কলেজ থেকে দূরে, খানিকটাই দূরে পরিত্যাক্ত প্রাচীন বাড়ি এক, শতবর্ষ পুরনো বাড়ি। এক বুনো অশ্বত্থ ফুটে আছে পাশেই তার, যেন মস্ত এক পাহারাদার সে। নিশ্চল পাহারাদার! অপরাজিতা নামের মেয়েটি বাড়ি ফেরার পথে অশ্বত্থের সে আন্দোলনরত শাখার নিচে দাঁড়িয়েছিলো সেদিন, দাঁড়িয়েছিলো সেই নিরিবিলি বৈশাখে আর ভিজে জুবুথুবু হচ্ছিলো, হচ্ছিলো হঠাৎ বৃষ্টির সাথে উত্তাল হাওয়ার সন্ধ্যায়। ভেজা সন্ধার ক্লান্তিতে আশপাশের শরীরটা তখন ক্রমশই ঢাকছিলো আঁধারে, ঢাকছিলো দ্রুতই। চারপাশটায় ঝরো হাওয়ার সাথে গাড় হচ্ছে যত উন্মত্ততা, হচ্ছে তখন! আচমকা চলে গেলে ইলেক্ট্রিসিটি ফাঁকেই এর, চলে গেলে ভীরু পায়ে দ্রুত সে কড়া নাড়ে এসে, নাড়ে কড়া খানেক দূরে জানলা খোলা চৌচালা টিনের ঘরের দরোজায়, ভীরুবুকে নিরুপায় নাড়ে বড় দ্রতই!
অচেনা সুদর্শন দরোজা খুলে দিলে ভেতর থেকে কিছু না ভেবে না দেখেই চাইলো সে বৃষ্টিটুকুন পার করার আশ্রয়, চাইলো কথার চেয়ে যেনবা সুগভীর চাহনিতেই তার। চাইলো দৃষ্টি বিনিময়েই যেনবা অধিক! চারপাশটায় তাকিয়ে চতুর দৃষ্টিতে অতঃপর সুদর্শন সেই নিয়ে বসালো তাকে ভেতরের কামরায়। বসালো চারপাশটা দেখে নিয়েই একবার! সে ছিলো ভিজে কাপড়ে বাতাসে শীতের পরশ ছোঁয়া সে সন্ধ্যায়। খানিকটা পরই এর ভেসে এলো ঝরো হাওয়ার আড়ালে বেদনাদীর্ণ আর্তনাদ, আহাজারি। ভেসে এলো পাখা ঝাপটানোর নিরুপায় প্রচেষ্টা, নিস্ফলা আকুতি! ভেসে এলো জানলার কাছে, খুব কাছে, খাটে, ভ্রষ্ট যুবক সুচারুভাবে নষ্ট স্রোত মেখে গেলে এরপর! আশপাশের শরীরে তখন রাত্রি গাড় হচ্ছিলো এবং ক্রমবর্ধমান তুমুল বৃষ্টি।
অনিশ্চিতাই ফুটে ওঠে সবচে নিশ্চয়তায়, ফুটে ওঠে সামাজিক উঠোনে এরপর। ফুটে ওঠে মৃত্তিকায় তার বেড়ে উঠলে রহস্যময়তা প্রাণের! এরপর থেকে বৃষ্টির সাথে আসেনি আর ঝোড়ো হাওয়া কিংবা আসেনি কলেজ শেষে বাড়ি ফেরার তাড়াও। আসেনি কখনোই! তবে দলছুট হলদে পাখির মত মাইলের পর মাইল জুড়ে মেয়েটি পড়ে রয় স্বপ্নহীনতায় আর জানালার কাছে বসে ব্যথার শাঁসে শার্সিটাকে কাঁপিয়ে দেয় অজান্তেই দীর্ঘশ্বাসে বারবার!
১ অক্টোবর ২০১২
দুপুর, উত্তরা।
Thumbnails managed by ThumbPress
১৮টি মন্তব্য
আদিব আদ্নান
অপরাজিতার হারানোর বেদনার সার্থক উপস্থাপন ।
মর্তুজা হাসান সৈকত
ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার সুন্দর অভিমতের জন্য কিন্তু হারানোর বেদনার কাছে এতো খুবই নস্যি । ভালো থাকুন…
জিসান শা ইকরাম
সত্য ঘটনার কাব্যিক উপস্থাপনা সুন্দর ভাবেই করেছেন ।
মর্তুজা হাসান সৈকত
ধন্যবাদ ভাইয়া সময় করে পড়ার জন্য । আমার যে কবিতাগুলোর ভেতরে সময়ের বীভৎসতা আমি দেখতে পাই, এটি সেরকমই একটা । ভালো থাকুন ।
ছাইরাছ হেলাল
এমন হৃদয় বিদারক ঘটনা যা বর্তমান সময়ের সাথে প্রায় সম্পূরক ,
তুলে ধরেছেন ব্যথিত হৃদয়ে সার্থক উপস্থাপনে ।
মর্তুজা হাসান সৈকত
ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার সুন্দর উপস্থাপনের জন্য । জানিনা, এরকম আর কত আর দেখতে হবে, তবে প্রার্থনা করি যেন এমনটা না দেখতে হয় আর একটিও । ভালো থাকুন আপনি…
মিসু
অসাধারন
মর্তুজা হাসান সৈকত
ধন্যবাদ আপি সময় নিয়ে পড়ে সুন্দর অভিমতের জন্য । শুভ দুপুর…
যাযাবর
লেখাটি পড়ে কেন জানি মনটা কেপে উঠলো আমার , ভালো লিখেছেন ।
মর্তুজা হাসান সৈকত
ধন্যবাদ সময় নিয়ে পড়ে অভিমত জানানোর জন্য । সুচেতন কেউ মানেই এমন কিছু প্রত্যাশা করেনি কখনোই । ভালো থাকুন ।
শিশির কনা
সময়ের বীভৎসতা ভালো ভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন ।
মর্তুজা হাসান সৈকত
ধন্যবাদ আপনাকে সময় নিয়ে পড়ে অভিমত জানানোয় । শুভ কামনা রইল ।
বনলতা সেন
এই বীভৎস সামাজিক অনিশ্চয়তার মুক্তি কামনা করি ।
মর্তুজা হাসান সৈকত
যতটুকু সম্ভব বের হয়ে আসতেই হবে। রোধ করতেই হবে সামাজিক অবক্ষয়।
ব্লগার সজীব
কেন যেন উদাস হয়ে গেলাম , ঘোড় লেগে গেলো । অনেক ভালো লাগা লেখায়।
মর্তুজা হাসান সৈকত
এমন পরিনতি যেন প্রবল শত্রুরও নাহয়। এসব নিয়মিতই হচ্ছে এখন। মানতে কষ্ট হয় বড়।
খসড়া
অনুভূতি টা কষ্টের। বহির্প্রকাশের ভাষা নেই।
মর্তুজা হাসান সৈকত
ভাবতেই কষ্টের ক্ষীণ একটা স্রোত বইয়ে যায় আমার ভেতরেও। শুভকামনা জানবেন।