মাত্র তো আর ছয় মাস। তারপরই দেশে ফেরার কথা শফিকের। পরিকল্পনাও অনেক। ফোনে বৌকে বলেও সেগুলো।এবার ফিরলেই বাচ্চা নিয়ে নেবে দুজন মিলে পরামর্শ করে। বিয়ের চার মাসের মাথায় নার্গিসকে রেখে অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও দেশ ছাড়তে হয়েছিলো শফিককে। মফস্বলে বেড়ে উঠা নার্গিসের সাথে শফিকের পরিচয় বন্ধুর বিয়েতে।পরিচয়ের পর চার-পাঁচ মাস ফোনালাপ।এর ভেতরেই দুজন টের পায় একে অপরকে টানছে অদৃশ্য কোন বাঁধনে। শফিকের তখন প্রবাস জীবনের তাড়া। কিন্তু নার্গিসকে বিয়ে না করে গেলে যদি অন্য কোথাও বিয়ে হয়ে যায় ,সেই রিস্কেও যেতে চাইলো না শফিক।তাই দু'পরিবারের সিদ্ধান্তে বিয়ে এবং চার মাসের সংসার জীবনে প্রবেশ।দেশ ছাড়ার তিন বছর হয়ে গেছে।দেখতে দেখতে মাস ছয় চলেও যাবে।
দূরে থাকায় মনের টান গভীরতর হয়েছে দুজনেরই। অনেক স্বপ্নের কথা বলার সুযোগ তৈরী হয়েছে। কখনও কখনও খানিক অভিমানে পুঁড়েছেও ভেতরে-ভেতরে। এভাবেই দিন-রাতের ব্যবধান কমছে। মাত্র তো ছয় মাস।কেটে যাবে।
শরৎকালের দুপুর। রোদ-বৃষ্টির ভেতর তুমুল সখ্যতা জন্মেছে।হুটহাট রোদের ভেতরেই বৃষ্টির আনাগোনা শুরু হয়।
নার্গিসের জ্বর ছিলো রাতে। সকালে জ্বরের উত্তাপ কমে গেলেও শরীরের দূর্বলতায় শয্যা ছাড়েনি। অসুখ বিসুখের কথা চেপে রাখার স্বভাব নার্গিসের। শারীরিক দূর্বলার কথা কাউকেই জানায় না ,শফিককেও না,পাছে দুঃশ্চিন্তা করে।
চোখ বন্ধ করে নার্গিস কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে।এমন সময় বেজে উঠে ফোন।শফিকের। যার আসার দিন ঘনিয়েছে। বৌয়ের জন্য কি আনবে , কি লাগবে পরিবারের সবার সব কিছু জেনে নিচ্ছে বারবার। মনের ভেতর তুমুল উচ্ছ্বাস তার। বৌকে কিভাবে অবাক করে দিবে সময়- অসময়ে নিজেই ভাবে সে সমস্ত কথা, হাসে একা একাই। কখনও সহকর্মীরা সেই হাসি দেখে টিপ্পনিও কাটে।
শফিকের ফোন পেয়ে নার্গিস বিছানা থেকে নেমে বারান্দায় বসে।
দুঃশ্চিন্তা করবে বলে শরীর খারাপের কথা জানায় না শফিককে। কিন্তু শফিক জেনে যায় মায়ের কাছ থেকে।
ফোন করেই উদ্বিগ্ন শফিক বৌকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা বলে। অনিয়ম করতে মানা করে। দেশে ফিরে যাবতীয় ডাক্তারী পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়ে আনবে ঢাকায় গিয়ে, এসবও বলে। কিন্তু ফোনের অপরপ্রান্তে থাকা নার্গিস ততক্ষণে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে। হাত থেকে পড়ে গেছে শফিকের পাঠানো সেলফোন। শফিকের কণ্ঠ তখন ধ্বনিত হচ্ছে বাতাসে।পৌঁছাচ্ছে না অপেক্ষায় থাকা নার্গিসের কর্ণকুহর ভেদ করে হৃদয়ে....
Thumbnails managed by ThumbPress
৩৬টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
ফেরার অপেক্ষাটি অসমাপ্তই রয়ে গেল,
সহজ কথা সহজে বলে ফেলার নৈপুণ্য দেখিয়েছেন লেখাটিতে।
ভাল লাগল।
রুম্পা রুমানা
ধন্যবাদ । মনোযোগী পাঠক আপনি ।বুঝতে পারছি। ভুল ভ্রান্তি থাকলে অবশ্যই শোধরে দিবেন।
ইঞ্জা
হৃদয়গ্রাহী।
রুম্পা রুমানা
হৃদয়গ্রাহী করে তুলতে পারিনি যদিও। তবুও ধন্যবাদ।
ইঞ্জা
পেরেছেন কিনা আপনার পাঠকই বলবে আপু। 🙂
জিসান শা ইকরাম
সফিকের ফেরা অসমাপ্তই রয়ে গেলো,
নার্গিস অসুখের কথা জানালে গল্পটি অন্য রকম হতে পারতো,
সমাপ্তিটা এমন হবে বুঝিনি শেষ তিন লাইন না পড়া পর্যন্ত।
সাবলীল উপস্থাপনা।
রুম্পা রুমানা
প্রবাস জীবন খুব যে আনন্দের না আমরা যতোটা ভাবি , তা ই বুঝাতে চেয়েছি। পারিনি হয়তো। এভাবেই অনেকের জীবন থেকে অনেক কিছু হারিয়ে যায়।
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
অন্যরকম ভালো লাগলো।
রুম্পা রুমানা
অন্য রকম ধন্যবাদ আপনাকে।
নীলাঞ্জনা নীলা
মন বিষাদে ছেয়ে গেলো।
ছোট গল্প এতো সুন্দর লেখেন আপনি?
খুবই ভালো লেগেছে।
রুম্পা রুমানা
উৎসাহিত হলাম আপু। পাশে চাই । বিষাদে ছেয়ে গেল মন , তাই দুঃখিত।
নীলাঞ্জনা নীলা
এখানেই আপনার লেখনীর স্বার্থকতা। মনটা বিষাদে ছেয়ে গেছে বলেই গল্প ভালো লেগেছে।
নাসির সারওয়ার
আহারে, সবই নিয়তির দোষ!
সহজ তবে ঘুছানো লেখা।
রুম্পা রুমানা
কঠিন করে ভাবতে পারি না।সমস্যা এখানেই। ধন্যবাদ।
ক্রিস্টাল শামীম
আমি আর ইব্রাহিম ভাই একরুমে এ থাকতাম। লোকটা প্রতিদিন তিনবার বৌ এর সাথে কথা বলতো। বউকে নতুন বেলাউস, সারি, জুতা, কিনার জন্য অভিমান করতো কারণ একসাপ্তাহ পর বাড়ি যাবে। আমিও রুম ছেড়ে ছোট একটা রুম নিলাম। কিন্তু বিধাতার খেলা কে বুঝে। বাড়ি যাওয়ার ২ দিন আগে রাতে হার্ডএটাক করে মারাগেলো। সেই একই টিকেট দিয়ে ইব্রাহিম ভাইয়ের লাস গেলো। সবচাইতে বেশি কান্না আমিই করেছিলাম।
আপনার লেখাটা খুব হয়েছে যদিও সুখ ছাড়া আমার কিছু ভালো লাগেনা, বৃষ্টির পানির কাঁদামাটি দিয়েও যে মূর্তি বানানো যায়, আপনার লেখা না পড়লে বুঝতেই পারতাম না।
রুম্পা রুমানা
এই যে লেখাটা , এমনটা আমাদের গ্রামের একজনের জীবনেরই চিত্র। কিছুটা ঘুরিয়ে , নাম বদলে , সময় বদলে লিখেছি কেবল। ইব্রাহীম ভাইদের জীবনে অনেক অপূর্ণতা থাকে। অনেক। আমরা বুঝি না কেবল। আপনাকে ধন্যবাদ।
মোঃ মজিবর রহমান
এ কি করলেন আপা। মানিনা।
এভাবে কষ্ট কেম জ্বালা ধুত !!!!!!!!!!!!!
আপুরে…………।।
রুম্পা রুমানা
ভাগ্যে আজব এক কারিগর। আমি কেবল লিখেছি।
মোঃ মজিবর রহমান
তা ঠিক আপু।
ভাল থাকুন সতত ।
মিষ্টি জিন
প্রবাস জীবন খুব কষ্টের।
কত কিঁছু যে কেডে নেয়..
গুছিয়ে খুব সুন্দর করে লিখেছেন।
রুম্পা রুমানা
ধন্যবাদ , আপু । ভালো থাকুন খুব।
মৌনতা রিতু
দূরে থাকলে অনেক সম্পর্কই খুব কাছে চলে আসে, আবার অনেক সম্পর্ক দূরে সরে যায়।
একই আঙ্গিকে পড়ছিলাম, খুব সহজ সরল ভাবে।কিন্তু হঠাৎই মনে হয় ধাক্কা খেলাম।
উপস্থাপন সুন্দর। ছোট শব্দের মধ্যে একটা বড় গল্প পড়ে ফেললাম, মনে হল।
রুম্পা রুমানা
অনেক সুন্দর বলেছেন। এভাবে ভাবিনি নিজেও ।
অপার্থিব
রেমিট্যান্স আর হুন্ডিতে চাপা পড়ে প্রবাসীদের দুঃখ কষ্ট। স্বপ্ন , নিরাপত্তা আর অতি উচ্চাশার ফাঁদে পড়ে এমন কত গল্পের যে অকাল পরিসমাপ্তি
ঘটে আমাদের লোক চক্ষুর আড়ালে কে জানে?
ভাল লেগেছে লেখাটি।
রুম্পা রুমানা
শুভেচ্ছা রইলো । শুভ কামনা ও ধন্যবাদ।
ইলিয়াস মাসুদ
মন ছুঁয়ে গেল,এমন কত যে ঘটনার আমি নিজেও সাক্ষি
খুব ভাল লাগা রইল লেখাতে
রুম্পা রুমানা
লিখুন তবে।আমরাও পড়ি ।ধন্যবাদ।
ব্লগার সজীব
প্রবাসীদের বেদনার কাব্য এটি। এই ফেরা কখনোই সমাপ্ত হবে না। ভাল লিখেছেন আপু।
রুম্পা রুমানা
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই। এইসব না ফেরাগুলো বেদনাদায়ক।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
প্রবাসী যারা দেশে পরিবার রেখে বিদেশ থাকে তাদের মনের হাহাকারই ফোটে উঠেছে গল্পটিতে। কি নিদারুণ কষ্ট এদের!
আমার জানামতে এমন একজনকেও দেখেছি, সহসাই দেশে আসতে পারবে না তাই ফোনের মাধ্যমে বিয়ে করেছে। গিয়েছিলো প্রায় ৮/১০ বছর। বিয়ে করেছে গতবছর। আসবে কবে জানা নেই।
কষ্ট কি জান রূম্পা, অই ছেলের উপর পরিবারের ১২/১৫ জন ডিপেন্ডেন্ট। এমনকি ছোট দুইভাইকে দেখেছি বিয়ে করেছে অথচ রোজগার কিছুই করে না। একটার আবার বাচ্চাও আছে।
এটাও বুঝি, যে মেয়েটা বিয়ে হয়ে এখনো স্বামী কি বুঝেনি, তাকেও অনেক যন্ত্রণা পোহাতে হবে এদের মাঝে। এই হচ্ছে প্রবাসী জীবন।
রুম্পা রুমানা
এগুলো বেদনাদায়ক চিত্র , আপা। মর্মান্তিক। ধন্যবাদ আপনাকে এমন চিত্র তুলে ধরার জন্য।
শুন্য শুন্যালয়
বেশ ভালো লিখেন তো আপনি! সহজ সরলভাবেও কষ্ট কেমন করে ফোঁটানো যায়, তা আপনার লেখায় উপস্থিত। প্রবাসের জীবন সুখকর নয়, এটা বলতেও কেমন অস্বস্তি হয়, কেন আছি তবে এখানে!! তাইতো।
রুম্পা রুমানা
ধন্যবাদ আপনাকে । তবুও জীবনের তাগিদে থাকতেই হয় । কি আর করা ।
আবু খায়ের আনিছ
ভাব বেশি, বলো কম, লিখো তারচেয়ে কম। এ ত এতকাল পড়ে/শুনে এসেছি আজ দেখা পেয়ে গেলাম। অল্প লেখায় গল্পের অসাধারণ বহিঃপ্রকাশ।
ভালো লেগেছে গল্প।
রুম্পা রুমানা
মন্তব্যে উৎসাহ বাড়লো। ভয়ে ভয়ে লিখি। হয় কিনা লেখা তার বিচার আপনারাই করুন। ধন্যযোগ।
আবু খায়ের আনিছ
ভয় পাবেন না, এখানে সবাই সবার আপন। সমালোচনা করবে কিন্তু তাও মিষ্টি ভাষায়।