অবশেষে (১পর্ব)

আতা স্বপন ১৩ মে ২০২০, বুধবার, ১১:০১:৩২পূর্বাহ্ন উপন্যাস ৮ মন্তব্য

এক.

বাহ! মাছিটাতো খুব সুন্দর! এটা কি মৌমাছি? না! মৌমাছিতো আরেকটু ছোট। এটা তবে কি ? বল্লা হবে !

বাড়ীতে জানালার পাশে বল্লার একটা চাক হয়েছিল। জানলা খুলতে যেয়ে ভুল করে একবার সেখানে হাত দিয়ে ফেলেছিলাম । আর যাই কোথায়? হুল ফুটিয়ে দিল। হু এটা বল্লাই হবে!

ফুলের দোকানটার পাশে দাড়িযে আছে সে। সুরম্য সুঠাম দেহ।দেখেই বোঝা যায় জিম করা শরীর। তার নাম আবু বাকার নাবিল। বয়স ২৫কি ২৬ হবে।  অনেক্ষন হলো দাড়িয়ে আছে। দোকানির দেখা নাই। কোথায় যে গেল ? আজ তার বিশেষ একটি দিন । প্রথম বিবাহ বার্ষিকী। আর এই দিনেই প্রথম আলাপ হয়েছিল তার সাথে ফারজানার।

 

৫ই জানুয়ারী ২০১৪ সাল। দেশে একটি নির্বাচন চলছে।  যে নির্বাচনে অংশ নেয় নি বি.এন,পি -জামাত জোট। শুধু  আ্ওয়ামী লীগ সহ মহা জোট ও শরিক জাতীয় পাটি নির্বাচন করছে। ৩০০ আসনে বেশীর ভাগ প্রাথীই ওয়াক ওভার মানে বিনা প্রতিদন্দ্বীতায় নির্বাচিত। অনেকেই ভোট দিতে পারেনি। অনেক নতুন ভোটার ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত। ফারজানা  নতুন ভোটার হয়েছে। পুরান ঢাকায় একটি কেন্দ্রে সে ভোট দিতে গিয়েছিলি। লাইনে দাড়িয়ে নতুন ভোট দেবার একটার আনন্দ তাকে বারবার রোমাঞ্চিত করছিল। একজন একজন করে সামনে ভোট দিতে ঢুকছে আর তার মনটা ধুক ধুক করছে। কখন সেও ভিতরে ঢুকে ভোটটা দিবে।

 

মহাজোটের পক্ষের ২জন প্রাথী । একজন  মনোনীত আর অন্যজন বিদ্রোহী প্রাথী। সেখানে দু পক্ষের মধ্যে গন্ডগোল হল। বোমা ফুটল। চারদিকে আতংক ছড়িয়ে পড়ল। হুটোপুটি পড়ে গেল। লাইন ভেংগে যে যেদিকে পারল ছুটতে লাগল। এমন ভয়ংকর পরিবেশে ভীষন ভয় পেল সে। ঘটনার আকস্মীকতায় জ্ঞান হাড়াল।

 

চারদিকে কেমন একটা গন্ধ। সেগেরেটের গন্ধই হবে। মাথা কেমন ঝিম ঝিম করছে। ভোট কেন্দ্রের পাসে একটি পুলিশ ক্যাম্পে সে শুয়ে আছে। তার মাথায় পানি ঢালছে  একজন মহিলা পুলিশ। একটু দুরে দুজন পুলিশ দাড়িয়ে আছে। একজনের হাতে সিগেরট জ্বলছে। ঝাপসা চোখে তাকাল সে। সাথে সাথে মহিলাটি চিৎকার করে উঠল-

স্যার ! জ্ঞান ফিরেছে । জ্ঞান ফিরেছে।

সিগেরেট হাতে পুলিশটি দৌড়ে আসল তার দিকে। আমি এখানে কেন?  জড়ানো কন্ঠে বলল সে।

থ্যাংকস গড! আপনার তাহলে জ্ঞান ফিরেছে? বলল, পুলিশ ভদ্রলোক।

আমি বাড়ী যাব!

অবশ্যই যাবেন। ডাক্তার ডাকা হয়েছে! উনি আসুক তারপর।

আমি বাড়ী যাব। জড়ানো কন্ঠে আবারো বলল। পরক্ষনেই দ্বিতীয়বারের মত জ্ঞান হারাল।

 

নাবিলে মনে হল এইতো সে দিনের কথা।সব চোখের সামনে ভাসছে এখনো। তাকে পুলিশ ক্যাম্পে ফারজানার কাছে আনা হল।সেই প্রথম তাকে দেখে সে। বিছানায় শুয়ে নিস্পাপ স্নিগ্ধ পুষ্পীতা যেনো।ভোরের ঝরা পাতা কিংবা………………. কত কিযে মনে এসেছিল তখন। নাবিল ফারজানার হাতটি ধরল।একটি অজনা ভাল লাগায় মন ভড়ে গেল। কত রোগী সে দেখেছে কারো স্পর্শেতো কখনো এমন হয় নি! নারি দেখল সে। একটু পানির ছিটা দিল মুখে।চোখ মেলে তাকাল অপ্সরী যেনো।

মিষ্টি হেসে নাবিল বলল আপনার কিছুই হইনি! ঘাবরাবেন না। ভযে আতংকে একটু নার্ভ ব্রেকডাউন হয়েছিল। ওষুধ দিচ্ছি। ঠিক হয়ে যাবেন জলদি। এক্ষুনি বাড়ী ফিরতে পারবেন।

 

না ডক্টর! আমরা ওনাকে এভাবে ছাড়তে পারিনা। রাস্তায় এখনো গেদারিং রয়েছে। ওনাকে একা ছাড়া যাবে না। আমারা পুলিশ আমাদের সবদিকেই দোষ খুজে সবাই।

তাহলে সাথে একজন কনস্টেবল দিয়ে দিন।

 

দু:খিত তাও পারছিনা এই মূহুর্তে। আমাদের ফোর্স এমনিতেই কিছু সর্ট আছে। এক কাজ করুনা না আপনার যদি আপত্তি না থাকে তাহলে ওনাকে একটু বাড়ী পৌছে দিন না। আমি শুধু পুলিশ ভ্যান দিয়ে সাহায্য করতে পারি। ওতে করে ওনি নিরাপদে বাড়ী যেতে পারবেন।

 

তা দেয়া যেতে পারে। আমার তেমন তারা নেই। তবে ওনার যদি আপত্তি না থাকে।

 

৩২/২ দক্ষিণ হাজারীবাগ ফারজানার বাড়ী ।পুলিশ ভ্যান ছুটে চলছে। ভ্যানের লম্বা ছিটগুলোর একপাসে ফারজানা বসে আছে। গুটিশুটি মেরে। সে বেসে ছিল একটু দুরে আর একটি লম্বা সিটে। সব কিছু কত স্পষ্ট মনে পরছে তার।

 

স্যার কি ফুল নিবেন?

ধ্যান ভাঙ্গে নাবিলের। হ্যাঁ

আমার একটা ফ্লাওয়ার বাস্কেট চাই

ঠিক আছে স্যার। তবে দামটা একটু বেশী

যাই দাম হোক দাও। একটু তারাতারি। বিকেল থাকতে থাকতে দ্রুত এখান থেকে বাসায় যেতে হবে। স্বন্ধ্যা হলেই বিপদ। দেশের অবস্থা ভাল না।

শুনছেন স্যার! খালেদা জিয়াকে গুলশান কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছে? সমাবেশ করতে দেয় নাই।

ভাই! আমি রাজনীতি কম বুঝি।

হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠল নাবিলের

হ্যালো!

নাবিল স্যার বলছেন!

হ্যা

আমি মুনা বলছি ।

হ্যা বলো।

স্যার! সুপ্রিম কোর্টে পুলিশের সাথে আইনজীবিদের সংঘর্ষ হয়েছে। অনেকে আহত হয়ে হাসপাতালে এসেছে। কারো কারো প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছে। এদিকে ডাক্তার স্যাররা কেউ নেই। মোবাইলে যোগাযোগ করে কাউকে পাচ্ছি না। শুধু আপনাকেই পেলাম। নার্সদের মধ্যে আমি আর সুমিতা দি আছি।

হোয়াট? কি বল? হাসপাতালে রুগি ফেলে সবাই গেল কোথায়?

রাস্তাঘাটে গেনজাম হচ্ছে তাই সবাই তারাহুরো করে বাড়ি চলেগেছে।

আই সি! আচ্ছা তুমি ওদের ফাস্ট এইড দাও। আমি আসছি।

 

 

দুই.

ঘুম থেকে উঠতে তমিজ উদ্দিনের আজও দেরি হয়ে গেল। ফজরের নামাজটা সময়মত পড়া হলো না। প্রত্যেকদিন ভাবে খুব ভোড়ে উঠে বাজামাত ফজরের নামাজ পড়ে কোরআন তেলওয়াৎ করবে। কিন্তু প্রায়দিনই সে ফজরের নামাজ ঠিক সময়ে পড়তে পারেনা। সুর্য ওঠার পর পড়ে।

 

তমিজ উদ্দিন নামাজ শেষ করে তার খাটের পাসে থাকা টেবিলে দিকে তাকান সবসময়। বৌমা ফারজানা সকালের নাস্তা আর চা দিয়ে যায়। সাথে খবরের কাগজ। কাগজটা হাতে নিয়ে আপন মনে গজগজ করা তার প্রতিদিনের স্বভাব। খুন ধর্ষন গুম চুরি ডাকাতি ছিনতাই আর দুর্নিতি এসব খবর তিনি আগে পড়েন।আর গজগজ করেন।

 

কি হইল দেশটার। হায়রে সোনার বাংলাদেশ শেষকালে চোরের দেশ হইলি। হলমার্ক নিয়া কি কান্ড! শালারা! দুর্নিতি কাইরা দেশটারে তামা তামা বানাইয়া ফেলল। যারে বলে তামার বাংলাদেশ।

আজ টেবিলে চা নেই। তবে খবরের কাগজ আছে। তাতে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছেন তিনি।কিন্তু চা না থাকায় মেজাজ ক্রমেই উদ্ধগতি হচ্ছিল।খবরগুলোও আরো বেশী বিরক্তিকর মনে হচ্ছিল। একটা করে হেড লাইন পড়েন আর ঝাল ঝাড়েন নিজ মনে।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে বিএনপির বি‌ক্ষোভ

সরানো হয়েছে ট্রাক

চট্টগ্রামে ব্যাপক ধড়পাকড়

সেনাবাহিনী দেশের অখণ্ডতা রক্ষায় সক্ষম : রাষ্ট্রপতি

নৌ–রেল–সড়কে অনির্দিষ্টকাল অবরোধ: বিএনপি

কালও রাজধানীর ১৬ পয়েন্টে থাকবে আ. লীগ

পুলিশ–বিএনপি সংঘর্ষে নিহত ১, রাজশাহীতে কাল হরতাল

মাঠে থাকবে আ.লীগ: ওবায়দুল কাদের

পুলিশে অবরুদ্ধ নয়াপল্টন

ঢাকায় আসছেন মমতা

বিএনপির রাজনৈতিক ভুলের খেসারত জনগণ কেন দেবে: প্রধানমন্ত্রী

খালেদাকে চুমকিছয় ঘণ্টা ঘুমিয়ে ১৮ ঘণ্টা জনগণের কথা ভাবুন

গওহর খান ‘থাপড়’ নাটকে নতুন মোড়

 

এগুলা কোন খবর হইলো। দেশে খালি আ লীগ আর বিএনপিই থাকে? আরে কেউ থাকে না খালি হেগই পেচাল। থাপর নিয়া এইটা আবার কি নিউজ।এইটা একটু অন্যরকম - তিনি খবরটি মনযোগ সহকারে পড়তে লাগলেন।

গত ডিসেম্বরে ইন্ডিয়া’স র স্টার টিভি রিয়েলিটি শোয়ের চূড়ান্ত পর্ব উপস্থাপনা করার সময় ভারতীয় মডেল ও অভিনেত্রী গওহর খানকে থাপড় মেরে হইচই ফেলে দেন মোহাম্মদ আকিল মালিক নামের এক ব্যক্তি। সম্প্রতি আকিল দাবি করেন, গওহর খানকে থাপড় মারার পুরো ঘটনাই ছিল সাজানো নাটক। স্রেফ প্রচারণার জন্যই ওই নাটক সাজানো হয়েছিল। শুধু তা–ই নয়, জনসমক্ষে থাপড় মারার জন্য গওহর তাঁকে ঘুষ দিয়েছিলেন বলেও দাবি করেছেন আকিল। অবশ্য আকিলের এই দাবিকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন গওহর। তিনি আকিলকে মিথ্যাবাদীও বলেছেন।

কি তাজ্জব কান্ড! থাপরও প্রচারে মাধ্যম। আহা বিশ্বে থাপর দিয়া জয় জয়াকার হইয়া যাইতাছে আর আমাদের দেশে ............। ঠিক এসময় ফারজানা চা নিয়ে আসল।

বাবা আপনার চা। চিনি ছিলনাতো পাশের দোকান থেকে আনতে হল।এজন্য একটু দেরি হয়ে গেল।

মা জননী ! তুমি আমার লক্ষি মা। তোমার কাছে আমি কি বলেছি কেন চা দিতে দেরি হইলো? তুমি বৌ হইছো বইলা তুমি কি এই বাড়ির দাসি হইছো? তোমার একটা স্বাধীনতা আছে না। তুমি তোমার সুযোগ সুবিধামতো দিবা। তা মা চিনি ছিল না আমারে বললেইতো হইতো। আমি নিয়া আসতাম। থাক সেই কথা । নাবিল কি হাসপাতাল থেকে আসে নাই এখনো?

না বাবা।

বে কুব ! বেকুব একটা! আজ তোমাদের একটা মধুর দিন। আর আজ হারামিটা নাই।

শশুড়ের মুখে এমন কথা শুনে লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে গেল সে।

শরমের কিছু নাই মা। এইসব ন্যাচারাল বিষয়। এগুলোতে শরম পাওন ঠিক না। শরম পাইবা মিথ্যা কথা বলতে। খারাপ কাজ করতে। কি বল মা ঠিক না। আহা! সেই দিনগুলা কি ভোল যায় আমি আর তোমার শাশুড়ী দুইজনে কত কিছুই না করছি............।

বউ এর সাথে তমিজউদ্দিনের ভালো খাতির। তবে এইটা তার একটা অভিনয়। বৌদের খুশি না রাথতে পাড়লে এখন বৃদ্ধাশ্রমে জায়গা হয়। তার বন্ধু আব্দুল  জব্বারের  বেলায় এমন ঘটেছে। তারপর থেকে এই আতংক। আর তাইতো অভিনয়ের চেষ্টা। বৌ এর কাছে ভাল শশুর হয়ে থাকা। কিন্তু ফারজানা খুবই সাধারণ একটা মেয়ে। সে শশুড়ের জন্য জানপড়ান। সারক্ষন সংসার নিয়ে থাকে। স্বামী আর শশুর সংসাতো মোটে এই তিনটি প্রানী। এদের নিয়েই চলে যায় তার বেলা।

 

 

0 Shares

৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ