শীতের রাত্রি।
হরিবাবু ঘুমানোর পূর্বে বারান্দায় বসে প্রতিনিয়ত
তামাক খেতেন। আজও আপনমনে টান দিতেছেন তামাকে। লালমোহন খেয়েদেয়ে শুইয়া আছে
এখন আর ডেকে তোলা তাকে সম্ভব নয়।
চারদিক নিস্তব্ধ, রাত্রি গভীর হতে চলছে।
হরিবাবু হুঁকাটি সযত্নে বারান্দার দেওয়ালে ঠেস দিয়ে রাখলেন। হাত পা ধুয়ে শয্যাগৃহে উপস্থিত হলেন। দুয়ারটি বন্ধ করে যেই বিছানার পাশে গেলেন হঠাৎ করে দেখেন নিজের ছবি ভূতস্বরূপ!
হতবাক হয়ে পড়লেন ।
এ কাজটা কে করলো?
এমন ছবি আগে কখনো দেখেন নি হরিবাবু।
ছবিখানা দেখে ভয়ে হাত পা কাঁপছে।
আপন গিন্নী হিন্দুবালাকে ডাক দিয়ে বলছেন কোথায় গো গিন্নী কোথায়?
তাড়াতাড়ি দেখে যাও সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে।
কী হলো গো?
এত রাত্তির বেলা ছেঁচাছো যে।
দেখো দেখো গো গিন্নী,
বাড়িতে জীবনে যা ঘটেনি তা ঘটতে বসেছে।
এই দেখো আমার বিছানায় আমার ভূতময় ছবি রেখে দিয়েছে কোন হারামজাদা।
হ্যাঁ এ তো ঠিকি দেখছি।
এ কাণ্ডটা কে করলো গো?
আমি কি জানি গো গিন্নী।
তোমার সোহাগী ভাই লালমোহনকে ডেকে বলো যে এই কাজটা কে করলো আর কতটাকা পেয়ে আমার বিছানায় ছবিটা রেখেছে?
গিন্নী হিন্দুবালা চেঁচিয়ে উঠে বলছেন কথায় কথায় আমার ভাইয়ের যতসব দোষ।
আর নিজে একজন দুধে ধোয়া তুলসিপাতা।
লালমোহন ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠে তার জামাইবাবুকে বলছে কি হয়েছে জামাইবাবু আমায় সবখুলে বলুন?
আরে এ মোহন কী আর খুলে বলবো দেখো এ কাণ্ডটা কে করলো ভূতের ছবির সাথে আমার ছবি।
সত্যিই তো জামাইবাবু এ কাণ্ডটা কোন অকালকুষ্মাণ্ড করলো?
এ আর কে করবে মোহন তোমার মতো আরেক অকালকুষ্মাণ্ড করেছে।
এ কী বলছেন জামাইবাবু আমি কেন করতে যাবো?
আমি এমনিতেই ভূতপ্রেত খুবি ভয় পাই।
আর ভূতের সাথে আপনার এমন ভূতময় ছবি দেখে আমার ভয়ে হাত পা কাঁপছে।
কেন জানি মনে হচ্ছে আপনাকে ভূতের মতো লাগছে।
আর দিনের বেলা বিনু আমায় বলেছিলো আপনি না কি  ভূতের সর্দার।
আজ তা আমার সত্যিই মনে হচ্ছে।
লালমোহনের এমন কথা শুনে হরিবাবু অগ্নিশর্মা হয়ে আছেন। চোখ মুখ ফুটফুটে লাল হয়ে আছে না জানি আজ লালমোহনের কী হয়।
জামাইবাবু রাগ করবেন এক কথা থেকে অন্য কথা বলে ফেলেছি ক্ষমা করুন।
হরিবাবু হিন্দুবালাকে বেশ ভয় পেতেন এ ভয়ের সুবাদে আজ লালমোহনকে ক্ষমা করে দিলেন।
রাত্রিবেলা লালমোহন কালোবিড়াল ধরে বেঁধে রাখার কথা ছিলো কিন্তু তা সে করেনি।
মিথ্যা কথা বলে হরিবাবুকে বলছে জামাইবাবু আপনার কালোবিড়াল খুঁজে পাইনি কোথায় পালিয়েছে।
বাড়িতে আসলে বেঁধে রাখবো কথা দিলাম।
ঠিক আছে মোহন যাও এ ছবিটা বাইরে নিয়ে রেখে আসো। কাল খাসকামরায় বিচার ডাকবো।
সকাল হলে বিনু ও রাঘবকে বলো আসতে খাসকামরায়। আর হালকা পাতলা মধ্যাহ্ন ভোজনের নিমন্ত্রণ দিয়ে এসো। না হলে আসবে না দুজনি তোমার মতো ভোজনপটু।
আজ্ঞে জামাইবাবু আপনার যথাজ্ঞা।
আজ দিনের হিসেবে বিনু ও রাঘবের তিনদিন অতিবাহিত হতে লাগলো।
রাত্রি হলে বিনুর ভূতের ভয়ের জ্বালা আর রাঘবের ভূত দেখার পালা। দুজনের রাত্রিবেলা ঘুম নেই এ যেন দুজনি অতন্দ্রপ্রহরী হয়ে আছে।
কিন্তু রাঘবের ভূত ধরা আর বিনুকে ভূত দেখানো দুটি কাজ সফল হচ্ছে না।
এ নিয়ে রাঘব বেশ চিন্তায় চিন্তিত।
রাতটা কোনরকম কেটে গেলে লালমোহন ভোরবেলা বাগানবাড়ি এসে রাঘব ও বিনুকে বলে যায় জমিদার বাড়ির খাসকামরায় যাওয়ার জন্য।
এছাড়া জমিদার বাড়িতেই মধ্যাহ্ন ভোজনের আমন্ত্রণ রয়েছে।
দুপুর হলে বিনু ও রাঘব স্নান করে চলছে জমিদারবাড়িতে।
হরিবাবু বিনুকে দেখে বলছেন দুজনি এসেছ দেখে খুশি হলাম। আজ্ঞে কর্তামশাই আপনার কথা আমরা কেমন করে উপড়িয়ে ফেলি বলুন?
জমিদার বিনুকে বলছেন বেশ বললে!
হরিবাবুর এমন কথার উপর বিনু হঠাৎ বলে উঠলো আচ্ছা জমিদার মশাই আপনার বাড়িতে একটা ইতিহাস আছে!
শুনি তো কী ইতিহাস?
আজ্ঞে জমিদার মশাই আপনার বাড়িতে ভূতপ্রেতের ইতিহাস আছে। আর এ ভূতপ্রেত না থাকলে বিছানায় ভূতের সাথে আপনার ভূতময় ছবি থাকতো না। আসলেই আপনি একজন ভূতের সর্দার!

0 Shares

১৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ