ডায়েরী লিখা শুরু করেছিলাম যখন আমি সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। আমার বড় ভাই আমাকে একটা ডায়েরী (আসলে তা ছিল রেক্সিনের কাভারযুক্ত নোট বুক) দিয়েছিল তার ছোট ভাই ক্যাডেট কলেজে চান্স পেয়েছে এই খুশিতে। কথা দিয়েছিল একটা CASIO ঘড়িও দেবে পরে। দিয়েছেও পরে তবে সময় নিয়েছিল পাঁচ পাঁচটা বছর। আমার বড় ভাইটা আমার অনেক বড় রোল মডেল ছিল, আমার অনেক কিছুরই প্রেরণা বলা যেতে পারে। যদিও এখন আমি তাকে বলি "আমরা আসলে স্ট্রাকচারালি রিলেটেড ব্রাদার, নট ফাংশানালি"। সেদিকে যাবনা, যাবার দরকারও নেই। তবে আমার ডায়েরী লেখার শুরুটা হয়েছিল আমার বড় ভাইয়ের বদৌলতেই। তখন বছরের শুরুতে একটা ভাল ডায়েরী কিনতে পারা বা পাওয়া সে ছিল রুটিনের মত। এমনও হতো ভিন্ন ডায়েরী ছিল ভিন্ন ভিন্ন ভাব প্রকাশের জন্যে। অনেক দিনের যত্নে রাখা ডায়েরীগুলো এখন কোথায় কোনটা আছে, নাকি হারিয়ে গেছে কিংবা পোকায় খেয়েছে বলতে পারব না।
গত পরশু দিন গিয়েছি আমার বোনের বাসায়। মা এসে উঠেছে আমার মেজবোনের বাসায়। আমার আরো দুই বোনও হাজির। ভাগ্নে-ভাগ্নিরা এখন বড়ই হয়েছে। ওরাও আছে সবাই। ওদের কাছে আমার জায়গা একটু আলাদা - ওদের বাসায় আমি তিন বছরের মত ছিলাম। অনেক স্মৃতি ওদের সাথে। আমার অনেক সুভেনিরও সব ওদের বাসায়। রাতের খাওয়া শেষে হৈ চৈ এর মধ্যে আমার মেজবোনের বড় মেয়ে এক প্যাকেট নিয়ে হাজির। "মামা, এই ডায়েরীটা তোমার, ড্রয়ারের কাগজ পত্রের নীচে পড়ে ছিল"। ডায়েরীটার কাভার দেখার সাথে সাথে আমি যেন বদলে গেলাম। প্রথম পাতা, পরের কয়েকটি পড়তে পড়তে যেন আমি অন্য কোন সময়ে হারিয়ে গেলাম বা যাবার পথ খুঁজছি। কিছু অংশ খেয়ে ফেলেছে উই পোকায়। কিছু লাইন সবাইকে পড়েও শোনালাম।
মজার ব্যাপার হলো সেই পুরোনো ডায়েরীটা আবার রেখে আসলাম ওদেরই কাছে, মনে হলো আমার স্ত্রী এ ডায়েরীর ভার নিতে পারবে না। ক্যাচাল না করে রেখে আসাই শ্রেয় মনে হলো। আজ আবার যাব ওদের বাসায়। ভাবছি নিয়ে আসব ডায়েরীটা। নিজের লেখা ডায়েরীর সমালোচনা লিখব সোনেলায়। নিজেকে নিজের নাম দিয়েছি নানাভাবে, যখন যেমন মন চেয়েছে। তখন নিজের নাম দিয়েছিলাম অর্বাচীন। তাই নাম দিলাম "অর্বাচীনের ডায়েরী" - লেখাগুলো আসলে কোন এক অর্বাচীনেরই।
Thumbnails managed by ThumbPress
২৪টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
আহ ডায়েরী! পুরনো দিনের ডায়েরী!! উইপোকায় খাওয়া। বিশ্বাস করুন উইপোকাকেও এখন আমার আপনজনের মতো লাগছে। স্মৃতি খাওয়া উইপোকা।
অর্বাচীনের ডায়েরীর জন্য এখন অপেক্ষা করবো, নিজের লেখার সমালোচনাও শুনবো। ডায়েরী নিয়ে নিজের অনেক স্মৃতিও মনে পরলো, তবে এখানে নিজের নয় আপনারটাই শুনতে চাই। ডায়েরী সূচনার সুন্দর ভূমিকা।
অরণ্য
একটা পেরিয়ে আসা সময়কে নিয়ে লিখব, লেখা কিছুকেই আবার লিখব, এই সময়ে এসে সেই চেতনাকে সমালোচনা করব, দেখব বসে এই সময়ে – ব্যাপারটা খারাপ না, আবার খুব বেশি ভালও না।
শুন্য শুন্যালয়
নিজের নাম দিয়েছিলেন, অর্বাচীন? বেশ তো!! অর্বাচীন মানে তো নবীন, নাকি আরো কিছু আছে?
অরণ্য
আমি দিয়েছিলাম আনাড়ী, মুর্খ বোঝাতে – less educated, কম প্রজ্ঞাসম্পন্ন।.
অলিভার
এক একটা ডায়েরি, এক একটা স্মৃতির আখড়া। যারা নিয়মিত লেখে তারা শুধু যে তাদের কথাই লেখে তা নয়। বরং তার পুরো জগতটাকে তুলে ধরে।
অপেক্ষায় রইলাম আপনার সেই জগৎ সম্বন্ধে জানার জন্যে, আপনার ‘অর্বাচীন’ কে চেনার জন্যে 🙂
অরণ্য
ধন্যবাদ অলিভার ভাই। বেশি আকাঙ্ক্ষা না করতে বলব – সে এক অর্বাচীনের লেখা। এখন হয়তো একটু সময় নিয়ে নেড়ে দেখব। কোন কোন প্রেক্ষাপট ভাল লাগতেও পারে।
অলিভার
হা হা হা
ডায়েরীর লেখা তেমন খারাপ লাগার কথাও নয়।
আর জানার জন্যেই তো পড়তে আসবো। হোক না একটু ভিন্নরকম, ক্ষতি তো নেই তাতে 🙂
অরণ্য
না অলিভার ভাই, কোন ক্ষতি নেই।
আশা জাগানিয়া
অর্বাচীনের ডাইরীর ভুমিকা ভাল হয়েছে।ভাবী ডায়েরীর ভর বহন করতে না পারলেও আমরা ঠিকই পারবো।দেখি আপনি কতটা ভর চাপাতে পারেন আমাদের উপর 🙂
অরণ্য
ধন্যবাদ আশা জাগানিয়া। আপনার নাম দেখেই একটা গান মনে পড়ল – ওগো দুখো জাগানিয়া তোমায় গান শোনাব। সবাই সব ভার বইতে পারে না। আর তারা সব বইবেই বা কেন? আমি জানি সোনেলা তা পারবে। আর তাই সোনেলাকেই বেছে নিলাম ডায়েরীটার সংরক্ষণাগার হিসাবে।
খেয়ালী মেয়ে
এক সময় আমিও নিয়ম করে প্রতিদিন ডায়েরী লিখতাম–বিশেষ করে হোস্টেলে থাকার দিনগুলোতে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ২টা লাইন না লিখলেই হতো না–হারিয়ে গেছে সেদিনগুলো 🙁
নিজের লেখা ডায়েরীর সমালোচনা-নতুন কিছু হতে যাচ্ছে….অপেক্ষায় রইলাম আপনার অর্বাচীনের ডায়েরী পড়ার….
অরণ্য
শেষ ডায়েরী লিখেছি হলে। আমার আয়োজন ছিল একটু আলাদা। আমি হলে ফিরতাম অনেক রাত করে। ঘুমোতে যাবার আগে একটা ফ্রেশ গোসল ছিল প্রতিদিনের কাজ। তারপরে টেবিল ল্যাম্পের আলোয় কিছু একটা লিখতাম। তারপর একটা সিগারেট, তারপর ঘুম।
নতুন কিছু করছি কিনা জানিনা। তবে লিখতে ইচ্ছে করল। আগ্রহ পাচ্ছি, দু-এক জন আপনারা অপেক্ষায় আছেন অর্বাচীনের ডায়েরী পড়ার। ধন্যবাদ আপনাকে।
কৃন্তনিকা
ডায়েরী… জীবনের অনেক বড় অংশ… অবশ্যই নিয়ে আসুন, নিয়ে আসুন সোনেলায়… 🙂
“মজার ব্যাপার হলো সেই পুরোনো ডায়েরীটা আবার রেখে আসলাম ওদেরই কাছে, মনে হলো আমার স্ত্রী এ ডায়েরীর ভার নিতে পারবে না। ক্যাচাল না করে রেখে আসাই শ্রেয় মনে হলো।” জানতে ইচ্ছে করছে কি এমন হতে পারে??? পুরানো প্রেমের গন্ধ পাচ্ছি :p
অরণ্য
প্রেমের গন্ধ অবশ্য আছে একটু। যে কারো জীবনেে প্রেম-প্রুম একটু থাকলে মন্দ না। “মন্দ না” না বলে বলা উচিৎ এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কেউ কেউ পুরান কাশুন্দির ঝাঁঝ সহ্য নাও করতে পারে। একটা বহমান সম্পর্কে কমপ্লেক্সিটিও আসার সমূহ সম্ভাবনা আমি অনুমান করছি। কি দরকার তার?
ব্লগার সজীব
ডায়েরী আন সেন্সর্ড পাবলিশ চাই। সেন্সর করলে বুঝতে পারবো কিন্তু। অতএব সাবধান।প্রশ্ন হচ্ছে-ভাবি কেন ভার নিতে অক্ষম হবেন? 😛
অরণ্য
বলছেন যখন, তখন তাই হবে। আর সবাই সব লোড নিতে পারে না। সব লোড সবাইকে দিতেও নেই।
জিসান শা ইকরাম
একটা লেখা শুরুর দারুন সুচনা।
ঐ সময়ের ফ্রেমে বন্ধী আপনাকে দেখতে পাবো ভেবে ভালো লাগছে।
কেমন এক আত্মজীবনীর মত লাগছে…………
অপেক্ষায় আছি অরণ্য ভাই।
অরণ্য
জিসান ভাই, ধন্যবাদ আপনাকে।
শেষ পর্যন্ত যেমনটি ভাবছেন সেরকমই কিছু একটা দাঁড়াবে মনে হয়।
অর্বাচীনের ডায়েরীর মোড়ক উন্মোচন টা আগে করি। তারপর দেখি স্রোত ওকে কোন দিকে ভাসায়।
ভাল থাকবেন।
স্বপ্ন
ভাইয়া সোনেলায় ডায়েরীর প্রচলনটা আপনিই আরম্ভ করলেন মনে হয়।আরো দুই আপু লিখেছেন ডায়েরীর কথা 🙂 আমি যে লিখবো না তার নিশ্চয়তা নেই। অপেক্ষায় আছি আপনার লেখার জন্য।
অরণ্য
এই আমার কাজ হয়তো। আসলে আমার এ লেখা হয়তো প্রভাবকের কাজ করেছে মাত্র। আমরা অনেকেই লিখতে চাই, আলাপ করতে চাই, জানতে চাই, জানাতে চাই। আমিও খেয়াল করেছি। আমার খুব ভাল লেগেছে। একটু অপেক্ষা করুন। আমি খুব শিগগিরই ফিরব লেখা নিয়ে। এবারের লেখা হবে আসলে গল্প বলার মত। ভাল থাকবেন।
সোনিয়া হক
কেমন আছেন অরণ্য ভাইয়া? অপেক্ষায় রইলাম কিন্তু 🙂
অরণ্য
ভাল আছি রে ভাই। আমিও অপেক্ষায় আছি কবে লেখা শুরু।
নীলাঞ্জনা নীলা
ডায়েরী কোথায়? অপেক্ষায় আছি সেই কবে থেকে! ;?
অরণ্য
🙂