জমিদার হরিবাবুর এক বাল্যবন্ধু নবীনবাবু তাঁর বসবাস উত্তরবঙ্গে। বয়স প্রায় আশির কাছাকাছি।
ওকালতি করে সংসার চলে।
বড্ড পেঁচুক মানুষ।
লোকে প্যাঁচাল নবীন বলে ডাকে।
কথায় কথায় প্যাঁচ ছাড়া আর কিছু বলার থাকে না তাঁর। আজ ছুটি বিধায় বাড়িতে বসে পত্রিকা পড়ছেন।
পত্রিকার হেড লাইনে ভেসে উঠলো,
আনন্দপুরের জমিদার হরিবাবুর বাড়ি আজ হতে ভূতবাড়ি নামে নামকরণ করা হলো!
জমিদার হরিবাবু ও তাঁর আপন শ্যালক দুজনকে ভূতে ধরেছে। নবীনবাবু বিস্ময়ে চোখ দুটো বড়বড় করে পত্রিকার দিকে তাকালেন। হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়লেন বাল্যবন্ধুর এমন খবর শুনে।
তাড়াহুড়া করে উঠে পড়লেন ট্রেনে।
সাথে স্ত্রী বিন্দুদেবী।
ট্রেনটি উত্তরবঙ্গের জংশন অতিক্রম করে রওয়ানা হলো আনন্দপুরের দিকে। এর আগে আর কোথাও স্টেশন নেই থামাবার। হাতে পত্রিকা নিয়ে সিটে বসে আছেন নবীনবাবু। আর একমনে পড়ছেন পত্রিকা। স্পষ্ট করে ভাসছে "হরিবাবুর জমিদার বাড়ি ভূতবাড়ি নামে নামকরণ করা হলো। এমন লেখা দেখে পাশের সিটের এক লোক বলছে বাবু কোথায় যাচ্ছেন?
আনন্দপুরে। আমার বাল্যবন্ধু হরিবাবুর বাড়ি।
তাকে ভূতে ধরছে। তাই তাকে দেখতে যাচ্ছি।
তাহলে আপনি ভূত দেখতে যাবেন?
নবীনবাবু রাগান্বিত হয়ে বললেন কী এমন উদ্ভট প্রশ্ন করছেন আপনি।
আমি ভূত দেখতে যাচ্ছি না
বরং আমার বন্ধুকে দেখতে যাচ্ছি।
আজ্ঞে ঠিক আছে কর্তামশাই রাগ করবেন না।
কথায় কথায় বলে ফেলছি আপনার হাতে পত্রিকার হেডিং দেখে।
ট্রেন পৌঁছেছে আনন্দপুর স্টেশনে।
নবীনবাবু ও তাঁর স্ত্রী বিন্দুদেবী নেমে পড়লেন ট্রেন থেকে। সেখান থেকে টেক্সি করে রওয়ানা হলেন হরিবাবুর বাড়ি।
জমিদার বাড়ি পৌঁছাতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে।
বহুদিন পর বাল্যবন্ধুর দেখা পেয়ে নবীনবাবু চোখেরজলে ভাসতে ভাসতে হরিবাবুকে জড়িয়ে ধরলেন। বিনু নবীনবাবুকে বলছে এইভাবে জড়িয়ে ধরবেন না,আপনার বন্ধুকে ভূতে ধরেছে।
তাই আপনাকেও ভূতে ধরার সম্ভাবনা আছে!
এমন কথাশুনে নবীনবাবু তাঁর বাল্যবন্ধু হরিবাবুকে বলছেন এ ছেলেটা কে?
কে আর হবে নবীন উড়ে এসে জুড়ে বসেছে,একটা অকালকুষ্মাণ্ড। কথায় কথায় তর্ক করে। আর এ বাড়ির নাম মিটিয়েছে সে।
বিনু বলছে সব বলে দিবো কর্তামশাই আর আমার নামে কিছু বললে! আমাদের অতিথি এনে অপমান করছেন। এখন বলছেন উড়ে এসে জুড়ে বসেছি।
থামো, থামো বিনু।
আমি মরে যাচ্ছি আর তুমি বসে বসে কীর্তন দিচ্ছো আমার নামে।
এদিকে ধীরে ধীরে লালমোহন সুস্থ হতে লাগলো।
কিন্তুু হরিবাবু দিনদিন অসুস্থ হয়ে পড়তে লাগলেন। নবীনবাবু আসার সময় বেশ রসালো রসালো খাবার এনেছেন উত্তরবঙ্গ হতে। দুর্ভাগ্য বাল্যবন্ধু হরিবাবুকে খাওয়াতে পারলেন না।
সব রসালো রসালো খাবার লালমোহন,বিনু ও রাঘবের পেটে। না খেতে পেরে হরিবাবু বিছানায় শুয়ে শুয়ে হায়হুতাশ করে দিনপার করছেন। রাত যত গভীর হয় হরিবাবুর মুখে রামনাম বেড়ে যায়।
এসব শুনতে শুনতে হিন্দুবালা প্রায় অসহ্য।
এ যেন ভূতের মুখে রামনাম শুনছেন হিন্দুবালা!
এমন অবস্থায় হিন্দুবালার সাথে হরিবাবুর রোজ ঝগড়া হতো। মাঝেমধ্যে হরিবাবু আপন স্ত্রী হিন্দুবাবুকে বলতেন। ও গো গিন্নি আমি একদিন বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো। দেখবে গো দেখবে।
আমি আর তোমার অপমান সইতে পারছি না।
এতসবের মাঝে ডাক্তার ও কবিরাজ রোজ পথ্য দিতে আসতো হরিবাবুকে।
আরও বেশকদিন বিছানায় থাকতে হবে তাঁকে।
নবীনবাবুর অফিস খোলা বিধায়।
তিনি আর থাকতে পারলেন না।
চলে গেলেন আজ সকালে বাল্যবন্ধুুর বাড়িতে তিনদিন থাকার পর নিজ বাড়িতে।
আজ রাত্রিবেলা বাগানবাড়িতে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভূত ধরার জন্য!
পাহারায় লালমোহন, বিনু ও রাঘবসহ গ্রামের কয়েকজন যুবক।
সবার মনে ভয় জাগলেও ভয় জাগছে না একেবারেই রাঘবের। রাত যত গভীর হচ্ছে লালমোহনের মনে ভয় জাগছে আর এক পা দু- পা করে পিছপা দিচ্ছে।
ভূতপ্রেত নিয়ে বিনু ও রাঘবের কিছুটা আইডিয়া হয়েছে, হরিবাবুর প্লানচেটের আবাহনী ক্রিয়া দেখে।
তাদের বিশ্বাস ভূত আছে।
কিন্তু পাড়ার লোকেরা ভূত বিশ্বাস করে তাই জমিদার বাড়িকে ভূতবাড়ি বলে ডাকে। কিন্তু লালমোহন ভূতপ্রেত ধরা পছন্দ করে না।
হঠাৎ একটা বিকট শব্দ শুনে সবাই ভূত ভূত বলে চিৎকার করতে লাগলো। শব্দটা ধেয়ে এসেছে বাগানবাড়ির বটগাছ থেকে। লালমোহন গিয়ে দেখে জমিদার বাড়ির সেই কালোবিড়ালটা। বিড়ালটা হরিবাবুর মুখে প্রসাব করার পর থেকে আর খুঁজে পাওয়া যাইনি।
বিনু বিড়ালের কথা না বলে সবাইকে বলতে লাগলো বটগাছে ভূত এসেছে ভূত। এ ভয়ে সবাই পালাতে লাগলো। কিন্তু রাঘব ঠিকি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে দেখছে ওটা আসলে ভূত কি না।

0 Shares

১৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ