
আজ ধানের সাধভক্ষণ,নলসংক্রান্তি ও অশ্বিনীকুমার ব্রত।
দিনটি গ্রামবাংলার অতি পরিচিত ঐতিহ্যগত রীতি।
আশ্বিনের শেষ দিন নলসংক্রান্তি নামে পরিচিত। ধানফসলের একটি পবিত্র দিন । হিন্দু বাঙালিদের সাধ ভক্ষণ একটি বিশেষ রীতি। নল সংক্রান্তির মূল উদ্দেশ্য ঐ
সাধভক্ষণ। আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্তিকের মাঝামাঝি ধানের গর্ভ কাল ।নলগাছ বহু প্রজনন ক্ষমতার অধিকারী । চাষিরা আশা করেন তাদের ধানগাছ গুলোও নল গাছের মত প্রজনন ক্ষমতার অধিকারি হোক । ফসলের মাঠ ভরপুর হয়ে উঠবে।
বসুমতী কৃপা করবেন।
কোন কোন এলাকায় ডাক সংক্রান্তি নামেও পরিচিত। প্রথম পূজো হয় সারকুড়ে । তালের আঁটির ভেতর সুস্বাদু কলতা এই পূজোর প্রসাদ। সারকুড়ে নল গাছকে ও চালতা পাতায় টগর গেঁথে পূজো করে জমিতে গাড়া হয় । পোঁতার সময় এলাকাগত ভাবে নানা ছড়া চালু আছে ।
আকাশের জল পাতালে নল,
ধান ফলা কলকল ।
চাষি মানুষের আশা আকাঙ্খা প্রতীক নল সংক্রান্তি ।
হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার চিরন্তন ঐতিহ্য নলসংক্রান্তি। আশ্বিনের সংক্রান্তি এলেই ফসলের দেবী লক্ষ্মীর সাধভক্ষণ করানোর রীতি বা উপচার হোলো এই নলসংক্রান্তি বা ডাকসংক্রান্তি বা সারধরা বা ডাক সাঁকরাত। প্রসূতিকে যেমন প্রসবের আগে সাধ ভক্ষণ করানোর চল আছে, তেমনি আশ্বিন মাসের শেষ দিন যখন ধানের শিষ এসে যায়, তখন ঢলঢলে জমিতে তথা আসন্ন প্রসবা লক্ষ্মীকে নানা খাদ্য সহকারে সাধভক্ষণ করানোর রীতি রয়েছে এই নলসংক্রান্তির মাধ্যমে।
এছাড়া আজ অশ্বিনীকুমার ব্রত।
এইদিনে। আট আনাজ( সবজি ) খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে।
আশ্বিনে রাধেঁ , কার্ত্তিকে খাঁয়, যে বর মাগে সেই বর পাই।।
অশ্বিনী (অশ্ব রূপিণী সূর্যপত্নী সংজ্ঞা) এবং তাঁর কুমার (পুত্র)। এই অর্থে অশ্বিনীকুমার।
স্বর্গের চিকিৎসক। এঁর পিতার নাম সূর্য ও মাতার নাম সংজ্ঞা।
সংজ্ঞা সূর্যের অসহ্য তেজ সহ্য করতে না পেরে, সূর্যকে দেখলে চোখ নামিয়ে ফেলতেন। এই জন্য সূর্য ক্রুদ্ধ হয়ে অভিশাপ দেন যে, সংজ্ঞা তাঁর চক্ষু সংযমন করার জন্য প্রজাদের সংযমনকারী যম-কে প্রসব করবেন। এরপর এই অভিশাপের সূত্র সংজ্ঞা মৃত্যু দেবতা যমকে প্রসব করেন। এরপর তিনি অত্যন্ত ভীতা হয়ে চপলভাবে সূর্যের দিকে দৃষ্টিপাত করতে লাগলেন। তাঁর এই চপল চক্ষু দেখে সূর্য বললেন যে, তিনি চঞ্চলস্বভাবা একটি নদী প্রসব করার অভিশাপ দেন। এই অভিশাপের সূত্রে সংজ্ঞা, যমী নামক কন্যার জন্ম দেন। এই কন্যা যমুনা নামে প্রবাহিত হয়। এই কারণে যমী’কে অনেক সময় যমুনা বলা হয়।
যম ও যমী (যমুনা) জন্মের পর, স্বামীর রূপ ও ক্রোধ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য, ইনি নিজের অনুরূপ ছায়া নামক এক নারীকে সৃষ্টি করেন। এরপর সূর্য ও নিজের পুত্র-কন্যার পরিচর্যার ভার ছায়ার উপর অর্পণ করে, পিতৃগৃহে যান। কিন্তু সংজ্ঞার পিতা বিশ্বকর্মা অসন্তুষ্ট হয়ে কন্যাকে সূর্যের কাছে ফিরে যেতে বলেন। এরপর ইনি স্বামীর কাছে না গিয়ে উত্তর কুরুবর্ষে ঘোটকীর রূপ ধারণ করে ভ্রমণ করতে থাকেন।
ছায়া নিজের সন্তানদের মত সংজ্ঞার সন্তানদের প্রতিপালন করতেন না। এতে যম একদিন ক্রুদ্ধ হয়ে ছায়াকে পদাঘাত করতে উদ্যত হয়েও পরমুহূর্তেই যম ছায়ার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কিন্তু ছায়া ক্ষমা না করে যমকে অভিশাপ দিলেন যে, তাঁর পা খসে যাবে। যম পিতার কাছে গিয়ে বিমাতার এই ব্যবহারের কথা বলেন। সুর্য নিজ পুত্র যমকে অভিশাপ থেকে মুক্ত না করে বলেন যে, তাঁর পায়ের মাংস নিয়ে কৃমিরা মাটিতে প্রবেশ করবে। এরপর যম, সংজ্ঞা যে তাঁর আপন মা নয়― সে কথা সূর্যকে জানালেন। সমস্ত বিবরণ গোপন রেখে ছলনা করবার জন্য সূর্য ছায়াকে অভিশাপ দিতে উদ্যত হলে, ছায়া সমস্ত কথা স্বীকার করে, সংজ্ঞার পিতৃগৃহে গমনের সমস্ত সংবাদ সূর্যকে বলে দেন।
এরপর সূর্য বিশ্বকর্মা’র কাছে গিয়ে, তাঁর স্ত্রীর (সংজ্ঞা) গৃহত্যাগের কারণ জানতে পারেন। এরপর সূর্য সমাধিস্থ হয়ে সংজ্ঞার অবস্থান এবং অশ্বীরূপ সম্পর্কে জানতে পারলেন। এরপর সূর্য বিশ্বকর্মা’র কাছে গিয়ে নিজের তেজ কমিয়ে অশ্বরূপ ধারণ করে ঘোটকীরূপিণী সংজ্ঞার সাথে মিলিত হলেন। এই মিলনের ফলে প্রথমে যুগল দেবতা অশ্বিনীকুমারদ্বয় ও পরে রেবন্তের জন্ম হয়।
অশ্বিনীকুমারদ্বয় নামে খ্যাত পরবর্তী সময়ে এরা চিকিৎসাবিদ্যায় সুপণ্ডিত হয়ে উঠলে– স্বর্গবৈদ্য উপাধিতে ভূষিত হন। চিকিৎসা বিষয়ক এদের রচিত গ্রন্থের নাম হলো চিকিৎসা-সার-তত্ত্ব।
এখন মূল কাহিনী হল যে বর মাগে সেই বর কেন পাই ?
ঘোটকীরূপিণী সংজ্ঞার সাথে মিলনের পর উভয় পুনরায় আপন রুপে ফিরে আসে তখন গর্ভস্থায় ঘোটক রুপী মিলনের যে সন্তান তা অবশ্যই ঘোটক রুপে হবে , তাই শংকিত হয়ে দিকবেদিক ছুটছে সংঞ্জা ।
অবশেষে বিশ্বকর্মা বলল এর এক মাত্র উপায় বলতে পারবেন মহাদেব।
পুত্রী তুমি মহাদেবের নিকট গমন কর।
সংজ্ঞা মহাদেবের নিকট গিয়ে সমস্ত বিবরণ বললে , মহাদেব বলেন এর উপায় আমার জানা নেই কারন আমি পুরুষ , নারী সংক্রান্ত বিষয়ের জন্য তুমি বরং তোমার মাতা পাবর্তীর নিকট যাও । সংজ্ঞা পাবর্তীর নিকট গিয়ে সবিষয়ে বললে পাবর্তী এক মুষ্টি চাউল প্রদান করে বলল এই অন্ন রন্ধন করবে আশ্বিন মাসের শেষ তারিখে পূর্ব রাত্রে শেষ দিবস রেখে ভক্তি পূর্বক মহাদেবের আচর্না করবে এবং কার্ত্তিক মাসের ১ম দিবসে মনে মনে তোমার চাওয়া সংকল্পক করে ভক্ষণ করবে। তাহলে তোমার মনস্কামনা পূর্ণ হবে। টিক তাই করল দেবী সংজ্ঞা এবং মহাদেব ও মাতা পার্বতীর আর্শিবাদে সূর্য্য ও সংজ্ঞা মানুষ আপন রুপী পুত্র দ্বয়ের পিতা মাতা হন।
এই জন্য বলা হয় যে বর মাগে সেই বর পাই ।
১৫টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
চমৎকার। এতোটা জানা ছিলো না। আমাদের ওদিকে সারাইন উৎসব বলে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন সবসময় শুভ কামনা রইলো।
প্রদীপ চক্রবর্তী
হ্যাঁ,দিদি।
একেক জায়গায় একেক রেওয়াজ রয়েছে।
শুভকামনা আপনার জন্য।
মোঃ মজিবর রহমান
সুন্দর বিবরন ভাল লাগল প্রদীপ দা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ,দাদা।
মোঃ মজিবর রহমান
ভাল থাকুন। সুস্থ।
সুরাইয়া পারভীন
সম্পূর্ণ অজানা বিষয় সম্পর্কে জানতে পেরে বেশ পুলকিত লাগছে দাদা। প্রসূতি মায়ের মতো ধান গাছকেও সাধ ভক্ষণ করানো হয় জেনে বিষ্মিত হলাম।
অসংখ্য ধন্যবাদ চমৎকার একটি পোস্ট করার জন্য
প্রদীপ চক্রবর্তী
অসংখ্য ধন্যবাদ ও শারদ শুভেচ্ছা, দিদি।
খাদিজাতুল কুবরা
আমাদের গ্রামের বাড়িতে আশ্বিনে রাঁধে কার্তিকে খায় এরকম একটি অনুষ্ঠান হয় হিন্দু বাড়িতে। ঐ উৎসবে মোটামুটি সবাই অংশগ্রহণ করতো স্মৃতি গুলো এখনও জ্বলজ্বল।
প্রদীপ চক্রবর্তী
গ্রাম ব্যতীত এসব রেওয়াজ শহরে নেই বললে চলে।
এসব গ্রামবাংলার
প্রদীপ চক্রবর্তী
গ্রাম ব্যতীত এসব রেওয়াজ শহরে নেই বললে চলে।
এসব গ্রামবাংলার অতি প্রাচীন রীতি।
শারদ শুভেচ্ছা রইলো দিদি।
ছাইরাছ হেলাল
এ তো এক দারুন অজানাকে জানলাম,
‘যে বর মাগে সেই বর পাই’ এটির আসল ঘটনা জানলাম।
প্রদীপ চক্রবর্তী
হ্যাঁ,দাদা।
সাধুবাদ আপনাকে।
তৌহিদ
এতসব কিছুই জানতামনা দাদা।যে বর মাগে সেই বর পাই কেন বলে আজ জানলাম আপনার লেখার মাধ্যমে।
ধন্যবাদ আপনাকে।
প্রদীপ চক্রবর্তী
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকেও দাদা।
শারদ শুভেচ্ছা।
শামীম চৌধুরী
দারুন বিবরন দাদাভাই।