আমি রুদ্রকে হিংসে করি, সত্যি বলছি আগাগোড়াই বড্ড হিংসে করি তাঁকে। যে কবি প্রেমিকার মনে আটলান্টিকের উথালপাতাল ঝড় বইয়ে দেয় তাকে আমার স্নেহাস্পদ ভাবতে অন্তরে কাঁটার মত বিঁধে। তসলিমা থেকে তনয়া এদের প্রত্যেকে হ্যামিলিয়নের পথ ধরে রুদ্র'র কবিতার শব্দবাঁশরির মূর্ছনায় সেই যে অন্ধকারাবৃত গহ্বরে বেমালুম মিলিয়ে গিয়েছে আর খুঁজে পাইনি তাদের।
শাহাবাগের দেশি দশে, আজিজ মার্কেটে দিপু'র চায়ের টেবিলে, চারুকলার ছবির হাটে, সোহরাওয়ার্দীর কদমতলায় কোথাও তনয়াদের খুঁজে পাইনা। সাঁইয়ের পদধূলিকে নমস্য করে নবউদ্যমে একতারা বাজিয়ে যারা আমাহতে ধারকৃত কবিতায় প্রেমাসক্ত সুললিত কন্ঠমাধূর্যে বশ করেছিলো শত সহস্র হৃদয়, সেসব রমনীর উপর আমার অধিকারযুক্ত পদবী কিঞ্চিত হলেও বর্তায় বৈকি! তাদের এমন হারিয়ে যাওয়াকে কিছুতেই মেনে নিতে পারিনা।
টিএসসির বারান্দায় পায়ে পা মিলিয়ে বসে থাকার সঙ্গী ঘাসফড়িঙটা সেদিন কাঁধে এসে বসেছিলো বিমর্ষ বিদনে। বললাম- তনয়াদের ইদানিং দেখেছো? পাখা ফড়ফড়িয়ে মুখে কিম্ভুতকিমাকার অভিমান্য ডানার ঝাপটা উপহার দিয়ে সেও উড়ে চলে গেলো তৎক্ষণাৎ। অথচ তাকেও রুদ্র'র কবিতা পড়ে শোনাতে চেয়েছিলাম আমি। ফড়িঙটা বোধহয় আমার মতই রুদ্রর বিপরীতে হিংসাত্মকবোধে আস্ত ডুবে আছে কে জানে!
দিনরাত্রির উত্থানপতনে বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়। নিয়ন আলোর ফুটপাত ধরে হেঁটে হেঁটে বেইলী রোড থেকে নাগরিক নাট্যমঞ্চের প্রবেশদ্বার; এ আমার ইদানিংকালের রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছ। আমি মানুষের ভীড়ে তনয়াদের খুঁজি। খোঁপায় কাঠগোলাপের শুভ্রতার মায়া ছড়িয়ে আমায় অতিক্রমকারী প্রত্যেক রমণীর চোখে তাকিয়ে রুদ্র'র কবিতার ছায়া অনুভব করি। হয়তো তার আঁচলে লুকিয়ে আছে তনয়ারা! রুদ্র'র কবিতাকে যারা ভালোবেসেছে তারা আর আমার বশে নেই এটা নিশ্চিত।
ইটপাথরের দেয়াল ঘেরা হৃৎপিন্ডবিহীন তক্ষকদের এই শহর আমার নয়। যে নগরের নারীরা আমার কবিতা ভালোবাসেনা সেখানে আমি নিজেই নিজেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি আজ। নিদারুণ আক্ষেপে ভালোবাসাযুক্ত কবিতার দু'লাইন লিখে আকাশের ঠিকানায় চিঠি দিয়েছি রুদ্র! যদি পারো অদলবদলের নিদারুণ অমোঘ সন্ধিতে স্বাক্ষর করে তনয়াদের মুক্ত করে দিও। নতুবা তোমার কবিতার রসকাব্যে একফোঁটা নীলাভ হেমলক - হয়তো সেটাই আমার শেষ নিয়তি!
["অসহায় মানুষ হত্যার প্রতিবাদে
পৃথিবীর সমস্ত যুদ্ধের প্রতিবাদে
আমি আরো একবার ভাঙবো শোষকের আইন
আমি আরো একবার প্রতিরোধে ঘৃণায় বিক্ষোভে
মানুষের সমুদ্রে এনে দেবো প্রবল জলোচ্ছ্বাস।"]
-- রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্।
------------
তৌহিদ
২২/০১/২০২১
১৮টি মন্তব্য
আলমগীর সরকার লিটন
খুব সুন্দর লেখেছেন তৌহিদ দা
তৌহিদ
ধন্যবাদ ভাই, ভালো থাকুন আপনিও।
রোকসানা খন্দকার রুকু
তনয়ারা! রুদ্র’র কবিতাকে যারা ভালোবেসেছে তারা আর আমার বশে নেই এটা নিশ্চিত।*** কী মন্তব্য করব বুঝতে পারছিনা। সবাই সবার মতই শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। শুভ কামনা ভাই।
তৌহিদ
রুদ্র এবং তনয়া, তসলিমা সবাই এখানে প্রতীকী কিন্তু!!
নিজেকে বড় ভাবলেইতো আর বড় হওয়া যায়না আপু। কারন রুদ্র’র কবিতা বিশ্বজুড়ে আর আমি এখানেও অনেকের মনে নেই।
লেখাটির অন্য একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে – দুইলাইন লিখে নিজেকে বড় ভাবা অমূলক। যার কারনে পাঠক আমার সাথে নেই।
নামসর্বস্ব কবিতা লিখে নিজেকে রুদ্রর মত বিশাল কবি ও প্রেমিক দাবী করা সকল কবিদের প্রতি করুণা। শুভকামনা জানবেন।
মনির হোসেন মমি
“চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়- বিচ্ছেদ নয়
চলে যাওয়া মানে নয় বন্ধন ছিন্ন-করা আর্দ্র রজনী
চলে গেলে আমারও অধিক কিছু থেকে যাবে আমার না-থাকা জুড়ে।
”-রুদ্র
শ্রদ্ধা বিনয়ের সাথে।
তৌহিদ
সাধু সাধু! প্রীত হলাম ভাইয়া।
আরজু মুক্তা
যারা অসীম জ্ঞানের অধিকারী তাদের অবস্থান পৃথিবীতে ক্ষণস্থায়ী। বিনম্র শ্রদ্ধা
তৌহিদ
এই ক্ষণস্থায়ী জীবনেও তারা নিজেদের অবস্থান তৈরি করে গিয়েছেন পৃথিবীতে। শ্রদ্ধা জানাই তাদের।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
কবিতার মোহ মানুষের ভালোবাসার চেয়েও বেশি মায়াময়।
যে সুধার ধারা শাশ্বত সে তো সর্বত্রই বিরাজমান।
সুন্দর শব্দের খেলায় অনন্য নিবেদন।
মুগ্ধতায় শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা রেখে গেলাম অন্তহীণ।
তৌহিদ
সুন্দর বললেন ভাই, অসংখ্য ধন্যবাদ। ভাল থাকুন আপনিও।
ছাইরাছ হেলাল
রুদ্রের তুলনা নেই/হয়-ও না।
আপনার অনুভব আমাদের ও ছুঁইয়ে দিচ্ছে/যাচ্ছে।
তৌহিদ
রুদ্রের সাথে কারো তুলনা হয়না। তার লেখায় যে শব্দের ঝংকার খুঁজে পাই শুনতে পাই তার রেশ থেকে যায় চিরকাল। ধন্যবাদ ভাইয়া।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
রুদ্রকে উপচিয়ে যাওয়া সত্যিই কঠিন। আপনার চমৎকার শব্দবুননে, উপস্থাপনায় মুগ্ধ হলাম আবারো। একরাশ শুভেচ্ছা ও শুভকামনা নিরন্তর। ভালো থাকবেন সতত
তৌহিদ
রুদ্র তুলনা সে নিজেই। তার লেখা আমাকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো টানে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ দিদিভাই। ভালো থাকুন আপনিও।
জিসান শা ইকরাম
রুদ্রের কবিতার মাঝে তনয়ারা তন্ময় হয়ে হারিয়ে গিয়েছে রুদ্রের জগতে,
সেখানে অন্য পুরুষ সব পরপুরুষ হয়ে গিয়েছে তনয়াদের কাছে।
তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
রুদ্রের ভক্ত আমিও 🙂
শুভ কামনা।
তৌহিদ
আপনারর এই মন্তব্যে আমার লেখার সারমর্ম পুরোটাই ফুটে উঠেছে। আপ্লুত হলাম ভাই।
শুভকামনা সবসময়।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
লেখা নিয়ে হিংসে ভালোই তো ভাইয়া। ভালো থাকবনে।
তৌহিদ
সে তো হবেই, আমার লেখা পড়ে কেউ বলল না যে মনের কথা।
ভাল থাকুন ভাই।