
আজ অপুর বিয়ে
তার সব বন্ধু বান্ধব মোটরসাইকেলের সামনে মশাল জ্বালিয়ে ঘুরছে পুরোটা শহর, দেখতে অনেকটা পাহারাদারের মত, কিংবা শহুরে নেতা।
সবগুলো মানুষ যখন ঘুমিয়ে পরবে তখন ই জেগে উঠে এরা, হু হু হাহা কিংবা হৈ হৈ শব্দে মাতিয়ে রাখে গোটা শহরটাকে, ঘুমন্ত শহর জাগ্রত হয়ে উঠে। আশাহতরা ফিরে পায় তাদের আশা।
প্রথম সাড়িতে থাকে তিনটা মোটর সাইকেল, সেগুলোকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে তিনজন চালক। এরা অনেকটা ভ্যান চালক কিংবা রাখাল ছেলের মত। ভ্যান চালকরা মালবোঝাই ভ্যানটিকে যেভাবে ঠেলে কিংবা টেনে, চালিয়ে নিয়ে যায় সামনের দিকে অথবা বাধা গরু গুলোকে সন্ধার আগে দড়িতে টেনে ধরে যেভাবে নীড়ে নিয়ে যায় রাখাল ছেলেটি, ঠিক তাদের মত। শহুরে এই পাহারাদার গুলোকে টেনে নিয়ে বেড়াচ্ছে পুরোটা শহর।
তাদের পেছনে একজন করে বসে থাকা মানুষগুলো আটকে ধরছে সময়কে, আমার দৃষ্টিতে তারা ফটোগ্রাফার কিংবা জেলে…
সময়কে আটকে ধরার যন্ত্রগুলো কাধে কিংবা হাতে নিয়ে বসে আছে। ঠিক যেমন জেলে তাকিয়ে থাকে তার জালের দিকে কিংবা পুকুরে বড়শি ফেলে পাড়ে চুপটি করে বসে থাকা মানুষটির মত। বড়শি ফেলে একনজরে তাকিয়ে থাকে তারদিকে। হঠাৎ কোন মাছ এসে কামড় বসালেই টুপ করে আটকে ধরবে। এ মানুষগুলোও তেমন। বড়শি ফেলে তাকিয়ে থাকে সময়ের দিকে। টুপ করেই আটকে ফেলে একটুকরো সময়। মুহুর্তেই বন্দি হয়ে যায় মায়াজালে। এ মানুষগুলো সময়ের দৃষ্টিতে অনেকটা জল্লাদের মত কিংবা শহুরে পুলিশ অথবা জেলখানা।
জল্লাদেরা যেমন দড়ি নিয়ে দাড়িয়ে থাকে রুমালের দিকে, মাটিতে পরা মাত্রই টেনে ধরবে রশিটি। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে মাটিতে ঝুলে পরবে লাশ কিংবা শহুরে পুলিশ গুলো ধরে ফেলে আসামিকে অথবা জেলখানা গুলো আটকে রাখবে সময় গুলোকে। সময়রা একসাথে যাবে, মাঝে মাঝে ভয়ে আতকে উঠবে তারা, শহুরে পুলিশ কিংবা জেলখানা গুলোর কথা ভেবে। তাদের দৃষ্টিতে এ ফটোগ্রাফার গুলো অনেকটা ডানা ওয়ালা দৈত্যের মত, উড়ে এসে ধরে নিয়ে হারিয়ে যাবে শূন্যে কিংবা মহাশূন্যে…
পেছনের সাড়িতে থাকা পাহারাদার গুলোর অপেক্ষায় বসে প্রহর গুনে ঘুমন্ত মানুষগুলোকে বুকে নিয়ে জাগ্রত থাকা শহরটা। এখানে আমার দৃষ্টিতে ঘুমন্ত মানুষগুলো জাগ্রত শহরের আদুরে সন্তানের মত। যেন চোখ বন্ধ করে শত বিশ্বাস বুকে নিয়ে মষ্তিষ্কটাকে কিছু সময়ের জন্য বিশ্রাম দিয়ে আরামে ঘুমোচ্ছে। আর শহরটা কোন গহীন গ্রামে বৃষ্টির দিনে বাচ্চা গুলোকে বুকে আগলে ধরে ঘরের এক কোনে বসে কাঁপতে থাকা মুরগির মত।
লাইনের পর লাইন, সাড়ির পর সাড়ি…
একটার পেছনে অন্যটা কিংবা এটার পাশে ওটা।
সবার গাড়ির সামনে মশাল জ্বলছে ধাও ধাও। কিছু সময় পর পর হুহু হাহা কিংবা হৈ হৈ শব্দ
অপু বসেছে বিয়ের পীড়িতে, মুখে রুমাল, মাথায় টুপি অআর গায়ে শেরওয়ানি
অপুকে দেখে আমার অনেকটা মুখোশধারী মনে হয়। কিংবা খোলস পড়ে বসে থাকা কোন গিরগিটির মত,
আপাতত এ মুখোশটা বউ শিকারের।
বিয়ের আগে অপু যখন প্রেম করতো তখনও সে মুখোশ পরিধান করতো, এ মুখোশ আর সে মুখোশের মাঝে কোন মিল আমি খুজে পাচ্ছিনা। হয়ত এটা আমার ব্যর্থতা, নয়ত অপুর স্বার্থকতা।
তবে মুখোশটা আমার চোখে স্পষ্ট…
তার পাশেই বসে আছে নতুন বউ, তাকেও কেন জানি আমার মুখোশধারীনি বলে মনে হচ্ছে। হয়ত এই মেয়েটারো কোন প্রেমিক ছিল বিয়ের আগে, প্রেমিকার মুখোশ পড়ে দেখা করতে যেত সে। আজ সে মুখোশটা আমি খুজে পাচ্ছিনা কোথাও। তার মানে খোলসের সাথে মুখোশটাও পাল্টিয়ে নিয়েছে। লজ্জায় কেউ কারো দিকে তাকাতে পারছেনা। আমি এ লজ্জাবোধের ভেতরেও একটা মুখোশ দেখতে পাচ্ছি। লুকায়িত মুখোশ…
বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেলে তারা আলাদা রুমে ঢুকে পরবে, লজ্জায় দুজনই লাল হয়ে থাকবে। তবে এ লজ্জাবোধের স্থায়িত্বকাল খুব বেশি সময় নয়। দুজন দুজনার হয়ে যাবে, নিভে যাবে আলো, ভেঙ্গে যাবে লজ্জাবোধ, খুলে যাবে মুখোশ
২৩টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
মুখোশের ব্যাপারটি গল্পে খুব সুন্দর করে উঠে এসেছে।
মুখোশের এ জীবন, জীবনের মুখোশ, একে অন্যের!
মোঃ মিজানুর রহমান সুমন
ধন্যবাদ ভাইয়া
এস.জেড বাবু
এতো এতো মুখোশের সমাহার চারপাশে
মুখশ্রী চেনা বড় দায়।
চমৎকার করে লিখেছেন – রাখাল- জেলে
পরে আর একবার পড়ে দেখলাম।
মোঃ মিজানুর রহমান সুমন
ধন্যবাদ ভাই…
দোয়া করবেন
জিসান শা ইকরাম
মোবাইলে ব্রাউজ করলে, প্রথম পাতার একদম নিচে ” নীতিমালা ” আছে। ওটা একবার পড়ুন।
পোস্ট দেয়ার ক্ষেত্রে নীতিমালায় বলা আছে ” ৫/ সোনেলা পোস্ট ফ্লাডিং নিরুৎসাহিত করে। একজন ব্লগার দিনে একের অধিক পোস্ট না দেন , সোনেলা এটি প্রত্যাশা করে। ২৪ ঘন্টায় কোন ব্লগারের একাধিক পোস্ট হলে , একটি রেখে অন্য সব পোস্ট খসড়ায় রেখে দেয়া হবে। এক্ষেত্রে ব্লগার ইচ্ছে করলে পরেরদিন খসড়ায় জমাকৃত পোস্ট পুনঃ পোস্ট দিতে পারবেন। ”
আশাকরি নীতিমালার প্রতি শ্রদ্ধা দেখাবেন।
আমরা চাই, ব্লগাররা নিজেরাই নিজের মডারেটর হবেন।
সোনেলার সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
শুভ ব্লগিং ……
মোঃ মিজানুর রহমান সুমন
আমি গতকাল একটা পোষ্ট করেছিলাম, আর আজকে এটা…
অর্থাৎ একদিন পর
সমস্যা নাই ভাই, আমার পোষ্টে যেহেতো আপনাদের সমস্যা হচ্ছে আমি আর কখনো এ ব্লগে কিছু লিখবোনা।
ধন্যবাদ সতর্ক করার জন্য..
সাথে আমার লেখা আগের সব গুলো পোষ্টও রিমোভ করে দিব।
ভালো থাকবেন।
আল্লাহ হাফেজ
মোঃ মিজানুর রহমান সুমন
আমার লেখা লেখির অত সখ নাই, যখন যা মাথায় আসে তা লিখি…
আমার শ্রদ্ধেয় বড় ভাই অনন্য অর্নব, উনি আমাকে বলেছিলেন এখানে লেখার জন্য। তাই লেখছি। আমি এর আগে কখনো কোন ব্লগে লেখিনাই। এসব লেখালেখির ইচ্ছেও আমার নাই।
আর আপনি বল্লেন ব্লগের নীতিমালার প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে, আমি অসম্মান করিনাই আপনাদের নীতিমালাকে। হয়ত বরাবর ২৪ ঘন্টা টা হিসেব করা হয়নাই আমার। তাই….
আর এমনও না যে আমি আপনাদের ব্লগে লিখে অনেক বড় লেখক হয়ে যাবো কিংবা অনেক টাকার মালিক হয়ে যাবো…
ভালো থাকবেন আপনারা
আল্লাহ হাফেজ
জিসান শা ইকরাম
প্রতিটি ব্লগেরই একটি নীতিমালা থাকে। চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে দুইটি পোস্ট দেয়া যাবেনা, এটিই আইন। এটি সুধু আপনার একার জন্য নয়, সবার জন্যই প্রযোজ্য। এই আইনে আপনার সমস্যা হলে আপনি লিখবেন কেন? আপনার সমস্যা হোক এটি আমরা চাই না।
আপনি নীতিমালা মানতে চাইছেন না, আপনার একার জন্য নীতিমালা পাল্টানো হবে না।
আইনের প্রতি আমাদের সবার শ্রদ্ধা থাকা উচিত।
এখানে লিখতে হলে নীতিমালা অনুযায়ী লিখতে হবে।
আপনাকে এখানে লিখতে বাধ্য করা হচ্ছেনা।
আপনার ইচ্ছেয় আপনি স্বাধীন।
ভালো থাকুন আপনিও
জিসান শা ইকরাম
আপনি লিখেছেন ” আর এমনও না যে আমি আপনাদের ব্লগে লিখে অনেক বড় লেখক হয়ে যাবো কিংবা অনেক টাকার মালিক হয়ে যাবো… ”
অনেক বড় কথা বলে ফেললেন। আপনাদের মত নতুন লেখকদের একটি স্থান দেয়ার জন্যই সোনেলা ব্লগ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আপনি কোনো টাকার মালিক হয়ে যাবেন এটা যেমন সত্যি নয়, তেমনি এটা সত্যি ব্লগ টিম নিজেদের টাকা খরচ করে এই ব্লগ টা চালাচ্ছে। আপনার লস হচ্ছেনা, টাকার লস সোনেলা ব্লগের।
আপনার জন্য নীতিমালা চেঞ্জ করা যাবে না।
মোঃ মিজানুর রহমান সুমন
আমি আপনাকে বলছিনা আমার জন্য নীতিমালা পরিবর্তন করতে, আপনার ব্লগে আপনার যেমন খুশি নীতিমালা রাখবেন, সেটা আপনার ব্যাপার।এতে আমার কিছু যায় আসেনা।
আমি যখন ২৪ ঘন্টার ভেতর দুইটা পোষ্ট করেছি, তারমানে আপনার বুঝা উচিৎ ছিল আমি নতুন, কিংবা নীতিমালা সম্পর্কে আইডিয় নাই। ব্যাপারটা আপনি আমাকে বুঝায় বল্লেও পারতেন। যেহেতো আমার বোঝার যতেষ্ট বয়স হয়েছে।
এভাবে অপমানজনক কিংবা কঠিন ভাষায় কথা না বল্লেও পারতেন। আপনাদের মত কিছু মানুষের অপমানজনক কথা বার্তার জন্যই নতুন লেখকরা তাদের লেখার উৎসাহ হারিয়ে ফেলে।
পরবর্তিতে কোন নতুন কিংবা পুরাতন লেখকের সাথে কথা বল্লে আশা করি শ্রদ্ধাবোধ দেখিয়ে কথা বলবেন।
আল্লাহ হাফেজ
জিসান শা ইকরাম
আপনি একটি ভুলের মাঝে আছেন। এটি আমার ব্লগ নয়, আমাদের ব্লগ।
আপনাকে নীতিমালার কথা মনে করিয়ে দেয়াতে অশ্রদ্ধা প্রকাশ কিভাবে করলাম তা আমার বোধগম্য নয়। আপনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন তা বুঝতে পারছি।
আর একটি কথা ” নীতিমালা সমস্ত ব্লগারের মতামত নিয়ে করা হয়েছে যখন এটি তৈরি করা হয়েছে। ” সুতরাং নীতিমালা সোনেলা ব্লগের চাপিয়ে দেয়া নয়, এটি ব্লগারদের তৈরি করা নীতিমালা, যা সোনেলা সংযুক্ত করেছে মাত্র।
আমার ব্যবহার এবং কথায় আপনিই কেবল অসন্তস্ট, এটা আমার ব্যাড লাক।
আর কথা বাড়াতে চাইনা, ভালো থাকুন।
শুভ কামনা।
নৃ মাসুদ রানা
এরকমকরে বলছেন কেন? আপনাকে লিখতে মানা করা হয়নি। শুধু বলা হয়েছে ২৪ ঘন্টা পরপর পোস্ট দিতে।
আসলে এমন অনেক ব্লগ আছে যেখানে আপনি চাইলেও ২৪ ঘন্টায় দুবার কিংবা সাথে সাথে আপনার পোস্ট দেখতে পাবেন না। কেননা, লেখাটি পর্যবেক্ষন হওয়ার পর হয়তো পোস্ট হতে পারে।
কিন্তু সোনেলায় সেরকম কিছুই নেই।
আসলে প্রত্যেকটি ব্লগের সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়মনীতি আছে।
মনির হোসেন মমি
সুমন ভাই বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবে নিন। এখানে আমরা আমরাই আমাদের মাঝে এর আগেও এমন আলোচনা হয়েছে,,,শুধু আপনার বেলায় হয়নি।যেহেতু আমরা একই সোনেলা পরিবারের সুতরাং এখানে এমন আলোচনা হতেই পারে। অনন্য অর্নব আমাদেরও সন্মানীত লেখক ব্লগার। নিয়মের মাঝে না থাকলে জীবন যেমন সুন্দর হয় না তেমনি সর্বোক্ষেত্রে। বাকীটা আপনার বুঝ।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
জেলে আর জল্লাদের উপমাটা অনেক ভালো লেগেছে। শেষে মুখোশের ব্যাপারটাও অসাধারণ। ভালো থাকুন সবসময় শুভ কামনা রইলো
মোঃ মিজানুর রহমান সুমন
ধন্যবাদ আপু
সঞ্জয় মালাকার
এতো এতো মুখোশের সমাহার চারপাশে,
ভালো লাগলো খুব।
মোঃ মিজানুর রহমান সুমন
ধন্যবাদ দাদা
মনির হোসেন মমি
লেখায় বেশ কয়েকটি উপমা টেনেছেন।খুব ভাল লাগল আপনার গল্প পড়ে।মুখোশের দুনিয়ায় জীবন পালিয়ে বেড়ায়।
মোঃ মিজানুর রহমান সুমন
ধন্যবাদ দাদা
ত্রিস্তান
পৃথিবীতে মুখোশের বিকল্প কিছু নেই, যার মুখোশ যতো অকৃত্রিম সে ততো বেশি সফল।
মোঃ মিজানুর রহমান সুমন
বাস্তব একটা কথা বলেছেন দাদা…
ধন্যবাদ
ফয়জুল মহী
অপূর্ব , পাঠে মুগ্ধতা রেখে গেলাম।
মোঃ মিজানুর রহমান সুমন
ধন্যবাদ দাদা