অবশেষে (৩য় পর্ব)

আতা স্বপন ১৫ মে ২০২০, শুক্রবার, ১০:২৪:০৮অপরাহ্ন উপন্যাস ৫ মন্তব্য

পাঁচ.
হাসপাতালের বেডে একটা ছেলে শুয়ে আছে। বয়স দশ কি এগার হবে।মাদ্রসার ছাত্র হতে পারে।গায়ে ছুন্নতি লেবাস। মাথায় টুপি।পথচারী ছিল। কোটের সামেনে দিয়ে আসছিল সে।আইজীবিদের গন্ডগোলে পুলিশ গরম পানি নিক্ষেপ করে। সবাই ছত্রভঙ্গ হয়ে দৌড়তে থাকে। এই হুলস্থুলে মাঝে পথচারী ছেলেটা নিচে পড়ে যায়। মানুষের পায়ের তলায় পড়ে গিয়ে ভালই আঘাত পেয়েছে।নাবিল ছেলেটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। ছোট্ট বাচ্চাদের প্রতি তার এমনিতেই একটা আলাদা দরদ আছে।এরপর বাচ্চাটার পরনে সুন্নতি লেবাস।এই লেবাসের প্রতি তার অন্যরকামের একটা ধর্মীয় আকর্ষন আগেই ছিল।সেই ছোট বেলা থেকেই সে নিয়মিত মসজিদে যেয়ে নামাজ পড়ছে। কাজের যতই চাপ থাকুক এখনো নামাজ মিস করেনা।

সে যখন ছোট ছিল তখন তার দাদা বলেছিল- তমিজ তোর এই ছেলেরে হাফেজি পড়াবি।হাফেজের অনেক কদর মওলার কাছে।এদের শান অনেক উচা।

হাফেজের ভাত নাই দুনিয়ায়! আব্বাজান।

নাফরমানের মত কথা বলবা না।রিযিকের মালিক কি তুমি?মালিক হইলো আল্লাহপাক। হের উপর ভরসা করবা।নালায়েকে গাছে ধরে না আমার ওরসেই ধরল! মওলা মাফ কইরা দিও।

নাবিলের মা অবশ্য শশুরের কথায় সায় দিয়ে বলেছিল-
ছেলেটারে দিকে একটু দেখেন এই লাতুরা কালে (শিশুকালে) জবানে কলমা জারি হইছে। দেখেন কেমন কয়-লা-ই-লা মুহাম্মা

আজগুবি কথা আমার সামনে একদম বলবা না। কালেমা জারি হইছে। আরে আমি ওরে কোলে নিয়া কলেমা পড়ি সবসময়। ছোট পোলাপান যেটা শুনে সেটাই শিখে।

নাবিলের বাবা কারো কথা শুনেননি নিজের মত করে ছেলেকে মানুষ করেছে। হাফেজ বানায় নাই।ডাক্তার বানিয়েছে।অবশ্য ছেলেকে মক্তবে্ও পড়িয়েছেন। ছেলের জন্য ভাই গিরিশ চন্দ্র সেনের বাংলায় অনুদীত কুরআন শরীফ এনে দিয়েছিল।
খিলগাও মসজিদের ইমাম ইদ্রিস আলী বলল, ভাইজান বাজারে মুসলমানদের অনুবাদ থাকতে আপনে কেন একজন বিধর্মীর অনুবাদ কিনলেন।তার অনুবাদের অনেক শব্দ হিন্দুয়ানী। যেমন ওনি ইবাদত কে বলেছেন পুজা।

হুজুর আমি আপনার মত এত এলেমদার না । তবে এটাতো হাদিসে আছে। কর্মফল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। এখানে বিষয় হইল নিয়ত। অর্থাৎ কুরআন বুঝা। আমিতো সমস্যা দেখিনা। আর উনি উনার জ্ঞানের আলোকে অনুবাদ করা চেষ্টা করেছেন। ওনার জ্ঞানতো আর সৌদি জ্ঞান না? ওনারটা আগে পড়ুক এরপর মুসলমানদের করা অনুবাদগুলা পড়বে। এতে সে নিজেই সঠিক বেঠিক বুঝতে সক্ষম হবে।

আপনা কথায় যুক্তি আছে। আল্লাহ ভরসা।

ধর্মের নৈতিক জ্ঞান এর ভিত্তিটি তার ছোটবেলা থেকেই মজবুত ছিল। ধমীয় বুজু্র্গ আর আলেমদের প্রতি তার গভীর ভালবাসা আর অন্যধর্মগুলোর প্রতিও তার শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে।
ধর্মকর্ম পালন করায় তাকে ছোটবেলায় নানা অসস্থিকর পরিবেশে পড়তে হয়েছে।

ছয়.
জোহরের নামাজ আদায় করে বাসার পথে হাটছিল সে। এ পাড়ায় অনেক গলি আছে যেমন প্রেম গলি যেখানে পোলাপান থেকে শুরু করে জোয়ানবুড়া সবাই আড্ডা দেয়। আবার আছে ভুতের গলি। এ গলিতে গেলেই দিনের বেলায়ও সবার গা ছম ছম করে। এ গলিটার নাম অন্ধগলি। অন্যগলির মত এরও দোষ আছে। নেশার কারবার থেকে শুরু করে ছিনতাই , যত রকমের দুই নম্বারি ধান্দা সব এগিলেতে হয়। নাবিল নামের ছোট্ট ছেলেটি প্রতিদিন এ পথ দিয়ে মসজিদে যাতায়ত করে। তার বাড়ির থেকে মসজিদে যাওয়ার এই একটাই পথ। রোজকার মত আজও নামাজ শেষে নির্জন গলিপথে শুনশান নিরবতায় জিকিরে ফিকিরে পথ চলায় আত্মমগ্ন সে। ঠিক তখনি এলাকার কিছু মাস্তান টাইপের ছেলে তার পথ রোধ করে দাঁড়াল।

এদের মধ্যে বল্টু নামের কোঁকড়ানো উস্ক খুস্ক চলের ছেলেটি সম্ভবত মস্তান দলটির লিডার হবে, মুখ দিয়ে ষাঁড়ের মতো আওয়াজ করে বলল, এই রাজাকারের বাচ্চা থাম!

দেখ ভাই! আমার আব্বু একজন মুক্তিযোদ্ধা। এপাড়ার সবাই তা জানে। মুক্তিযোদ্ধার ছেলেকে এটা বলা কি ঠিক হলো। আমিতো রাজাকারের বাচ্চা না!

ভালই ডায়লগ শিখছস দেখতাছি। কোন ফিলমের লেকছার?

এটা লেকচার নয়। যা সত্য তাইতো বললাম।

ঐ বেডা বেশী ফুটর ফাটুর করবিনা কইলাম। ডায়লগ কম লবি! আর একটা কথা যদি কস এমন থাবরা দিমুনা বত্রিশ দাত পাউডার হইয়া যাইব।

আর হেই পাউডার দিয়া আমরা বেগতে দাত মাজমু। হি-হি-হি। বলল মদনা নামের এক মস্তান।

আরেক মস্তান বলল, গুরু ! এইডাতো পোলাপান। যারে কয় বেবি রাজাকার। এরতো বত্রিশ দাতই উডে নাই।

জব্বর কইছসতো! এক্কেবারে খাটিকতা! বেবি রাজাকার মুখটা ফাককরতো দেহি! তোর বত্রিশ দাত ঠিকমতন উঠছেনি। হা-হা-হা

তোমরা এমন করছ কেন? সামনে থেকে সর। বাসায় যাবো।

যাইবি! আবশ্যই বাসায় যাইবি! যাইতেতো তরে দিমুই। তয় তার আগে তরে একটু সাইজ কইরা লই। রাজাকার হইছস তুই! রাজকার বাইটা আজকা তরে খাওয়ামু!

আমি রাজাকার না!

হারাদিন মজ্জিদে দৌড়াছ চলস দেহি দাড়ী টুপি অলাগো লগে, আর কস রাজাকার না তুই! বড়ই তাজ্জব হইলাম!

মসজিদে গেলেই কেউ রাজাকার হয় না! রাজাকার শব্দাটা কিন্তু ভাল তবে…………..
তাকে থামিয়ে দেয় বল্টু।
ঐ বেডা তরে না কইছি ডায়লগ কমলবি! লেকছার বন্দ কর!

দেখ ভাই! প্রতিটি মোসলমানকে পাঁচ ওয়াক্ত নাজমা পড়তে মসজিদে যেতেই হবে! এটা আল্লাহর হুকুম। তার হুকুম না মানলে তিনি নারাজ হন।

গুরু! চান্দুতো রাজাকারী সবক ভালই লইছে!

এই ছবক অর পেড থেইকা এহনি বাইরকরতাছি দারাইয়া খালি দেখ।

কেমনে গুরু?

বেবি রাজকারডারে ধইরা এক ডোক ফিডার খাওয়াইয়া দে! দেখবি সোনারচানের রাজকারী ভাগব।

মদনা ফেনসিডিলের বতলটা নাবিলের মুখে চেপে ধরে।
খা বেবি রাজাকার! ফিডার খা! হি-হি-হি।
মদনার হাত থেকে ছুটার জন্য ধস্তা ধস্তি করে সে। তার জোড়াজুড়িতে বোতলটি মাটিতে পরে যায়। সে মুখ ভড়ে বমি করে মদনার সার শরির ভাসিয়ে দেয়।

দিছেরে! হালায় আমারে গান্দা কইরা দিছে। ধর রাজকারডারে!
পরিমরি করে নাবিল ছুটতে শুরু করল।

সাত.
ইদ্রিস আলী খিলগাঁও জামে মসজিদের ইমামতি করেন। অন্য ইমামদের মত তিনি কিন্তু বেতন ভুক্ত কর্মচারি নন। আল্লাহর খলিফা হিসেবে ইসলামের প্রতিটি কাজ তার সন্তুষ্টির জন্য করা উচিত।বিশেষ করে নামাজ রোজা হজ্জ যাকত এগুলা কোন দুনিয়াবি স্বার্থে করা ঠিক নয়। তিনি এটা বিশ্বাস করেন। তাই ইমামতি করে বেতন নেন না।

তার মতে, নামাজ হইল আল্লাহপাকের অপার করুনা! আর আমি তার নগন্য খাদেম! আমার কাজ হইল বিনাশর্তে আল্লাহর পয়গাম মানুষের কাছে পৌছানো। এতে আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি হাসিল করা যাইব।পয়সা করি লইয়া এইসব করা মানে তার সন্তুষ্টি থেইকা অগুলারে বেশী গুরুত্ব দেয়া।

ইমাম সাহেবকে মসজিদ কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব আজমত উল্লাহ তার গ্রাম থেকে নিয়ে এসেছেন। তিনি তার ছাত্র ছিলেন। ছোট বেলায় তার কাছে মক্তবে পড়েছেন। তার সততা আর স্পষ্ট কথা বলা আজমত সাহেবের খুব পছন্দ। তিনি ইমাম সাহেবকে মসজিদ কমিটির প্রধান উপদেষ্টা করেছেন। তার উপদেশ ও পরামর্শ কমিটির সবাই মান্য করে। মসজিদের পাসে একটি টুপির দোকান আছে আছে। এর আয় দিয়ে ইমাম সাহেব সংসার চালান। সংসার বলতে এখন কেউ নাই! তার একটি মাত্র মেয়ে বড়ের সাথে সৌদী চলে গেছে। তিনি তাই এখন একা।অন্ধগলির শেষ মাথায় চারতলা বাড়িটি হল আজমত উল্লাহ সাহেবের বাড়ি। এ বাড়ীর নিচ তলায় ইদ্রিস আলি ভাড়া থাকেন।
আজমত সাহেব যত বলেন ভাড়া দেওয়া লাগবে না হুজুর।
তিনি নাছোর বান্দা। এক কথা মাংগানা কোন কিছু ভালা না।ভিক্ষুকরা মাগনা খায়। আমি দুনিয়ার ভিক্ষুক হতে চাই না আল্লাহর ভিক্ষুক হতে চাই আমারে যা দিবার উপর ওলাই দিবেন। তার ভান্ডার কখনোই শেষ হয় না। মানুষেরটা শেষ হইয়া যাইব একদিন।

জোহর নামাজ শেষ করে কালামে পাক তেলওয়াত করা তার প্রতিদিনকার রুটিন মাফিক কাজ। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি।তিনি মধুর সুরে কুরআনা পড়ছিলেন- ইন্নাদ দিনা ঈনদাললাহীল ইসলাম (নিশ্চয় ইসলামই হল আল্লহর নিকট গ্রহন যোগ্য একমাত্র জীবন ব্যবস্থা)।
এমন সময় তার গায়ের উপর এলিয়ে পড়ল একটি দেহ।

কে? কে? হতচকিত ইমাম সাহেব ।

হুজুর! হুজুর।

আরে নাবিল! তোমার কি হইছে বাবা?

-বল্টু-উর দ-ল আমা-র পিছু নিয়েছে। হাপাতে থাকে সে।

পিছু নিছে! কই দেখি চলতো।

নাবিলের কাছেপুরো ঘটনাটা শুনে ছাতা হাতে মসজিদ থেকে বের হলেন ইমাম সাহেবে।

বল্টু তার সাংগো পাংগো নিয়ে মসজিদের বাইরে চেচাঁতে থাকে।

এ বেডা বেবি রাজকার বাইর হ! নইলে কপালে বহুত খারাবি আছে!

ঐ বজ্জাতের দল মসজিদের সামনে এমন চিল্লা ফাল্লা কেন?

যেই ইন্দুরডা আপনের গর্তে হান্দাইছে অরে বাইর করেন! নইলে…………..

নইলে! নইলে কি করবা তোমরা?

হেইডা আপনেরে কওন লাগবো?

আমারেই বলতে হইবো।সোজা সরল পোলাডারে রাস্তায় পাইয়া এমন কামটা কেমনে তোমরা করলা? ও তোমাগো ছোট ভাই! ওর সাথে এমন করা ঠিক হয় নাই। বেচারা বহুত ভয় পাইছে।

দেহেন ইমাম হইছেন মসজিদের বিত্তে যাইয়া ওয়াজ করেন! আমাগোরে হুনায়া কাম নাই! আমাগোরে আমাগো কাম করবার দেন। এ মামলার মইন্দে হান্দাইয়েন না!

হারামজাদারা! আমার লগে বেয়াদবি।

বেয়াদবির আমনে দেখছেন কি? অহন সময় আছে নিজের কামে যান! বহুত ফয়দা হইবো।

শয়তান কি আওলাদ! তোগ এতবড় সাহস! এইটা দিয়া (হাতের ছাতাটা দেখিয়ে) এমন বাড়ি দিমু বাপ-দাদার নাম ইয়াদ আইব না!

আমাগো লগে লাগতে আইলে কপালে বহুত খারাবি আছে কইলাম।

বেত্তুমিজের ছাও! হারামি কা আওলাদ! আমারে তোরা ডর দেহাস। এই ইদ্রীস মাওলানা আল্লা ছাড়া কাউরে ডরায় না।

রেগে গেলেন ইমাম সাহেব। রাগে গজগজ করতে করতে ঠাস করে ছাতার এ ঘা বসিয়ে দিলেন বল্টুর মাথায়। জ্ঞান হারালো সে। বাকি মস্তানরা তখন আক্রমন করলো ইমাম সাহেব কে। তিনিও কম কিসে ছাতাটা দিয়ে আক্রমন পতিহত করতে লাগলেন অনেকটা লাঠির মত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে।
চমৎকার লড়ে যাচ্ছেন তিনি মাস্তান দলটির সাথে। ইমাম সাহেরব ছাতার বাড়ি সইতে না পেরে একসময় বল্টু কে ফেলেই দৌড়ে পালাল মাস্তানরা।

নাবিল এতক্ষণ দূরে দাড়িয়ে ইমাম সাহেবের কেরামতি দেখছিল। ভাড়ি অবাক হল সে।

যাও বাবা! বাড়ি যাও! আর কোন ডর নাই।

বেত্তুমিজগুলারে জম্মের শিক্ষা দিয়াদিছি।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। হুজুর! কিন্তু এতগুলো লোকের সাথে আপনি একা যেভাবে লড়লেন সত্যই অবাক হবার মতো।

তাজ্জাব হইয়া গেছো না! তাজ্জাব হওনের কিছুই নাই। আমি হইলাম গ্রামের পোলা। ছোট থেইকা লাঠি খেলা ভালই জানি। কয়েবার পুরস্কারও পাইছি।

হুজুর ওর মনে হয় ফাস্ট এইড লাগবে। চলেন ওকে ফার্মেসিতে নিয়ে যাই।

তাই চল। ও অমানুষ হইতে পারে! আমরাতো মানুষ। যারে বলে আশ্রাফুল মাকলুকাত।

বল্টুর অচেতন দেহটা ধরে দুজনে পাসের ফার্মেসিতে নিয়ে গেল।

সেই ঘটনাটা আজও মনে গেঁথে আছে নাবিলের।ইমাম সাহেবের কথা খুব মনে পড়ে। কোথায় আছেন তিনি? বেঁচে আছেন তো!

আট.

আমারে একটু পানি দিবেন সাব!

চমকে ফিরে তাকায় নাবিল।ছেলেটি তার কাছে পানি চাইছে।

পানি খাবে! দাড়াও দিচ্ছি! পাসেই পানির জার থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে ছেলেটাকে দেয় সে।

তোমার নাম কি? কোথায় থাক?

হাফেজ নুর মুহাম্মদ আমার নাম।নয়াপল্টন হাফেজিয়া মাদ্রাসায় আবাসিকে পড়ি।

এত অল্প বয়সে তুমি হাফেজ হয়ে গেলে? মাশাআল্লাহ।

কোটের কাছে গেলে কিভাবে?

বড় হুজুর কইলো কাকড়াইল মসজিদে আরবদেশ থেইকা তাবলিগের একটা বিশাল জামাত আইছে। ওগোরে আমাদের মাদ্রাসায় আসার দাওয়াত দিতে গেছিলাম।ফিইরা আসনের পথেই গন্ডগোলের মধ্যখানে পইড়া গেলাম।

কোন চিন্তা নাই । তোমার তেমন কিছু হয় নাই। অল্পদিনেই সুস্থ হয়ে যাবে।তোমার মাদ্রসা থেকে কেউ আসে নাই?

আসছেতো ! ঐ যে বড় হুজুর।

এতক্ষন নাবিল লক্ষ করেনি। ওইতো ওখানে মাথায় পাগড়ি আর লম্বা জোম্বা পরিহিত হুজুরকে দেখা যাচ্ছে।নাবিলের দিকে চোখ পড়তেই তার দিকে আসতে লাগলেন তিনি।লোকটি যতই কাছে আসছে নাবিলের কাছে লোকটির চেহারা তত স্পষ্ট হচ্ছে।হুজুরকে নাবিলের খুব চেনা চেনা মনে হল।কোথায় যেন দেখেছি। আরে এ যে ইমাম সাহেব! মাওলানা ইদ্রিস আলী।
আসসালামু আলাইকুম! বলে সে পাধরে কদমবুছী করতে গেল।

আরে করেন কি? করেন কি ? ডাক্তার সাব! পা ধরন ঠিক না।ইসলামে কদমবুছী না যায়েজ।

হজুর আমাকে চিনেছেন? বলেই আবেগ তারিত হয়ে কেঁদে দিল নাবিল।হাসপাতালের রোগি অন্যান্য ষ্ট্যাফরা সব তাকিয়ে দেখেছে সব।কেউ কিছু বুঝতে পারছে না।

নাতো ডাক্তার সাব! আপনি ………….

আমি নাবিল! আমা বাবা মুক্তিযোদ্ধা তমিজ উদ্দিন। ঐ যে খিলগাও মসাজিদে আপনি যখন ইমাম ছিলেন আমাকে বল্টু বাহিনির হাত থেকে উদ্ধার করেছিলেন।

খিলগাও! অনেক আগের কথা। হ্যা ! তাইতো ! আপনি মানে তুমি কি সেই নাবিল!

জি হুজুর। আপনার দোয়ায় এখন আমি ডাক্তার।

মাশাআল্লাহ! তুমি আমার বড়ই পেয়ারা ছিলা। তোমার লাইগা খাশ দিলে দোয়া করছি সবসময়। আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করছে। তা তোমার বাবা কোনখানে? ভাল আছেনতো?
আমার বাসতেই আছে।আল্লাহর রহমতে ভালই আছেন।

নুর মুহাম্মদের অবস্থা কেমন বুঝতাছো?

তেমন কিছু হয় নি।হাতে আর পায়ে একটু ফ্যাকচার হয়েছে দু এক দিনে সেরে যাবে।

হাসপাতালে নিজস্ব চেম্বারে মুখোমুখি বসা দুইজন।

হুজুর আজ অনেকদিন পর আপানারে পাইছি । কি খাবেন বলুন?

কিছুই লাগব না! তোমারে দেইখাই দিল খোশ হইছে।

তবুও কিছু একটা তো খেতে হবে। ইন্টারকমে কার সাথে যেন কথা বললেন।

একজন সিস্টার প্রবেশ করল ট্রেভর্তি খাবার নিয়ে।

আপনাকে দেখলে আব্বা খুব খুশি হবে। চলেন আজ আমার বাসায়।

আমারে ঠিকানা দাও। অন্যসময় যাব।

না হুজুর ! আজ আমার একটা বিশেষ দিন। আজই যাওয়া লাগেব । রাতে আমাদের সাথে খাওয়া দাওয়া করবেন আর একটু দোয়া করে দিবেন।

বাবা! মায়া বড়ই একটা আজিব জিনিস। এরে কেউ এড়াইতে পারে না। ঠিক আছে! ইনশাআল্লাহ যামু তোমার বাসায়। ঠিকানটা দাও।

নাবিল তার একটা ভিজিটিং কার্ড দেয় মওলানা ইদ্রীস আলীকে।

0 Shares

৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ