
তীব্র আলো এসে পড়লে বন্ধ চোখেও টের পাওয়া যায়। আর সে কারণেই ঘুম টুটে গেল রাজিনের। চোখ মেলে দেখে অপরূপ সুন্দরী এক পরি দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। অপার বিস্ময়ে তার দিকে চাইতেই বলে উঠল
– চল রাজিন, আমি তোমাকে নিতে এসেছি।
– কোথায়! কোথায় নিয়ে যাবেন আমাকে? কে আপনি?
– আমি স্বর্গ থেকে এসেছি। তুমি যেখানে যাওয়ার স্বপ্ন দেখ এবং দেখছিলে, সেখানেই নিয়ে যাব তোমাকে।
– কই আমি তো কোন স্বপ্ন দেখছিলাম না!
– দেখছিলে তো, স্বপ্ন দেখতে দেখতেই তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ, তাই হয়তো মনে নেই।
– মানে?
– মানে তুমি সন্ধ্যায় যখন ঠিকমতো পড়াশুনা করছিলে না, তোমার আম্মু তোমাকে খুব করে বকা দিচ্ছিল, মনে পড়ে? তারপর তুমি অভিমান করে বালিশে মাথা দিয়ে কতকিছু ভাবছিলে। তোমার বাবা তোমার গায়ে – মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। তোমাকে বুঝাচ্ছিল যে, তোমাকে অনেক বড় হতে হবে। বাবার আদর খেতে খেতে কখন যে তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ টের পাওনি।
– হ্যাঁ, তাই তো, কিন্তু এতকিছু আপনি জানলেন কি করে!
– আমি আরও অনেককিছু জানি।
– আচ্ছা, বলুন তো আর কি কি জানেন।
– তোমার বাবা যখন তোমাকে আদর করে অকেককিছু বোঝাচ্ছিল, তখন মনে মনে তুমি অনেক বড় হবার প্রতিজ্ঞা করছিলে। তুমি ভাবছিলে এবার পরীক্ষায় ফাস্ট হবে। স্কুলের খেলাধুলায় চ্যাম্পিয়ন হবে, সাহিত্য – সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী হবে। সবকিছুতে তুমিই হবে সেরাদের সেরা।
– হ্যাঁ ঠিক বলেছেন। আমি সবকিছুতেই সেরা হতে চাই। আমার বাবা-মা’ও চাই আমি সবক্ষেত্রে সেরা হই।
– কিন্তু এটা ঠিক নয় রাজিন। সবাই কেবল সেরা হতে চায়। কিন্তু কেউ মনে রাখে না যে, সবক্ষেত্রে সেরা হবার চেয়ে একজন সত্যিকারের মানুষ হওয়া উত্তম ও জরুরি।
– তাহলে সেরারা কি মানুষ নয়!
– সেরা হলেই সত্যিকারের মানুষ হওয়া যায় না। এই শহরে বহু লোক আছে যারা জীবনের কোন না কোন ক্ষেত্রে সেরা ছিল বা আছে, কিন্তু তাদেরকে আমরা অমানুষ বলি। কেননা মানবিক গুণাবলীর চেয়ে তাদের মধ্যে পশুত্বের গুণাগুণ বেশি। তাদের দ্বারা মানুষের কোন উপকার তো দূরের কথা, ক্ষতিই বেশি হয়। সত্যিকারের মানুষেরা কখনো কারো ক্ষতি করে না, কাউকে ছোট করে না, সবাইকে সন্মান করে, মানুষের কল্যাণে নিজের জীবন পর্যন্ত বিলিয়ে দিতে চায়। তুমি সত্যিকারের মানুষ হতে পারলেই সবার উপরে উঠতে পারবে।
– আহ কি সুন্দর কথা! তাহলে আমি সত্যিকারের মানুষই হতে চাই। বলুন তো সেজন্য আমাকে কি করতে হবে।
– কঠিন কিছু না। ঠিকমতো লেখাপড়া করতে হবে, বাবা -মা ও শিক্ষকের কথা শুনতে হবে। সময়ের মূল্য দিতে হবে। সকলকে সন্মান করতে হবে। এজন্য তোমাকে আলোর পথে হাঁটতে হবে। তুমি যদি উপরে উঠতে চাও, অবশ্যই তোমাকে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হবে। আর সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে গেলে অবশ্যই আলোর প্রয়োজন। তা না হলে অন্ধকারে পড়ে যাবে, উপরে উঠার সিঁড়ি খুঁজে পাবে না।
– কিন্তু আমি তো আলোর পথে হাঁটতে চাই। আমাকে আলোর পথে নিয়ে চলুন পরিবন্ধু।
– আচ্ছা তবে চল বন্ধু, আলোর সিঁড়ি দেখিয়ে দিই। সেই সিঁড়ি বেয়ে যেতে যেতে তুমি পৌঁছে যাবে আকাশে।
– আলোর সিঁড়ি আকাশ ছোঁবে!
– হ্যাঁ ঠিক তাই, আকাশ ছোঁবে আলোর সিঁড়ি।
পরিবন্ধুর হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে রাজিন। আহ কি সুন্দর পথ! চারদিকে ফুলের সৌরভ। কি এক মোহনীয় সুগন্ধ!
হৃদয় শীতল করা ঝিরঝিরে হাওয়া। পাখি ও পরিদের কণ্ঠে অপূর্ব সুরের মূর্ছনা। সিঁড়ির চারপাশে বর্ণিল আলোর ঝলকানি। আহ! কি অপরূপ আলো চারিদিক! এমন তেজস্বী আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেল রাজিনের।
২টি মন্তব্য
হালিমা আক্তার
চমৎকার। এভাবেই আলোর সিঁড়ি বেয়ে এগিয়ে যাক জীবন। শুভ কামনা রইলো।
নিতাই বাবু
চমৎকার কবিতা! শুভকামনা রইল দাদা। সাথে রইল অগ্রীম ঈদ-উল-ফিতরের শুভেচ্ছা।