তখন ডিসেম্বরের মাঝামাঝি শীত চাপিয়ে পড়েছে চারদিকে। রহমত আলী ফরেস্ট থেকে তিনদিনের সফর শেষ করে বাড়ি ফিরেছেন।
সাথে করে নিয়ে আসলেন এক অদ্ভুত ভয়ংকর গা ছিমছিমে ও শিহরিত হয়ে উঠার গল্প।
গল্প শুনার জন্য সবাই গোল হয়ে বসে আছে জমিদারবাড়ির দীঘির পাড়ে। তখন বিকাল প্রায় চারটের কাছাকাছি। সন্ধ্যা না হলে গল্প বলতে নারাজ রহমত আলী।
রহমত আলী বলেন শীতের সময় ভূতের গল্প ঠিক সন্ধ্যা কিংবা গভীর রাত্রি না হলে তা আস্বাদন করা যায়না।
তাই কিছুটা সময় অপেক্ষা করে গল্প শুনতে হবে।
বিনু, রাঘব ও লালমোহন তাঁর কথা মেনে নিয়েছে।
বিনুর পেটের অবস্থা বেশ ভালো না।
ঘরবার করে যাচ্ছে। এছাড়া ডাক্তার নীলুদা কিছু পথ্যাধি দিলেও তাতে যেন সারছে না।
এসবের ফাঁকে ফাঁকে চলছে রাঘব,ডাক্তার নীলুদা ও নগেন জ্যোতিষীর দেখা ভূত ও পরীর গল্প।
এসব শুনে রহমত আলী খিলখিলয়ে হাসছেন আর বলছেন যতসব মিথ্যা কথা বলছ তোমরা!
গতকাল রাত্রিতে যে ভূত দেখেছি তোমরা মরে গিয়েও এমন ভূত দেখতে পাবেনা। এমনকিও মরেও ভূত হতে পারবেনা।
আমি কবরের ভেতর শুয়ে শুয়ে নয়টে ভূত দেখেছি।
এক দুটো নয়,
নয়টে ভূত।
জায়গাটা শুনশান, ভয়ংকর নীরব ও জনমানবহীন।
বিনু ভাবছে সত্যিই নাকি রহমত আলী কবরে শুয়ে নয়টে ভূত দেখেছেন।
একেকটা ভূতের উচ্চতা প্রায় সাত থেকে আট ফুট লম্বা।
হাতের নখ, মাথার চুল, দাঁত হিয়া লম্বা লম্বা।
চোখের সামনে যা পায় তাই খায়।
রহমত আলী সচক্ষে দেখেছেন ভূতপ্রেতেরা জীবিত মানুষ আস্তো খেতে।
কবরে শুয়ে থাকা মানে অক্সিজেন শূন্য হয়ে বাঁচারে বিনু। সে রাতের কথা ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা। শুনলে একরাত্রিও ঘুমাতে পারবেনা।
গল্পের মধ্যে হঠাৎ আচমকা দমকা দক্ষিণা হাওয়া বইতে লাগলো। রহমত আলী সকলকে বলছেন এ বাতাস ভূতপ্রেতের শ্বাস।
পূর্বে রহমত আলী কবিরাজি করতেন।
তাঁর অনেক তন্ত্রমন্ত্র ছিলো কাগজের মধ্যে লিখা তা উইপোকা ও ছারপোকা খেয়ে ফেলেছে। সে থেকে এসব বাঁদ দিয়ে দিলেও কিছু বিদ্যা এখনো ছাড়েন নি। তবে সাকিনাবিবি জানলে উপায় থাকবেনা।
গল্পের মধ্যে মিস্টার নগেন জ্যোতিষী বলছেন আমি অনেক ভূতপ্রেতের নামে পিণ্ডি দান করেছি।
জানিনা এগুলো পরকালে কী রূপে জন্মগ্রহণ করেছে।
রহমত আলীর গল্প শুনে সকলের জিহ্বা ও গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। শীতসন্ধ্যায় এমন গল্প মিথ্যা নয় চিরসত্য ও চোখের দেখা।
বিনু ও মোহন সবসময় ভীতু প্রকৃতির লোক।
এসব কথা শুনে ভয়ে কাঁপতে লাগলো।
দুজনের গায়ে বিষণ জ্বর এসেছে। থার্মোমিটার দিয়ে ডাক্তার নীলুদা মেপে দেখলেন তাপমাত্রা একশো পাঁচ এর উপরে।
রহমত আলী বলছেন ভাগ্যিস এইবারের মতো আমি বেঁচে গিয়েছি। না হলে আমায় জেন্তো চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়ে শেষ করে দিতো।
হঠাৎ করে জমিদারবাড়ির কালো বিড়াল এসে হাজির। তার আগে জমিদারবাবু গ্রামে ঢাকঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করেছেন। যে কালো বিড়ালকে ধরে দিতে পারবে তাকে মোটা অংকের অর্থ দেওয়া হবে।
সে লোভে মোহন যেই বিড়াল ধরতে গিয়েছে তখনি বিড়ালটি ঘাপটি করে হাতে কামড় মেরে পালিয়েছে!
আগামীকাল মোহনকে দেখতে আসবে কন্যাপক্ষ।
উপায় তো বড্ড মুশকিল।
কি করা এখন।
নীলুদা চিকিৎসা দিতে লাগলেন।
হিন্দুবালা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়লেন
তবে কী লালমোহনের বিয়ে এইবার আটকে যাবে?
লোকজন এসে দেখবে মোহনকে বিড়াল কামড় মেরেছে। তারমধ্য শরীর জুড়ে প্রচণ্ড জ্বর এসেছে।
এতসবের মাঝে রহমত আলীর না বলা অনেক দেখা কথা থমকে গিয়েছে।
পরেরদিন কন্যাপক্ষ থেকে স্বয়ং মেয়ে এসেছে মোহনকে দেখতে। মেয়েটি হাতের অবস্থা জানতে চাইলে বিনু হুট করে বলে উঠে বিড়ালভূত কামড় মেরেছে। মোহনও ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলে উঠে হ্যা কামড় মেরেছিল।
মেয়েটি আশ্চর্য হয়ে ভাবছে এ কেমন কথা!
তবে কি মোহনের গায়ে ভূতপ্রেতের আনাগোনা আছে।
বাড়িতে আসার পূর্বে আগত মেয়েটি জেনে ফেলেছে জমিদারবাড়ি এখন ভূতবাড়ি নামে পরিচিত।
বিয়ের আলাপ থেমে গিয়েছে সেখানে।
মোহনকে পছন্দ হয়েছে তবে তাকে ঘরজামাই করে নিতে চায় মেয়েটি।
কিন্তু এসবে রাজী হননি হিন্দুবালা।
ইদানিং হরিবাবুর দিনকাল ভালো যাচ্ছে না।
যেই আসে সেই বলে থাকে ভূতবাড়ি।
দিনদুপুরে হারিকেন জ্বালিয়ে এক জটাধারী তান্ত্রিকের আগমন। জমিদার হরিবাবু আর কোন তান্ত্রিক মহাতান্ত্রিককে বাড়িতে জায়গা দিতে চান না।
এভাবে এসে অনেক তান্ত্রিক মহাতান্ত্রিক বহুবার ঠকিয়ে গিয়েছে। এইবার তান্ত্রিক, মহাতান্ত্রিক আনা মানে নিজের ঘরে খাল কেটে কুমির আনা।
জ্বীন সাধনা,পরী সাধনা, ভূতপ্রেত সাধনা এসব নগেন জ্যোতিষী ব্যতীত তন্ত্রমন্ত্র আর কেউই জানেনা।
মেয়েটিকে মোহনের বড্ড পছন্দ হয়েছে।
ডাক্তার নীলুদা বলছেন চিন্তা করো না মোহন।
আমার পরিচিত ভূতদেরকে বললে বাড়িতে ধরে এনে বিয়ে দিয়ে দিবে।
কিছু আর্জি দিতে হবে।
সফল না হলে আর্জি ফেরত।

0 Shares

১৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ