অবশেষে ইমতিয়াজ

নাসির সারওয়ার ৭ অক্টোবর ২০১৬, শুক্রবার, ০১:৫৫:৩৬অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৩০ মন্তব্য

# হ্যালো, বল ।

  • আমি কাশবনের যৌবন দেখবো, এখনইতো সময়।

# আচ্ছা, আজ নিয়ে যাবো

  • ঠিক সন্ধ্যে বেলায় কিন্তু

# আচ্ছা

সে কী ওর হাসি যেন ছোট্ট একটা খোকা তার মার বুকে ঝাঁপ দিয়েছে। ইচ্ছে হোল কাশবনে হাটবে, ওদের গাঁয়ে হাত বোলাচ্ছে। সাথে কত সুন্দর করে প্রকৃতির বর্ণনা সেতো আমি পারিনা।

মাঝে মাঝে কিছু ভাবনা আমায় ঝাপটে ধরে। ইচ্ছে হলেও এড়াতে পারিনা। আমার এই বন্ধুটির দুটো কিডনিই অকেজো প্রায় চার বছর। চিকিৎসা পরিভাষায় ওর অবস্থা End stage renal failure এবং Kidney transplant ই ছিল যোগ্য চিকিৎসা। হয়ে উঠেনি তা। একদিন পরপর dialysis করেই চলছিলো দিন। মাঝে মাঝেই আমাকে কল দিয়ে তার আবদার। আজ অনেক ঠাণ্ডা একটা কোমল পানীয় খেতে ইচ্ছে হচ্ছে। একটু খোলা আকাশের নীচে হাঁটবো। মাঝে মাঝেই ওকে নিয়ে উত্তরার আশেপাশে ঘুরতাম।

আজকের পরে ও আর আমাকে কল দেবেনা। ওকে নিয়ে কীর্তন খোলায় নৌকায় আর চড়া হলোনা।  ওর বাচ্চাসুলভ হাঁসিটা আর দেখবোনা।

কিছুদিন আগের ওর লেখা একটা কবিতা। একটা মানুষ মৃত্যুর কাছে বসে কেমন করে এসব লেখে ! কবিতাটা কি ওর কাছে হেরে গেল!!

Imtiaz1

 

অনিচ্ছুক যাত্রী

ডাঃ ইমতিয়াজ চৌধুরী

না হে, ব্যাপারটা ততটা ভয়ানক নয় ;
কিছুটা অপার্থিব, সেটা অবশ্য মেনে নিতেই হয় ।
না সেরকম হিমশীতল বরফি আগুনের পথ নয় তা —
নয় সে পথ অগ্নিকুন্ডময় হুতাশন হাহাকারে পূর্ণ ।

বেঁচে থেকে পৃথিবীতে থাকতে থাকতে এ জায়গাটাতে বড় অভ্যস্ত আমি ।
মায়া পড়ে গেছে ভীষন, যেতে ইচ্ছে করে না আর কোথাও
এই রংমহল ছেড়ে । ওরাও ছাড়বে না, যেতেই হবে ।
সময় হয়ে গেছে, যেতেই হ’বে ওপারে ।

২৬০ / ১৫৩ রক্তচাপ আর শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় কত আর প্রতিরোধ ?
ইষ্টনাম জপে সমর্পণ করে ফেললাম একসময়ে ; কোন প্রার্থনা শ্লোক
পর্যন্ত মনে হচ্ছিল না তখন । তক্ষুণি খুলে গেল চেনা-অচেনা এক পথ ।
লহমায় দেখা হয়ে গেল, তখন চরাচর জুড়ে প্রশস্ত এক বিষণ্ন গেরুয়া
সড়ক ; দুপাশে সারিবাঁধা বনস্পতি, বট, অশ্বত্থ ইত্যাদি ।

ওপরে সুর্মা রঙ-এর আকাশ নিচু হয়ে নরম আলো ছড়াচ্ছে ।
নেই কোন শব্দ, না আছে সেখানে কোন পাখী ।
শুধু মিঠে একটা নরম বাতাস, মাদকের মত আকর্ষন করা বাতাস ।
সেই হাওয়া শুধু সামনে পথে ঠেলে নেয়, মাথার ওপরে টুপটাপ
করে গাছের পাতা ফেলে মনে করিয়ে দেয় যাওয়ার কথা ।

কে যেন সেসময় শক্ত করে ধরে ফেলে আমার হাত ।
যেতে চাই আমি পথের শেষে, সে আমায় নিয়ে আসে পেছনে ।
তখন আমার আর মনে নেই কারো কথা । বাবামা, ভাইবোন
অদৃশ্য আমার স্মৃতিতে ; চল্লিশ বছরের বন্ধুরা সব অপাঙতেয় ।
যেতে চাই সেই পাতা বিছানো গেরুয়া পথ ধরে পৃথিবীর সীমান্তে,
পথের শেষে জানি আমি, সেখানে খেয়ানৌকার হাল ধরে মাথায় গামছা
বেঁধে বসে আছে আমার জন্যে, কাশেম ভাই ।
গেলেই ধমকে দিয়ে বিরস বদনে বলবে, ‘এত দেরি কেন ? উঠে পর
ঝটপট নৌকায় ; তারপর বলবে সবাইই যায়, সবাইকেই যেতে হয় ।
ভাবিস না, আমি আছি নারে !

এভাবেই চলে যেতামই হয়তো একা একা ;
কিন্তু কে যে হাতটা ধরে রাখলো ?
আর যাওয়া হ’লো না এবেলা, বুঝলে বাপু !
যাওয়া বললেই হয় না যাওয়া, যাবো না বললেই হয় না থাকা ।

 

0 Shares

৩০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ