অবশেষে (শেষ পর্ব)

আতা স্বপন ৫ জুন ২০২০, শুক্রবার, ১০:২৭:০৩অপরাহ্ন উপন্যাস ১৫ মন্তব্য

সতের.
মাওলানা ইদ্রিস আলীর চোখে সম্যসা হয়েছে। আরবি হরফগুলো তার কাছে ঝাপসা লাগছে। যদিও কুরআনে পাক তার মুখস্ত চোখে কম দেখার কারণে তেলাওয়াতে কোন সমস্যা হয় না।কিন্তু এটা তার কাছে ভাল মনে হল না।আজ হরফ ঝাপসা দেখছে কাল পুরা আন্ধা হইয়া যাইব।এই চোখে কালামে পাক আর দেখা হইব না। বড়ই আফসোস এর বিষয় আল্লাহর এই কালামে পাক আস্তে আস্তে তার চোখের সামনে থেইকা হারাইয়া যাইব। এসব ভাবতে ভাবতে মাদ্রসার বারান্দায় পায়চারি করছেন তিনি।
না আজাই ডাক্তারের কাছে যাওয়া দরকার । মোখলেছ ! মোখলেছ!
জ্বি হুজুর! আমারে ডাকছেন !
আমি একটু ডাক্তারের কাছে যাব।আসতে রাত হবে।আমি যতক্ষন থাকবনা ততক্ষন তুমি হইলা এইখানকার জামিনদার।ঠিক ঠাক মত সব দেইখা রাখবা । কারো কোন তখলিফ যাতে না হয়।
জ্বি আচ্ছা ! হুজুর!
ইদ্রিস আলির হঠাৎ মনে হল সে তো শুধু ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে না একটা দাওয়াতও আছে। সেখানেও যেতে হবে। মোখলেছ কি সেটা বলার দরকার আছে! সব কিছু বলতে নাই। কিছু রহস্য রাখাতে হয়। আমাদের স্রষ্টাও রহস্যময়।তিনি কিছু কিছু বিষয়ে আমাদের সাথে রহস্য করছেন। কাজেই আমিও একটু রহস্য করলে কি দোষ হইব? অবশ্য মোখলেছরে বললেও বলা যায়।না থাক! বলিনাই যেহেতু আর বলব না।ছাতাটা হাতে নিয়ে রাস্তায় নামলেন।

হুজুর সামনে যাবেন না! মহা গেনজাম লাগছে। একজন লোক দৌড়তে দৌড়তে বলল।

কেন? কি হইছে সামনে?

আর বলবেন না। দুই দলের মধ্যে মারামারি লাগছে।

এইটা আর নতুন কি? হরহামেসা এই দুইটা দলই তো লাগে।
আরে হুজুর! আমি ঐ দলের কথা বলছি না।রিক্সাওয়ালাদের দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষ। বোমা ফাটছে। হুজুর আমি গেলাম আপনিও চলে যান।

কিন্তু ইদ্রিস আলী সামনে দিকে এগুতে লাগলো। চারদিকে লোকজনের চিল্লফাল্লা। কিন্তু যেমনটা লোকটা বলেছিল তেমন নয়। কোন বোমা ফাটেনি। তবে ভালই মারামারি হয়েছে ইট পাথর ছুরে।এখন অবশ্য সংঘর্ষ নাই।আহত অবস্থায় অনেক লোক দেখা যাচ্ছে চারপাসে। এর মাঝে তমিজ উদ্দিনও আছেন।তার সারা শরীরে রক্তের দাগ। থর থর করে কাঁপছেন তিনি।দারুন ভয় পেয়েছেন। একটা ঘোরের মধ্যে আছেন যেন।

আরে তমিজ ভাইযান! কি হইছে আপনার!

কে? কে?

আমি মাওলানা ইদ্রিস আলী!

ও! মাওলানা সাব! তার ঘোর তখনও কাটেনি।

আপনি আমাকে মনে হয় ঠিক চিনতে পারেন নাই।আপনি আমাকে কখনো মাওলানা ডাকেন নাই। আমারে ডাকতেন ইদ্রিস হুজুর!

ইদ্রিস হুজুর! ইদ্রিস হুজুর! সমস্ত দোষ আমার! ওদের কোন দোষ নাই।রক্ত ! রক্ত!
ঘোরে থেকেই বলতে লাগলেন।

আহা! হুসে আসেন! কি হইছে এইখানে? কাধ ধরে ঝাকি দিলেন মাওলানা।

হঠাৎ ইদ্রিস আলীকে বুকে জড়িয়ে কাদতে লাগলেন।কেন এমনটা হয়ে গেল? বলেনতো ?
ঘোর কেটে গেল তার।তিনি ইদ্রিস আলীকে চিনতে পারলেন।

আঠার.
মোবারক সাহেবের হাতে একটা বেনারসি শাড়ি নিয়ে মেয়ের বাড়িতে এসেছেন।কিন্তু বাড়িতে কেউই নেই। দড়জায় তালা দেয়া।বিষয়টা কি? এনিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলেন।কোথায় গেল সব? এদিকে ওদিকে চোখ ফিরাতেই দবির মোল্লাকে দেখতে পেলেন।তার হাতে কি যেন একটা প্যাকেট।

এইযে ভাইযান এটাকি নাবিল সাহেবের বাসা?

হ্যা!এটাই!

দড়জায় তালা কেন?

আমিও আপনার মতো এর উত্তর খুজছি জনাব।

আপনিও বুঝি ওনাদের অতিথি ! আচ্ছা ! আচ্ছা! আমি বুঝতে পারি নাই । কিন্তু গেল কোথায় সবাই?

হাসপাতালে!!

চমকে পিছনে ফিরে তাকলেন দুজন। ওনার সবাই হাসপাতালে গেছেন। এখনই চলে আসবেন। এই যে আমার কাছে চাবি আছে আমি ঘরটা খুলে দিচ্ছি। আপনারা ভিতরে এসে বসুন।

কিন্তু তুমি কে? আর হাসপাতাল কেন সবাই? উৎকন্ঠিত হয়ে বললেন মোবারক সাহেবে।

আমি হাসান। নাবিল স্যারের ছাত্র।স্যারের বাবা মানে আঙ্কেল একটু হালকা চোট পেয়ে হাসপাতালে আছেন। তেমন বড় কিছু না। স্যার এখুনি সবাইকে নিয়ে এসে পড়বেন।

সবাই ঘরে ঢুকতেই কমলা রানীও এসে উপস্থিত হলেন রজতের সাথে।এপর এলেন পুলিশ অফিসার রফিকুল ইসলাম। তার সাথে তার স্ত্রীও আছেন।মোটামুটি বেশ কজন অতিথি চলে এসেছেন কিন্তু হোস্ট তখনও আসেনি।হাসান সবাইকে সঙ্গ দিচ্ছে। এর মধ্যে প্রতিটি অতিথিকে সরি বলে ক্ষমা চেয়ে তার স্যারের ক্ষনিক অনুপস্থিতির কারণটি কয়েবার বলে ফেলেছে। সবাই উৎকন্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করছে। এমন সময় ঘরে প্রবেশ করলেন মাওলানা ইদ্রীস আলী।সবার উদ্দেশ্যে লম্বা সালাম দিলেন।

আসসালামু আলাইকুম।

আপনার পরিচয় ? জানতে চাইলেন পুলিশ অফিসার রফিকুল ইসলাম।

উনি আমার হুজুর!ছোটবেলায় ওনার কাছে আমি মক্তবে পড়েছি। নাবিলের কন্ঠ শুনা গেল।

সবার দৃষ্টি নাবিলের উপর পড়ল। নাবিলকে দেখে সবার উৎকন্ঠা কিছুটা হলেও কমল।

তোমার বাবা কেমন আছেন জামাই বাবাজি?

সামন্য চোট পেয়েছিলেন।এখন ভাল আছেন। এক্ষুনি এসে পড়বেন।ঠিক তখন একে একে প্রবেশ করল অন্যরা। ফারজানার আর কার্তিক এর কাধে ভর দিয়ে তমিজ উদ্দিন ঘরে প্রবেশ করলেন ।তাদের পিছনে দেখা গেল মাথায় বেন্ডেজ বাধা দুই কিশোরকে।হারেছ আলী আর সুরজ মিয়া।ওরাও আজকে অতিথী। সবাইকে নিয়ে সেদিনটিতে পালিত হয়েছিল ৫ই জানুয়ারীর রোমান্টিক জুটির প্রথম বিবাহ বার্ষিকী।

এরপর কেটে গেছে ৫টি বছর। প্রকৃতিতে এসেছে ৫টি বষন্ত। নানা পরিবর্তন। পরিবর্তন এসেছে কমলা রানী আর রজতে জীবনেও। তারা এখন স্বামী স্ত্রী।কমলার বোন নিপার সাথে কার্তীকের মিলন শেষ পর্যন্ত হলো না। কার্তীক ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।রজতের ভাই দিনেশের সাথে নিপার বিয়ে হয়।দিনেশ এখন পাক্কা ব্যবসায়ি।নিরেট ভদ্রলোক। মোবারক সাহেব এর ছেলে আকাশ বুয়েটে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে।তার মা অতি লোভী আলেয়া বেগম ছেলেকে অনেকটাকা যৌতুক নিয়ে বিয়ে করাবার স্বপ দেখে যাচ্ছে ।মোবারক সাহেব স্ত্রীকে বুঝিয়ে হাল ছেরেদিয়েছেন।মাওলানা ইদ্রিস আলী ইন্তেকাল করেছেন।তার ছেলে মুফতি তৈয়বুর রহমান এখন পল্টন মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল।পুলিশ অফিসার রফিকুল ইসলাম অবসর গ্রহন করেছেন। গ্রাম গিয়ে শাকসবজি চাষ করছেন। পরিবর্তন এসেছে নাবিল আর ফারজানার জীবনেও। তাদের ছেলে সাদমান এখন কেজি স্কুলে পড়ে।নাবিল তার সহ ডাক্তারদের নিয়ে একটা হাসপাতাল করেছে।সেখানে তারা গরীব রোগিদের কম খরচে চিকিৎসা সেবা দেয়। এক্ষেত্রে নাবিল বেশিরভাগ সময় অনেক রোগীর কাছ থেকে টাকাই নেয় না।উল্টো ঔষধ কিনে দেয়। এই হাসপাতালে সে সবার প্রিয় একজন ডাক্তার।সবাই তাকে ভাল ডাক্তার বলে ডাকে।

উনিশ.

সোমবার ৯ইমার্চ ২০২০।পত্রিকার একটি খবরে তমিজ উদ্দিনের চোখ আটকে গেল-
বাংলাদেশেও করোনা- আক্রান্ত ৩ জন চিকিৎসাধীন
গতকাল রোববার বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত
তিনজন শনাক্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দুজন পুরুষ ও একজন
নারী। তাঁদের সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।……………………

চিনে একটি রোগ মহামারি আকারে হানা দিয়েছে শুনা যাচ্ছে। দিনকে দিন তার প্রকোপ বাড়ছে। করোনা ভাইরাস (কোভিড -১৯)নামের রোগটিতে উৎপত্তি স্থল চিনের উহান শহরে হাজার লোক মারা যাচ্ছে। মার্চের ৮ তারিখে বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগি সনাক্ত হয়েছে। এই নিয়ে আগে থেকেই তিনি একটু চিন্তিত ছিলেন। এখন খবরটি পড়ে প্রতিদিনের মত চা খেতে খেতে নিয়ম মাফিক গজগজ করছেন তিনি। পাসে নাতি সাদমান খেলা করছে। তার এই গজগজানিতেও একটু পরিবর্তন এসেছে। নাতিকে উদ্দেশ্য করে এমন ভাবে কথা বলেন মনে হয় সে একজন বুঝাদার ব্যক্তি।

বুঝলা দাদা ভাই! দেশটাতে আল্লার গজব চলেই আসল। ভাবছিলাম আল্লাহ মাফ দিছে। না শেষমেশ এসেই পড়ল।আসব না কেন? দেশতো আর দেশ নাই এখন দুর্নিতির আখরায় পরিনত । আমাদের জীবনতো শেষ তোমার জন্য যত চিন্তা।

চিন্তা করবেন না আব্বা!করোনা ভাইরাস! আমারা একটু সচেতন হলেই প্রতিরোধ করা যায়।চিকিৎসা বিজ্ঞান এখন অনেক উন্নত।আল্লাহর রহমতে এটা আমাদের দেশে তেমন কোন ক্ষতি করতে পারবে না।

দেখ বাবা! আল্লার গজব যখন আসে সচেতনতা কোন কাজে আসেনা ।

আব্বা ! এটা শুধু গজব ভাবছেন কেন? এটা পরীক্ষাওতো হতে পারে। যাতে মানুষ স্রষ্টার দিকে ফিরে আসে।

হতে পারে! আবার নাও হতে……….. না ছেলের সাথে বেশি তর্ক করা ঠিক হবে না। যা বলবে সায় দিয়ে যেতে হবে।ছেল বিগরাইয়া গেলেই বৃদ্ধা শ্রম।না সতর্ক হইতে হবে।ছেলে আর ছেলে বৌ এর সাথে ভুলেও তর্কে জড়ানো যাবে না।

পঞ্চম বিবাহ বার্ষিকীর রাতটিতে ছিল চন্দ্রগ্রহন।এই চন্দ্রগ্রহনের মত তার জীবনেও যে এ বছরটাতে গ্রহন লাগবে নাবিল জানতই না।সে ব্যস্ত ছিল তার রোগিদের নিয়ে।এই ব্যস্ততা মার্চে এসে এমন বেড়ে যাবে সে ভাবতেও পারেনি। তাকে সাহায্য করছে ডাক্তার হাসান। এখন আর সে ছাত্র নেই সেও এই হাসপাতালে রোগিদের নিবেদিত প্রাণ একজন ডাক্তার।দিন রাত হিসেব নেই রোগিদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে তারা।

১৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী মারা গেল। টেনশেন বেড়েগেল ডাক্তারদের। নাবিল তার হাসপাতালের তরফ থেকে করোন রোগ সম্পর্কে জন সচেতনা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন এলাকায় সেবা ক্যাম্প করল।করোনা আস্তে আস্তে মহামারি রুপ নিল।সরকার লকডাউনের পর লকডাউন করে চলল। করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এসময় অনেক ডাক্তার এর মৃত্যুর খবর শুনা গেল। আর তখনই কিছু ডাক্তার পিপিই এর অজুহাতে মহামারীতে আক্রান্ত রোগিদের চিকিৎসা করতে অনিহা দেখাতে লাগল।কিন্তু তারা গুরু শিষ্য এসময় জীবনের পরওয়া না করে সমান তালে করোনা রোগিদের সেবায় লেগে থাকল। রোগিদের ফ্রি করোনা টেস্ট থেকে শুরু করে পথ্য পর্যন্ত তারা কিনে দেয়।এমনকি তারা গরিবদের মাঝে ত্রান বিতরণ ও করে।কিন্তু এ কার্যক্রম হোচট খেল যখন প্রিয় ছাত্রটি করোনা আক্রান্ত হলো।হাসপাতালের অন্যান্য ডাক্তার আর নার্সরা নানা অজুহাতে কোয়ারেন্টাইনে চলে গেল।নাবিল নিজেই হাসপাতাল পরিচালনা করতে লাগল।তখনও কিছু নার্স তার সাথে ছিল।হাসানকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হলো।কিন্তু করোনা যুদ্ধে পতন হলো একটি নক্ষত্রের। হাসান মারগেল ফজরের আযানের সময়।মুয়াজ্জিন বলছিল – আস সালাতু খাইরুম মিনান নাউম। (ঘুম হতে নামাজ শ্রেষ্ঠ) । কিন্তু হাসান ঘুমিয়েই থাকল। আর জাগল না।

বিশ.
পরিশিষ্টঃ
এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়। দেশে সাধারন মানুষের পাসাপাসি এ ভাইরাসে ডাক্তার ও নার্সদের মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়ে চলছে। আজ একজন ডাক্তার মারা গেছেন। তার সামনে তার পিতা বসে আছেন।কিন্তু তার এতদিনের সহকর্মী ও নার্সরা কেউ তার ধারকাছে নেই।দুর থেকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে।

হাসপাতালের বেডে লাশটার দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি। তার একমাত্র পুত্রের মৃত্যু শোকে পাথর হয়ে গেছেন যেন।লাশটার পাশে মাছি ভন ভন করছে। কেউ কাছে আসছে না মাছি তারাতে। নার্সরাও রয়েছে দুরে দুরে।বৃদ্ধ উঠে গিয়ে হাত দিয়ে মাছি গুলো তাড়াচ্ছে। এইতো কিছুক্ষন আগেও সে ব্যথায় কাৎরাচ্ছিল। ডাক্তার নার্স সবাইকে বলেছে তাকে একটু দেখার জন্য কিন্তু কেউই কাছে আসে নি।যন্ত্রনায় কাৎরাতে কাৎরাতে একসময় তার দেহটি নিথর হয়ে যায়।সবাই ভুলে গেছে কেমন করে ওযে ওদেরই সাথে এতকাল এই হাসপাতালে সেবা দিয়ে এসেছে। ওযে ওদেরই একজন।

এমন সময় একজন নারীকে ছুটে আসতে দেখা গেল।
বাবা! বাবা! ও কেমন আছে?
আমার বাপজান আরে নেই মা! সব শেষ হয়ে গেছে। সব শেষ।
না বাবা! কি বলছেন আপনি! কি বলছেন!!!
যা সত্য তাই বলছি মাগো! এইতো আমার হাতে উপরে ছটফট করতে করতে চেল গেল বাপ আমার। ডাক্তার নার্স কেউই একটু ছুইয়াও দেখলনা এটাই আফসোস। নিজের হাসপাতালে নিজে এত রুগির সেবা দিল আজ সেইখানে তারে মরতে হইল চিকিৎসা ছাড়া।
বাবা! আপনার ছেলের সাথে এটা ইনসাফ হয় নাই। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল সে।
কেদ না মা! শক্ত করে নিজেকে! তুমি কাঁদলে সাদমানকে দেখবে কে? ওকেতো ওর বাবার মত ডাক্তার বানাতে হবে তোমাকে!!
ডাক্তার! কোন ডাক্তার বাবা! যারা নিজের সহকর্মীকে এভাবে ধুকে ধুকে মরত দেখে ফিরে তাকায় না সে ডাক্তার। এমন ডাক্তার হবার কোন দরকার নাই।
ঠিক বলছ মা! আমার মনে কথা বলছ! তোমার ছেলে তার বাবার মত ডাক্তার হবে। ওদের মত হবে কেন? নিজের জীবন দিয়ে যে তার কর্তব্য পালন করতে পারে এমন ডাক্তারই হবে।
বাবা এই হাসপাতালে আর এক মুহুর্ত না। চলেন আপনার ছেলেকে নিয়ে এখান থেকে যাই। এখানে সব অকৃজ্ঞ বেইমানদের পদচারনা।এই খানে থাকলে আপনার ছেলের আত্মা কষ্ট পাবে।
ওরা এখন লাশ নিতে দিবে না মা! পুলিশ আসবে ! তারপর সিদ্ধান্ত হবে !
এসব কি বলছেন বাবা! আমার স্বামীর লাশ আমি নিতে পারব না।দৌড়ে রিসিপসনে গেলেন।রিসিপসনের মেয়েটি তাকে খুব ভাল করে চিনে। তাদের স্যারের স্ত্রী।
সরি ম্যাম! স্যার এভাবে চলে যাবেন ভাবিনি।
রুকসানা ! তুমি আমাকে বলতো আমার স্বামীর লাশ আমি কেন নিতে পারব না?
আসলে ম্যাম মহামারীতে মৃত্যুতো সরকারী কিছু নিয়ম কানুন পালন করতে হবে।পুলিশ আসবে।এরপর যদি তারা মনে করেন আপনি লাশ নিতে পারবেন।
পুলিশ আসল। কিন্তু সেই লাশ পেলনা তার স্বজনরা। প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের আলোকে চারজন পুলিশের তত্ত্ববধানে খিলগাও তালতলা কবরস্থানে তাকে দাফন করা হলো। তার এপিটাপে লেখা হলো-

আবু বাকার নাবিল, একজন মৃত্যুঞ্জয়ী করোনা যুদ্ধা। আমরা তোমাকে ভুলবনা

কিন্তু লেখা হলোনা কতটা অনাদরে অবহেলায় তার মৃত্যু হয়েছে সে কাহিনী। একজন ডাক্তার একজন করোনা যুদ্ধা যে কিনা করোনা যুদ্ধে সম্মুখ সমরে নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে মানবতার ক্রান্তিলগ্নে এগিয়ে এসেছিল। অবশেষে………….. সে কি পেল?

আসলে নাবিল আর হাসানরা কিছু পাওয়ার জন্য কিছু করেনা। তারা শুধু দিতেই জানে। তারা যে ক্ষনজন্মা মহাপুরুষ।এদের শূন্য হাতে এ ধরায় আগমন ফিরে যায় শূন্য হয়ে অবশেষে ।

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ