আড্ডায় বাজেট কথন

তৌহিদুল ইসলাম ১৪ জুন ২০২০, রবিবার, ১২:৪০:০৭অপরাহ্ন রম্য ১৪ মন্তব্য

ভাই জানেন, এবারের বাজেটে মোবাইল কলরেট, ইন্টারনেট, আমদানিকৃত মোটরসাইকেল, গাড়ি রেজিস্ট্রেশন ফি, সিগারেট এবং আমদানিকৃত পেঁয়াজসহ নিত্যব্যবহার্য এবং অতীব প্রয়োজনীয় অনেক জিনিসের দাম বাড়বে।

তাই নাকি ভাই? আসলে চাহিদা বাড়লে মুল্য বেড়ে যায়। তাই চাহিদা বাড়াতে প্রথমে ব্যাবহারকারিকে লোভনীয় প্রস্তাব দিন, এরপরে সেই পণ্যে অভ্যস্ততা গড়ে তুলতে সহায়তা করুন এবং মওকা বুঝে কোপ মারুন। ফ্রীতেই মার্কেটিং আইডিয়া দিলাম কাজে লাগাবেন কিন্তু।

হ্যা ভাই, ঠিকই আছে। এদেশে মানুষজন মোবাইলে ফাও কথা বেশি বলে। কড়া নজরদারির মধ্যেও ইন্টারনেটে ভিপিএন ইনস্টল দিয়ে নীল আকাশে বিচরণও মাত্রাধিক হারে বেড়ে গিয়েছে। অশ্লীল টিকটক করবা, লাইকিতে সেমিন্যুড ভিডিও দেখবাতো নেও দেখো এবার। মজা নিবা আর ট্যাকা দিবানা তাই কি হয়!

মিয়ারা, বাপের টাকায় বিদেশি ব্রান্ডের লাল কমলা গাড়ি কিনে মানিকমিয়া এভিনিউ দিয়ে ফড়ড় ফড়ড়ড় শব্দ করে যাইবা, মেয়ে পটাইবা আর ট্যাক্স ফাঁকি দিবা এইটাতো গ্রহণযোগ্য নয়। মজা তুমিও যেমন পাইতেছো আমাদেরকেও পাইতে দাও টাইপ অবস্থা!

তবে ভাই শুনলাম, শর্তসাপেক্ষ কালো টাকা সাদা করা যাবে। কিন্তু থলের কালো বেড়াল বের হবার ভয়ে কতজন এটি করবে তা বোঝা মুশকিল। দেশের তরুণ উদ্যোগী বেকারদের সহায়তা করলে কিছুটা পাপমুক্তি মিলতে পারে। বলেন ঠিক কিনা?

আর সিগারেটের দাম বাড়লেও সমস্যা নাই। এটা গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। স্বাস্থ্যহানিকারক সব জিনিসের দাম আরও বাড়ুক। তবে আমার টেনশন নাই, নিজে বাঁচলে বাপের নাম।

ভাই আমি ভাবছি একবিঘা জমি বর্গা নিয়ে এবারে তামাক চাষ করবো। সিগারেট কোম্পানিগুলি নিজেদের স্বার্থেই এই চাষাবাদের খরচ দেয় বলে জানি। এতে তাদেরও লাভ, আমারও লাভ। দুই তিন বছরের সিগারেট সেই টাকায় হয়ে যাবে। বেশি হলে বিনা ট্যাক্সে (পড়ুন বিনামুল্যে উপহার হিসেবে) ভাই বেরাদারদের বিতরন করবো।

তবে ভাই, এখন থেকে দেশি পেঁয়াজ খান। কথামত আমদানিকৃত পেয়াজের দাম বাড়বে। দেশের মানুষ বিরল এক ঘটনার সাক্ষী হতে যাচ্ছে এবারে। জামাই কি করে? বলবেন পেঁয়াজের ইন্টারন্যাশনাল ইম্পোর্টার! ওয়াও! হোয়াট এ প্রেজটিজিয়াস ম্যান দ্যা জামাই ইজ!

ভাই, রোজা যেহেতু শেষ তাই চিনির দামও কমবে। সামনের রোজা পর্যন্ত জীবিত থাকবো কিনা আমরা কেউই জানিনা। তাই চলুন দেশি লেবু কিনে, দেশি চিনির সাথে সরবত বানিয়ে খাই। নিজের ইমিউন সিস্টেম বর্ধিত করি।

আর না বাড়লেও সমস্যা নাই। আল্লাহ না খাস্তা করোনা হলেও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত (হ্যান্ড সেনিটাইজার সহ আনুষঙ্গিক) অনেক জিনিসের দাম এবারে কমবে। আইসিইউ এর ভাড়াও কমবে। সো চিল ম্যান!

আসলে ভাই, সমস্যায় পড়ে গেলাম আসলে আমি। মধ্যবিত্ত হলেও উপরতলার মানুষদের মত একটু ভালো থাকতে চাই। কিন্তু নিত্যব্যবহার্য জিনিসের মুল্যবৃদ্ধির সাথে সমানুপাতিক হারে আমার বেতন না বাড়ার চিন্তায় এখন নাভিশ্বাস উঠছে। যেহেতু জীবনে ঘুষ কি চীজ চোখে দেখিনি তাই একজন সৎ সরকারি চাকর বিবেচনায় সরকার মহোদয় আমার দিকে একটু খেয়াল রাখবেন কি?

আচ্ছা ভাইজান, তেলের দাম কমলো নাকি বাড়লো তাতো জানালেননা! চা খাবেন আর এক কাপ?

না ভাই, দাম বেড়ে গিয়েছে। দুইকাপ খেলে পকেটে টান পড়বে। বোঝেনইতো?

আমি- ইয়া মাবুদ! শান্তি দাও শান্তি।

(ছবি- নেট থেকে)

0 Shares

১৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ