাড়িতে। আর না হয় কাপড়ের বেগ গুছিয়ে বাড়ি ফিরতে পারো।
হরিবাবুর এক এক কথা ফুরালেও ফুরাচ্ছে না আপন গিন্নী হিন্দুবালার হাতে বানানো পানের খিলি।
বিনু ও রাঘব দুজনি প্রায় মনঃক্ষুণ্ণ।
এ বাড়িতে ভূত আছে কিন্তু ভূতের আসল জায়গাটার সন্ধান দিচ্ছেন না জমিদার হরিবাবু।
জমিদার বাড়ি থেকে ফেরার পথে হরিবাবুর খাসকামরায় বসে বিনু ও রাঘব পেটভরে ইলিশ মাছের ভাজি আর রুই মাছের তরকারি দিয়ে মধ্যাহ্ন সেরে নিয়েছিল।
হরিবাবুর সাথে ভূত নিয়ে অনেক কথা কাটাকাটি হলেও বিনু ও রাঘব হরিবাবুর বেশ ভূয়সী প্রশংসা করেছে।
হরিবাবুর খাসকামরায় এতো দারুণ খাবারের আয়োজন আর সামান্যতম সময়ের জন্য অতিথি আপ্যায়নে দুজনি মুগ্ধ।
তা কখনো ভুলে যাওয়ার নয়।
অবশেষে বিনু ও রাঘব বাগানবাড়িতে ফিরছে।
গোধূলির সূর্য সবেমাত্র ডুবেছে।
এক ফালি আকাশে তারারত্নকে নিয়ে পূর্ব দিগন্ত জুড়ে উঠেছে সরোবরে চাঁদ।
হঠাৎ করে রাঘবের কর্ণপাত হলো জমিদার বাড়ির আশপাশে কোথায় গাজন উৎসব হচ্ছে।
শীতসন্ধ্যায় হিমবাতাসের সাথে ধেয়ে আসছে গাঁজার মনমাতানো ঘুমঘোর গন্ধ। রাঘব ও বিনু দুজনি চলে গিয়েছে সেখানে গাজন উৎসব দেখতে।
তান্ত্রিকদের হাতে নাকি অনেক ভূতপ্রেত বশীকরণ হয়েছে।
কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো আনন্দপুরটা আজকাল ভূতের রাজ্য হতে চলছে। অনেকেই রাত্রিবেলা ভূতের জ্বালায় ঘুমাতে পারেনা!
গাজন উৎসবে আগত সকল তান্ত্রিকরা হার মানিয়েছেন আনন্দপুরের ভূতের কাছে।
রাঘব মনেমনে চেয়েছিলো গাজন উৎসবের তান্ত্রিকদের দিয়ে জমিদার হরিবাবুর বাগান বাড়ি হতে দুএকটা ভূত ধরবে। আজও রাঘবের এ স্বপ্ন পূরণ হলো না।
রাত্রি অনেক দুজনি পুনরায় বাড়ি ফিরছে।
বিনুর মনে আতঙ্ক বাড়ছে এতো রাত্রি তারমধ্যে চারদিক অন্ধকার। রাস্তাঘাটে বাঁশঝাড়,তেঁতুল গাছ আর বটগাছ এসবে পুরো শহর ভরপুর।
বিশেষ করে এমন গাছপালাতে ভূতের উপদ্রব থেকেই থাকে। দুজনি হাঁটছে অন্ধকার পথ ধরে।
বিনু সামনের দিকে একবার চেয়ে পেছনপানে থাকায় দশবার। বিনুর মনে ভয়ানক আতঙ্ক যা কিছুতেই কাটছে না। যে আতঙ্ক দিনের বেলা নেই।
রাত্রি অনেক হওয়াতে রাঘবের মনে একটু একটু করে বেশ ভয় জাগতে চলছে। কেননা হাতে টর্চলাইট নেই তাছাড়া এতো গভীর রাত্রি অন্যান্য জায়গার তুলনায় এ পাড়াটা অদ্ভুত রকমের।
এতসবের ফাঁকে বিনু তেঁতুল গাছের তলায় প্রসাব করে কান্ডটা বাড়িয়ে দিয়েছে।
না জানি আজ তার কি উপায় হয়..

0 Shares

২১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ