
মানুষ মাত্রেই প্রত্যেকের ভেতরে বাস করে একটি করে শিশু। অনেকের আচার-আচরণ অনেক সময় শিশুসুলভ হয়ে যায়। এর কারণ কি কখনও কি ভেবেছেন- কেন এমনটা হয়? শিশুদের বুঝতে হলে যেমন তাদের মনকে বোঝা জরুরি তেমনি বড়রা শিশুদের মত আচরনের পিছনেও কার্যকারণ আছে অবশ্যই।
রূপকথার রাজত্বে শিশুর চিরদিনের বাস। শিশুর মন সম্ভব-অসম্ভবের কোন ধার ধারেনা। রূপকথার সঙ্গে বাস্তবের ভেদ অনুভব করতে পারে না। রূপকথার বিচিত্র আখ্যানভাগ তার কাছে পরম সত্য। তার মন সারাক্ষণ সেই বেষ্টনীর মধ্যে বিচরণ করে।
বাস্তবের সংঘাতে শিশু তার ক্ষুদ্রত্ব, অসহায়ত্ব অনুভব করে। বয়স্কদের সংসারে তার আশা-আকাঙ্ক্ষা, ভাবনা-চিন্তার যে বিশেষ কোনো মূল্য নেই তা সে ধারণ করতে পারে। কিন্তু শিশুর স্বভাবের মধ্যে একটা আত্মপ্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা সর্বদাই বর্তমান থাকে। তাই কল্পনায় এই ক্ষুদ্রত্ব ও অসহায়ত্বকে সে পূরণ করে বা করতে চায়। শিশু মনস্তত্ত্ববিদগণ এ অবস্থাকে বলেছেন- কম্পেনসেটরি প্রসেস (Compensatory process) বা শিশুমনের কল্পনায় ক্ষতিপূরণ-প্রক্রিয়া।
কঠিন বাস্তবজগতের আবেষ্টনী ক্রমে শিশুকে একটু একটু করে ঘিরে ধরতে আরম্ভ করলে, সে এটি থেকে মুক্তি পেতে চায়। ছুটি চায়- তার মনের খেলার জগতে প্রবেশ করতে চায়। যেখানে বাস্তব জগতের কোন নিয়ম খাটেনা। যেখানকার ভালো-মন্দ, সামান্য-বিশেষ, শিশুর ওজনে, শিশুর মাপকাঠিতে নির্ধারিত। সে জগতের অবাধ স্বাধীনতার মধ্যে সঞ্চারণ করতে চায়। তাদের পড়াশোনার ভালো লাগেনা, যেন কল্পনার সীমাহীন স্বাধীনতা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় সে ছুটি খোঁজে।
প্রকৃতি শিশুর সঙ্গে নিজের সম্পর্ককে খুব নিবিড়ভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে রেখেছে জন্মাবধি। এ কারনেই প্রকৃতি শিশুদের কাছে একান্ত সজীব, প্রকৃতির বিভিন্ন অংশ তার কাছে (শিশুটির) একেবারে মানুষের সমগোত্রীয়।
সন্ধ্যাবেলায় কদম গাছের আড়ালে যখন চাঁদ ওঠে, তখন শিশু মনে করে সত্যিই চাঁদ উঠেছে সেখানে। চাঁদ আটকা পড়ে গিয়েছে এবং এটিকে ধরে আনা যায়। তার দাদা বা দাদী যখন বলে যে- চাঁদ অনেক দূরে থাকে, ওটা অত্যন্ত বড় আর হাতে ধরা যায়না তখন অবুঝ শিশু দাদা-দাদীর যুক্তিকে বুঝতে পারেনা। শিশুটি বলে-
“দাদা তুমি জানো না কিছুই।
মা আমাদের হাসে যখন ওই জানালার ফাঁকে
তখন তুমি বলবে কি, মা অনেক দূরে থাকে?
…… ……. ……. …….
কি তুমি ছাই ইস্কুলে যে পড়।
মা আমাদের চুমু খেতে মাথা করে নিচু,
তখন কি মার মুখটি দেখায় মস্ত বড়ো কিছু।”
(জ্যোতিষ-শাস্ত্র)
ছোটকাল থেকেই আমাদের মনে সেই অবুঝ শিশুটির ছায়াকে আমরা লালন করি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। আর এ কারণেই শিশুসুলভ আচরণগুলো আমাদের মাঝে প্রকাশিত হয় ক্ষণে ক্ষণে। তাই কখনো কাউকে শিশুসুলভ আচরণ করতে দেখলে বিরক্ত হবেন না। বরং আপনিও নিজেকে তার অবস্থানে রেখে একজন শিশুর মতো করেই ভাবুন না। নিজের মনের শিশুকে বিকশিত হতে দিন। শিশুসুলভ মনের মানুষই একজন খাঁটি মনের মানুষ।
[ছবি- নেট থেকে, অনুপ্রেরণা – রবীন্দ্র কাব্য]
১১টি মন্তব্য
আলমগীর সরকার লিটন
সুন্দর লেখেছেন তৌহিদ দা অনেক শুভ কামনা
তৌহিদ
দাদা ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন সব সময়।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সবার মধ্যেই শিশুসুলভতা ঘুমিয়ে থাকে। কেউ প্রকাশ করে জেগে উঠে কেউ অপ্রকাশিত রাখে । তারা সত্যিই খুব ভালো হয় যাদের মধ্যে এমন শিশুসুলভ আচরণ দেখা যায়।
সবার অন্তরের শিশুরা জেগে উঠুক উচ্ছল, তারুণ্য আর নিষ্পাপ ভরা মায়ায়, ভালোবাসায়।
একরাশ শুভেচ্ছা ও শুভকামনা। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন নিরন্তর
তৌহিদ
সুন্দর বললেন আপু, অনেক ধন্যবাদ। নিজেদের অন্তরে শিশুকে লালন করতে হয় সবসময়। ভালো থাকুন আপনিও।
শুভকামনা রইল।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে।
অনেক শিশিক্ষনীয় সুন্দর একটু পোস্ট ভাই।
শুভ কামনা রইলো।
প্রদীপ চক্রবর্তী
প্রতিটি মানুষের মাঝে রয়েছে শিশুসুলভ আচরণ।
লেখাটা পড়ে ভালো লাগলো,দাদা।
শিক্ষণীয় পোস্ট শেয়ার করার জন্য সাধুবাদ জানাই।
তৌহিদ
ধন্যবাদ আপু। সুন্দর বললেন, লেখা পড়েছেন দেখে ভালো লাগলো।
শুভ কামনা সব সময়।
আরজু মুক্তা
শিক্ষণীয় পোস্ট। বোঝার আছে অনেক কিছু
শুভকামনা
তৌহিদ
ধন্যবাদ আপু, ভালো থাকুন সবসময়।
খাদিজাতুল কুবরা
কেউ কেউ বয়সের ভারে নুয়ে পড়ার পরও ভেতরে সজীব প্রাণবন্ত থাকে, শৈশব, কৈশোর তারুণ্যকে লালন করে। আবার কেউ কেউ শিশু সুলভ আচরণ মনের অজান্তেই করে। এসব সাদাসিধা মানুষগুলোর মন খুব ভালো হয়। আমার মনে হয় জটিল কুটিল হওয়ার চেয়ে শিশুসুলভ হওয়াই ভালো।
খুব ভালো একটি বিষয় নিয়ে লেখার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ তৌহিদ ভাইয়া।
তৌহিদ
খুব সুন্দর বললেন আপু। আসলে আমাদের অন্তরের শিশুটিকে যত্ন করতে হয়। একজন মানুষের ভালো খারাপ দুটোই প্রকাশিত হয় সেই শিশুটিকে আমরা কিভাবে যত্ন করছি তার উপরে।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকুন সবসময়।