পূবের মাঠ পেরোলেই ছাতিম,
আর জারুলের বাগান।
জমিদারবাড়ির পান্থপথে বিশাল আকৃতি দুটো সাইনবোর্ড লাগানো। একটা মিস্টার নগেন জ্যোতিষীর আরেকটা ডাক্তার নীলুদা শঙ্করের।
প্রথম সাইনবোর্ডে লেখা,
পূর্ববঙ্গ হতে আগত তান্ত্রিক, মহাতান্ত্রিক, মহাসাধক নগেন জ্যোতিষী। যাঁর রয়েছে অগণিত নানা সনদপত্র।
বশীকরণ, যাদুকরণ,ভূতপ্রেত সাধনা,পরী সাধনা,
অবিবাহিতাকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া,তাবিজ ও যাদুটোনা।
কড়ি চালান,বাটি চালান ইত্যাদি আরও কতকিছুতে পারদর্শী।
যোগাযোগের ঠিকানা আনন্দপুর জমিদারবাড়ি। বর্তমানে লোকমুখে ভূতবাড়ি নামে পরিচিত।
বিদ্র : বিফল হলে আর্জি ফেরত।
অন্য সাইনবোর্ডে লেখা ডাক্তার নীলুদা শঙ্করের চিকিৎসা বিজ্ঞান ও ভূতবিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রিধারী একজন নামকরা চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও ভূত বিজ্ঞানী।
যিনি উত্তরবঙ্গ থেকে আগত।
হাত ভাঙা, পা ভাঙা, মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত, সর্দিকাশি,
ইত্যাদি। প্রথম দেখাতে নগদ পাঁচশত টাকা।
পরবর্তী দেখানোতে দুইশত পঞ্চাশ টাকা।
বিদ্র : বাকি নেই।
বাকি মানেই ফাঁকি।
তান্ত্রিক নগেন জ্যোতিষী ও ডাক্তার নীলুদার নাম চারদিকে ছড়তে লাগলো। আনন্দপুরের নানা প্রান্ত হতে লোকজন দিনের পর দিন ক্রমশ বেড়ে চলছে।
দুজনের জমজমাট ব্যবসাটা চলছে জমিদারবাবুর কাঁধে ভর করে। এতে কোন মাইনা দিতে হয় না।
মাঝেমধ্যে বিনু ও রাঘব দুজনি চিকিৎসা প্রদানের সময় তাঁদের সাথে থাকে।
বিনু মিস্টার নগেন জ্যোতিষীর কাছ হতে ভূতের তন্ত্রমন্ত্র শিখছে। মাথায় হাত বুলিয়ে বিনুকে বলছেন নগেন জ্যোতিষী,তোর চিন্তার কোন কারণ নেই।
তোকে অনেককিছু শিখিয়ে যাব। প্রথমে বশীকরণ মন্ত্র শিখাবো রে বিনু। তা না হলে বশ করে কিছুই করতে পারবেনা। আমিও প্রথমে বশীকরণ শিখেছি তারপর অন্যত্র।
বিনু বলছে,যথাজ্ঞা জ্যোতিষী মশাই।
যাতে করে আপনার দেওয়া তন্ত্রমন্ত্রে সারাজীবন আয় রোজগার করে দিন কাটাতে পারি।
পারবে রে পারবে বিনু।
তোর এ প্রতিভা আছে।
তবে তোকে ভিতু হলে চলবে না।
বুকের মধ্যে সাহস রাখিস সবসময়।
রাঘব সকাল হলে জমিদার হরিবাবুর খাসকামরার উত্তর পাশে ছোট একটা ঘরে চিকিৎসাবিজ্ঞান ও
ভূতবিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করে ডাক্তার নীলুদার সাথে।
মোহন মাঝেমধ্যে দু জায়গায় আসে আর যায়।
আগের থেকে তার হাতের অবস্থা একটু উন্নতি হয়েছে।
কিন্তু মেয়েটি ঘরজামাই করে রাখতে চায়।
তা তো কেউ মেনে নেয়নি।
মোহন মিস্টার নগেন জ্যোতিষীকে দিয়ে বশীকরণ করতে চায় মেয়েটিকে। এ বিষয়ে নগেন জ্যোতিষ তাকে আশ্বাস দিয়েছেন।
যদিও তন্ত্রমন্ত্র থেকে লালমোহনের অনেক আগ থেকে বিশ্বাস উঠে গিয়েছে। তবে নগেন জ্যোতিষী ও ডাক্তার নীলুদার কথার প্রতি তার বিশ্বাস সর্বদা আছে।
কিন্তু জমিদার হরিবাবু ও রহমত আলীকে কী ভূতে ধরেছে। এবং কোন ভূতের সাথে তাঁদের সম্পর্ক  আজও তা কেউ জানেনা।
এমনকি মোহনও না।
দুনিয়ার তন্ত্র মন্ত্র গিলিয়ে খাওয়ালেও হরিবাবুর মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হবে না। তবে তাঁর সাথে ভূতের যোগসূত্র আছে। সেটা রাঘব অনেক আগে থেকেই জানে।
জানার কথা।
কেননা ঐদিন প্লানচেটে অশরীর আত্মা আহ্বানের পূর্বে ভূতপ্রেত এসেছিলো।
সে ভয়ে এখনো দিন কাটছে।
হরিবাবু মোহনকে বলছেন,
মোহনরে তুই দিনদিন ধান্ধাবাজ হয়ে যাচ্ছিস।
এতে তোর নিজের কপাল নিজে খাচ্ছিস মনে রাখিস।
আমি তোর ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছি ঘোর অন্ধকার।
জেনে রাখিস মন্ত্রের জোরে ঘরে বউ আনতে পারিস।
কিন্তু তার মন পাবি নারে।
বউ তোকে পালাইয়া যাবে,না হয় তোকে নিয়া ঘরজামাই করবে। আজ এ কথা বলে দিলামরে মোহন। তোর বিয়ে হইব একদিন!
কৃষ্ণপক্ষের সাদা চান্দের রাত্রিতে।
তোই আর মেন মেন,বেন বেন করে কান্না করিস না।
আমি তো আছিই তোর,জামাইবাবু।
একটা কথা আবারও বলি তুই ধান্ধাবাজি ছেড়ে দেয়।
তোর জন্যই আজ জমিদারবাড়ির নাম ডুবতে বসেছে।
মোহন হরিবাবুর পায়ে পড়ে বলছে এইবার আমায় একটা ব্যবস্থা করুন জামাইবাবু।
হবে রে হবে, সব হবে।
সব ব্যবস্থা আমি করছি।
যা এইবার নগেন জ্যোতিষীকে গিয়ে বল পুনরায় বিবাহবন্ধনের মন্ত্র দিয়ে ফুঁ দিতে।
এ কেমন কথা বিয়ের পূর্বে কেউ কী বিবাহবন্ধনের মন্ত্র দেয়?
আরে বোকা এই বোকামির জন্য তোর বিয়েই হচ্ছে না।
যা বিবাহবন্ধনের ফুঁ দিয়ে আস।
বাড়িতে হঠাৎ করে কন্যাপক্ষের আগমন মোহনকে দেখতে। এইবার একটা ব্যবস্থা হবে বলে বিশ্বাস হিন্দুবালার। অবশেষে তাই হলো।
মোহনকে দেখতে কন্যাপক্ষের স্বয়ং মেয়ে এসেছে।
মেয়েটি স্বয়ংবরা।
তাই সে নিজেই স্বামী নির্বাচন করতে এসেছে।
অবশেষে সকল বাঁধা বিপত্তি কাটিয়ে লালমোহনের বিয়ে হলো। কোন এক  কৃষ্ণপক্ষের সাদা চান্দের রাত্রিতে।
কিন্তু বিনু ও রাঘব দুজনি কোন সমাধান খুঁজে পাচ্ছেনা বাগানবাড়ির ভূতের।
যদিও কিছুটা বিশ্বাস জেগেছিল ভূতনাথতলার ভূত ও পরী দেখে। তবে বাগানবাড়ির ভূতগুলো কেমন তা দেখতে চায়।
অনেকদিন অনেক প্রহর,ভূতপ্রেতের চিন্তা করতে গিয়ে রাঘব ও বিনুর বিয়ের বয়স পার হতে চলছে।
এদিকে কারো দৃষ্টিগোচর নেই।
বিনু মনেমনে ভাবছে ভূতপ্রেতের দেখা না পেলে খালি হাতে বাড়ি ফিরে লাভ কী?
বরং বিয়ে করে বাড়ি ফেরা ভালো। বিনুর এমন সিদ্ধান্ত ফেলে দেওয়ার না হলেও রাঘব ভাবছে পরিবার তা মেনে নিবে না।

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ